সফলতার কান্না : সিলভিয়া অ্যান হিউলেট | Sofolotar Kanna

  • বই : সফলতার কান্না
  • লেখক : সিলভিয়া অ্যান হিউলেট
  • প্রকাশনী : সিয়ান পাবলিকেশন
  • বিষয় : ইসলামে নারী
  • অনুবাদক : তাবাসসুম মোসলেহ
  • পৃষ্ঠা : 288, কভার : পেপার ব্যাক
  • আইএসবিএন : 9789848046463, ভাষা : বাংলা

আপনি যে বইটি পড়তে যাচ্ছেন, হতে পারে সেটা আপনার জীবন পালটে দেবে। এখানে যেসব তথ্য ও পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে, হতে পারে সেগুলো বিপুলভাবে প্রভাব ফেলবে—হয়তো আপনার নিজের, বা আপনার প্রিয় বন্ধুর, বা আপনার মেয়ের কিংবা আপনার বোনের জীবনে।

প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার আমি অকাট্য প্রমাণ পাই যে, এই বইটি কারও চিন্তাধারা বদলে দিয়েছে, কারও জীবনে পরিবর্তন ঘটিয়েছে, কারও জীবনের গতিপথ পালটে দিয়েছে।

এই বইয়ের পাতায় পাতায় যেসব পরিসংখ্যান এবং বাস্তব গল্প তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো একত্রে মিলে একটি অত্যন্ত স্পষ্ট মানচিত্র তৈরি করে—যা একজন নারী, তার বয়স ১৮ হোক বা ৩৮, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আরও বুঝে-শুনে, আরও অনুপ্রেরণার সাথে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে।

ফার্টিলিটি-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক তথ্য তাকে কৃত্রিম বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার ব্যাপারে আরও পরিষ্কার ধারণা দেবে। বুঝতে সাহায্য করবে ৪২ বছর বয়সে একটি ‘মিরাকল বেবি’ জন্ম দেওয়া আসলে কতটা বাস্তবসম্মত!

ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বিকল্প পথ এবং ফ্যামিলি সাপোর্টের সুবিধার ব্যাপারে নতুন সব তথ্য নারীদের বিভিন্ন সুযোগের ব্যাপারে অবগত করবে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব নারীদের জীবনে অবাক করার মতো।

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বইটি পড়ার আগের আপনি আর পরের আপনির মধ্যে এক বিস্তর তফাৎ আপনি নিজেই খুঁজে পাবেন।

সম্পাদকের কথা
নারীদের জীবনে বাইরে গিয়ে অর্থ উপার্জন করা না-করা, কিংবা এসবের মেরিট-ডিমেরিট প্রসঙ্গে মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ তর্কবিতর্ক হয়। আমি নিজে অনেকবার চেয়েছিলাম বিষয়টি নিয়ে আর্টিকেল বা পুস্তিকা টাইপ কিছু একটা লিখব; কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে হয়ে ওঠেনি। বইয়ের সম্পাদকীয় তো লিখতেই হবে—তাই ইচ্ছাটাকেই ব্যস্ততার অংশ বানিয়ে নিলাম আজ; তবে সংক্ষেপেই কিছু কথা বলব।

আমার যখন বিষয়টা নিয়ে লিখতে প্রবল ইচ্ছা হচ্ছিল, তখন নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম—'আমি এই বিষয় নিয়ে কী কারণে লিখতে আগ্রহ বোধ করছি? কেন আমার মাথায় এটা নিয়ে লেখার এমন তাড়না বোধ করছি? কিংবা এই বিষয় নিয়ে আমার কী এমন অভিজ্ঞতা আছে; যা লিখলে তা মানুষের জীবনে কোনো ভ্যালু যোগ করতে পারে?' খুব স্পষ্ট কোনো উত্তর ভেতর থেকে পেলাম না। একইসাথে তাড়নাটাকেও তাড়াতে পারিনি।

পরে বুঝতে পারলাম—এটা হলো আমার ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনের বিপরীতমুখী অভিজ্ঞতার অবচেতন প্রভাব। এটাই হয়তো আমার অবচেতনমনে এক ধরণের তাড়না তৈরি করেছে।

ব্যক্তিগত জীবনে আমার একটু বিচিত্র ও বিপরীতধর্মী অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতিনিয়ত সেই জীবনধারার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনও করছি। আমার মনে হয় আমি এই ক্ষেত্রে খানিকটা বিরল অভিজ্ঞতা রাখা একজন মানুষ।

এই অভিজ্ঞতাই আমাকে অবচেতন মনে এই বিষয়ে লিখতে 'উসকানি' দিচ্ছিল বোধ হয়। বলি, কী সেই বিপরীতধর্মী ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা।

আমি নিজে লেখাপড়া করেছি কওমি মাদরাসায়, কিন্তু কর্মজীবনে সহকর্মী হয়েছি এমন অনেক মানুষের; যারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলায়ে লেখাপড়া করেছেন—যাদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়ই ছিলেন। আবার যখন থেকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মতো দায়িত্ব কাঁধে চেপেছে, তখন থেকে আমার টিমেও অনেক নারী পুরুষ কাজ করেছেন, করছেন; যারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেছেন। আমি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত এসব মানুষের জীবনধারার খানিকটা এবং চিন্তাধারার কিয়দাংশ কাছ থেকে দেখেছি। তাদের প্রাত্যহিক জীবনের চাওয়া পাওয়া, সুবিধা-অসুবিধাগুলোও প্রত্যক্ষ্য করেছি কাছ থেকে।

আমার দুটি বোন। তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েটেড; বেশ স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; তার হাজবেন্ডও একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত। আরেক বোন মেট্রিকও পাশ করেনি; তার আগেই বিয়ে হয়ে গেল। সংসার-সন্তান সামলাতে গিয়ে লেখাপড়ার পাট সেখানেই চুকাতে হলো। তার হাজবেন্ড বর্তমানে দেশের একটি ইসলামী ব্যাংক-এর একজন ম্যানেজার। আর আমার বোনটা একজন পূর্ণকালীন স্ত্রী ও মা হিসেবে সাংসারিক জীবনযাপন করছে।

আমার দুজন স্ত্রী। তাদের একজন ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের। যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও অল্প বয়সে সংসার ও সন্তানের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আর চালিয়ে যেতে পারেননি; পূর্ণকালীন সংসার-সন্তান সামলাচ্ছেন। আমার আরেকজন স্ত্রী একযোগে বুয়েট, ঢাবি ও মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিলেন; অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করেন। বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ভুলে গেলে চলবে না যে, তাকেও একই সাথে ঘরসংসার ও সন্তান সামলাতেই হচ্ছে।

বিস্তারিত আলোচনায় গেলে এমন আরেকটা পূর্ণ বই লিখতে হবে। তাই সংক্ষেপেই বলব। যদি আমার দুই বোনের জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম আয়েশের তুলনামূলক চিন্তা করি, তাহলে স্পষ্টতই দেখতে পাই যে নিজেকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ