বিয়ন্ড ডেমোক্রেসি : কারেল বেকম্যান | Beyond Democracy

  • বই : বিয়ন্ড ডেমোক্রেসি
  • লেখক : কারেল বেকম্যান
  • প্রকাশনী : ফাউন্টেন পাবলিকেশন্স
  • বিষয় : দেশীয় রাজনীতি
  • অনুবাদক : রাকিবুল হাসান
  • পৃষ্ঠা : 120, কভার : হার্ড কভার
  • ভাষা : বাংলা

বিয়ন্ড ডেমোক্রেসি বইটি তিনভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে আমরা ‘সংসদীয় গণতান্ত্রিক খোদার ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করেছি। আর ১০টা ধর্মের মতোই গণতন্ত্রের কিছু নিজস্ব ‘বিশ্বাস’ রয়েছে। রয়েছে কিছু অন্ধবিশ্বাস; যা সবাই বিনা প্রশ্নে, বিনা দ্বিধায় অমোঘ সত্য বলে মেনে নিয়েছে। গণতন্ত্রের ১৩টি মিথ বা কুসংস্কারের আদলে আমরা তা পেশ করব।

দ্বিতীয় ভাগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বাস্তব, ব্যাবহারিক ও প্রায়োগিক কুফল নিয়ে আলোচনা করব। আমরা দেখিয়ে দেবো কেন গণতন্ত্রের অনিবার্য গন্তব্য— স্থবিরতা, অদক্ষতা এবং অবিচার। তৃতীয় ধাপে আলোচনা করব গণতন্ত্রের বিকল্প নিয়ে। স্বায়ত্তশাসন, বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকার ও ভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে নতুন সিস্টেম দাঁড় করাব।

আজ থেকে মাত্র ১৫০ বছর পূর্বে নানা কারণে অধিকাংশ পশ্চিমা রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের জন্ম হয়। তখন যে কারণেই জন্ম হয়ে থাকুক না কেন, এখনো সংসদীয় গণতন্ত্রের ঘানি টানার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি এখন আর কাজ করছে না। নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

মানবসভ্যতার সূচনাকাল থেকেই পৃথিবীর মানুষ দুইভাগে বিভক্ত—শাসক ও শাসিত। ক্ষুদ্র একদল মানুষ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে শাসন করেছে সবসময়। এটিই পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম হিসেবে টিকে আছে। অবশ্য কালের স্রোতধারায়, ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ, পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে শাসনব্যবস্থার নতুন নতুন রূপ হাজির হয়েছে পৃথিবীতে। ট্রাডিশনাল ইসলামি শাসনধারার বাইরে রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতো নানা ঘাট পেড়িয়ে গণতন্ত্রে এসে থেমেছে এই সিলসিলা। কিন্তু তারপর? এখানেই কি শেষ? পশ্চিমা গণতন্ত্রের ব্যাপারে ফ্রান্সিস ফুকুয়ামার সেই বিখ্যাত উক্তিটাই কি টিকে যাবে?

বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা বর্তমান সময়ের বড় সমস্যাগুলোর অন্যতম। ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংকট, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে গবেষকদের পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ-সহ এ বিষয়ক খবরাখবর সংবাদমাধ্যমের চটকদার শিরোনাম হয় আজকাল। কিন্তু গতানুগতিক চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে বৃত্তের বাইরে চিন্তা করতে পারা ও কথা বলতে পারা মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম এই ময়দানে।

চিন্তার এই সংকট পৃথিবীজুড়েই। এই জায়গায় এই বইটির লেখকদ্বয় ব্যতিক্রম। গণতন্ত্রের গতানুগতিক সমালোচনার বাইরে সরাসরি এই ব্যবস্থার ওপরই প্রশ্ন তুলেছেন তারা। গণতন্ত্রের তেরোটি মিথের শিরোনামে বলা যায় অসাধারণভাবে কাজটি করেছেন লেখকরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার এমন সময়ে এই বইটি যদি প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ, তরুণ রাজনীতি চিন্তক ও সাধারণ পাঠকদের চিন্তার জগতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে, তাহলেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে।

একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, বইয়ের লেখকদ্বয় প্রচণ্ডভাবে লিবার্টারিয়ান চিন্তায় প্রভাবিত। আমাদের জায়গা থেকে এই চিন্তাটাও মোটাদাগে গলদ চিন্তা। ফলে লিবার্টারিয়ান চিন্তার ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে মূল বইয়ের শেষে নিজ থেকে একটা অধ্যায় যুক্ত করে যারপরনাই প্রশংসাযোগ্য কাজ করেছেন অনুবাদক। এ ছাড়া বাংলাদেশের পাঠকদের দিকে লক্ষ্য করে মূল বইয়ের কিছু জায়গায় সামান্য সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে। অনুবাদক হিসেবে রাকিবুল হাসানের কাজ বরাবরই চমৎকার। তার জুড়ি তিনি নিজেই। তার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। এ ছাড়াও বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রিয় কাজিন মহসিনকে, আমাদের অনুরোধে সুদূর আমেরিকা থেকে মূল ইংরেজি বইটি কিনে পাঠিয়েছিলেন তিনি।

পরিশেষে পাঠকদের বলতে চাই, বইটি যদি ভালো লাগে, তাহলে অফলাইনে প্রিয়জনদের মাঝে এবং অনলাইনে বন্ধুদের মাঝে আপনার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে ভুলবেন না। বইটিকে আলোর মুখ দেখাতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ও নানা সূত্রে যারা এর সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং প্রিয় পাঠক, আপনার জন্য রইল অগ্রিম শুভেচ্ছা।

প্রকাশনার পক্ষে আবদুর রহমান আদ-দাখিল ডেমরা, ঢাকা।

রাকিবুল হাসান 'বিয়ন্ড ডেমোক্রেসি' বইটি সম্পর্কে বলেন,
The best argument against democracy is a five-minute talk with the average voter.-Winston Churchill

পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে বর্তমানে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে—আস্থার সংকট। মার্কিন কোম্পানি গ্যালাপ ২০১২ সালের নভেম্বরে সে দেশের নাগরিকদের মাঝে একটা জরিপ করেছিল, সামাজিক পেশাদার শ্রেণিগুলোর বিশ্বস্ততা নিয়ে। ৫৪ শতাংশ মানুষের মতে কংগ্রেস সদস্যদের বিশ্বস্ততা ভেরি লো বা ‘খুবই কম'। অবিশ্বস্ততায় কংগ্রেস সদস্যদের নিচে শুধু একটা শ্রেণি ছিল— গাড়ির সেলসম্যান! তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের কথা বাদই দিলাম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য-সহ ইউরোপের সমস্ত দেশে সরকার আসে, সরকার যায়। এটি কীসের নিদর্শন? রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর জনগণের আস্থার নিদর্শন নাকি অনাস্থা?

এখানে খুব জনপ্রিয় একটি উত্তর হচ্ছে—এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সংকট, গণতন্ত্রের অপব্যবহারের সংকট। এই বইতে সেই উত্তর তালাশের চেষ্টা করা হয়েছে যে আদতে এটি কি গণতন্ত্রের অপব্যবহারের সংকট নাকি খোদ গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত সংকট। মনে রাখতে হবে—গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল দুটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এক, শাসনের বৈধতা। দুই, শাসনের বিশ্বস্ততা। কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশে এই দুই উদ্দেশ্য একীভূত হয়নি। যদি হতো—সেই দল, সেই সরকার চিরকাল ক্ষমতায় থাকত।

শাসনের বৈধতা একটি প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক বিষয়। ব্যালটে কাগজ ফেলে আমরা সেই বৈধতা প্রদান করি। কিন্তু শাসকের বিশ্বস্ততা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম নয়। গণতন্ত্রে বিশ্বস্ততা নিশ্চিতকরণের কোনো উপায় বাতলানো হয়নি। বারংবার সরকার পরিবর্তন সেই অবিশ্বস্ততার প্রতীক।

প্রসঙ্গত বলি, ইসলামে শাসনের বৈধতা ও বিশ্বস্ততা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। এবং ‘ব্যালট থেকে উৎসারিত' বৈধতার চেয়ে বিশ্বস্ততার মূল্য বেশি। এ নিয়ে পশ্চিম ও পশ্চিম প্রভাবিত চিন্তকদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। ওদিকে ব্যালটে ফেলা কাগজের সংখ্যাবলে সমাজের সবচেয়ে নীচু ও নীতিহীন শ্রেণিগুলো যে ক্ষমতার উচ্চাসন দখল করছে, সে নিয়ে অবশ্য উচ্চবাচ্য নেই। এটি গণতন্ত্রের একটি মৌলিক সংকট। নীতিবান শাসক ছাড়া সুশাসন কীভাবে সম্ভব?

আমাদের মতো খেটে খাওয়া, নিম্নবিত্ত দেশের মানুষ গণতন্ত্রের সমালোচনা করলে সেটা প্রত্যাখ্যাত হবে—স্বাভাবিক। প্রভুভক্তি বলে একটা জিনিস এখনো কলোনাইজড পিপলদের মগজে রয়ে গেছে। তাই সাদা দেশ, প্রভু দেশের চিন্তকদের ভিন্নচিন্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

রাকিবুল হাসান,
তাকমিল; মাদরাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর শিক্ষার্থী; আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 13/6/2022 খ্রি.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ