The Giver pdf - Louis Loury | বই দ্য গিভার pdf - লোইস লোওরি

  • বই : দ্য গিভার • লোইস লোওরি pdf in english
  • জনরা : সাই-ফাই, ডিস্টোপিয়া
  • last update: 3/7/2022
  • প্রথম প্রকাশ : জুন ২০২২
  • অনুবাদক : ফাহাদ আল আবদুল্লাহ
  • প্রচ্ছদ : জুলিয়ান
  • প্রকাশনা : ঐশ্বর্য প্রকাশ
  • মুদ্রিত মূল্য : ৩২০ টাকা মাত্র
  • পৃষ্ঠা : ১৬০
  • Review Credit: Peal Roy Partha

কেমন হতো─যদি আপনি এক রং-বিহীন দুনিয়ার বাসিন্দা হতেন? যেখানে রঙের ছটায় চোখ রাঙানো যায় না, কোনো গানের সুর বাতাসে ভেসে বেড়ায় না; এমনকি অনুভূতির তুমুল ছোঁয়া হৃদয়ে দোলা দেয় না─এমন এক পরিবেশে আপনি কীভাবে বেঁচে থাকতেন? গৎবাঁধা এক নিয়মে বন্দি আপনি আর আপনার পরিবার। কিন্তু... যাদের আপনি পরিবার হিসেবে মেনে নিচ্ছেন─তারা আদতে কি আপনার পরিবার!?
আসুন সেই সত্যের কিয়দংশ জেনে নেওয়া যাক─
আপনি যার সন্তান; তার কাজ শুধু সন্তান জন্ম দেওয়া। বিলিভ ইট অর নট। আপনি যদি এত অল্পতে বিস্মিত হয়ে থাকেন তাহলে আরও জানুন─জন্মের পর আপনার লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয় অন্য একটি পরিবারকে। আপনার সকাল শুরু এবং রাত শেষ হয় যাদের সাহচার্য পেয়ে─তারা কখনোই আপনার বায়োলজিক্যাল বাবা-মা ছিল না! এমনকি আপনার ছোট্ট বোনটিও; আপনার মায়ের মেয়ে কি-না সেটাও আপনি জানতেন না। আপনার আসল মায়ের কাজ শুধু সন্তান জন্ম দেওয়া; তাও নির্দিষ্ট বছরের মধ্যে পরপর তিনটি। এর পর তার জীবন নিদারুণ কষ্টের। আপনি জানেন না তার পরিণতি কী অথবা তার ঠিকানা কোথায়। এমনকি আপনি জানেনও না যে, আপনার বাবা কে! আপনি যেখানে বসবাস করেন সেটাকে ‘কম্যুনিটি’ বলা হয়। যার অস্তিত্ব ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে। আমি যে গল্প বা কাহিনি বা বইয়ের কথা লিখছি তার পুরোটা ‘ডিস্টোপিয়া’ ঘরনার ছাঁচে গড়া বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি।

ডিস্টোপিয়া কী?

ডিস্টোপিয়া হলো এমন এক কাল্পনিক জায়গা বা জগৎ, যেখানে অস্তিত্বের অবস্থা বিপন্ন। যে পৃথিবীতে সবকিছু ত্রুটিপূর্ণ এবং ভয়াবহ বিপর্যস্ত। যেখানকার মানুষ দুর্দশাগ্রস্থ ভীতিকর এক সমাজে থেকে জীবন অতিবাহিত করে। সেই সমাজ সংকটাপন্ন এবং নিপীড়িত অবস্থার পাশাপাশি অশিষ্টতা, উৎপীড়ন, ব্যাধি দিয়ে পরিপূর্ণ। অমানবিক, নিরানন্দ এবং ভয়ঙ্কর এক হতভাগ্য জীবনে থেকে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যেতে হয় সেখানে।
দ্য গিভার❜ বইটির প্রেক্ষাপট এমন একটি সমাজে গঠিত; যা আজকের সমাজের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন। কিন্তু এই বইয়ে ভবিষ্যতের পৃথিবী অনেক সাজানো-গোছানো। যেখানে প্রত্যেকে সমাজের প্রতিটি নিয়ম মেনে চলে। সেই নিয়মের কিছু অদ্ভুত নিয়ম রয়েছে। আমি ব্যক্ত করব না─নিয়মগুলো কেমন। তবে সেই সমাজে বৈষম্য, অব্যবস্থাপনা, অবিচার এসব অভিশাপ বিদায় নিয়েছে বহু আগে। কিন্তু এত নিখুঁত সমাজ যতটা বাইরে থেকে দেখা যায়; আক্ষরিক অর্থে ততটাই কী সুশৃঙ্খল আর জীবনবান্ধব? না-কি সবকিছু এক মিথ্যে ভেলকি?
আপনাকে আমি এক বালকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি; যার নাম ‘জোনাস’। এই জোনাস শীঘ্রই ১২ বছর বয়সে পদার্পণ করবে। কী হয় ১২ বছর বয়সে পদার্পণ করলে? বিষয়টি বেশ মজার একই সাথে সাজারও! ১২ বছর হলে সেই সমাজ বা কম্যুনিটির বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য একটি নির্দিষ্ট কাজ দেওয়া হয়। যা সে ‘ছেড়ে দেওয়া’-এর আগ পর্যন্ত করে যাবে। এখানে ‘ছেড়ে দেওয়া’ কী তাও বলব না; বই পড়ে বরং জানুন। যাহোক, সেই নির্দিষ্ট কাজটি আপনাকে দিবে কম্যুনিটির এল্ডাররা─যারা পুরো কম্যুনিটির দেখভাল করে।

আপনি ১২ বছরে পদার্পণ করার আগ পর্যন্ত স্কুলে কী শিখেছেন, কোন কাজে ভলান্টিয়ার হয়েছেন বা কোন কাজে আপনার আগ্রহ তুঙ্গে অথবা কোন কাজ আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী সামঞ্জস্য; সেই সবকিছু বিবেচনা করে আপনাকে উক্ত কাজটি দেওয়া হয়। তবে এমন একটি কাজ এই কম্যুনিটিতে আছে যা অত্যন্ত সম্মানের। সেই সম্মানীয় কাজটির নাম─রিসিভার। যে কাজে চিহ্নিত করা হয় এমন একজনকে─যার মধ্যে বিশেষ কিছু রয়েছে। এখন কী সেই বিশেষত্ব; আমি সেটাও এড়িয়ে গেলাম। সব প্রশ্ন বইয়ের জন্য তোলা থাক। আমার কাজ শুধু─আপনার কৌতূহলকে টেনে সামান্য লম্বা করা।

জোনাসের কথায় আসা যাক। যেহেতু সে গল্পের প্রধান চরিত্র। তার সাথে সেই সম্মানীয় কাজটির কী সম্পর্ক তা আপাতত বলছি না। কারণ জোনাস তখনও সেই সমাজের লুকিয়ে থাকা অনেক সত্য; উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি। তবে শীঘ্রই পারে। বইটি পড়ার সময় জোনাসের চোখ দিয়ে যখন পুরো কম্যুনিটির আদ্যোপান্ত জানা ও দেখা শুরু করবেন; তখন হতচকিত হবেন।

জোনাস তার পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে আরাম-আয়েশের এক জীবন অতিবাহিত করলেও ১২ বছরে পা রাখার পর─সব কেমন যেন পরিবর্তন হতে শুরু করে। যে সমাজকে সে চিনত─ তার এক ভিন্ন রূপ যেন জোনাসের চোখে এসে ধরা দেয়। এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে জোনাসের সবকিছু। পরিচিতরা কেন যেন অপরিচিতের মতো ব্যবহার করে। বন্ধুদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। অসহায় জোনাস পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। ঠিক তখনই আবির্ভাব হয় এক বৃদ্ধের! যাকে আপনারা ‘দ্য গিভার’ নামে সম্বোধন করতে পারেন। কোথায় থেকে এলো উনি আর কেন-ই বা আসে; সেই উত্তর ❛দ্য গিভার❜ উপন্যাসে পেয়ে যাবেন। শুধু বলব এই একজনের আগমনে পরিবর্তন হতে শুরু করে এমন কিছু─যা সেই কম্যুনিটি বহির্ভূত। নিয়ম লঙ্ঘনের এক মায়াজালে জোনাসও নিজেকে জড়িয়ে ফেলে।

দ্য গিভার❜ বইয়ে চরিত্রদের সংখ্যা হাতে গোনা হলেও; প্রত্যকটি চরিত্র বিশেষ অর্থ বহন করে। তবে গ্যাব্রিয়েল বা গেইব নামের ছোট্ট শিশুটির কাজকারবার আমাকে এতটাই মুগ্ধ করেছে; যা শব্দের জাদু প্রয়োগ করেও বোঝানো সম্ভব না। তাকে দেওয়া লেখকের মিহি সংলাপ আর দুষ্ট কাজের মিষ্টি আলোড়ন; অন্য রকম এক প্রশান্তি এনে দিয়েছে। জোনাসের অদম্য ইচ্ছা আর ছোট্ট গেইবের সমর্থন─অনবদ্য। আপনি যে এতে মোহগ্রস্ত হবেন; তা হলফ করে বলা যায়।

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ও ডিস্টোপিয়া ঘরনার পাশাপাশি বইটিকে জাদুবাস্তবতার কাতারে রাখা যায়। লিটারারি ফিকশনের জাদুবাস্তবতা বা পরাবাস্তবতা নিয়ে আমরা অনেকে অবগত। তবে ❛দ্য গিভার❜ বইয়ে জাদুবাস্তবতা অনেকটা হিলিং স্পেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মৃত অনুভূতিদের জাগ্রত করার জন্য লেখক যে এমন অভিনব এক কৌশল প্রয়োগ করবেন; ভাবনায় ছিল না। বইটি এমন যে, আপনি যতই পড়বেন বা সামনে এগিয়ে যাবেন ততই আপনাকে চমকিত করবে। অজানা এক শঙ্কা আপনাকে ঘিরে ধরবে। আপনি হয়তো জানবেন, সামনে কী হবে; তাও জানার যে এক নিষিদ্ধ ইচ্ছা সেটা আপনাকে ভীষণ প্রভাবিত করবে। তখন চাইলেও আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না।

লেখকের অসাধারণ লিখনপদ্ধতির তারিফ করতে হয়। তবে এই তারিফের কিছু ক্রেডিট আমি অনুবাদককে দিতে চাই। কারণ তিনি এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন যা মূল বইয়ের ধারা বজায় রেখে পাঠক সত্তায় প্রশান্তি এনে দিয়েছেন। সংলাপেও তিনি একই কাজটা করেছেন যেন মৌলিকের একটা ভাব বজায় থাকে। এক্ষেত্রে অনুবাদককে সফল বলব। তিনি যথাযথ কাজটি করতে পেরেছেন।

দ্য গিভার বইয়ে বানান ভুল রয়েছে ভালোই সাথে বেশ কিছু লাইনের সম্পাদনার গড়মিল। এই যেমন─একই শব্দ পরপর দু’বার ব্যাবহার করা। টাইপিং মিস্টেক তো আছেই। ৯৬ পৃষ্ঠায় কালেভদ্রে বানান লেখা কালে-ভদ্র! তেমনই সেখানে একটা লাইন আছে─

মাঝে মাঝেই দেন?” একদিন জোনাসকেও একদিন এই শাসনকর্তাদের পরামর্শ পরামর্শ দিতে হবে, এমন ভাবতেই ভয়-ভয় করে ওর।
এমন সম্পাদনার ত্রুটি প্রায় লক্ষণীয়। তবে গল্পের আবহে ডুবে থেকে এসব কিছু চাইলে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এ-ছাড়া এই বইয়ের বিশেষত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলাপের পসরা বসানো যায়। নাহয় এমন বই কী আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্কুলগুলোতে অবশ্য পাঠের তকমা পেত? বইটির মূল তত্ত্বে ‘প্রজ্ঞা’ নিয়ে আলাদা আলোচনা আছে যা একজন পাঠকের জন্য বিশেষ কার্যকরী। কারণ এই জ্ঞান পুরোপুরি উপলব্ধির। মস্তিষ্ক ও মননের অনন্য এক যোগসাজশে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঐশ্বর্য প্রকাশনীকে ধন্যবাদ বইটির অনুবাদ করার জন্য। বইটি সকল পাঠকের একবারও হলে পড়া উচিত। তাহলে নিজের অনুভূতিগুলো আবার নতুন করে উপলব্ধি করার শখ বা ইচ্ছা জাগবে।

The Giver In English PDF Download Free

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ