গয়নার বাক্স PDF : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় | Goynar Baxo

At A Glance Of Goynar Baxo

  • Title : গয়নার বাক্স পিডিএফ + রিভিউ 
  • Author : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
  • Publisher : আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
  • ISBN : 9788172151867
  • Edition : 1st Edition, 1993
  • Number of Pages : 87
  • Country : ভারত
  • Language : বাংলা
  • রেটিংঃ ৪/৫


অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে সোমলতা। সে বিয়ে হয়ে আসে এক জমিদার পরিবারে। তবে নামে জমিদার অবশ্য। বংশের ধন দৌলত সব শুন্যের কোটায়। সেজন্যে যা না আছে তারচেয়ে দেখাতে ব্যস্ত বেশী৷ 

সোমলতার স্বামীটির নাম চকোর মিত্র। তিনি বিএ পাশ কিন্তু অবসরে তবলা বাজানো ছাড়া বিশেষ কোনো কাজ করেন না। বংশপরম্পরায় বাড়ির পুরুষেরা পেয়ে আসছেন "কুঁড়েমি" সাথে কিঞ্চিৎ কুঅভ্যাস ও আছে বইকি। কারণ এপরিবারের কর্তারা মনে করেন পূর্বপুরুষের জমি-জমা, সোনা-দানা বেচেই রোজগারের জোগাড় হবে। কিন্তু কথায় আছে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও ফুরোয়। এই নিয়ে সোমলতার দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

সোমলতার পিসিশ্বাশুড়ি মহা জাঁদরেল মহিলা ছিলেন। পেল্লায় জমিদার বাড়ির দোতলায় বড় দুটো ঘর জুড়ে তিনি থাকতেন। একে বাল্যবিধবা তার উপর কাওকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করতেন না। পিসিমা বৈবাহিক এবং পৈতৃকসুত্রে ১০০ ভরি গয়না পেয়েছিলেন। এই গয়নার বাক্স তিনি যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখতেন। এই বাক্স ঘটনাচক্রে চলে আসে সোমলতার হাতে কিন্তু কি করে? 

এই বইটির পরিসর ছোট্ট হলেও এর শিক্ষা অতি বিস্তারিত। লেখক প্রথমে তৎকালিন জমিদার বংশের পুরুষদের গোড়ামি এবং কুড়েমি দেখিয়েছেন। সাধারণত এমন অবস্থায় বাড়ির বউ মেয়েদের সব মেনে মুখ বুঝে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু এখানেই পেয়েছি ব্যতিক্রম। বাড়ির বউ সব সংশয় ঝেড়ে স্বামীকে শোধরানোর চেষ্টা শুরু করে যাতে পরিবারটির অর্থনৈতিক অবস্থা আবার আগের অবস্থায় ফিরতে পারে। চকোর মিত্রও নিজের সমস্ত ভুল শুধরে নেয়। 

এরপরে দেখানো হয় ৩য় প্রজন্ম, সোমলতার মেয়ে, বসন। অনেকেই বলেন বইটির এই অংশটি খাপছাড়া কিংবা অনেকে বুঝতে পারেন নি। তবে ধারণা সেটি ভুল৷ প্রথম প্রজন্ম সোমলতার পিসিশ্বাশুড়ি যিনি মরে ভুত হয়ে সোমলতার ঘাড়ে চেপেছিলেন তিনি আক্ষরিকঅর্থে সারাজীবনে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাননি। নিয়মের বেড়াজালে তিনি নিজের শৈশব, কৈশোর, যৈবন, বার্ধক্য চারকালেই আবব্ধ ছিলেন। এখানে লেখক বিধবাদের দুঃখ দুর্দশা দেখিয়েছেন।  ২য় প্রজন্ম সোমলতা, যে মোমের মতো নরম কিন্তু ইস্পাতের মতো কঠিন। সে নিজের ইচ্ছাশক্তি, বুদ্ধি, পরিশ্রম এবং ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু অর্জন করে নিয়েছিলো। একই সাথে বড় সমর্থক হিসেবে পেয়েছিলো নিজের স্বামীকে এবং পরবর্তীতে পুরো পরিবারকেই। ৩য় প্রজন্ম বসন, সে ছিলো সম্পূর্ণ স্বাধীন। পরিবার তাকে সমস্ত স্বাধীনতা, ভালোবাসা দিয়েছিলো একঅর্থে না চাইতেই সব পেয়েছিলো সে। বসন ছিলো পুরো মিত্র পরিবারের চোখের মনি। কুসংস্কারাচ্ছন্ন আবহাওয়া থেকে পুরো পরিবারটি একটি আধুনিক রুচিবোধ সম্পন্ন পরিবারে রুপান্তরিত হয়েছিলো এভাবেই। 

আমি বলবো লেখক হাস্যরস এবং রুপক দিয়ে সুক্ষ্ণ সুক্ষ্ম ব্যাপার গুলো খুব সুন্দর তুলে ধরেছেন অতি স্বল্প পরিসরে। যদিও রহস্যের গন্ধ অল্পই ছিলো। এই বইটা পড়ার খুব শখ ছিলো এবং পড়ে আরাম পেয়েছি। যারা খুব গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন তারা বইটি পড়ে আমার মতোই আনন্দ পাবেন আশাকরি। 

সময়টা ৪৭-এ দেশ বিভাগের পরপর। অষ্টাদশবর্ষীয়া গরীব ঘরের মেয়ে সোমলতা। তার বিয়ে হয় কোলকাতার এক পড়তি জমিদার বাড়িতে। এদের দিন চলে জমি আর ঘরের সোনাদানা বেচে। যতোটা না আছে তার চেয়ে বেশি ঠাঁটবাঁট দেখাতে ব্যস্ত। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের কুঁড়েমি নামক রোগটা মজ্জাগত। তারা কেবল জমি-সোনাদানা বেচে খেতে পারে। বাইরে নেমে চাকরি-বাকরি কিংবা ব্যাবসা করা এদের জন্য লজ্জার বিষয়!

 এইরকম অবস্থায় মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে সোমলতার। কষ্টেসৃষ্টে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছে বলে দুঃখ কষ্ট কি জিনিস জানা আছে বেশ ভালো ভাবেই। তার শ্বাশুড়ি খুবই ভালো মানুষ। প্রথমদিনই তাকে বলে দেয় যে, স্বামীকে শোধরানোর দ্বায়িত্ব তার। এবং এর জন্য সে যা খুশি করতে পারে।

সোমলতার জীবনে শুরু হয় তার অক্লান্ত পরিশ্রম স্বামীকে স্বাবলম্বী করে তুলবার। সংসারের মানুষগুলোকে একটু ভালো রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে। তার স্বামী চকোর মিত্রচৌধুরী-ও বেশ লোক। লতা ঠিকই তাকে এক শাড়ির ব্যবসায় লাগিয়ে দেয়।এবং প্রথমে একটু ধাক্কা খেলেও আস্তে আস্তে বেশ লাভ হতে থাকে ওদের।

সোমলতার এক পিসি শ্বাশুড়ি, মহা জাঁহাবাজ মহিলা। কাউকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে না, খুব ছোটকালে বিয়ে, আর তার প্রায় সাথে সাথেই বিধবা।থাকেন বাড়ির তিনতলার তিনটি ঘর নিয়ে।বলা যায় তিনিই দণ্ডমুণ্ড এর কর্ত্রী। 

পিসি মারা যান হঠাৎই! ঘটনাক্রমে পিসির এই এক শ' ভরি সোনার গহনা হাতে চলে আসে সোমলতার। সেই গয়নার বাক্স, নিরীহ সোমলতা আর মরে যেয়ে ভূত হয়ে যাওয়া পিসশাশুড়িকে নিয়েই এগিয়ে যায় কাহিনি৷ পিসি বেঁচে থাকবার সময় যেমন দজ্জাল টাইপ ছিল, মরে ভূত হবার পরও কথার ঝাঁজ বিন্দুমাত্র কমেনি। সোমলতাকে বকাবকির করার মাধ্যমে বুঝতে পারা যায় সেকালে অল্পবয়সী বিধবাদের দুঃখ, কষ্ট, তাদের দীর্ঘশ্বাস মাখা হাহাকারটুকু৷ 

এরপরই আসে বসন। সোমলতার মেয়ে। হুবহু পিসির চেহারা তার। মুক্তমনা আর নব প্রজন্মের চিন্তাধারা নিয়ে বেড়ে উঠছে সে। সবার ভালোবাসার মাঝেও কি একটু দুঃখ নেই তার?

About Shirshendu Mukhopadhyay

Shirshendu Mukhopadhyay শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের টালমাটাল সময়ে পরিবারসমেত কলকাতা পাড়ি জমান। বাবার চাকরির সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শৈশব কেটেছে তার। কোচবিহার বোর্ডিং স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন তিনি। মাধ্যমিক পাস করেন কোচবিহার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। পরে কলকাতা কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। 

শীর্ষেন্দু তার পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মাধ্যমে। দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন কিছুদিন। বর্তমানে সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এর সহকারী সম্পাদক পদে নিয়োজিত আছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই ভীষণ বইপড়ুয়া ছিলেন। হাতের কাছে যা পেতেন তা-ই পড়তেন। খুব ছোটবেলাতেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মানিক বন্দোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দোপাধ্যায় এর মতো লেখকদের রচনাবলী পড়ে শেষ করেছেন। 

এই পড়ার অভ্যাসই তার লেখক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। ১৯৫৯ সালে দেশ পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ‘জলতরঙ্গ’ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশ পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’। এরপর থেকেই নিয়মিত লিখতে থাকেন তিনি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই এর সংখ্যা দু’শতাধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস পার্থিব, দূরবীন, মানবজমিন, গয়নার বাক্স, যাও পাখি, পারাপার ইত্যাদি। 

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর রহস্য সমগ্র রহস্যপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রায় ৪০ এর অধিক রহস্য গল্প প্রকাশিত হয়েছে ‘অদ্ভুতুরে সিরিজ’ নামকরণে। মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি, ভুতুড়ে ঘড়ি, হেতমগড়ের গুপ্তধন, নন্দীবাড়ির শাঁখ, ছায়াময় ইত্যাদি এই সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু ছোটগল্প রচনা করেছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই সমূহ দুই বাংলায় পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে সমানতালে। 

এছাড়াও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই সমগ্র অবলম্বনে বিভিন্ন সময় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তার উপন্যাস ‘যাও পাখি’ এবং ‘মানবজমিন’ নিয়ে বাংলাদেশেও ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হয়েছে। তার সৃষ্ট চরিত্র শাবর দাশগুপ্ত এবং ধ্রুব পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা উপন্যাস ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’র জন্য ১৯৮৫ সালে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ পান। ১৯৭৩ এবং ১৯৯০ সালে পেয়েছেন ‘আনন্দ পুরস্কার'।

১৯৮৮ সালে ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্য অর্জন করেন ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’। এছাড়াও, ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ লাভ করেন তিনি।

গয়নার বাক্স পিডিএফ : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় | Goynar Baxo PDF Download Link   (please use vpn for unlimited download pdf books)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ