ন‌বি‌জির ﷺ তিলাওয়াত | লেখক শাইখ হামদান আল হুমাইদি রহ. | Nobijir Tilawat


  • ন‌বি‌জির ﷺ তিলাওয়াত
  • লেখক : শাইখ হামদান আল হুমাইদি রহ.
  • প্রকাশনী : রাইয়ান প্রকাশন
  • বিষয় : কুরআন বিষয়ক আলোচনা
  • অনুবাদক : সালিম আব্দুল্লাহ
  • পৃষ্ঠা : 128, কভার : পেপার ব্যাক
  • ভাষা : বাংলা

মনকাড়া একটি ঘর। দেয়ালে সাঁটানো দামি পেইন্টিং। ফুলদানিতে সাজানো হরেক রঙের কৃত্রিম ফুল। নিয়নের আলোয় চকচক করছে চারপাশ। সেই নয়নাভিরাম ঘরে মানুষ আসছে, যাচ্ছে। কেদারায় বসে খোশগল্প করছে। বই পড়ছে। বাচ্চাদের সাথে খুনসুটি করছে। গভীর রাতে ঘুমুচ্ছে। রাত পোহালে চলে যাচ্ছে আপন কাজে। পরিচারিকা এসে ঘরদোর মুছে দিচ্ছে সময়মতো। সন্ধ্যা হলে আবার ফিরছে সেই ঘরে। সবকিছুই নিয়ম মতো হচ্ছে। কিন্তু…

আলমারিতে সাজিয়ে রাখা কুরআনকে ছুঁয়ে দেখছে না কেউ। জুজদানে বিন্দু বিন্দু করে বালি জমেছে সেই কবে, কিন্তু পরিষ্কার করার ফুরসত হচ্ছে না কারো। ফিরেও তাকাচ্ছে না কেউ ওদিকে। যেন কুরআন একটি শো-পিচ মাত্র। কিন্তু শো-পিচ হলেও তো সপ্তাহে এক-দুবার পরিষ্কার করে রাখে কেউ। কিন্তু কুরআন হেতু কেউ ভ্রুক্ষেপই করছে না সেদিকে! আহ, এ কোন জাতি আমরা। তবে কি আমরাই সেই জাতি, যারা কুরআনকে পরিত্যাজ্য করেছি! ছেড়ে দিয়েছি কুরআনের তিলাওয়াত! ভুলে বসে আছি কুরআনের বিধান! আমাদের ব্যাপারেই কি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাল কিয়ামতের তিন শত আফসোস নিয়ে বলবেন— ’’হে আমার রব! আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য সাব্যস্ত করেছে।’’

ন‌বি‌জির ﷺ তিলাওয়াত বইটির লেখক গুণীজন। ক'দিন আগেই তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। অনূদিত বইটির নাম ‘নবিজি এর রামাদান'। সেখানে লেখক সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দিয়েছিলাম। মূলত তিনি হানবলি মাজহাবের একজন মুকাল্লিদ। আরবের বরেণ্য আলেম। তার কিতাবের বৈশিষ্ট্য হলো, আলোচিত প্রতিটি বিষয় গোলাব পাঁপড়ির মতো সাজানো থাকবে। পুরো গ্রন্থে থাকবে কেবল সহি আর হাসান হাদিসের মিশেল; মাওজু, জয়িফ ও জাল হাদিস থেকে মুক্ত থাকবে। আলোচনার কোথাও কোনো অত্যুক্তি থাকবে না। এ বইটিও তার ব্যতিক্রম নয়। বইটিতে আলোচ্য বিষয় সংশ্লিষ্ট কুরআনের আয়াত আর হাদিস ছাড়া অন্য কিছু নেই। অবশ্য কোনো কোনো বক্তব্যে সালাফদের এক দু'টি বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। ব্যস, এতটুকুই; অতিরিক্ত কোনো আলোচনা নেই। তার এই ভাবধারা প্রশংসনীয়। তবে তা কেবল আরবি ভাষাভাষীদের জন্যই পূর্ণ উপযোগী। কিন্তু অনারবদের জন্য অনুধাবন করা কিছুটা কষ্টসাধ্যই বটে। তাই অধম আল্লাহর ফজলে দু'কলম লিখেছি। জটিল বক্তব্য সরল করার প্রয়াস পেয়েছি। বোধগম্য করার চেষ্টা করেছি হাদিসের মর্মবাণী। উল্লেখ করেছি গুটি কয়েক মাসআলার সমাধান।

বক্ষমান গ্রন্থে উঠে এসেছে প্রিয় নবি এর কুরআনিক দিনযাপন। তাঁর তিলাওয়াতের অনন্য ধরন। সফরে হজরে, রাত্রদিনে, সকালে-বিকেলে, নামাজে বাহিরে এবং সর্ব হালতে তাঁর কুরআন তিলাওয়াতের গল্প। যা আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়কে আন্দোলিত করবে, ইবাদাতে আগ্রহী করে তুলবে, আমলে স্পৃহা বাড়াবে এবং আরও একবার আমাদেরকে রাসুল প্রেমে আবদ্ধ করবে। সর্বোপরি আমাদেরকে বেঁধে রাখবে স্বর্গীয় বন্ধনে।

রাসুলুল্লাহ * এর কুরআনিক দিনযাপন সম্বন্ধে জানার পূর্বে কুরআন সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া অবশ্য কর্তব্য জ্ঞান করছি। যা আমাদের নিত্য দিনের পাথেয় হবে ইন শা আল্লাহ....
অতীত যুগের সকল আসমানি গ্রন্থই ছিল নির্দিষ্ট কোনো জাতি বা ভৌগোলিক সীমারেখা বেষ্টিত জনগোষ্ঠীর জন্য এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হিদায়াতের উৎস। কিন্তু কুরআন মাজিদ কোনো নির্দিষ্ট জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, দেশ বা কালকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়নি; বরং তা সর্বকালের সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্য হিদায়াতের বাণী নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। এ কিতাব চিরন্তন ও বিশ্বজনীন গ্রন্থ। এজন্য প্রতিটি মানুষের জীবনে কুরআনুল কারিমের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশুদ্ধ আকিদা, একনিষ্ঠ ইবাদাত ও উত্তম আখলাকের উৎস এ কুরআন, এটিই মানুষের জীবন বিধান। এতে রয়েছে আদর্শ সমাজ, সুশৃঙ্খল জাতি ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের যথোপযুক্ত প্রয়োজনীয় উপাদান।

কুরআনুল কারিমের বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ তাআলা এই কুরআনকে বিভিন্ন বিশেষণ দ্বারা গুণান্বিত করেছেন, যা তার মর্যাদা-মহত্ত্ব ও গুরুত্বকে প্রকাশ করে। যে কারণে এই কুরআন মহান আল্লাহ তাআলার সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিযার দাবিদার। প্রথমে সেই বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি—
এক. কুরআনুল কারিমকে আল্লাহ তাআলা 'রূহ' বলেছেন, যা ব্যতীত মানুষ মৃত ও
নিশ্চল। তিনি বলেন, “অনুরূপভাবে আমি তোমার কাছে আমার নির্দেশ থেকে ‘রূহ’কে ওহি যোগে প্রেরণ
করেছি; তুমি জানতে না কিতাব কী এবং ইমান কী”।
এ আয়াত প্রমাণ করে যে, কুরআনহীন মুসলিম জাতি রূহ বিহীন মানুষের ন্যায় মৃত ও মূল্যহীন।

দুই. কুরআনুল কারিমকে আল্লাহ তাআলা 'নুর' বলেছেন, যা ব্যতীত মানবজাতি
অন্ধকারে নিমজ্জিত। ইরশাদ হয়েছে,
“অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নুর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে, তার মাধ্যমে আল্লাহ ওই ব্যক্তিদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তার সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তিনি তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন”।

তিন. কুরআনুল কারিমকে আল্লাহ তাআলা পথপ্রদর্শক বলেছেন, যা ব্যতীত মানবজাতি সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত। ইরশাদ করেছেন,
“নিশ্চয় এ কুরআন এমন একটি পথ দেখায় যা সবচে' সরল। আর তা মুমিনদের
সুসংবাদ দেয়”।

বুঝা যাচ্ছে, যে জাতি কুরআনুল কারিমকে আঁকড়ে ধরবে সে জাতি সরল পথে তথা জান্নাতের পথে পরিচালিত হবে। অন্যথায় সে জাতি হবে সরল পথ থেকে বিচ্যুত, দিকভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট।
• সুরা শুরা, আয়াত: ৫২।
* সুরা মায়িদা, আয়াত: ১৫-১৬।
* সুরা ইসরা, আয়াত: 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ