টিমওয়ার্ক ১০১ : লেখক জন সি. ম্যাক্সওয়েল | Teamwork101 By John C. Maxwell

  • বই : টিমওয়ার্ক ১০১ - Teamwork 101
  • লেখক : জন সি. ম্যাক্সওয়েল
  • প্রকাশনী : অন্যধারা
  • বিষয় : আত্ম উন্নয়ন ও মোটিভেশন
  • অনুবাদক : মো. ফুয়াদ আল ফিদাহ
  • পৃষ্ঠা : 97, কভার : হার্ড কভার
  • ভাষা : বাংলা

কীভাবে পড়বেন? কীভাবে বুঝবেন? কীভাবে মুখস্থ করবেন?

আমার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই নিজের বিকাশের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলাম। আসলে, গত চল্লিশ বছর ধরে আমি প্রতি বছর বিকাশের জন্য একটা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, সেটার পিছু ধাওয়া করে আসছি! লোকে বলে, জ্ঞান নাকি বয়সের হাত ধরে আসে। তবে সেই সত্যটা আমি বিশ্বাস করি না। কখনও কখনও বয়স আসে নিঃসঙ্গ সারথির মতো। আমি যদি ক্রমাগত উন্নতির জন্য নিবেদিত প্রাণ না থাকতাম, তাহলে কখনোই আমার কোনো স্বপ্ন অর্জন করতে পারতাম না। আপনি যদি বিকশিত ও সেরা ব্যক্তিদের একজন হতে চান, তাহলে আপনার মধ্যে সেই ইচ্ছাশক্তি থাকতেই হবে।


একই সাথে জীবন বড়োই ব্যস্ত ও জটিল। বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রে, করণীয় কাজের তালিকা সম্পন্ন হবার আগেই ফুরিয়ে যায় দিন। আর জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্যের একেবারে মূলে পৌঁছানো একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বিগত পাঁচ হাজার বছরের তুলনায় গত তিরিশ বছরে বেশি নতুন তথ্য তৈরি হয়েছে-তা কি আপনি জানেন? সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে বসবাস করা লোকজনের বেশিরভাগ তাদের জীবদ্দশায় যত তথ্যের মুখোমুখি হয়েছে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি সাপ্তাহিক সংস্করণে তার চেয়ে অধিক তথ্য রয়েছে।

এজন্যই আমরা ১০১ বইয়ের সিরিজটি প্রণয়ন করেছি। নেতৃত্ব, মনোভাব, সম্পর্ক, টিমওয়ার্ক বা দলগত-কাজ, এবং মেন্টরিংয়ের মতো বিষয়গুলো থেকে আমরা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাছাই করেছি আর সেগুলোকে এমন এক বিন্যাসে রেখেছি যাতে আপনি তা পড়তে পারেন এক বসায়। অথবা যাতে আপনি সহজেই একটি ১০১ বই কোনো ব্রিফকেস বা পার্সে ফেলে রাখতে পারেন, আর সময় পেলে যেখানে-সেখানে পড়তে পারেন ।

আমার অনেক বড়ো বইতেই, আমি বিষয়বস্তুর অনেক গভীরে যাই। তা করার কারণ, আমি বিশ্বাস করি মানুষের কাছে অর্থবহ হয়ে ওঠাই সর্বোত্তম উপায়। টিমওয়ার্ক ১০১ সেদিক থেকে আলাদা। এটা একটা বিষয়ের ভূমিকা, কোনো ‘অ্যাডভান্স বা অগ্রবর্তী কোর্স' নয়। তবে আমি বিশ্বাস করি আপনার এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিকাশের পথে এটি আপনাকে সাহায্য করবে।

টিমওয়ার্ক ১০১


wUgIqvK© ev 'jMZ KvR GZieZjc~Y© †Kb?

মহান কোনো অর্জনের পথে... এক বড্ড নগণ্য একটা সংখ্যা

আত্ম উন্নয়ন ও মোটিভেশন বই 

ব্যক্তিগত জীবনে আপনার নায়ক কারা? আচ্ছা, হয়তো আপনার জীবনে নির্দিষ্ট কোনো নায়ক নেই। তাহলে কয়েকটি প্রশ্ন করি: কোন ধরনের মানুষকে আপনি সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখেন? আপনি কার মতো হতে চান? কোন মানুষটা আপনাকে উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করে? আপনি কাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন...

  • ব্যাবসা-উদ্ভাবক, যেমন জেফ বেজোস, ফ্রেড স্মিথ, বা বিল গেটসকে ?
  • মহান ক্রীড়াবিদ, যেমন মাইকেল জর্ডান, ম্যারিয়ন জোন্স, বা মার্ক ম্যাকগোয়ারকে?
  • সৃজনশীল প্রতিভা, যেমন পাবলো পিকাসো, বাকমিনিস্টার ফুলার,
  • বা উলফগ্যাং অ্যামাদেউস মোজার্টকে? পপ-সংস্কৃতির আইকন, যেমন ম্যাডোনা, অ্যান্ডি ওয়ারহল, বা এলভিস প্রিসলিকে?
  • আধ্যাত্মিক নেতা, যেমন জন ওয়েসলি, বিলি গ্রাহাম, বা মাদার তেরেসাকে? বা
  • রাজনৈতিক নেতা, যেমন শার্লেমেন, অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট, উইনস্টন চার্চিলকে?
  • যুগ বদলে দেওয়া চিন্তাবিদ, যেমন মেরি কুরী, থমাস এডিসন, বা অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে?
অথবা হয়তো আপনার তালিকায় এমন এক ক্ষেত্রের লোক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যার উল্লেখ আমি করিনি। এমনটা বলা নিরাপদ যে আমরা প্রত্যেকেই সফলদের শ্রদ্ধার চোখে দেখি।

আর আমরা, আমেরিকানরা বিশেষ করে অগ্রগামী ও সাহসী ব্যক্তিদের ভালোবাসি, যারা প্রতিকূলতা বা বিরোধ সত্ত্বেও একাকী লড়াই করে: সেটলার যিনি সীমান্তের জঙ্গলে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করেন, বুনো পশ্চিমের শেরিফ যিনি দৃঢ়তার সাথে কোনো বন্দুকযুদ্ধে শত্রুর মুখোমুখি হন, পাইলট যিনি সাহসিকতার সাথে আটলান্টিক মহাসাগর জুড়ে একাকী উড়ে বেড়ান, আর বিজ্ঞানী যিনি তার চিন্তা শক্তির মাধ্যমে বিশ্বকে পরিবর্তন করেন।

  • নিঃসঙ্গ, একাকী যোদ্ধা আদপে একটি গালগপ্পো

একাকী কাজ করে তাৎপর্যপূর্ণ কিছু কখনও কেউ অর্জন করতে পারেনি হয়নি। গভীরে তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন আপাতদৃষ্টিতে যা একাকী কাজ বলে মনে হচ্ছে তা, আসলে দলীয় প্রচেষ্টার ফসল। সীমান্তবাসী ড্যানিয়াল বুন যখন ওয়াইল্ডারনেস রোড তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তখন তার সঙ্গী হয়েছিল ট্রান্সিলভ্যানিয়া কোম্পানি। শেরিফ ওয়াট ইয়ার্প তার দুই ভাই ও ডক হলিডে-কে পাশে পেয়েছিলেন।

অ্যাভিয়েটর চার্লস লিন্ডবার্গের প্রতি সেন্ট লুইসের নয়জন ব্যবসায়ী এবং রায়ান অ্যারোনটিক্যাল কোম্পানির পরিষেবার সমর্থন ছিল, যারা তার বিমানটি বানিয়েছিল। এমনকি অ্যালবার্ট আইনস্টাইন-যে বিজ্ঞানী তার থিয়োরি অভ রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দিয়ে বিশ্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছিলেন-তিনিও অন্য কারও সাহায্য ছাড়া কাজ করেননি। নিজের কাজের জন্য অন্যদের কাছে ঋণী থাকার ব্যাপারে আইনস্টাইন একবার মন্তব্য করেছিলেন, 'দিনে অনেকবার আমি বুঝতে পারি আমার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ জীবন আমারই জীবিত ও মৃত সহকর্মীদের শ্রমের ওপর নির্মিত; আর তাদের কাছ থেকে যতখানি পেয়েছি, বিনিময়ে আমাকে ততখানিই আন্তরিকতার সাথে সচেষ্ট হতে হবে।' এটা সত্য যে আমাদের দেশের ইতিহাস চিহ্নিত হয়েছে অনেক শক্তিশালী নেতা ও উদ্ভাবনী ব্যক্তির অর্জনের দ্বারা, যারা যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তবে সেইসব লোকজন সবসময়ই একটা দলের অংশ ছিলেন।

  • অর্থনীতিবিদ লেসটার সি. থুরো মন্তব্য করেছেন:

দলগতভাবে কাজ করার বিরোধী কিছু আমেরিকার ইতিহাস, সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যে নেই । আমেরিকার ইতিহাসে দল অনেক গুরুত্বপূর্ণ-পশ্চিমকে জয় করেছিল ওয়াগন ট্রেনগুলো, আমেরিকান শিল্পের ক্ষেত্রে অ্যাসেম্বলি লাইনে একসাথে কাজ করে বিশ্বকে জয় করেছিল পুরুষেরা, একটা সফল জাতীয় কৌশল ও অগণিত টিমওয়ার্ক একজন আমেরিকানকে সর্বপ্রথম চাঁদে রেখেছিল (আর যা এখন পর্যন্ত, শেষ)। অথচ আমেরিকান কিংবদন্তিগুলোতে পাওয়া যায় কেবল ব্যক্তি বন্দনা... আমেরিকাতে, প্রতিটি কার্যক্ষেত্রের জন্য হল অভ ফেম বিদ্যমান, কিন্তু কোথাও আমেরিকানরা দলগত কাজের প্রশংসায় কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেনি।

অবশ্যই বলব যে থুরোর প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের সাথে আমি একমত নই। সর্বোপরি, ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে ইউএস মেরিন কর্পস যুদ্ধের স্মৃতিসৌধ দেখেছি, যা ইও জিমা-য় পতাকা উত্তোলনের স্মরণে নির্মিত। তবে কিছু বিষয়ে তিনি সঠিক। এই দেশ গড়ার জন্য টিমওয়ার্ক সবসময়ই অপরিহার্য ছিল। আর এই বিবৃতি প্রতিটি দেশ সম্পর্কেই করা যেতে পারে।

টিমওয়ার্ক বা দলগত কাজের মূল্য

একটা চৈনিক প্রবাদে বলা হয়েছে: 'একজন সক্ষম পুরুষের পেছনে সবসময় অন্যান্য সক্ষম পুরুষ থাকে।' সত্য হলো এই যে মহান অর্জনের কেন্দ্রস্থলে দলগত কাজের অবস্থান। প্রশ্ন এটা নয় যে দলগুলোর কোনো মূল্য আছে কি না। প্রশ্ন হলো-আমরা ওই সত্যকে মেনে নিয়ে একজন ভালো সদস্য হয়ে উঠবো কি না। তাই আমি জোর দিয়ে বলেছি যে মহান কোনো অর্জনের জন্য এক সংখ্যাটা খুবই

নগণ্য। সত্যিকারের মূল্যবান কিছু আপনি একাকী করতে পারবেন না। মানবজাতির ইতিহাসে সত্যিকারের তাৎপর্যপূর্ণ এমন এক কাজের কথা চিন্তা করার চ্যালেঞ্জ আপনাকে করছি, যা একাকী এক মানুষ কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছে। আপনি যে নামই নিন না কেন, সেখানে কোনো একটা দলকে জড়িত দেখতে পাবেন। এজন্যই রাষ্ট্রপতি লিন্ডন জনসন বলেছেন, 'এমন কোনো সমস্যা নেই যা আমরা মিলেমিশে সমাধান করতে পারি না, আর খুব কম বিষয়ই আছে যা আমরা একাকী সমাধান করতে পারি।'

সি. জিন উইলকস তার জিসাস অন লিডারশিপ বইতে উল্লেখ করেছেন দলের ক্ষমতা আধুনিক ব্যাবসায়িক জগতেই কেবল স্পষ্ট নয়, এর এমন এক গভীর ইতিহাস রয়েছে, যা বাইবেলের যুগেও ছিল স্পষ্ট। উইলকস দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন:

  • দল অধিক লোকজনকে সম্পৃক্ত করে, এইভাবে একক ব্যক্তির তুলনায় অধিক সংস্থান, পরিকল্পনা ও শক্তি সরবরাহ করে। দল নেতার সম্ভাবনাকে সর্বাধিক আর দুর্বলতাকে হ্রাস করে। একক ব্যক্তির মধ্যে শক্তি ও দুর্বলতা অধিক প্রকাশিত হয়। .
  • কীভাবে একটা প্রয়োজন মেটাতে বা লক্ষ্যে পৌঁছতে হয় সে সম্পর্কে একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে দল, এইভাবে প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিকল্প তৈরি করে। কোনো সমস্যায় পড়লে ব্যক্তিগত উপলব্ধি খুব অল্প ক্ষেত্রেই একটা গোষ্ঠীর মতো বিস্তৃত ও গভীর হয়।
  • জয়ের কৃতিত্ব আর পরাজয়ের দোষ ভাগ করে নেয় দল। এটি প্রকৃত নম্রতা ও নিখাদ সমাজকে এক হতে উৎসাহিত করে। কৃতিত্ব বা দোষ একাই গ্রহণ করতে হয় স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে। এটি অহংকার ও কখনও কখনও ব্যর্থতার অনুভূতি জাগায়।
  • লক্ষ্যের জন্য নেতাকে দায়বদ্ধ রাখে দল। কারও সাথে সংযুক্ত না থাকা স্বতন্ত্র ব্যক্তি কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই লক্ষ্য বদলে ফেলতে পারে।
  • স্বতন্ত্র ব্যক্তির তুলনায় দল বেশি কিছু করতে পারে।

আপনি যদি আপনার ভেতরে থাকা সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে বা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবের দিকে ধাবিত হতে চান-যেমন, আপনি চলে যাবার দুই হাজার বছর পরেও যেন আপনার প্রদানকৃত শিক্ষা বিনিময় করা হয় তাহলে আপনাকে একটা দলের সক্রিয় সদস্য হতে হবে। ব্যাপারটা সস্তা হতে পারে, তারপরও এটাই সত্য: স্বতন্ত্র ব্যক্তিরা খেলাটা খেলে, আর দল জেতে চ্যাম্পিয়নশিপ।

আমরা একা থাকি?

দলের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে সবকিছু জেনেও, কিছু ব্যক্তি কেন নিজেরাই সবকিছু করতে চায়? এর অনেকগুলো কারণ আছে বলেই আমার বিশ্বাস ।

১. অহং

খুব কম লোকই আছে যারা স্বীকার করে যে তারা সবকিছু করতে পারে না, অথচ পারবে যে না... সেটাই জীবনের বাস্তবতা। কোথাও কোনো সুপারম্যান বা সুপারওম্যান নেই। যেমনটা আমার INJOY (ইনজয়) গ্রুপ টিমের সদস্য, কেরি ওয়ালস বলে, ‘লোফালুফির সময় বাড়তি বস্তু আপনার প্রতিভাকে বৃদ্ধি করে না বরং তা ফেলে দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই প্রশ্ন এই নয় যে আপনি নিজেই সবকিছু করতে পারবেন কি না; প্রশ্ন হলো আপনি কত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন যে তা পারবেন না?

জনহিতৈষী অ্যান্ড্রু কার্নেগি ঘোষণা করেছেন, 'যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে একটা কাজ একাকী করার তুলনায় ভালোভাবে করতে অন্য লোকজন আপনাকে সাহায্য করতে পারে, তখন আপনার বিকাশের পথে একটা বড়োসড়ো পদক্ষেপ স্পষ্ট হয়।' সত্যিকারের বড়ো কিছু করার জন্য, নিজের অহং ত্যাগ করে একটা দলের অংশ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হোন।

২. নিরাপত্তাহীনতা

নেতাদের সাথে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি-কিছু ব্যক্তি দলগত কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়, কেননা তারা অন্য লোকজনকে হুমকি মনে করে। ষোড়শ শতাব্দীর ফ্লোরেনটাইন রাষ্ট্রনীতিবিদ নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি-এর পর্যবেক্ষণও সম্ভবত অনুরূপ ছিল, যা তাকে লিখতে প্ররোচিত করেছিল, 'একজন শাসকের বুদ্ধিমত্তা অনুমান করার প্রথম পদ্ধতি হলো তাকে ঘিরে থাকা লোকজনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া।'

আমি বিশ্বাস করি-দুর্বল বিচার বা বুদ্ধিমত্তার অভাব নয়, বরং নিরাপত্তাহীনতার কারণে নেতারা প্রায়শই নিজেদের দুর্বল লোকদের দিয়ে ঘিরে রাখেন। যেমনটা আমি দ্য ২১ ইররিফিউটেবল ল'জ অভ লিডারশিপ বইতে বলেছি, শুধু মাত্র নিঃশঙ্ক নেতারা অন্যদের ক্ষমতা দেয় ।

এটাই ক্ষমতায়নের আইন। অনিশ্চিত নেতারা সাধারণত দুটোর একটির কারণে দল গঠনে ব্যর্থ হয়: হয় তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত সমস্ত কিছুর ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চায়, নতুবা তারা অধিক যোগ্য কারও দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার ভয় পায়। উভয় ক্ষেত্রেই, যেসব নেতারা দলগত কাজের প্রচারে ব্যর্থ হয় তারা নিজের সম্ভাবনাকেই হ্রাস করে; এবং যাদের সাথে কাজ করে, তাদেরও সর্বোত্তম প্রচেষ্টাকে নষ্ট করে। রাষ্ট্রপতি উইড্রো উইলসনের পরামর্শ তাদের কাজে আসতে পারে, ‘হাতে থাকা মগজের সবটা ব্যবহার করার পাশাপাশি, আমাদের উচিত আরও মগজ ধার করা।'

৩. নির্বুদ্ধিতা

কনসালটেন্ট জন ঘেগান নিজের ডেস্কে একটা চিহ্ন রেখেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, 'যদি আমাকে সবকিছু আবার করতে হয়, তাহলে আমি সাহায্য চাইবো।' এই কথাটি নির্ভুলভাবে তৃতীয় ধরনের লোকদের অনুভূতির প্রতিনিধিত্ব করে, যারা দল-নির্মাতা হতে ব্যর্থ হয়। তারা অর্বাচীনের মতো বড়ো কিছু অর্জনের অসুবিধাকে অবমূল্যায়ন করে। ফলে তারা চেষ্টা করে একাকী অগ্রসর হওয়ার।

এই দলে থেকে শুরু করা কিছু লোকজন শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়ে যান। তারা আবিষ্কার করেন-নিজেদের সক্ষমতার চেয়ে তাদের স্বপ্নগুলো বড়ো; তারা এ-ও বুঝতে পারেন-একাকী নিজের লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারবেন না, আর তাই সমন্বয় করে নেন। সফলতার জন্য দল গঠনের দিকে ধাবিত হন। তবে কিছু লোকজন বড্ড দেরি করে সত্যটা শেখে আর ফলস্বরূপ, তারা কখনোই নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। আর যা একটা লজ্জাজনক বিষয়।

৪. মানসিক অবস্থা

কিছু লোকজন খুব একটা মিশুক নয়, আর দল গঠন ও দলীয় কাজে অংশগ্রহণ তাদের চিন্তাভাবনায় থাকে না। চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও, তাই তাদের মাথায়

আসে না যে কিছু একটা অর্জনের জন্য অন্যের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। একজন মিশুক হিসেবে, বিষয়টা বোঝা আমার জন্য কঠিন। যখন আমি কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই, তখন প্রথমেই চিন্তা করি এই ব্যাপারে যাদের সাহায্য আমি চাই, তাদের নিয়ে। ছোটবেলা থেকেই আমি এভাবে চিন্তা করে আসছি। সবসময়ই ভেবেছি- যখন নিজের সাথে অন্যদের আমন্ত্রণ জানাতে
পারছেন, তখন কেন একাকী ভ্রমণ করবেন?

সবাই যে এভাবে কাজ করে না- তা আমি বুঝতে পারি। তবে আপনি স্বাভাবিকভাবে একটা দলের অংশ হওয়ার দিকে ঝুঁকছেন কি না তা আসলে অপ্রাসঙ্গিক। আপনি যদি একাই সবকিছু করেন আর অন্য লোকজনের সাথে সম্পৃক্ত না হন, তাহলে আপনি নিজের সম্ভাবনার পথে বিশাল বাধার সৃষ্টি করবেন। ড. অ্যালান ফ্রোমে চাতুর্যের সাথে বলেছেন, 'অন্যের বিরুদ্ধে কাজ করার তুলনায় মিলেমিশে কাজ করে অধিক অর্জন করার ব্যাপারে মানুষের সুখ্যাতি আছে।' এরচাইতে বড়ো অবমূল্যায়ন আর কী হতে পারে! দীর্ঘসময় ধরে স্থায়ী হবে, এমন কিছু করতে হলে একটা দল লাগে। এছাড়াও, বিশ্বের সবচেয়ে অন্তর্মুখী ব্যক্তিও একটা দলে থাকার সুবিধাগুলো উপভোগ করা শিখতে পারে (এমনকী কেউ দুর্দান্ত কোনো কিছু অর্জন করার চিন্তা না করলেও পারে)।

দ্য ফিনিশিং টাচ-এ আমার বন্ধু চাক সুইন্ডল একটা লেখা লিখেছে, যা টিমওয়ার্ক বা দলগত কাজের গুরুত্ব তুলে ধরে:
কেউই পুরো একটা দল নয়... আমাদের একে-অপরকে দরকার। কাউকে আপনার প্রয়োজন আর কারো আপনাকে প্রয়োজন। আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নই । জীবন নামের এই কার্যটাকে সম্পাদন করার জন্য, আমাদের সমর্থনের দরকার হবে। আর সম্পৃক্ত হয়ে দেখাতে হবে প্রতিক্রিয়া। করতে হবে আদান-প্রদান। দায় স্বীকার যেমন করতে হবে, তেমনি ক্ষমাও করতে হবে। হাত বাড়িয়ে করতে হবে আলিঙ্গন ও ভরসা...যেহেতু আমরা কেউই পুরো, স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ, অতি সক্ষম, সর্বশক্তিমান-বিশেষজ্ঞ নই, তাই আসুন নিজেদের মতো করে কাজ করা ছেড়ে দিই। আমাদের ওই নির্বোধ ভূমিকা পালন করা ছাড়াই জীবন যথেষ্ট নিঃসঙ্গ। খেলা শেষ। আসুন সম্পৃক্ত হওয়া যাক।

যে ব্যক্তি একাকী সবকিছু করার চেষ্টা করছে তার জন্য খেলাটি আসলেই শেষ। বড়ো কিছু করতে চাইলে আপনাসকে অবশ্যই অন্যদের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। মহান কোনো অর্জনের পথে...এক আসলেও খুবই নগণ্য একটা সংখ্যা।

  • টিমওয়ার্ক ১০১ এর অরিজিনাল অনুবাদ কপি সংগ্রহ করুন Rokomari | Wafilife | Aadi | Boiferry And Boibazar থেকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ