পাঠকপ্রিয় গোয়েন্দা ফেলুদা যে কারণে আপনারও পড়া উচিত!

'আর সাতাত্তর পা।'
'আর যদি না হয়?'
'হবেই ফেলুদা। আমি সেবার গুনেছিলাম।'
'নাহলে গাট্টা তো?'


'হ্যাঁ- কিন্তু বেশি জোরে না। জোরে মারলে মাথার ঘিলু এদিক ওদিক হয়ে যায়'
এই ছিল ফেলুদার প্রথম গল্পে তোপসের শিশুসুলভ কথাবার্তা! দার্জিলিং এ বেড়াতে গিয়ে গোয়েন্দাগিরি করা দিয়ে বাংলা সাহিত্যের অমূল্য রত্ন ফেলুদা সিরিজের জন্ম। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা সিরিজের একটি এই ফেলুদা। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। বিদেশিদের কাছেও প্রশংসার পাত্র। কখনো কখনো বিশ্বসেরা গোয়েন্দাদের তালিকায়ও স্থান পায় সত্যজিৎ রায়ের এই ফেলুদা।
থ্রি ফোল্ড করে হাতা গোটানো পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট, দুআঙুলের ফাঁকে আলতো করে ধরে রাখা চারমিনার, ছিপছিপে নাক-মুখ-চেহারা সবই ছিল বাঙালির মধ্যবিত্তের নাগালে। কিন্তু তারই সঙ্গে সত্যজিৎ রায় যোগ করেছেন মারাত্মক মেধা, স্মার্টনেস আর ফ্যাশন।
 
'ফেলুর মত মাস্টার আছে কি সেই স্কুলে?' তোপসের বাবা তথা ফেলুদার চাচার এই বিখ্যাত উক্তি যথার্থই বটে!
 
এতো গেল ফেলুদার কথা। লালু, ফেলু, তপু! ইয়ে মানে লালমোহনবাবু, ফেলুদা আর তপেশ- এই থ্রি মাস্কেটিয়ার্স যেন এই সিরিজের প্রাণ! তপেশ অথবা তোপসে, ফেলু মিত্তিরের এই চাচাতো ভাইটি প্রথম থেকেই তার সাথে চুম্বকের মত লেগে থেকে তার গোয়েন্দা কাহিনী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করে গিয়েছে। সত্যজিৎ রায় 'সোনার কেল্লা' উপন্যাসে লালমোহন গাংগুলি তথা জটায়ুকে আনলেন কমিক ক্যারেক্টার হিসেবে, যার হাস্যকাহিনির কারণে ফেলুদা সিরিজ হয়ে গেল কিংবদন্তী! তপেশ সাবলীল ভাষায় লিখে চলে চমৎকার সব বেড়ানোর গল্প, যেখানে গজিয়ে ওঠে দারুণ সব রহস্য, মোলাকাত হয় দারুণ সব ভিলেনদের সাথে। ফেলু মিত্তির ক্ষুরধার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দিয়ে ধরিয়ে দেয় আসামীদের। এই ট্রায়ো মিলে মজা করতে করতে ভেদ করে ফেলে দুর্বোধ্য সব রহস্যের জাল, জিতে যায় মামলাগুলো।
 
ফেলুদা সিরিজের প্রতিটি উপন্যাস ও গল্পই এনে দেয় ভিন্ন ভিন্ন আনন্দ, ভিন্ন ভিন্ন থ্রিলিং স্বাদ৷ সঙ্গে ফাউতে শেখা হয়ে যায় ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভূগোল থেকে সংখ্যাতত্ত্ব, প্যারাসাইকলজি অবধি।

১৯৬৫ সালে 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি' শীর্ষক গল্পটি সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে চারদিকে সাড়া পড়ে যায়। এরপর 'বাদশাহী আংটি' উপন্যাসের মাধ্যমে খ্যাতির জগতে ফেলুদার প্রবেশ। 'সোনার কেল্লা', 'জয় বাবা ফেলুনাথ', 'কৈলাসে কেলেঙ্কারি', 'গোরস্থানে সাবধান', 'রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য', 'বাক্স রহস্য', 'হত্যাপুরী', 'যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে', 'নয়ন রহস্য' এগুলো কতগুলো উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত উপন্যাস যেগুলো আপনিও পড়ে দেখতে পারেন! অবশ্যই ভালো লাগবে আশা করি!
লেখকঃ আয়শা সিনীন খান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ