লেখকঃ ফাহ্মিদা বারী
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩২০
প্রাপ্তিস্থানঃ বইটই এ্যাপ।
কোথায় কে যেন বলেছিল,জীবন নাটকের চাইতেও বেশি নাটকীয়! আসলেই তো, জীবনটা একটা নাট্যমঞ্চের মতো,আর আমরা কখনো সেই নাটকের অভিনেতা আবার কখনো পার্শ্বচরিত্র! কেউ কখনোই ভাবতে পারে না,তার সুশৃঙ্খল, স্বপ্নজালের বন্দি জীবনের পরতে পরতে কতশত নিষ্ঠুর নাটকীয়তা অপেক্ষা করছে! কে না চায়,সুচারু নির্ঝঞ্ঝাট জীবন পেতে! কিন্তু সবাই কি পায়? পায় না। কখনোসখনো শতবর্ষীয় নৈসর্গিক বিবর্তনের মতো জীবনের তাবত সোনালী-সজীবতা বিবর্তিত হয়ে ধূ-ধূ মরুর মতো হয়ে যায়। ‘সেদিন গেছে ভেসে’ উপন্যাসে এমনকিছু চরিত্র আছে যারা না চাইতেও তাদের জীবনের ওপর ধেয়ে আসা তপ্ত লু হাওয়ায় ঝলসে গেছে। জীবন-নদীর গতিধারার নিদারুন স্বেচ্ছাচারিতায় হাপিত্যেশ করেছে, কিন্তু আশা ছাড়েনি। স্বপ্ন দেখতে ভুলেনি৷
উপন্যাসের চরিত্রগুলোর গোড়াপত্তন হয়েছে আশির দশকের তিনজন আধুনিকমনস্ক তরুণ-তরুণীকে ঘিরে। ধীরে ধীরে গল্প লতিয়ে উঠে গেছে অনেক দূরে। গল্পের মূল পটভূমিকায় এসেছে তাদের ছেলেমেয়েরা, আবার সেই ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রিয়-অপ্রিয় মানুষগুলোও অবিচ্ছেদ্যভাবে এসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে এই গল্পে।
এই গল্পে সমাজের চিরাচরিত চিত্রগুলো যেন নিরপেক্ষভাবে দর্পনের মতো উঠে এসেছে ছাপার অক্ষরে। বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা, অনিয়ন্ত্রিত লোভ, আবেগ, সম্পর্কের টানাপোড়েন...সবশেষে শান্তি-স্বস্তির আকুল অন্বেষণ! সবমিলিয়ে দারুণ একটা জার্নি! সবচেয়ে উপভোগ্য বিষয় ছিল লেখকের গল্প বলার ভঙ্গিতে। সত্যি বলতে,সাধারণ সমকালীন একটা উপন্যাসের গল্প যে এতটা উত্তেজনাময় ও আকর্ষণীয় করে লেখা যেতে পারে তা আমার জানা ছিল না৷ আগাগোড়া উপন্যাসেই ছিল ভরপুর সাসপেন্স। প্রত্যেকটা পরিচ্ছদ পড়ার পর পরের পরিচ্ছদ পড়ার জন্য যথেষ্ট রসদ যুগিয়ে রেখেছেন লেখক। এছাড়াও লেখকের লেখনশৈলীতে অলংকার, উপমা,প্রবাদবাক্য,বাগধারা প্রভৃতির যুতসই ব্যবহার ছিল দারুণ উপভোগ্য। ঝরঝরে সাবলীল লেখা,কোথাও জটলা নেই; একটানে অনেকদূর পড়ে ফেলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যায়।
পছন্দের চরিত্রঃ বলে রাখা ভালো, এই উপন্যাসটা কোনো নির্দিষ্ট কোনো নায়কনায়িকা-ভিত্তিক না। গল্পের প্রয়োজনে আসা প্রত্যেকটা চরিত্রই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় প্রতিটা চরিত্রের জীবন ও জীবনদর্শনকে সমান গুরুত্ব দিয়ে চিত্রিত করা হয়েছে। পার্শচরিত্রগুলোও ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী ও প্রয়োজনীয়;যতক্ষণ চিত্রপটে ছিল ততক্ষণই তাদের উপস্থিতির অনিবার্যতা বুঝিয়ে দিয়েছে পাঠককে। উপরন্তু,প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে রবিকে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। রবির শ্বাসরুদ্ধকর অসহায়ত্ব আর তার জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনা হৃদয় কেঁদে উঠার মতোই। রবির মাধ্যমেই লেখক বুঝিয়ে দিয়েছেন, জীবন-সিন্ধুর বুকে যত কালান্তক ঝড়-ঝঞ্ঝা উঠুক;মচকানো যাবে না। ম্রিয়মাণ অন্তরের কোনো এক গোপন কুঠুরিতে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে বলতে হবে‘সেদিনগুলো কোথায় ভেসে যাবে?’
সবশেষে এককথায় বলব, উপন্যাস-প্রিয় পাঠকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য দারুণ একটা উপন্যাস ‘সেদিন গেছে ভেসে’। আপনাদের পড়ার লিস্টে রাখতে পারেন নির্দ্বিধায়।
পুনশ্চঃ রিভিউ আমি লিখি না খুব একটা। অভ্যাস নেই একেবারে। নতুন লেখকদের হাতেগোনা কয়েকটা বইয়ের রিভিউ লিখেছি-মাত্র। এটা চার নম্বর হয়তো। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....