মোটিভেশন : লেখক ব্রায়ান ট্রেসি | Motivation (The Brian Tracy Success Library)

  • বই : মোটিভেশন
  • লেখক : ব্রায়ান ট্রেসি
  • প্রকাশনী : অন্যধারা
  • বিষয় : আত্ম উন্নয়ন ও মোটিভেশন
  • অনুবাদক : সুমাইয়া সাদিকা
  • পৃষ্ঠা : 95, কভার : হার্ড কভার
  • ভাষা : বাংলা

কীভাবে পড়বেন? কীভাবে বুঝবেন? কীভাবে মুখস্থ করবেন?


যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ অব্যবহৃত এবং সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে তার জনসম্পদ। উন্নয়নের, উৎপাদনশীলতার, কর্মক্ষমতার, অর্জনের এবং মুনাফা লাভের। সবচেয়ে বৃহত্তর সম্ভাবনার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে একজন গড়পড়তা মানুষের মধ্যে নিহিত দক্ষতা এবং সক্ষমতা। এই বইতে, আপনারা শিখবেন ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি সম্পর্কে জানবেন। শিখবেন সেই সক্ষমতা যা দিয়ে অন্যকে উৎসাহিত করে উন্নতির শিখরে পৌঁছানো যায়। যতগুলো আইডিয়া আবিষ্কার হয়েছে বিগত পঞ্চাশ বছরে। যা দিয়ে একজন মানুষকে তার সর্বোচ্চ অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন আপনার প্রতিষ্ঠানে।

আমরা জানি আপনি কাউকে দিয়ে কিছু করিয়ে ফেলতে পারবেন না হয়তো। কিন্তু তাদের অনুপ্রাণিত করার পথের বাঁধা দূর করলে, হয়তো তারা নিজেরাই উদ্বুদ্ধ করতে শিখবে। সব সেরা মোটিভেশন হচ্ছে নিজেকে নিজে মোটিভেট করা। একজন ব্যবস্থাপক হিসেবে এমন পরিবেশ তৈরি করুন। যেন একজন কর্মী স্বপ্রণোদিত হয়ে, প্রাকৃতিক ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে পারেন।

আত্ম উন্নয়ন ও মোটিভেশন বই

রবার্ট হাফ এবং তার সহযোগীদের মতে একজন সাধারণ মানুষ তার কর্মক্ষমতার ৫০ ভাগ ব্যবহার করে মাত্র এবং বাকি ৫০ ভাগই নষ্ট হয়। সহকর্মীদের সাথে ফালতু গল্পগুজবে। অথবা ইন্টারনেটে কিংবা অফিসে দেরি করে এসে, তাড়াতাড়ি চলে গিয়ে, দীর্ঘ চা পানির বিরতি নিয়ে। কিংবা লাঞ্চ ব্রেক বা খাবারের সময় বেশি নিয়ে অথবা ব্যক্তিগত কাজে ।

এই অপব্যয়ে আপনার প্রতিষ্ঠানে গুনতে হয় বড় অর্থ। কারণ মানুষেরা তাদের কাজে এবং উৎসাহী এবং আগ্রহী নন। তারা সময়ের আগেই কাজ শেষ করার গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম নন। এই দিকভ্রষ্টতাই ঠিক করতে পারেন একজন প্রকৃত ব্যবস্থাপক।

অব্যবহৃত ৫০ ভাগে মনোযোগ দিন আপনার দায়িত্ব অপব্যবহৃত ৫০ ভাগ শক্তিতে নজর দেয়া এবং সেগুলোকে সঠিক পথে পরিচালনা করে অধিক উত্তম কাজ বের করে নিয়ে আসা। যেকোনো ব্যবসার মূল লক্ষ্য তার সারিতে সবার সামনে অবস্থান এবং সমতার বিধান করা যতটা মূলধন বিনিয়োগ হয়েছে তার সাথে। আর ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য কর্মরত প্রত্যেকের সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা কাজে লাগানো। অর্থনৈতিক

মূলধন অর্থে বা ডলারে মাপা যায়। কিন্তু মানুষের মূলধন ব্যক্তির মানসিকতা,

আবেগ-অনুভূতি এবং শারীরিক শক্তি নিয়ে গঠিত। ব্যবস্থাপকের কাজ উভয়

মূলধনের প্রবৃদ্ধির সাথে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যতটা মূল্য অর্জন সম্ভব, তা অর্জন।


নিরুৎসাহকদের সরান

জীবন এবং কাজের ক্ষেত্রে দুটি প্রধান নিরুৎসাহক। এই দুটি ফ্যাক্টরই শিশুকালে শুরু হয় এবং পরবর্তী জীবনে প্রবাহিত হয় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হওয়া অবধি। এদেরকে সুনির্দিষ্ট করা হয় জীবনের নেতিবাচক অভ্যাসের ধরন বা উদ্দীপনার শর্তযুক্ত প্রতিক্রিয়া হিসেবে।

এদের মধ্যে প্রথমটি হলো হেরে যাবার ভয়। এটিই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষে পরিণত হবার পর জীবনে সাফল্য এবং অর্জনের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা। শিশুকালে ধ্বংসাত্মক সমালোচনার কারণে, বয়স হবার পরেও মানুষ কর্মজীবনে ভুল করা কিংবা ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা দেখলে ভীত হয়ে পড়ে। এই ভয়টি মানুষের মনে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে। তারা পক্ষাঘাতগ্রস্তের মতো আটকে যায় এক স্থানে। ঝুঁকি নিতে, নতুন স্বেচ্ছাশ্রম বা দায়িত্ব নিতে, অথবা নিজেকে মেলে ধরার যেকোনো সুযোগ দিতে তারা পিছিয়ে যায়। ব্যর্থতার ভয় ক্রমাগত তাদের অকার্যকারিতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিংবা অজুহাত হিসেবেও।

দ্বিতীয় নিরুৎসাহকটি হলো প্রত্যাখ্যাত হবার ভয়। শৈশবে যদি মা-বাবা শর্তাধীন ভালোবাসার প্রয়োগ করে তাদের সন্তানদের উপর। তাহলে এই মানসিক প্রতিবন্ধকতা সেসময় থেকেই মনে গেঁড়ে বসে। তারা তাদেরকে ভালোবাসা কিংবা সমর্থনকে শর্তসাপেক্ষ করে তোলে। যা শিশুটির উচ্চ কর্মক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। শিশুটি তখন অন্যদের মতামতের উপর অতিসংবেদনশীল হয়ে বেড়ে ওঠে। যেমন বড় হয়ে বসের মতামত, মন্তব্য কিংবা প্রতিক্রিয়ার প্রতি সংবেদনশীলতা।

প্রত্যাখানের এই ভয়টি সমালোচনা, নিন্দা বা একটি ভুল করে ফেলার পর বহিষ্কৃত হবার ভয়ও বটে। চমৎকার ব্যবস্থাপক তারা যারা প্রতিটি কর্মচারীর সাথেই অভ্যাস করেন 'নিঃশর্ত স্বীকৃত।' যার ফলে সমস্ত কর্মচারী তাদের বসের সাথে কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ এবং নিরাপত্তা বোধ করেন ।

ভয়কে দূরে সরিয়ে দিন

নিরুৎসাহিতবোধের এবং দুর্বল কর্মক্ষমতার নানান কারণ থাকতে পারে। কিন্তু এ দুটিই মূলত প্রধান কারণ। যার কারণে মানুষ তার সেরাটা দিতে পারে না। সফল প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবস্থাপক তারা, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব বাঁধা অপসারণ করেন। তারা সুস্পষ্ট করে দেয় যে, ভুল করলেই কারো সমালোচনা, প্রত্যাখান কিংবা অপসারণের ভয় থাকবে না। সর্বত্তোম ম্যানেজার তিনিই। যিনি এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম। যেখানে ভয় ও দ্বিধাহীনভাবে যে কেউই ঝুঁকি নিয়ে দিতে পারেন তাদের সবটা।

ড. এডোয়ার্ড ডেমিং, যিনি কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের জনক। একবার বলেছিলেন সেরা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে ১৪টি প্রধান ফ্যাক্টর রয়েছে। তাদের অন্যতম ‘ভয়কে দূরীভূত করা।' ভয়ের অনুপস্থিতিতে কর্মচারীরা তাদের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক কর্মক্ষম হয়ে থাকেন।

এই বইটিতে আপনি ব্যবহারিক, প্রমাণিত পদ্ধতি এবং কৌশলগুলোর একটি সিরিজ শিখবেন। যা দিয়ে আপনি সহজেই কমাতে পারেন ব্যর্থতা এবং প্রত্যাখ্যানের ভয়। একইসাথে নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবনের মাত্রা বাড়াতে পারবেন। কারণ যখন মানুষ নিজের সম্পর্কে ভালোভাবে তারা ভালো কিছুই করে।

এই প্রতিটি আইডিয়াই দীর্ঘ বছরের গবেষণা এবং অনুশীলনের ফলাফল। কখনো এর যেকোনো একটি ধারণার প্রয়োগই যথেষ্ট। একটি সংস্থাকে রাতারাতি পরিবর্তন করতে।

প্রধান ফ্যাক্টরগুলো

উদ্বুদ্ধ করতে এবং চূড়ান্ত কর্মক্ষমতায় পৌঁছে দেয় মাত্র একটি জিনিস। ব্যবস্থাপক এবং ব্যবস্থাপিতের মধ্যকার সংযোগ। এটি সংঘটিত হয় যখন এদের দুইজনের দেখা হয় এবং তারা কাজ শুরু করে। কর্মক্ষমতার নির্ধারক, উৎপাদনশীলতা, ফলাফল, এবং কোম্পানির মুনাফা নির্ধারিত হয় এই সংযোগ দ্বারা। সংযোগ ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক উভয়ই হয় এবং সেখানেই অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের একক ব্যক্তির কর্মদক্ষতা ও তার সম্পর্ক নির্ধারিত হয় সংস্থার সাথে। এই বইয়ের সকল আইডিয়া বসের সাথে কর্মচারীদের সুসম্পর্ক বৃদ্ধির উপর, বিশেষ করে সেই বিশেষ সংযোগ স্থাপনের সময়ে। তার উপর ফোকাস করে নিবদ্ধ করা হয়েছে। আপনি যাই করুন না কেন তার ইতিবাচক ফলাফল থাকতে হবে। ম্যানেজমেন্টের কোন স্তরে আছেন সেটা একদমই ব্যাপার নয়।

আইনস্টাইনের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করবো 'যতক্ষণ না কিছু নড়ছে কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটবে না।' একই সূত্রে বলা যায়, কিছুই হবে না যদি কেউ একজন নড়ে না বসে। এই আইডিয়াগুলোর কোনো মূল্যই থাকবে না যদি আপনি অগ্রসর না হোন নিজে থেকে এবং সেটা যত দ্রুত হয়, ততই ভালো।

দি এক্স ফ্যাক্টর

ম্যানেজমেন্ট পরামর্শদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইউরোপে বেশ অনেক গবেষণা ম্যানেজমেন্ট পরামর্শদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইউরোপে বেশ অনেক গবেষণা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের ও পশ্চিম জার্মানির কারখানা। এদের মধ্যে তুলনা করে দেখতে পান, পশ্চিম জার্মানির ফ্যাক্টরিগুলোই ব্রিটিশদের তুলনায় বেশি উৎপাদনশীল। পরিমাণে সেটি প্রায় ৪ গুণ। প্রথমত, এই গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল ব্রিটিশ গবেষকরা মানতে নারাজ। তারা দাবি করেন সব জার্মান কারখানা একদম নতুন। অধিকাংশই স্থাপিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। যেখানে অধিকাংশ ব্রিটিশ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে ১৯৩০ সালের দিকে এবং এখনো ব্যবহার করে চলেছে পুরনো যন্ত্রাংশই।

এই থিওরিকে প্রমাণ করতে তারা একই সুযোগ সুবিধা, আকৃতি ও কর্মের ধরন সমন্বিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুলনা করেন। যেসব জায়গায় গাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে একই প্রযুক্তিতে। দুই দেশের সেরা এবং সবচেয়ে খারাপ প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও এখনো চারগুণের পার্থক্য বিদ্যমান।

উৎপাদনশীলতার এই পার্থক্য, বস্তুগত কিংবা টেকনিক্যাল কোনোভাবেই ব্যাখ্যাযোগ্য নয়। তাই এর নাম দেয়া হয়েছে 'দি এক্স ফ্যাক্টর।' এই আবিষ্কারটির বর্তমান নাম সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টর বা মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর। যা দিয়ে ব্যবস্থাপনার জগতে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে। বিগত ষাট বছরে সমগ্র বিশ্বব্যাপী। ১৯২৯ সালে বৃহত্তর হতাশার পর সমস্ত উন্নতি ছিল মূলত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উৎপাদন প্রতিক্রিয়ার ফল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সর্বোচ্চ অগ্রগতি হয়েছে ব্যবস্থাপনা এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রকৃতিতে। এই এক্স ফ্যাক্টর ব্যাখ্যা দেয় কেন সবকিছু ঠিক থাকার পরেও কোম্পানি অসফল কিংবা ব্যর্থ হয়। কেন ২০% শিল্পকারখানা অর্জন করে ৮০% মুনাফা এবং কেন সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যক্তিরাআকৃষ্ট হয় সেরা কোম্পানির দিকে।

কর্মক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা নির্ধারণ করে এমন মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে আপনি নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারবেন। একজন পরিচালক হিসেবে আপনার কার্যকারিতা এবং ফলাফল পাওয়ার ক্ষমতায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

সকল নির্দেশনার কেন্দ্রবিন্দু

মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টরটি খুব সাধারণ একটি পয়েন্টে এসে থামে।

আত্মধারণা

বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীতে আত্ম-ধারণা বা স্ব-ধারণার চিন্তাটি বিকশিত হয়। যেটি নিঃসন্দেহে মানব সম্ভাবনার বিকাশের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। আত্ম-ধারণা হলো একক ব্যক্তির বিশ্বাস কাঠামো কিংবা তার সংস্কার,

মূল্যবোধ। এটি শৈশব থেকে বিকশিত হতে শুরু করে এবং আজ অবধি তার

সমস্ত মূল্যবোধ, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, সিদ্ধান্ত এবং অর্জিত শিক্ষা। এটি থেকে

নির্ধারিত হয় মানুষ নিজেকে কি ভাবে, কি অনুভব করে এবং বিশ্বের সাথে কিভাবে নিজেকে যুক্ত করে রাখে।

আত্মধারণাটি সকল উৎপাদনশীলতার এবং তার ব্যক্তিত্বের কেন্দ্রে অবস্থান করে কমান্ড সেন্টার হিসেবে। এটি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যক্তির আচরণ, কর্মক্ষমতা এবং তার উৎপাদন। আত্ম-ধারণাকে উন্নত করতে পারলেই কর্মক্ষমতা এবং আচরণে পরিবর্তন আসে। অন্যভাবে যদি বলি তাহলে, বাহ্যিক পরিবর্তনের শুরুটা হয় অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের সাথে সাথে।

স্বধারণা এবং কর্মক্ষমতা

নিজের সম্পর্কে ধারণাকে ভাগ করা যায় তিনটি উপাদানে। স্ব-আদর্শ, স্ব-চিত্র বা ইমেজ এবং আত্মসম্মান। আসুন তিনটি ভেঙে দেখা যাক।

আদর্শ হলো মানুষটি জীবনে কি হতে চায় তার সংক্ষিপ্ত চিত্র। এটি তৈরি হয় তার লক্ষ্য, স্বপ্ন, আশা এবং মূল্যবোধ নিয়ে এবং সে ভবিষ্যতে কোথায় নিজেকে নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব।

কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তির স্ব-আদর্শ কর্পোরেট মূল্যবোধ, সিনিয়র রোল মডেল এবং পারিপার্শ্বিক সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত।

দ্বিতীয় উপাদানটি হলো স্ব-চিত্র বা ইমেজ। এই অংশটি হলো তার ধারণা। যে অন্য মানুষ তাকে কীভাবে দেখছে। যারা নিজেদেরকে অন্যের পছন্দের, আত্মবিশ্বাসী এবং যোগ্য হিসেবে দেখেন। তারা অন্যদের তুলনায় ভালো কাজ করার প্রবণতা রাখেন। বিশেষত তাদের তুলনায় যারা আত্মবিশ্বাসী নন।

লোকেরা আপনার সাথে যেমন আচরণ করেন প্রতিদিন। তার দ্বারা আপনার স্ব-চিত্র ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। যখন মানুষের সাথে এমন আচরণ করা হয় যে তারা মূল্যবান, গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত। তখন তারা নিজেদের দেখে এবং আরো ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করেন। ফলস্বরূপ তাদের কর্মদক্ষতা অতি উচ্চস্তরের এবং ক্রমাগত আরো ভালো হতে থাকে।

তৃতীয় এবং স্ব-ধারণার মূল অংশটি হলো ব্যক্তির আত্মসম্মানবোধ । আত্মসম্মানকে আপনি নিজেকে কতটা পছন্দ করেন সেই হিসেবেও সংজ্ঞায়িত করা যায়। যত বেশি পছন্দ এবং সম্মান ভেতর থেকে নিজেকে করা যায়, তাদের বাইরে তত বেশি কর্মক্ষমতা। তারা নিজেদের জন্য নির্ধারণ করেন উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা। কাজের মান থাকে সাধারণের চেয়েও উপরে। যখন মানুষ তাদের পছন্দ করতে শুরু করে তারাও মানুষকে পছন্দ করে এবং একজন কাজের ক্ষেত্রে দলীয় সদস্য হিসেবে চমৎকার তাদের উপস্থাপন।

আত্মসম্মানই হলো একজন মানুষের কেন্দ্রিয় শক্তিঘর এবং এটি নির্ধারণ করে মূলত ব্যক্তির শক্তি, উদ্যম, জীবনীশক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের মাত্রা।

একটি সেরা কর্মক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা তৈরির প্রধান চাবিকাঠি হলো, ব্যক্তির কর্মক্ষমতাকে বাঁধা দেয় এমন ব্যর্থতা এবং প্রত্যাখ্যানের ভয় দূর করা। উচ্চ আত্মসম্মানের পরিবেশ সৃষ্টি। ইতিবাচক ও আত্মস্মমানপূর্ণ কর্মেক্ষেত্র যিনি নিশ্চিত করতে পারেন। সেরা ব্যবস্থাপক তিনিই। এতে কর্মচারীদের অধিক অংশগ্রহণ, কম অনুপস্থিতি, তুলনামূলক কম কর্মচারীর অন্যত্র চলে যাওয়া ও কম ভুল থাকবে, সেটি সুনিশ্চিত। একজন ব্যবস্থাপকের ভূমিকা

ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপক তার কর্মচারীদের মাঝে ইতিবাচক প্রেরণা এবং আত্মশক্তি জাগিয়ে তুলতে পারেন। যাতে তারা স্ব-ধারণা বৃদ্ধি করতে পারে, এমন পন্থা রয়েছে সাতটি। এই অনুশীলনকে বিন্যস্ত করা হয়েছে সাতটি ফ্যাক্টরে। যা নিম্নরূপ: ১. চ্যালেঞ্জ: এমন কাজ দিন যা তাদের নিজের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার

মাধ্যমেই শুধু সম্ভব। কাজের ক্ষেত্রে তারা যত বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, তত বেশি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। কাজে আরো বেশি সম্পৃক্ততা অনুভব করবে একইসাথে। এটি তাদের নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক হতেও সাহায্য করবে আরো বেশি।

২. স্বাধীনতা: পর্যাপ্ত স্বায়ত্তশাসন দিন কাজের ক্ষেত্রে। কোনো ঘনিষ্ঠ তত্ত্বাবধান ছাড়াই। তারা যত বেশি নিজের মতো করে সমাধানের চেষ্টা করবে কাজটি। তত বেশি স্ব-ধারণা বৃদ্ধি পাবে। ভালো বোধ করবে নিজের সম্পর্কে।

৩. নিয়ন্ত্রণ: নির্ধারিত সময় নির্বাচন করুন। কাজের পর্যালোচনা, প্রতিক্রিয়া এবং সার্বিক আলোচনার জন্য। কর্মচারীরা তাদের কাজ সম্পর্কে যত বেশি নিয়মিত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পান। তত নিজেদের সম্পর্কে ভালো বোধ করেন এবং মূল্যবান মনে করতে শিখবেন নিজের কাজকে।

৪. সম্মান: যখন আপনি তাদের জানতে চান মতামত সম্পর্কে। বলতে শুরু করলে মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তখন তারা নিজেদের অনুভব করেন মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতামত অনুযায়ী কাজ না করলেও, শুধু মনোযোগ ও গুরুত্বসহকারে শোনার কারণে। এখানে সম্মান প্রদর্শিত হয়। যা প্রতিটি ব্যক্তি স্বতন্ত্রতার প্রতি।

৫. উষ্ণতা: আপনার মানুষগুলো যত বেশি দেখবে। আপনি তাদের স্বতন্ত্র সত্তার প্রতি যত্নশীল। তারা তত ভালো কর্মদক্ষতা দেখাবে। যদি তাদের বন্ধু এবং কর্পোরেট ফ্যামিলির মতো বর্ধিত অংশ মনে করেন। তারা আরো বেশি নিরাপত্তা, অধিক নিরাপদ এবং মনে করবে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ।

৬. সাফল্যের অভিজ্ঞতা: যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কাজ দেয়া কিংবা দক্ষতা অনুযায়ী কাজ ন্যস্ত করা। এটি আত্মসম্মান এবং আত্মধারণা তৈরির মূল চাবিকাঠি। সফলভাবে যেকোনো কাজ সম্পাদন করার পরে ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন স্বীকৃতি প্রাপ্তি। এতেই মানুষটি নিজেকে বিজয়ী ভাবতে শেখে ।

৭. ইতিবাচক প্রত্যাশা: এটি সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রেরণা। মানুষ যখন বুঝতে পারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের বিশ্বাস করেন এবং কাজের যোগ্য মনে করছেন। বিশ্বাস করছেন কাজটি ভালোভাবে করার ক্ষমতা আছে তাদের। তখন এর চেয়ে বেশি আত্মসম্মান বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়। তেমন সক্ষমতা বৃদ্ধি

আর কিছুতেই হতে পারে না। সফল কোম্পানি সবসময় কর্মচারীদের দুর্দান্ত অনুভব করায় নিজেদের নিয়ে। আত্ম-ধারণার কার্যকারিতা বুঝা, সেই সংযোগটি বুঝাই পথের প্রথম ধাপ।

কাজের অনুশীলন

১. অভ্যাসে পরিণত করুন এটিকে যে আপনার প্রতিটি কর্মচারী যেন অনুভব করতে পারে তাদের গুরুত্ব। তাদের মূল্যায়ন, মেধা, প্রতিযোগী মনোভাব বৃদ্ধি আবশ্যক। তাদের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান বাড়িয়ে তোলার কোনো সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এমন প্রতিটি সুযোগে উৎসাহিত করুন নিঃসংকোচে।

২. আপনার স্টাফদের সবসময় বলুন তারা কত ভালো। তাদের কাজের মাধ্যমে কত খুশি আপনি। বিনিময়ে যখন আপনি চাইবেন তারা আরো বেশি। করুক। নিশ্চিত থাকুন হতাশ করবে না কেউ।

সঠিক মানুষ নির্বাচন

বস্থাপনার উৎকর্ষতা নির্ধারিত হয় সঠিক মানুষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ব্যবস্থাপনার উস্থাপক হিসিবে আপনার ঠিক মানুষ চান চিনের মিশুর দিয়ে। সঠিক মানুষটিকে খুঁজে বের করার উপর। যদি ভুল মানুষ নির্বাচন করেন বা নিয়োগ দেন। তাহলে যত পন্থাই অবলম্বন করেন না কেন, যত প্রচেষ্টাই দেন না কেন। এতে খুব বেশি কোনো পার্থক্য হবে না। ভুল লোক নির্বাচন কিংবা উত্তারাধিকার সূত্রে পাওয়া পদ। এই দুই জায়গা থেকেই আপনার সকল ব্যবস্থাপনার সমস্যা শুরু।

জিম কলিন্স পরামর্শ দিয়েছেন তার বই ‘গুড টু গ্রেট' বইতে। 'ম্যানেজমেন্টের জরুরি কাজটি হলো সঠিক মানুষটিকে বাসে তোলা, তাকে সঠিক সিটে বসানো এবং নামিয়ে দেয়া অপ্রয়োজনীয় লোকটিকে বাস থেকে।'

লি ইকোকাকে আনা হয়েছিল ক্রাইসেলার কর্পোরেশনকে বাঁচাতে। তখন এটি দেউলিয়া হবার পথে। তিনি প্রথমেই কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার লোন মঞ্জুর করালেন ব্যাংকে। সকল অপারেশনাল কার্যক্রম চালানোর কাজে। তারপর ইকোকা নিয়ন্ত্রিতভাবে এগুলেন ব্যবস্থাপনা পর্ষদের দিকে। ছত্রিশজন ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে ৩৫ জনকেই প্রতিস্থাপন করেছিলেন। তিন বছর মেয়াদের নিয়োগ দিলেন নতুনদের। শেষ পর্যন্ত তিনি সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের সরিয়ে দিয়েছিলেন। তার বদলে সমগ্র আমেরিকা এবং সারাবিশ্ব থেকে খুঁজে খুঁজে আনলেন, দক্ষ এবং সুযোগ্য এক্সিকিউটিভদের। ক্রাইসেলার কর্পোরেশনের সমস্ত উচ্চপদ ঢেলে সাজিয়েছিলেন তিনি।

সঠিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে প্রায় দেউলিয়া ক্রাইসেলার কর্পোরেশন একেবারেই ঘুরে দাঁড়ালো স্বল্পসময়ে। তিন বছরের কম সময়ে অসাধ্য সাধন করলেন ইকোকা। ব্যাংকের ৩৫০ মিলিয়ন ডলার লোন শোধ ছাড়াও, দারুণ মুনাফার পথে হাঁটতে শুরু করলো ক্রাইসেলার। কাজের মাধ্যমে চিন্তা করুন

সঠিক মানুষকে প্রথমে এনে বসানোই ব্যবস্থাপনার সাফল্য। কাজের শুরুটা করবেন লিখিতভাবে, সুচিন্তিত মতামত দ্বারা। প্রথমেই লিখে ফেলুন। কি কি যোগ্যতা এবং আপনার চাহিদা সঠিক মানুষটির থাকতে হবে, এই নির্দিষ্ট কাজটির জন্য। প্রথমে মনোযোগ দিন এবং পর্যালোচনা করুন নতুন কর্মচারীর কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে কিনা!

দ্বিতীয় ফ্যাক্টরটি হলো সেই মৌলিক দক্ষতাগুলো। যা কাজটির জন্য অত্যাবশ্যক কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের জন্য। চাকরির ভাইবা কিংবা ইন্টারভিউয়ের সময় নিশ্চিত হন আপনার চাহিদা মতো দক্ষতা প্রার্থী তার পূর্বের চাকরিতে অর্জন করেছেন কিনা। ঠিক যেমনটা পিটার ডুকার বলেছেন 'অতীতের কর্মক্ষমতাই, ভবিষ্যতের কর্মক্ষমতার সঠিক ভবিষ্যদ্‌বাণী।'

সবশেষে, ব্যক্তিত্ব, মনোভাব এবং বৈশিষ্ট্য দেখে নিয়োগ সম্পন্ন করুন। নিশ্চিত করুন নতুন মানুষটি যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে কিনা। আপনার কোম্পানির কর্মপরিবেশ এবং সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নিতে। যদি সঠিক মানুষটি নির্বাচন করে থাকেন তাহলে সহজেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে তোলা সম্ভব।

তিন-এর নিয়ম

তিনের নিয়মের সাহায্যে আপনি আপনার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। কিভাবে সঠিক মানুষটিকে নির্বাচন করতে হয়। এমনকি আপনার সফলতার হাত বেড়ে ৯০% অবধি হতে পারে। কারণ হিসেবে হাজার হাজার নির্বাহী এবং ব্যবসার মালিকপক্ষের সাথে আমার সংযোগ। ছয়টি ধাপে সম্পন্ন হতে পারে প্রক্রিয়াটি।

প্রথম, একটি চাকরির জন্য কমপক্ষে তিনজন প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিন। প্রার্থীদের তুলনা, যোগ্যতার বৈপরীত্য এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে। এই অনুশীলনটি আপনাকে ধীরেসুস্থে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, তিনটি আলাদা আলাদা সময়ে মুখোমুখি হন প্রার্থীর সাথে। মনে রাখুন, চাকরিতে প্রার্থী প্রথম ইন্টারভিউতে তার সেরাটা উপস্থাপন করেন। পরবর্তী সাক্ষাৎকারে একটি ঘাটতি তৈরি হয় তার মধ্যে এবং তৃতীয়বারে আসল মানুষটি উন্মোচিত হয়।

তৃতীয়ত, প্রার্থীকে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে আনুন। কারণ মানুষ অফিসের পরিবেশে যেভাবে উত্তর এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, ভিন্ন পরিবেশে তা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে। আমার মতে একে বলি 'শ্যামেলন কমপ্লেক্স।

চতুর্থত, এমন একজনকে নির্বাচন করুন যিনি আপনি ছাড়াও আপনার টিমের। আরো কমপক্ষে তিনজন পরীক্ষককে মুগ্ধ করেছেন। বহুক্ষেত্রে আমাকে মুগ্ধ করেছে এমন কেউ পরীক্ষক দল কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে দেখা যায় কারণটি বেশ জোরালো।

রেফারেন্সগুলোকে সতর্কতার সাথে যাচাই করুন

পঞ্চম, প্রার্থীর দেয়া শেষ তিনটি রেফারেন্স মনোযোগ সহকারে দেখুন। আইনের ভয়ে অধিকাংশই প্রার্থীই আপনাকে দিবে শুধু সর্বশেষ কাজের তারিখগুলো। কিন্তু এখানেও সত্য বের করে আনতে, করতে পারেন কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। যখন কল দিবেন সেখানে, এই প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিচ্ছি বা তাকে আমাদের কোম্পানির নতুন পদের জন্য যাচাই করা হচ্ছে ইত্যাদি না বলে। বলতে পারেন অন্যকিছু। যেমন: ১. আপনারা কি বলতে পারেন, চাকরির সময় প্রার্থীর কি কি দক্ষতা বা ত্রুটি চোখে পড়েছে আপনাদের?

২. এমন কিছু তথ্য কি দিতে পারেন, যেন যাচাই করতে পারি এই প্রার্থীকে আমরা নেব কিনা বা নেওয়াটা যথেষ্ট হবে কিনা?

৩. আপনারা কি এই প্রার্থীকে পুনরায় নিয়োগ দেবেন তিনি আবারো কোনো পদে আবেদন করলে?

যদি রেফারেন্স অচ্ছুক হয় প্রথম কিংবা দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে। তবে সরাসরি তৃতীয় প্রশ্নটি করুন। কারণ এটিই মূল প্রশ্ন। উত্তর যদি না হয় তাহলে আপনি খুব ভেবেচিন্তে নিন সিদ্ধান্তটি। কারণ এক্ষেত্রে প্রার্থী আপনার প্রথম পছন্দ হলেও আবার ভাবা উচিত।

ষষ্ঠ উপদেশটি হলো যদি আর গভীর যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন হয় তাহলে । পূর্বের কর্মদাতাকে বলুন প্রার্থীর কোনো সহকর্মীর নাম্বার দিতে। যেন আপনি তাদের সাথেও কথা বলে নিশ্চিত হতে পারেন। যদি এমনটা ঘটে তাহলে নিশ্চিত থাকুন জীবন বৃত্তান্তের বাইরেও অনেক কিছু জানা যাবে। এমনটাই আমার অভিজ্ঞতা।

  • Collect This Book Original In English From Amazon
  •  Collect This Book Original In Bangla From Wafilife

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ