শীত নামে পাহাড়ে বইটি লেখক আলী রেজার সমকালীন উপন্যাস।
"শীত নামে পাহাড়ে" বইটিতে লেখক "আলী রেজা" সুনিপুণ শব্দের পরিপাট্য ব্যবহারের মাধ্যমে পাহাড়ি জীবনের হাসি - কান্না, আনন্দ বেদনার বহিঃপ্রকাশ করছেন। উপন্যাসের বক্তা ও মূল চরিত্র হচ্ছে শহিদ আহমেদ। শহিদ ঢাকার ছেলে, প্রতি বছর শীতেই সে পাহাড়ে যায়। পাহাড়ে তার পরিচয় হয় নানা রঙের মানুষের সাথে তাদের সাথে ঘটা নানান মজার ও আনন্দ বেদনার মূহুর্তেই লেখক তুলে ধরেছেন।
রহিম মাঝির যে কিনা পরবর্তীতে মুদি দোকান দিয়েছিল । তার একটা কথা শহিদের মনে গেঁথে গিয়েছিল, বনের মায়া কঠিন মায়া , যাকে একবার পেয়ে বসেছে তার আর নিস্তার নেই । সত্যিই বড় বিশেষত এই পার্বত্য বনের মায়া - যেখানে আঁকা - বাকা নদী , সবুজ বন , ছোট বড় পাহাড় আর শ্যামল উপত্যকা এবং তাতে ভোরের কুয়াশা , দুপুরের রোদ ও গোধূলির রঙ্গিন আলো তেমনি এক মায়াজাল সৃষ্টি করে যে , তাতে একবার যে জড়িয়ে যায় সে আর ছাড়িয়ে যেতে পারে না । যেখানেই থাক না কেন , সেই মায়াজালের অদৃশ্য সুতোর আকর্ষণে তাকে ঘুরে ফিরে আবার আসতে হয়। এই মায়ায় পড়ে আর ভালো লাগা থেকেই শহিদ বারবার নারাইছড়ীতে ফিরে আসতো।
নাটকীয় ভাবেই শহীদের দেখা হয় মগ মেয়ে নীলাউয়ের সাথে । তারপর ছবি তোলার বাহানায় নীলাউয়ের সাথে এবং তার পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে । নীলাউয়ের দাদা ছিল কারবারী (সর্দার)। শহীদের মদ খাওয়ার অভ্যাস ছিল না প্রথম বার কারবারীর জোরাজোরি মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পরে এবং সেই রাতই ছিল শহীদের নীলাউদের বাড়িতে প্রথম রাত্রী যাপন । তারপর সে বাংলো ছেড়ে নীলাউদের বাড়িতে উঠে। ধীরে ধীরে তৈরি হয় নীলাউয়ের সাথে শহীদের ভালোবাসার সম্পর্ক।
শহীদ এরই মাঝে ঢাকায় আসে তার বিয়ে নিয়ে বাড়িতে আয়োজন হলে তা কৌশনে ভেঙে দেয় আবার ফিরে যায় নারাইছড়ীতে । সেখানে একজন বাঙালির পাহাড়ে গিয়ে নানান সমস্যায় পড়ার দিকগুলো তুলে ধরেছেন লেখক, যেমন খাওয়ার সমস্যা তাদের সব খাবার শহীদ খেতে পারে না।
নীলাউয়ের সাথে দিন দিন শহীদের মুগ্ধকর স্মৃতির জন্ম হচ্ছিল । দ্বিতীয় বার ঢাকায় ফেরার আগে নীলাউ শহীদকে ক্যাঙ দেখাতে নিয়ে যায়, নীলাউ সেখানে প্রার্থনা করে আর শহীদ ঘুরে ঘুরে ক্যাঙের পরিবেশ দেখে, শান্ত আর নীরব । তারা ক্যাঙ দেখে আর পরদিনই হামলা হয় ক্যাঙে, অজ্ঞাত কেউ ক্যাঙের গেরুয়াধারী রাহাই ( ভিখু ) কে খুন করে । ক্যাঙ মগদের শুধু ধর্মপিঠই নয় ব্যাংকও বটে, ক্যাঙের ধন সম্পদ লোট করে নিয়ে যায়, এই ঘটনার পর শহীদের ঢাকা ফিরার কথা থাকলেও তা আর হয় না । ঘটনার ৪র্থ দিন পুলিশ আসে শহীদকে জিজ্ঞেসবাদ করে, নীলাউকে জিজ্ঞেস করে তারপর তারা চলে যায়। তারপর শহীদ ফিরে আসে ঢাকায় । একবছর পর শীতে শহীদ আবার নারাইছড়ীতে ফিরে যায়। প্রথমে কারবারীর বাড়িতে গেলে কেউ তাকে চিনতে পরে না, কারবারী তাকে চিনতে পেরে আপ্যায়ন করে । মিরীর( নীলাউয়ের বৌদি) কাছে নীলাউয়ের কথা জানতে চাইলে জানা যায় তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে । হতাশ হয়ে শহীদ প্রচুর মদ খাওয়ায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পরে, শোকে আর গভীর কষ্টে সে তখনই কারবারীর বাড়ি ছেড়ে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে ঘাটে চলে যায়। কারবারী তাকে বুঝিয়ে রাখার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। শহীদ ফিরে আসার সময় নীলাউয়ের সাথে তার স্মৃতি জড়িত জায়গাগুলোতে থমকে গিয়েছিল । ফেরার পথেও শহীদের রহিম মাঝির কথাটা মনে পড়ছিল - বনের মায়া কঠিন মায়া , যাকে একবার পেয়ে বসেছে তার আর নিস্তার নেই ।
মুগ্ধতা হয়ে পুরো উপন্যাস পড়লাম, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমার চিন্তা ধারণার প্রতিফলন হবে আমাকে অবাক করে দিয়ে লেখক সম্পূর্ণ নতুন ভাবে লিখছেন আর এটাই তো লেখকের স্বার্থকতা।
পাহাড়ি জীবনের অদ্ভুত মায়ার প্রতিফলনই এই উপন্যাস । পাহাড়ে কন্যা আর সমতলের ছেলের সাথে গড়ে উঠা প্রেম , সমাজ আর নিয়মের কাছে হেরে গিয়ে ব্যর্থ প্রমিক হিসেবে সমতলে ফিরে আসা শহীদের বেদনার বহিঃপ্রকাশই শীত নামে পাহাড়ে উপন্যাস।
বই: শীত নামে পাহাড়ে
লেখক: আলী রেজা
ধরন: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: দূরবীণ
মূল্য: ২৫০ টাকা
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....