The stoning of Soraya M PDF : Feriodoune Shahebjum

আজ সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লিখিত এক উপন্যাসের কথা বলবো Feriodoune shahebjum এর বেস্ট সেলিং The stoning of Soraya M । এটাকে গল্প বললে ভুল হবে, যেখানে এক সত্যি ইতিহাস ধামাচাপা দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিলো।সব সত্যি যদি মুখফুটে বলা যেতো,সব সত্যি যদি সততার মূল্য পেত,নির্মম সব নির্যাতনের ইতিহাস যদি আর পুনরাবৃত্তি না হতো তাহলে হয়তো পৃথিবীটা অন্যরকম হতো..!!!


যে মলিন চোখ চেয়ে আছে পথ..
সে রক্তাক্ত কপোল অবাদে গুনছে   
মৃত্যুর নিঃশব্দ আহ্বান,
ধুর্ত মানুষের ভীড়ে তুমি এক বিলুপ্ত ম্যামথ..!!!
 
এই যুগ টা 'অ্যাইয়ামে জাহেলিয়া' নয়,কিন্তু তাও আমরা বুকে রেখে হাত বলতে পারবোনা কোন পরিবর্তন কি হয়েছে আদৌ এ যুগের?এ সমাজের?আমরা কোন অন্ধকার কুপে হারিয়ে যাচ্ছি দিনের পর দিন সত্যি জানিনা।যে সমাজে পুরুষ অধিকারের নিষ্ঠুরতার ছায়া ফেলে যাচ্ছে অসহায় নারীর আত্মচিৎকারে।সবকিছুই পরিবর্তন হয় সময়ের পরিবর্তনে কিন্তু মিথ্যা এক কলঙ্কের দাগ নিয়ে যে অসহায় মৃত্যুঘটিত হয় সেই মৃত মানুষের আত্মা কি আর ফিরে আসে???
                                   

উপন্যাসঃ-স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লেখকঃ-Feriodoune shahebjum
মুল্যঃ ৫১২
পৃষ্ঠাঃ ১৪৪
ভাষাঃ ইংরেজি 

      
◾আখ্যানঃ-
এক ফরাসি সাংবাদিক যাওয়ার পথে ইরানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে আটকা পড়েন,পথের মাঝে গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়াতে সে গাড়ি ঠিক করতে নেমে যান,এসময় হঠাৎ করেই তার সামনে বয়স্ক মহিলা এসে দাড়িয়ে যান আর কিছু অবাক করা কথা বলতে চান,কিন্তু সেই গ্রামের প্রধান, মসজিদের ইমাম,আর গন্যমান্য ব্যক্তিগন তখনি মহিলাকে পাগল বলে প্রমানিত করতে থাকে সাংবাদিকদের কাছে।তাদের কিছু সন্দেহ হওয়াতে সাংবাদিককে জেরা করতে থাকে কেন এসেছে, কোথায় এসেছে....

তখন সাংবাদিক জানায় যে গাড়ি ঠিক হয়ে গেলেই সে চলে যাবে,গাড়িটাই মুলত ঠিক করতে সে এই গ্রামে এসেছে। এরপর আমরা দেখতে পাই সাংবাদিক বিশ্রাম নিতে যায়,তখন সেই আধ-পাগলি জাহরা নামক মহিলাটি তাকে কি যেন বলতে চায়,কিন্তু আবারো সাংবাদিক তা শুনতে মানা করে দেয় কিন্তু সেই মহিলা একটা কাগজের টুকরোতে কি যেন লিখে সাংবাদিক কে তার বাড়িতে আহবান জানান,স্রেফ কৌতূহল বশত তখন তা শুনতে গিয়ে জেনে যায় সাংবাদিক এখানে গতকাল ঘটে গেছে নির্মম লোমহর্ষক এক কাহিনী এই গ্রামের সুরাইয়া নামক এক নারীর সাথে।যার পেছনে ছিল সমস্ত গ্রামের লোক,এমন লোমহর্ষক পরিকল্পনা,এমন অকথ্যনির্যাতন যেন ভাবা ও কল্পনার বাইরে।

গ্রামের প্রতিটি মানুষের স্বার্থের টান, প্রতিহিংসা, লোভ, বহুবিবাহ,সব কিছু কেন এভাবেই সুরাইয়ার পিছনে লেগেছিল? কি এমন হয়েছিল?যার জন্য তার জীবনটা পাথরাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল।কতটা নিচে নামতে পারলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এভাবে তার প্রতিশোধ নিতে পারে???সুরাইয়া কি এমন করেছিল??যার কারনে ব্যাবিচারি হিসেবে গন্যকরা হয়েছে??সবটা জানার পর সেই সাংবাদিকের কি হয়েছিল শেষ পর্যন্ত?সে কি শেষ পর্যন্ত সবার সাথে লড়তে পারবে??সারা পৃথিবীর বুকে সত্যিটা উথাপন করতে যখন ১৯৮৬ সালের শাহ এর পতনের পর আয়াতুল্লাহ খোমেনির শরীয়া শাষনব্যবস্থা শুরু হয়েছিল??

◾পাঠপ্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনাঃ-
মাঝে মাঝে কিছু উপন্যাস পড়ার পর শরীরের প্রতিটা লোম শিউরে উঠে।স্টোনিং অফ সুরাইয়া উপন্যাস টা ঠিক তেমনি ছিলো। এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ইরানের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটে যাওয়া নারী অধিকার দমনের নির্মম সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছে ,যা প্রকাশ করেছেন ইরানি বংশোদ্ভূত ফরাসি সাংবাদিক Feriodoune shahebjum। তখন সরকার তা অস্বীকার করে,কিন্তু দেশের জনগন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলন এতটাই উত্তাল হয়েছিলো যে,সরকার জনগণ কে শান্ত করতে তখন নারী অধিকারের অভাব তুলে ধরেন,যখন তাতেও সাধারন জনগন ক্ষান্ত হয়নি তখন সরকার এর জন্য নতুন আইন জারি করে এবং গ্রামের সেই সমস্ত ব্যাক্তিদের আইনের আওতায় আনেন। তখন সাংবাদিক Feriodoune shahebjum এর বেস্ট সেলিং ছিল The stoning of Soraya M নামক বইটি। পরবর্তীতে একই নামে চলচ্চিত্র ও তৈরি হয় যা অসংখ্য পুরস্কার ও অর্জন করে।

নারী সহিংসতা ঠিক কতটা নির্মম হয়,তার উৎকৃষ্ট প্রমান হিসেবে এই উপন্যাস আপনার পড়া উচিত। আমরা এমন সমাজে বিচরণ করি যেখানে একটা পুরুষ চরিত্রহীন হোক,মাতাল হোক একবার তার সাথে বিয়ে হলে তার সাথে আজীবন পার করতে হবে,তার বেহায়াপনা,নারী আসক্তি সব দেখেও না-দেখার ভান করতে হবে কারন আপনি এখন বিবাহিত,কারন আপনার বাচ্চা আছে,সংসার ছাড়া যাবেনা,স্বামীর অন্যায় দাবী মানতে হবে আর না মানলেই আপনি মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছেন,আপনি আর আপনি নন,পুরোই অসতী হয়ে যাবেন,সমাজ প্রতিটি পদে আঙুল দিয়ে তাই দেখিয়ে দিবে,তাতেও সমাজের স্বস্তি নেই যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি মাটিতে না মিশে যাবেন কারন স্বার্থহাসিল পুরুষসমাজ আপনাকে কাফনের কাপড়ে মোড়া না অব্দি ছেড়ে দিবেনা আর এটাই হয়,কারণ এটার নামই সমাজ'।

"Everything changes in the womb of time,but the last vision of death,which is full of pride and stigma Does not change"----কথাটা আগেও বলেছি,,আবারো বললাম কেননা এটাই সত্যি।

◾অনুবাদঃ- কিছু বইয়ের অনুবাদ আমার কাছে মনে হয় এখনো কেনো করা হয়নি,যদি এই উপন্যাসের অনুবাদ করা হতো তবে হয়তো আরো কত বই পড়ুয়া উপন্যাস সম্পর্কে জানতে পারতো,জানতে পারতো সত্যিকারে কতটা অমানুষ ছিলো এই সময়ের মানুষ গুলো। আমি এতটা এক্সপার্ট না ইংরেজি বই পড়তে কিন্তু একই নামের মুভি দেখার পর বইটা পড়তে কম হ্যাপা হয়নি। তারপর ও মনের আশা পূর্ণ হয়েছে। 

 ◾নিজস্ব মতামতঃ-
 এটা ‘অ্যাইয়ামে জাহিলিয়া’ বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ নয়,তবুও আমরা পেরেছি নিজেদের অধিকার আদায় করতে?যেখানে নৃসংশভাবে ধর্ষন হবার পরও এ সমাজ অপরাধীদের বদলে ওই অসহায় মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়া মেয়েটাকেই বারবার দায়ী করে যায়?একটা বার নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবুন তো সোশ্যাল মিডিয়ায় কতশত মানুষ কে আমরা মূহর্তের মাঝে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেই কোনকিছু না জেনেই?নিজেদের স্বার্থহাসিলের নোংরা চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে দাবিয়ে রাখতে কি আমরা সবসময় পারি?এই উপন্যাস তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।যার আড়ালে রয়েছে স্বার্থ হাসিল করা এক নোংরা খেলা,এক বাবার অহমিকা টাই তার সবচেয়ে অস্র হিসেবে ভেবে নেয়া,বড় দাড়ি আর টুপির নিচে সবসময় শুধু ইসলামের দাওয়াতি কাজ থাকেনা,অনেক সময় নোংরা নিকৃষ্ট ভাবনাও বিরাজ করে। সবমিলিয়ে উপন্যাসটা অবশ্যই পড়া উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ