পুঁজিবাদ এক ভৌতিক গল্প PDF : অরুন্ধতী রায় | Pujinad Ek Voutik Golpo : Arun Dhuti Roy

তোমার রক্ত জানতে চায়
বিত্তশালী মানুষ ও আইন কীভাবে একাত্ম হয়ে যায়?
কোন ধরনের কঠিন প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে এরকমটা হয়?
কেন দরিদ্ররা বারবার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হয়?

পুঁজিবাদ এক ভৌতিক গল্পবই কথন

last update: 3/7/2022

  • বই : পুঁজিবাদ এক ভৌতিক গল্প
  • মূল : অরুন্ধতী রায়
  • রূপান্তর : সোহেলী তাহমিনা
  • প্রচ্ছদ : ওয়াহিদ তুষার
  • মূল্য : ১৭৫ টাকা
  • প্রকাশকাল : বইমেলা ২০২০
  • প্রকাশনায় : Red Publication
পাবলো নেরুদা'র ঠিক এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েই যেন গাঁথা 'পুঁজিবাদ এক ভৌতিক গল্প ' বইটি। বইয়ের পাতায় দেখা মিলবে পুঁজিবাদের করাল গ্রাসের আর কর্পোরেট জগতওয়ালাদের পৈশাচিক আচরণের। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচে' দ্রুত গতিতে ইকোনোমিক রেইট বৃদ্ধি পাওয়া দেশটি হলো ভারত।

যে দেশে সেরা ১০০ জন বিত্তশালী ব্যক্তির অর্থ হলো মোট জিডিপির এক চতুর্থাংশ। অথচ বাকি তিন চতুর্থাংশ মানুষের কোন হিসেবই নেই। হিসেব নেই সেইসব লাখের উপর কৃষকদের যারা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে পেরে আত্মহত্যা করে । হিসেব নেই সেইসকল মানুষের শ্রমের যারা কেবল দুই ডলারের উপর জীবন ধারণ করে। কমনওয়েলথ গেমস বা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় রজধানী দিল্লির শ্রী বৃদ্ধির জন্য এইসব হতদরিদ্র মানুষগুলোকে উচ্ছেদ করে উধাও করে দেয়া হয় কাপড়ের ময়লার মত। 

গ্রামে ফিরে গিয়ে নিজের আবাসস্থলটুকুতে বাঁধ আর ধূলাবালি ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। ক্ষুধা আর পুলিশের তাড়নায় আবার ফিরে আসে শহরে। তখন তাদের মনের কষ্টের জিজ্ঞাসাকে লেখিকা দারুণ হৃদয় বিদারক করে ফুটিয়ে তুলেছেন -
" আর ভাবতে থাকে, এত বড় দেশের ঠিক কোন জায়গাটি তাদের স্থায়ী নিবাস হিসেবে তৈরি হয়েছে ! "

গণমাধ্যম , সংবাদপত্র - যাদেরকে বলা হয় জনগণের জন্য কাজ করা সংস্থা তারাও আজকাল ঝুঁকে পড়েছে কর্পোরেট ব্যবসায়ের দিকে। তথাকথিত গণতান্ত্রিক ভারতে তাদেরও সময় নেই জন সাধারণের দুর্ভোগের খবরগুলো তুলে আনার। ভারতের এমনও অনেক অঞ্চল আছে যেখান থেকে কোন খবরই উঠে আসেনা জনগণের সামনে কখনই। মণিপুর , কাশ্মীরের মত এলাকাগুলোর সামনে বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে অন্ধকারে বিলীন করে দেয়া হচ্ছে তাদের। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে কোন অভিযোগ করতে গেলেও প্রাণ নিয়ে ঘরে ফেরা হবে কিনা, তা তারা জানেন না। 

উপজাতি জনগোষ্ঠীর আর্তনাদে ভরপুর ভারতের কারাগারগুলো। বহু বছর কারাগারে কেটে গেলেও বন্দীদের বেশির ভাগই জানেন না তাদের অপরাধটা কি ছিলো। আদিবাসিদের কারাগারে পুরে দেয়ার জন্য হেন কাজ নেই ভারতের কর্পোরেট প্রশাসন করতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ আদিবাসি শিক্ষিকা সোনি সোরির কথাই ধরা যায়। বিনা অপরাধে তাকে থরে এনে যৌনাঙ্গে পাথর ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয় , যাতে সোনি নিজেকে মাওবাদীদের একজন বার্তাবাহক বলে স্বীকারোক্তি দেন। অথচ, বিনা অপরাধে এই মজলুম কে নির্যাতনকারী পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট অঙ্কিত গার্গ পেলো জাতীয় সম্মাননা।

 পাঠ অনুভূতি

বইটি অনেক অজানা তথ্যের জানান দিলো। বইয়ের প্রতিটি পাতায় যেন অসীম লোমহর্ষতা ছেয়ে আছে। গভীর ভাবনায় ঠেলে দিয়েছে বইটি। আজকের দুনিয়ায় কোন রাষ্ট্রই কর্পোরেট বিভীষিকার নাগালের বাইরে নয়। তাই আমার বইটি পড়ার পর মনে হয়েছে এখানে আম জনতার জন্য অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা আছে। শুধু তাই নয় ভারত যে মাত্রায় পুঁজিবাদের চক্রে ঘুরছে, অতি নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশও ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকার হবে বলে আমি মনে করি। বইটির সবচে' ভালো লেগেছে দুটি জিনিস। প্রথমত, ভারতের তথাকথিত গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরেপেক্ষতার মুখের উপর লেখিকা অরুন্ধতী রায় যে স্পষ্টভাষী এবং উত্তপ্ত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন তা সত্যিই ভালো লাগার মতো।

দ্বিতীয়ত ,যে ভয়াবহ সৌন্দর্য্যে তিনি সত্য ঘটনাগুলো লিখেছেন। মানবতা পক্ষে এবং জুলুম-দুর্নীতির বিপক্ষে তার সততা পাঠক হিসবে আমাকে মুগ্ধ করেছে। নিজের দেশের অমানবিক জুলুমের চিত্রগুলো বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে তিনি কুন্ঠাবোধ করেন নিই। সেইসাথে আবেগাপ্লুত হয়েছি ভারতের নির্যাতিত মুসলিমদের রক্তক্ষরণের গল্পে। আফজাল গুরুর প্রতি বিচারিক অবিচার , গুজরাটের দুই হাজার মুসলিম হত্যার ঘটনাগুলো হৃদয়কে হেলিয়ে রেখে দিয়েছে। বইটি ৭টি অধ্যায়ে বিভক্ত। ' পুঁজিবাদ: একটি ভৌতিক গল্প ' , 'কাশ্মীরের বিবাদের বিষয়', ' আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেওয়ার পরিণতি' - এই অধ্যায়গুলো বড় হৃদয় বিদারক।

 ভালো লাগা কিছু সাহসী কথা —

 ১) ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তির আইনী অধিকার থাকার বিষয়টি দরিদ্রদের ক্ষেত্রে কখনই খাটে না।

২) মনে হয় যেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীরা ও সরকার বিশ্বাস করে যে , তর্জন-গর্জন করে আর বোয়িং বিমান ক্রয় করে তাদের মনের মতো 'পুনরূদীয়মান' ভারত গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু সেদ্ধ করা উষ্ণ ডিমের বিধ্বংসী ক্ষমতা সম্পর্কে তারা জানে না।

 বইটি কারা পড়বেন এবং কেন পড়বেন

 কিছু বিশেষায়িত বই থাকে যা সকল শ্রেণী- বয়সের পাঠকদে জন্য নয়। ' পুঁজিবাদ : একটি ভৌতিক গল্প ' তেমন একটি বই। আমার মতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজকল্যাণ , অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং এ সকল বিষয় নিয়ে যারা গবেষণা করেন বইটি তাদের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া সাম্প্রতিক বিশ্ব এবং সাম্প্রতিক বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে সব সময় আগ্রহী পাঠকরাও অনায়াসে বইটি পড়তে পারেন। তবে বইটি পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের জনতা মাত্রই বইটি পড়তে চাইবে। কেননা, বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের পাশের দেশ ভারতের নানান গোপন কথা। পুঁজিবাদের চাকায় কি করে পিশে মারা হচ্ছে অসহায় জনগণকে তার ভয়াবহ চিত্র তুলে এনেছেন বইয়ের লেখিকা। বইটি পড়লে পাঠক আরও জানতে পারবেন - কি করে মুষ্টিমেয় কিছু বিত্তবানদের হাতেই কোন দেশের সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায়। কর্পোরেট জগতের মানুষগুলো যে কতটা অমানবিক ; তার চিত্রও বইটিতে ফুটে উঠেছে পরিষ্কারভাবে।

 সমালোচনা

 সাধারণ জনগণের জন্য বইয়ের অনুবাদ একটু কঠিন হবে বৈকি। আরেকটু সহজভাবে অনূদিত হলে আরও বেশি পাঠক বইটি উপভোগ করতে পারত। বইয়ের শেষের দিকে অনেক রেফারেন্স দেয়া আছে , যেগুলো থেকে তথ্য- উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। কভার পেপারব্যাকের। বইয়ের বাইন্ডিং, প্রচ্ছদ, কভারের এবং ভেতরের লেখার ফন্টের মানও ভালো। 

পরিশেষে, এই গুরুত্বপূর্ণ বইটি পাঠকদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য রেড পাবলিকেশনের প্রতি রইলো একরাশ কৃতজ্ঞতা।

প্রজন্ম পাবলিকেশনের "পুঁজিবাদ এক ভৌতিক গল্প" বইটি নতুন সাজে আসছে Red Publication থেকে

বইটি সম্পর্কে কিছু কথা

 বইয়ের পাতায় দেখা মিলবে পুঁজিবাদের করাল গ্রাসের আর কর্পোরেট জগতওয়ালাদের পৈশাচিক আচরণের। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচে' দ্রুত গতিতে ইকোনোমিক রেইট বৃদ্ধি পাওয়া দেশটি হলো ভারত। যে দেশে সেরা ১০০ জন বিত্তশালী ব্যক্তির অর্থ হলো মোট জিডিপির এক চতুর্থাংশ। অথচ বাকি তিন চতুর্থাংশ মানুষের কোন হিসেবই নেই। হিসেব নেই সেইসব লাখের উপর কৃষকদের যারা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে পেরে আত্মহত্যা করে । হিসেব নেই সেইসকল মানুষের শ্রমের যারা কেবল দুই ডলারের উপর জীবন ধারণ করে। কমনওয়েলথ গেমস বা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় রজধানী দিল্লির শ্রী বৃদ্ধির জন্য এইসব হতদরিদ্র মানুষগুলোকে উচ্ছেদ করে উধাও করে দেয়া হয় কাপড়ের ময়লার মত। গ্রামে ফিরে গিয়ে নিজের আবাসস্থলটুকুতে বাঁধ আর ধূলাবালি ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। ক্ষুধা আর পুলিশের তাড়নায় আবার ফিরে আসে শহরে। তখন তাদের মনের কষ্টের জিজ্ঞাসাকে লেখিকা দারুণ হৃদয় বিদারক করে ফুটিয়ে তুলেছেন -
" আর ভাবতে থাকে, এত বড় দেশের ঠিক কোন জায়গাটি তাদের স্থায়ী নিবাস হিসেবে তৈরি হয়েছে ! " 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ