মগরাজ : রবিন জামান খান | Mograj - Robin Zaman Khan

AT A GLACE OF MOGRAJ

  • Title মগরাজ
  • Author রবিন জামান খান
  • Publisher অন্যধারা
  • ISBN 9789849540397
  • Edition 1st Published, 2021
  • Number of Pages 560
  • Country বাংলাদেশ
  • Language বাংলা

মগরাজ - রবিন জামান খান

"এক লোক শ্বশুরবাড়ি গেছে। বৃষ্টির দিন। তো সেই লোক দুয়ারে দাঁড়াইয়া ভিজতাছে। কারণ শ্বশুর বাড়ির ঘরের চাল ভাঙা। ঘরে যারা আছে তারাও ভিজতাছে। তাই শাশুড়ী জামাইরে ডাক দিয়া বলতাছে, জামাই বাইরে দাঁড়াইয়া ভিজতাছো কেন? ঘরে আইসা গোসল করো।"

দিল্লির সিংহাসনে তখন মোঘল সম্রাট শাহজাহান। সম্রাটের তিন পুত্র দারাশিকো, শাহ সুজা এবং আওরঙ্গজেব সকলেই পরবর্তী সম্রাট হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। পিতার মৃত্যু সংবাদে সকলেই ক্ষমতার দিকে হাত বাড়ায়। বড় ছেলে দারাশিকো দিল্লিতে থাকলেও অপর দুই ছেলে ছিল দিল্লি থেকে দূরে। তারা নিজ নিজ সৈন্য নিয়ে রাজধানীর দিকে ধাবিত হয়। দারাশিকোকে পরাজিত ও হত্যা করে নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করে আওরঙ্গজেব। শাহ সুজা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েও আওরঙ্গজেবের শক্তিশালী বাহিনীর সাথে পেরে উঠতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে আসেন বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে আরাকান রাজার আশ্রয়ে। কিন্তু আরাকান রাজা বিশ্বাসঘাতকতা করে হত্যা করে শাহ সুজার পরিবার ও সেনাবাহিনীকে। 

এই বিশ্বাসঘাতকার যবানিকাপাতের অন্যদিকে ছিল বিশ্বস্ত সহচর তালেব তৈমুর। তিনি শাহ সুজার সকল সম্পত্তি নিয়ে রওনা হয়ে যান, যাতে করে এসকল সম্পত্তি আরাকান রাজ বা পর্তুগিজ জলদস্যুদের হাতে না পড়ে। এদিকে সেই দলের পিছু নেয় পর্তুগিজ জলদস্যু সিলভেরা। চাঁটগায়ের ব্যবসায়ী তালেব কিরান হলো তালেব তৈমুরের সন্তান। মগ ও পর্তুগিজরা আগে থেকেই উৎপাত করে আসছিল দক্ষিণাঞ্চলে। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি শাহ সুজার কারণে। এদিকে শাহ সুজা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কারণে চাঁটগায়ের ব্যবসায়ীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এমন সময়ে তালেব কিরানকে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরামর্শ দেয় যুদ্ধ অভিযানের প্রস্তুতির জন্য। যে যুদ্ধ পর্তুগিজ জলদস্যু সিলভেরার বিরুদ্ধে যার সাথে তালেব কিরানের রয়েছে পুরনো শত্রুতা। 


এছাড়া এই অভিযানের আরেকটি উদ্দেশ্য তালেব তৈমুর ও শাহ সুজার ধন-সম্পদ উদ্ধার করা। তালেব কিরান ও তার বাহিনী কি পারবে এই অভিযানে সফল হতে নাকি আরেকবার পরাজিত হবে দস্যু সিলভেরার হাতে?

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা হাইওয়েতে এক বৃষ্টির রাত। বড়লোকের নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু সন্তান বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। এমন সময় এক ব্যক্তিতে ধাক্কা মারে এবং ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। লাশ রাস্তা থেকে সরানোর আগেই পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায় তারা। দেখলে মনে হবে সাধারণ একটা সড়ক দূর্ঘটনা। কিন্তু লোকটির পরিচয় জানার পর আর ঘটনাটি সাধারণ থাকেনা। লোকটি একজন নামকরা প্রত্নতত্ত্ববিদ। যিনি কিনা কয়েকবছর যাবত নিখোঁজ। এতদিন পর তাও আবার রাতের বেলায় তিনি ওই রাস্তাতেই কী করছিলেন? এই কেসের সমাধান করতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয় সদ্য স্কটল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে আসা শারহান শারিয়ারকে। পিবিআইয়ের এই মাথা গরম এজেন্ট কি পারবে এই সমস্যার সমাধান করতে? যেখানে রহস্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই কারো!
 
আগের দুই বই সপ্তরিপু ও ব্ল্যাক বুদ্ধার তুলনায় এই বইটির গল্পটা ভালো লেগেছে। মোঘল সময়টাতে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে পর্তুগিজ ও মগদের বর্বরোচিত আক্রমণ এবং মানুষদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ মনোভাবের সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া মগদোষী নারীদের প্রতি সহানুভূতি ত ছিলই। লেখক সপ্তদশ শতাব্দীর আবহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন বলে আমার বিশ্বাস।

'সময়' সিরিজের তিনটি(প্রকাশিত; আরো চারটি প্রকাশিত হবে।) বইয়ের মধ্যে এই বইটি সেরা হতে পারতো। কিন্তু হয়নি প্রকাশকের ব্যবসায়িক চিন্তায় দায়িত্বহীনভাবে দ্রুত বই বের করা এবং লেখকের অবহেলায়।

রিভিউয়ের শুরুতে যে গল্পটা বললাম, বাতিঘর থেকে অন্যধারাতে যাওয়ার পর রবিন জামান খানের বইয়ের অবস্থা তেমনি হয়েছে। শুধু প্রকাশনীকে আমি দোষ দিব না। কারণ প্রকাশনী বই দ্রুত বের করতে চাইবেই, এতে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে। কিন্তু লেখক কি একটা ফাইনাল রিডিং দিতে পারতেন না? এত টাকার বই, মানেও ত সেইরকম করা উচিৎ। চরিত্রের নাম ভজঘট, বাইরের নামও আছে। বিস্তর বানান ভুল। বাক্য ভুল। এগুলা বিরক্তিকর।

বইটা এত বড় হওয়ার কারণ লেখকের গল্প বলার ধরণ। লেখক একটা জিনিসকে বারেবারে বলে সেইটারে শুধু টেনে লম্বা করেছেন। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যখনই কেউ কোনো ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিতে জিজ্ঞাসা করছেন কী হয়েছে; তখন তিনি সেই দিকে না গিয়ে শুধু বলেছেন সেইটা পরে বলবে। আগে অন্য কথা বলে দৃশ্যপট দীর্ঘায়িত করেছেন। কয়েক জায়গাতেই এমন পুনরাবৃত্তি। এছাড়া সপ্তদশ শতাব্দীর মানুষদের চিন্তাভাবনা এত আধুনিক ছিল কিনা সে-সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে।
লেখকের মেধা আছে; আছে পরিশ্রম। এখন শুধু উপস্থাপনা অর্থাৎ প্রকাশনীর কার্যক্রম এবং লেখার সম্পাদনা ঠিকঠাকমতো করতে পারে তাহলেই সামনের বইগুলো আরো ভালো হবে আশা করি।

" মোঘল সম্রাট শাহজাহান অসুস্থ, দিল্লীর মসনদ দখলের লড়াইয়ে লিপ্ত হলো তার তিন ছেলে। নিজের দুই ভাইয়ের কাছে যুদ্ধে হেরে পলায়নরত সম্রাট শাহ সুজা আরাকান রাজের আশ্রয়ে অতিথী হলে, লোভী আরাকান রাজ রাতের আঁধারে হামলা চালায় তার বাসভবনে। কিন্তু সম্রাট সুজার সাথে থাকা মোঘল সম্পদের বিরাট ভান্ডার দখলের আগেই সুজার একান্ত কাছের মানুষ সেটা নিয়ে রওনা দেয় বাঙাল মুল্লুকের উদ্দেশ্যে। তাকে ধাওয়া করে মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুদের বিরাট বাহিনী। বিপরীতে চট্টগ্রাম থেকে এই বাহিনী প্রতিহত করার দায়িত্ব এসে পড়ে কাপ্তান তালেব কিরানের ওপরে। "

Author Profile Of Robin Zaman Khan


"রবিন জামান খানের জন্ম ময়মনসিংহ শহরে, পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনার কেন্দুয়াতে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষাতত্বে দ্বিতীয় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। পড়া-পড়ানো, শেখা-শেখানোর চর্চা থেকেই শিক্ষকতাকে পেশা ও লেখালেখিকে নেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংকলনে বেশকিছু মৌলিক ও অনুবাদ গল্প লেখার পাশাপাশি লিখেছেন একাধিক টিভি নাটক। তার মৌলিক থৃলার উপন্যাস শব্দজাল, ২৫শে মার্চ, সপ্তরিপু, ব্ল্যাক বুদ্ধা, ফোরটি এইট আওয়ার্স, দিন শেষে, আরোহী ও অন্ধ প্রহর ইতিমধ্যেই অর্জন করেছে বিপুল পাঠক প্রিয়তা। বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতা থেকে প্রকাশিত তার মৌলিক গ্রন্থ ২৫শে মার্চ, সপ্তরিপু ও শব্দজাল পশ্চিম বঙ্গের পাঠক মহলে ভালোবাসা কুড়িয়েছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসের রহস্যময় ঘটনাবলী, সেইসাথে মানব মনের জটিল মনস্তত্ত্ব বিষয়ে আগ্রহ থেকে উনি বর্তমানে কাজ করে চলেছেন একাধিক ইতিহাস নির্ভর ও সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার উপন্যাস নিয়ে। এরই প্রেক্ষিতে খুব শিঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার মৌলিক থৃলার উপন্যাস বিখন্ডিত, রাজদ্রোহী, ধূম্রজাল, সিপাহী। রবিন জামান খান ঢাকায় প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবষেণা করছেন তিনি। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ