পরাণ ডোমের পোস্টমর্টেম : অমিতাভ অরণ্য | Porandomer Postmortem

◑নাম: পরাণ ডোমের পোস্টমর্টেম 
◑লেখক: অমিতাভ অরণ্য

               ● পরাণ ডোমের পোস্টমর্টেম —

     ডোমের ছেলে ডোমই হবে এমন কি কোনো কথা আছে? তবে পরাণের ভাগ্যে বিধাতা যেন এমনটাই লিখেছিলেন। লাশের সাথে বসবাস যার মৃত্যু তাকে আর তেমন কষ্ট দেয় না। কিন্তু মৃত্যু শোক পরাণকে নাড়া দেয় একবার, ভালোমতোই! মৃত্যুর প্রতিশোধ যে তাকে নিতেই হবে...

বইয়ে গল্প আছে মোট দশটা। প্রথম গল্পের নামেই যখন বইয়ের নামকরণ স্বভাবতই এক্সপেকটেশন বেড়ে যায়। তবে আশানুরূপ হয়নি। মিস্ট্রির যে আভাস লেখক রেখেছেন তা অল্পই। বলতে গেলে একদম শেষেই। 

               ● অরিত্রের অন্তর্ধান —

     সবকিছু থাকার পরও কিছু একটা যেন নেই এই ভাবনায় তাড়িত করে শৌনককে। সাজানো-গোছানো সংসার তার আর তরীর। কিন্তু ❝কিন্তু❞- ভাবটা তাকে অস্থির করে তোলে। বারবার মনে পড়ে অরিত্রের কথা। বহুবছর আগে যে হারিয়ে গেছে তাদের জীবন থেকে কেন বারবার পড়ে মনে?

শুরুতেই অনুমান করে ফেলেছিলাম অরিত্রের উধাও হওয়ার রহস্য। তবে গল্পটা ভালো লেগেছে। বিশেষ করে যেভাবে বলা হয়েছে অতীতের কাহিনী। শেষটা একই সাথে হরর, থ্রিলিং, মিস্ট্রির মিশ্রণ। 

               ● শেষ সিদ্ধান্ত —

     আঁকাআকি আর রূপন্তী এই দুয়ে মিলে ছিল নীলয়ের জগৎ। কিন্তু নীলয়ের জগৎ থেকে রূপন্তী হারিয়ে গেলেও ছিল আঁকাআকির প্রতি তুমুল নেশা। জীবন গড়িয়ে যায়। হঠাৎ ফিরে আসে রূপন্তী! পূর্বের ন্যায় আবার হতে চায় নীলয়ের জীবনের অংশ। কিন্তু দ্বিধায় পড়ে যায় নীলয়! কেন?

অতীতের স্মৃতিচারণা বলা যায়, শেষ সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়। মোটামুটি ধাঁচের লেখা। অতীত-বর্তমানের সম্পর্কের জড়িয়ে পড়া এক দ্বিধান্বিত যুবকের কাহিনী। অতীতকে যেমন মেনে নিতে পারছে না তেমনি বর্তমানকেও অস্বীকার করতে পারছে না। সমাপ্তি অসমাপ্ত। 

               ● শখের সাতকাহন —

     বাবা শুধু একটা শব্দ নয়। জীবনের একটা ঢালও বটে। অভাবের সংসার তারপরও বাবা পূরণ করতেন সকল চাহিদা। কীভাবে? সেটা তো বাবা বুঝতে দিতেন না একমাত্র আদরের সন্তানকে। কিন্তু বলে না থাকা পর্যন্ত মূল্য বুঝা দায়। হারিয়ে যেতে লাগলেই যেন ফিরে পাবার আকুতি জেগে উঠে। বাবা যেন হারিয়ে যাচ্ছেন! ফিরে আসবেন কি আবার সন্তানের ডাকে?

লেখকের জবানিতে লেখা ছোট একটা গল্প। বহুকষ্টে, বহু ত্যাগ স্বীকার করে একমাত্র সন্তানের সকল চাওয়া পূরণ করে চলেছেন বাবা। কিন্তু কষ্টের এই হিসাব রাখে কে? নিজের চিন্তায় সন্তান যে বাবা-মাকে ভুলে যায় লেখক এটাই মূলত ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পে। শেষটা বেশ ভালো লেগেছে। 

               ● প্রায়শ্চিত্ত —

     ইশতিয়াক বেশ বিরক্তই শাহানার প্রতি। দিনকে দিন তার ওজন বাড়াকে সহজভাবে নিতে পারছে না। সন্তানের মা হওয়ার পর থেকে স্বামী-সন্তান ছাড়া যেন তার জীবনে আর কিছুই নেয়। সুখের সন্ধানে ইশতিয়াক বছরের পর বছর প্রতারণা করে চলেছে শাহানারার প্রতি। হঠাৎ একদিন মুহাইমিনের সাথে দেখা হওয়ার পর মনে পড়ে যায় অতীতের ইশতিয়াক-শাহানার একসাথে পথ পাড়ি দেওয়ার দিনগুলো। বুঝে যায় ইশতিয়াক ফিরতে হবে তাকে। কিন্তু সকল পাপের কি প্রায়শ্চিত্ত হয়?

গল্পের প্লট ভালো তবে ভাষা কিছু জায়গায় মার্জিত হলে ভালো হতো। মানব মনের নোংরা অনুভূতি প্রকাশে শব্দও যে এমন হতে হবে বলে আমার মনে হয় না। শেষটা অপ্রত্যাশিত ছিল তবে এমনটা না হলে যেন মানাতো না।

               ● মায়ের ইচ্ছা —

     অপারেশন টেবিলে শুয়ে হাসছে মা অচিন্ত্যের দিকে চেয়ে। কিন্তু অচিন্ত্যের মন যে ভয়ে কাঁপছে! হাতে সময় নেই অপারেশন যে তাকে করতেই হবে। আর মায়ের ইচ্ছে তার হাতেই হবে অপারেশন। পারবে কি অচিন্ত্য মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে?

পৃথিবীতে আসার আগেই মায়ের সাথে সন্তানের বন্ধন গড়ে উঠে। সন্তান যেমন বিশ্বাস করে মা তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে মায়েরও এমন মনোভাব কি অমূলক? বইয়ের সবচেয়ে ছোট গল্প কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর। বিশ্বাসের উপরে কিছু নেই লেখক যেন এটাই বলতে চেয়েছেন। 

               ● শেষ স্বপ্ন —

     ছোট থেকে অবহেলিত হুলো। জন্মের পর থেকে অযত্নের জন্য আজ অনেকটাই দূর্বল। ভাগ্যের প্রতি তিক্তবিরক্ত। ভোলা ময়রাকে মাছ নিয়ে ফিরতে দেখে হুলো। একটাই স্বপ্ন এখন তার ❝এক টুকরো ইলিশ❞...

হুলো নামের হলদেটে বিড়ালের জীবন কাহিনী। অতীত থেকে বর্তমান সময়ে সে অতিষ্ঠ তারই ভাইয়ের জন্য। শেষটা কষ্টদায়ক। কার ফল পায় কে!!!

               ● জ্যোতির বন্ধু —

     মা-বাবার ঝগড়ায় অতিষ্ঠ ছোট জ্যোতি। অকূলপাথারে পড়ে যখন বাবা-মা আলাদা হয়ে যায়। মাও তাকে সময় দেন না ঠিকমতো। কিন্তু পাশে আছে সবসময় প্রাণের বন্ধু রূপম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় রূপম তার মনের সব খবর জানে! 

মানব মন বড়োই রহস্যময়। জ্যোতির বন্ধু তারই নিদর্শন। যদিও রহস্য তবে আগেই অনুমেয়। তবে শেষটা যে এভাবে হবে এটা রহস্যই বটে।

               ● শ্যামল স্যার —

     দেশকে ভালোবেসে যুদ্ধের পরও থেকে গেছেন দেশে। বিশ্বাস ছিল ভালোবাসা ছিল দেশাত্মবোধেরের আগে ধর্মের ভেদাভেদ থাকবে না। কিন্তু শ্যামল স্যারের বিশ্বাস-ভালোবাসা কি পূর্ণতা পেয়েছিল? 

স্বপ্ন, ভালোবাসা, বিশ্বাস যে মানুষকে কতটা শক্তিশালী করে তোলে ❝শ্যামল স্যার❞ যেন তারই আখ্যান। লোভে পড়ে মানুষ হয়ে যায় মানুষ থেকে অমানুষ। বিবেক লোপ পায়। 

               ● প্রত্যাবর্তন —

     অতীতের ফেলে যাওয়া গ্রামে ফিরে যায় সমীরণ। নিজেদের বসতভিটায় পা রেখে হয়ে পড়ে স্মৃতিকাতর। সাফল্যের সাথে বসবাস কিন্তু অকৃত্রিম সম্পর্কের দেখা পায়নি সে বহুবছর। প্রাণের বন্ধু মিন্টুর জায়গা তো আজও কেউ নিতে পারে নায়।

জীবনের তাগিদে শহরে পাড়ি জমায় অনেকেই। কেউ মানিয়ে নেয় তো কেউ পারে না মানিয়ে নিতে। কিন্তু গ্রামের স্নিগ্ধ শীতল স্মৃতি কি ভুলে থাকা যায়? বিদেশে পাড়ি দেওয়ার আগে সমীরণ শেষবারের মতো নিজ গ্রামে ফিরে যায়। স্মৃতিচারণ করে অতীতের, কেন ছেড়েছুড়ে গেছিলো সব। 

গল্পসংকলনে সকলই গল্পই যে ভালো হবে এমনটা আশা আসলে করা যায় না। তবে ওভারঅল মোটামুটি লেগেছে। কিছু গল্প অসাধারণ তো কিছু সাধারণ। প্লট কমন। কিছু গল্প শুরুটা যেমন ছিল শেষটা তেমন আশানুরূপ হয়নি। রেটিং দিতে হলে দিবো ৩.২। প্রচ্ছদটা আরও সুন্দর হতে পারতো। বইয়ে কিছু বানান ভুল আছে। কিছু চরিত্রের নামের মধ্যেও গন্ডগোল আছে তবে তা অল্পই। বইয়ের প্রোডাকশন ভালোই।

◑মুদ্রিত মূল্য: ২৫০/-
৩৫% ছাড়ে বইটি পাওয়া যাবে নহলী বুকস (নহলী বুকস)  ও রকমারি (rokomari.com/noholi) এর ঠিকানায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ