উলুগ বেগ - এশিয়ার এক জন ভুলে যাওয়া গণিত ও জ‍্যোতির্বিদ | Ulugh Beg Astronomer


১৩৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন উলুগ বেগ। কিন্তু আপনি কি জানেন তিনি কে? আর কেনই বা তিনি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন? চলুন, সংক্ষেপে সেটাই জানানো যাক।

শুরুতেই বলে রাখা ভাল, উলুগ বেগ কিন্তু তার মূল নাম না, বরং প্রশংসাসূচক নাম, যার অর্থ 'মহান শাসক'। কিন্তু ইতিহাসে তিনি উলুগ বেগ নামেই বেশি পরিচিত। বিখ্যাত এই বিজ্ঞানীর মূল নাম মির্জা মুহাম্মাদ ত্বরাক্বাই বিন শাহ রুখ।

শাহ রুখ ছিলেন তৈমুর লংয়ের চার পুত্রসন্তানের মাঝে সর্বকনিষ্ঠ। ফলে উলুগ বেগ আসলে তৈমুর লংয়েরই নাতি। তবে দাদার পরিচয়ে না, বরং নিজের কর্মপরিচয়েই ইতিহাসের বুকে স্থান করে নিয়েছেন মির্জা মুহাম্মাদ ত্বরাক্বাই।

১৪১৭-২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে উলুগ বেগের তত্ত্বাবধানে সমরকন্দে তৈরি করা হয় একটি মাদ্রাসা, যেখানে তার আহবানে জড়ো হয়েছিলেন বিশ্বের নানা প্রান্তের জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদগণ।

১৪২৮ সালে তিনি 'উলুগ বেগ মানমন্দির' নির্মাণ করেন, অনেক বিজ্ঞানীই যেটাকে সেই সময়কার মুসলিম বিশ্বের সেরা মানমন্দির বলে মেনে নেন। মধ্য এশিয়ার মাঝেও তখন সর্ববৃহৎ মানমন্দির ছিল এটি। সেই আমলে ৬০ জনের মতো জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন উলুগ বেগ, যাদের ভেতর ছিলেন গিয়াস আল দীন জামশিদ আল কাশি (পারস্যের জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ), মুইন আল দীন আল কাশি, সালাহ আল দীন মুসা পাশা (তুর্কি জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ; তিনি কাজী জাদা আল রুমি নামেও পরিচিত), আল কুশজি (তিমুরীয় পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ) প্রমুখ।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ২১ মিটার উঁচু এক পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে সিলিন্ডার আকৃতির এই মানমন্দির। ৫০ মিটার ব্যাসের এই স্থাপনার নিজের উচ্চতা ৩৫ মিটার। তিনতলা ভবনের নিচতলায় থাকতেন এর কর্মী ও গবেষকগণ। আকাশ পর্যবেক্ষণ চলত দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে। ছাদ বানানো হয়েছিল সমতল করে, যেন বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন করে সেখান থেকেও গবেষণা চালানো যায়।
এখানে গবেষণা চালিয়েই ১০১৮টি নক্ষত্রের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন উলুগ বেগ। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হতে থাকা টলেমির বিভিন্ন গবেষণাকর্ম ও ডাটাতেও তিনি বেশ কিছু ভুল খুঁজে বের করেন।গণিতে উলুগ বেগ অবদান রেখেছেন ত্রিকোণমিতি ও স্ফেরিক্যাল জিওমেট্রিতে। ত্রিকোণমিতিতে সাইন ও ট্যানজেন্টের যে মান তিনি দিয়েছেন, তা দশমিকের পরবর্তী আট ঘর পর্যন্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যই বলতে হবে উলুগ বেগের। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নিজের বড় ছেলের পাঠানো গুপ্তঘাতকদের হাতে ১৪৪৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এরপর অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার প্রতিষ্ঠিত মানমন্দিরের ভবিষ্যত। ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয় এখানে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজ্ঞানীকে বিতাড়িতও করা হয়। রাশিয়ান প্রত্নতত্ত্ববিদ ভাসিলি ভায়াৎকিন ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে এর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান।

উলুগ বেগের সম্মানার্থে জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান হাইনরিখ ফন মাদলার ১৮৩০ সালে তার প্রস্তুতকৃত চাঁদের মানচিত্রে সেখানকার একটি জ্বালামুখের নাম দিয়েছেন 'উলুগ বেগ জ্বালামুখ' নামে। আবার ১৯৭৭ সালে আবিষ্কৃত ২১ কিলোমিটার ব্যাসের একটি অ্যাস্টেরয়েড বেল্টের নামও রাখা হয়েছে তার নামেই- ২৪৩৯ উলুগবেক।

লিখেছেন: মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ