'দ্য লেজেন্ড অব টেকে টেকে'ও এরকমই গা হিম করা এক লোককাহিনী যা জাপানিরা হাড়েহাড়ে বিশ্বাস করে।
জাপানিদের বিশ্বাস কাউকে হেনস্তা (অ্যাবিউজ) করলে এই লেজেন্ড দেখা দেয় এবং হেনস্তাকারীকে বিশাল একটা সাইদ(scythe- হাতলওয়ালা বড়ো কাস্তে) দিয়ে কোমর থেকে কেটে দেহকে দুই ভাগ করে দেয়।
এসব একধরনের গল্পের মতো যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলে আসছে জাপানিদের কাছে। এসব গল্প বড়োরা ছোটোদের কাছে, কিশোর কিশোরীদের কাছে বলে এবং কী করা যাবে আর কী করা যাবে না তা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়। এসব গল্প একধরনের মোরালে চলে আসে যে, "বাজে ব্যবহার কোরো না নয়তো তোমাকে খেয়ে ফেলবে।"
এর কারণও খুবই সহজ বিষয়। জাপানিরা চায় যাতে শিশুরা এসবকে বিশ্বাস করে এবং ভয় পেয়ে স্বাভাবিক আচরণ করে।
জাপানের অধিকাংশ শিশুরাই অত্যন্ত সুলভ আচরণ করে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে এই নীতিগল্প বা ঈশপের গল্প। অর্থাৎ জাপানিরা তাদের শিশু কিশোরদেরকে ভয় দিয়ে ভালো আচরণ করার উৎসাহ দেন। এতে যে উপকার হয় না তেমন না। বেশ ভালো রকমের উপকার হয়।
এই টেকে টেকে নিয়ে দুটো ঘটনা রয়েছে। অর্থাৎ দুটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই লোককাহিনী।
যার প্রথমটা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর আর দ্বিতীয়টা নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নেই তবে শিনকানসেন ট্রেইন কাহিনির সাথে জড়িত দেখে অনেকে মনে করেন ১৯৫৭ সালের আশেপাশে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
জাপানিদের বিশ্বাস অনুযায়ী একধরনের আত্মার পদ হচ্ছে অনরিও(Onryo)। যারা কোনোরকম অন্যায় দেখলে দল বেঁধে নেমে আসে পৃথিবীতে এবং অন্যায়কারীকে শাস্তি দেয়। এছাড়াও আরও কথিত আছে যে এরা প্রায়শই নারী আত্মা হয়ে থাকে। এদের প্রতি যে অবিচার হয়েছে তার প্রতিশোধ নিতেই নরক থেকে নেমে আসে পৃথিবীতে এবং খুঁজতে থাকে তার হত্যাকারীদের।
টেকে টেকেও এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে। তার কারণ যে দুটো গল্প মানুষের মুখে রচিত হয়েছে তা অনেকটাই নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
প্রথম গল্পটির নারী কাশিমা রেইকো। যার শেষ পরিণতি এতটাই ভয়ানক ছিল যে তার বর্ণনা দিতে গেলেও হাত কেঁপে ওঠে। ধারণা করা হয় ঘটনাটি ঘটেছিল যুদ্ধের কিছু পরে জাপানে একজন আমেরিকান জিআই(GI) অথবা তাদের গ্রুপ কাশিমাকে প্রথমে লাঞ্চিত করে তারপর একটা রেইলওয়ে ট্রাকে ফেলে দেয়। ট্রাক লাইনে পড়ার পরে অনেক জায়গায় গুরুতর ভাবে আহত হলেও কাশিমা বেঁচে ছিল। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে একটা ট্রেন তার দেহের ওপর দিয়ে চলে যায়। পুরো দুইভাগ হয়ে যায় দেহটা। কোমর থেকে পা পর্যন্ত এক ভাগ এবং কোমরের উপর পর্যন্ত এক ভাগ। হোক্কাইডো শহরের ঠাণ্ডায় কোনো রক্ত ঝড়ে না তার দেহ থেকে। সৌভাগ্যবশত তার শেষ চিৎকার স্টেশন অফিসারকে এলার্ট করতে সক্ষম হয়। কিন্তু স্টেশন অফিসার তাকে সাহায্য করা দূরে থাক ঘটনার আকস্মিকতায় এবং নৃশংস লাশ দেখে থমকে যায়। তাকে সাহায্য না করে একটা প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে লাশটা ঢেকে দেয় এবং তাকে নৃশংস মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
দ্বিতীয় গল্পটা একজন জাপানি স্কুল ছাত্রীর যে কি না নিজের ছায়াকেও ভয় পেত। তার এই ভীতসন্ত্রস্ততা সবসময় তাকে তার ক্লাসমেটদের কাছে হাসির খোরাকে পরিণত হতে সাহায্য করতো। সে সবসময়ই সেই ক্লাসমেটদের কাছে বিভিন্ন ভীতিকর খেলার সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এটা এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে অনেকে মনে করা শুরু করে দিয়েছিল হয়তো লেজেন্ড টেকে টেকে পৃথিবীতে নেমে আসবে এবং এর একটা সুরাহা করবে।
একদিন স্কুল শেষে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে তার ক্লাসমেটদের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলল।
তারা মজা নেওয়ার জন্য সেই মেয়েটার কাঁধে একটা ঝিঁঝিঁ পোকা রেখে দেয়। সামান্য একটা মজা যে কতটা ভয়ানক হতে পারে তা তাদের কল্পনায় ছিল না। মেয়েটা পোকাটা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে ঘাবড়ে যায় এবং রেল ট্রাকে পড়ে যায়। এবং সাথে সাথে শিনকানসেন ট্রেন তাকে দু ভাগ করে তার ওপর দিয়ে চলে যায়। শিনকানসেন ট্রেনকে আধুনিক সময়ে বুলেট ট্রেনও বলে অনেকে।
কাটা দেহটি পড়ে থাকে সেখানে।
টেকে টেকে'র কোন গল্পটি মানুষ বিশ্বাস করবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও নিঃসন্দেহে দুটো গল্পই মর্মান্তিক। এবং এটাও বিশ্বাসযোগ্য যে হয়তো আসলেই টেকে টেকে রয়েছে এবং সে তার হত্যার প্রতিশোধ নিতে আত্মা রূপে ফিরে আসবে।
কথিত আছে এই ঘটনার পর জাপানের প্রায় প্রত্যেক স্টেশনের বাথরুমে উদ্ভট সমস্যা শুরু হয়। এবং অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করে যে কাশিমা রেইকো স্টেশনের বাথরুমে থাকে এবং কারো সাথে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করে, "আমার পা কোথায়?"
আর যদি কেউ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয় অথবা আত্মা দেখার কারণে চিৎকার দেয় তবে তাকে সাইদ দিয়ে কেটে দুই টুকরো করে ফেলা হয়।
গুজব আছে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হচ্ছে, "অন দ্য মেইহসিন লাইন" অর্থাৎ মেইহসিন লাইনে আছে তোমার পা। তাহলেই সে ছেড়ে দেয়।
এই বিষয় নিয়ে একটা গল্পও রয়েছে। অনেকেই গল্পটি বাস্তব বলেছেন। কেউ কেউ বলেন তারা না কি সেই স্টেশনের আশে পাশে টেক-টেক আওয়াজ শুনতে পান। টেক টেক আওয়াজ হতো সেই আত্মা যখন তার দু হাতের কনুই দিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে সামনে আগাতো। গল্পটি ছিল এরকম।
রাত দশটার সময়। সাতোশি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল ক্রাম স্কুল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরে। তার যাওয়ার পথে সে একটা পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিল্ডিংটার দিকে তাকায় এবং একটি খুব সুন্দরী মেয়েকে জানালায় দেখতে পায়। মেয়েটি তার দিজেই তাকিয়ে আছে। তাদের চোখাচোখি হলে দুজনেই হাসি দেয়। মেয়েটা জিজ্ঞেস করে, "আমার পা কোথায়?"
সাতোশি প্রশ্নটি না বুঝে বলে, "দুঃখিত, আমি জানি না কোথায়।"
মেয়েটি তখন জানালা থেকে তার হাতে ভর করে লাফ দিয়ে নিচে নেমে আসে। সাতোশি তখন বুঝতে পারে মেয়েটির নিচের অংশ নেই।
সাতোশি ভয়ে, আতংকে একেবারে জমে যায়। সাতোশি নড়তে পারে না। ওদিকে মেয়েটা তার হাত এবং কনুই ব্যবহার করে সাতোশির সামনে চলে আসে। হাত এবং কনুই দিয়ে সামনে আসার কারণে 'টেকে টেকে' শব্দ তৈরী হয়। সাতোশির সামনে মেয়েটি চলে এলে সেই সাইদটাকে তুলে ধরে কোপ দিয়ে দুই ভাগ করে ফেলে তাকে।
অনেকে মনে করে এই 'টেকে টেকে' লেজেন্ড আসলেই রয়েছে। এবং হুট করে দেখা দেয়। কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত জানে না কেন এই লেজেন্ড তার ভিক্টিমের জন্য সাইদ ব্যবহার করে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....