- বই - দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট পিডিএফ ডাউনলোড
- লেখক - অ্যালেক্স মাইকেলিডিসি
- অনুবাদ - সালমান হক
- মুল্য - ৩৮০ টাকা
- বাতিঘর - প্রকাশনী
কাহিনি সংক্ষেপঃ অ্যালিসিয়া বেরেনসন ও গ্যাব্রিয়েল বেরেনসনের সাত বছরের বিবাহিত জীবনের সমাপ্তি ঘটলো মর্মান্তিক ভাবে। পেইন্টার অ্যালিসিয়া আগস্টের এক গরমের রাতে তার পেশায় ফ্যাশন ফটোগ্রাফার প্রিয়তম স্বামীর মুখ বরাবর পাঁচটা গুলি করে তাকে খুন করলো। আর ঠিক সেই রাতের পর থেকেই একদম চুপচাপ হয়ে গেলো মেয়েটা। একটা বাক্যও আর বের হলো না তার মুখ দিয়ে।
ট্রায়ালের পর তাকে পাঠানো হলো মেন্টাল অ্যাসাইলাম গ্রোভে, যার দায়িত্বে আছেন বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডায়োমেডেস। একদম নিশ্চুপ অ্যালিসিয়াকে সেখানে বেশিরভাগ সময়ই কড়া ডোজের ড্রাগ দিয়ে রাখা হতো। কারণ, অতিমাত্রায় ভায়োলেন্ট হয়ে পড়েছিলো মেয়েটা।
সাইকোথেরাপিস্ট থিও ফেবার বরাবরই আগ্রহী ছিলো অ্যালিসিয়া বেরেনসনের এই অদ্ভুত কেসটার প্রতি। ঘটনাচক্রে গ্রোভের সাইকোথেরাপিস্ট পদে যোগদান করে সে এবং ডায়োমেডেসের সাথে কথা বলে অ্যালিসিয়ার থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করে সে। থিও'র একটাই লক্ষ্য ছিলো। আর তা হলো, নিশ্চুপ অ্যালিসিয়াকে তার মৌনব্রত পালন থেকে বের করা।
নানা সাধ্যসাধনা করে থিও যখন অ্যালিসিয়াকে থেরাপি দিচ্ছিলো, তখন অদ্ভুত কিছু ব্যাপার চলে আসে তার সামনে। কেন একজন প্রতিভাবান পেইন্টার তার প্রেমময় স্বামীকে নিষ্ঠুর ভাবে খুন করলো? নেহাতই মানসিক অসুস্থতা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরো বড় কোন কারণ! এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থিওকে খুঁড়তে হলো অ্যালিসিয়ার অতীত। কথা বলতে হলো খুন হয়ে যাওয়া গ্যাব্রিয়েলের বড় ভাই ম্যাক্স বেরেনসন, আর্ট গ্যালারি পরিচালক জিন-ফিলিক্স, অ্যালিসিয়ার ফুফাতো ভাই পল রোস ও বার্বি হেলম্যান নামের এক বাচাল মহিলার সাথেও। এরা প্রত্যেকেই থিওকে একেকটা নতুন গোলকধাঁধার সম্মুখীন করতে লাগলো। রহস্যের ভেতরেই যেন লুকিয়ে আছে আরো অনেক রহস্য। আর এসব রহস্য আরো ঘনীভূত হলো অ্যালিসিয়ার আঁকা আলসেসটিস নামের এক পেইন্টিংকে ঘিরে, যার নাম রাখা হয়েছে অখ্যাত এক গ্রীক ট্রাজেডির নামে।
নিশ্চুপ অ্যালিসিয়ার মরিয়া সাইকোথেরাপিস্ট থিও'র ব্যক্তিগত জীবনই যখন সঙ্কটের মুখে, তখন কাজটা তার জন্য হয়ে পড়লো আরো কঠিন। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়েও নামতে হলো তাকে। সত্যের নাকি অনেক চেহারা। প্রমাণিত হলো আরেকবার।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃপিওর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বলতে যা বোঝায়, 'দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট' আসলে তাই ছিলো। এমন একজন রোগী, যে কি-না একটা খুন করার পর একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে গেছে তার মুখ খোলানোর জন্য একজন সাইকোথেরাপিস্টকে কতোটা কাঠখড় পোড়াতে হয় তা বইটা না পড়লে আপনি বিশ্বাস করবেন না। জেদি স্বভাবের থিও ফেবার আর প্যারাডক্সিকাল অ্যালিসিয়া বেরেনসনের মধ্যেকার মানসিক ক্যাট অ্যান্ড মাউস গেইম বেশ দারুণ ভাবে টেনে নিয়ে গেছে এই উপন্যাসের কাহিনি। আরো ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে, যখন কাহিনিতে উঠে এসেছে অ্যালিসিয়ার ডায়েরির পাতাগুলো। বারবার বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম পড়তে গিয়ে। কাকে রেখে কাকে বিশ্বাস করবো এমন পরিস্থিতিতে আমি একবার না, বারবার পড়েছি 'দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট' পড়তে গিয়ে।
বইটা পড়তে গিয়ে একবারের জন্যও একঘেয়েমি আসেনি৷ বরং পৃষ্ঠা গুলো উল্টে গেছি গভীর আগ্রহের সাথে। ছোট ছোট অধ্যায়ে লেখা এই বিশাল কলেবরের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার আমাকে আটকে রেখেছিলো চুম্বকের মতো। তবে টুইস্টটা হালকা আঁচ করতে পেরেছিলাম কিছুটা আগেই। মিলে যাওয়ায় ভালো লেগেছে। ক্লাইম্যাক্সটাও বেশ লেগেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, 'দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট'-এ শুধুমাত্র একজন রোগীর মনস্তত্ত্বকেই হাইলাইট করা হয়নি। সেই সাথে হাইলাইট করা হয়েছে একজন প্রোফেশনাল সাইকোথেরাপিস্টের মনস্তত্ত্বকেও। জয়রাইড ছিলো আমার জন্য বইটা, নিঃসন্দেহে..
অসাধারণ একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার 'দ্য সাইলেন্ট পেশেন্ট' বইটির পুরোটা জুড়েই পিওর সাইকোলজির বিচরণ।শুধু ভিক্টিমের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়, আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়নি, সেই সাথে সাইকোথেরাপিস্টেরও মনস্তাত্ত্বিক বিষয় গুলোও তুলে আনা হয়েছে,এ জন্যেই বইটি একঘেয়েমি লাগেনি বরং পুরোটাই আকর্ষণীয় লেগেছে।
বইকথা
গল্পটা নামকরা চিত্রশিল্পী অ্যালিসিয়া বেরেনসনের।
নিখুঁত জীবনযাপনে হঠাৎই এক সন্ধ্যেয় তার স্বামী বাসায় ফেরার পর অ্যালিসিয়া স্বামীর মাথায় পাঁচ পাঁচটি গুলি চালায়!!
কেন - সেটা জানার কোন উপায় নেই,কারণ এই খুনের পর থেকেই মুখ খোলেনা অ্যালিসিয়া।যেহেতু তার শিল্প কর্মের মুল্য আকাশ ছোঁয়া সুতরাং মানুষের আগ্রহ থেকে আড়াল করতে তাকে লুকিয়ে রাখা হয় এক গোপন ফরেনসিক ইউনিটে।
গল্পের আরেক চরিত্র ক্রিমিনাল সাইকোথেরাপিস্ট থিও ফেবার।যে এই কেস টি নিয়ে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে এবং সুযোগ টি পায়৷অ্যালিসিয়ার মুখ খোলাতে গিয়ে সে এক সময় অন্য রকম বিপদের মুখোমুখি হয়।
গল্পটা থিওর মাধ্যমেই এগিয়ে গেলেও বলতেই হয় লেখকের গল্প রচনার ভঙ্গি আর অনুবাদ দুটো এতো সহজ-সাবলীল ছিলো যে বইটায় রিডিং স্পিড দারুণ ছিলো। থিওকে আমার কাছে সাইকোথেরাপিস্ট হিসেবে দূর্বল মনের মনে হয়েছে কিন্ত তার চরিত্রটা বেশ ভালো লেগেছে। সাইকোথেরাপিস্ট থিও অ্যালিসিয়াকে নিয়ে কাজ করা শুরু থেকে শেষ অব্দি খুব দারুণ ভাবে এগিয়েছে গল্পটা।
অ্যালিসিয়ার ডায়েরি আর থিও'র ব্যক্তিগত জীবন কাহিনি যখন পড়ছিলাম, তখনই টুইস্ট সম্পর্কে ধারণা চলে আসে বা বুঝে ফেলি। তারপরও লেখক ভিন্ন মাত্রা যোগ করায় জানা থাকার পরও টুইস্ট টা বেশ ভালো লেগেছে।
লেখক গল্পটা যেখান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানেই শেষ করলেন কিন্ত মাঝের জার্নিটা আমার দারুণ লেগেছে,অসাধারণ ছিল পুরো সময়টা।
সাইকোলজি নিয়ে কিছু কথা -
সাইকোথেরাপিস্ট আর সাইকিয়াট্রিস্ট দুটো আলাদা,
সাইকিয়াট্রিস্ট রা রোগীদের মানুসিকতা পরিবর্তন কিভাবে করা যায় সেটা ভুলে বসেন, শুধু অষুধ খাইয়ে শান্ত রাখতে পারলেই তারা খুশী।কিন্ত সাইকোথেরাপিস্ট আলাদা জিনিস।
দারুণ সাবলীল অনুবাদের একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রীলার শেষ করলাম।চাইলে পড়তে পারেন,আর বইয়ের শহর থেকে বইটি কালেক্ট করতেও পারেন।
বইছবি - আফসারাহ্ জাহিন
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....