[লেখক সালমান রুশদিকে গতকাল ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তার লেখা বই দ্য স্যাটানিক ভার্সেস, লেখক সালমান রুশদী এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনির ফাতওয়ার বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তাই আজ আপনাদের জন্য জানাচ্ছি]
১। দ্য স্যাটানিক ভার্সেস বইটির লেখক সালমান রুশদীকে হত্যার ফাতওয়া দেয়া হয়েছিলো। ফাতওয়া দিয়েছিলেন তৎকালীন ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি। উল্লেখ্য, 'আয়াতুল্লাহ' শব্দটি ইরানের প্রধান নেতার নামের পূর্বে ব্যবহৃত হয়, যা মূলত ইরানের সুপ্রীম লিডারের পদ।
২। দ্যা স্যাটানিক ভার্সেস সম্পর্কে অভিযোগে বলা হয়েছিলো, এটি নবী মুহাম্মদ'কে (সাঃ) ব্যঙ্গ করে লেখা হয়েছিলো। বইটি নবীকে অপমানের শামিল বলেই গণ্য হয়েছিলো। আয়াতুল্লাহ খোমেনি তাই জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- "আমি বীর মুজাহিদদেরকে আহ্বান করছি তাদেরকে হত্যা করার জন্য, যাতে নতুন করে আর কেউই মুসলিমদের কোন পবিত্র বিষয় নিয়ে এমন ঘৃণ্য কাজ করার সাহস না দেখাতে পারে। আর তাদেরকে হত্যা করতে গিয়ে কেউ যদি মৃত্যবরণ করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সে শহীদ হিসেবেই গণ্য হবে, ইনশাআল্লাহ।"
৩। সালমান রুশদীকে হত্যা করার জন্য এমনকি তিন মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিলো।
৪। বইটি লেখার পর সালমান রুশদীর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিলো। তিনি এরপর থেকে অন্তরালে বসবাস করতে শুরু করেন।
৫। এমনকি ফাতওয়ার পর তাকে নিজের সুরক্ষার জন্য কমপক্ষে পঞ্চাশ বার জায়গা বদল করতে হয়েছিলো।
৬। নিজের জীবন হুমকির মুখে থাকায় সালমান রুশদী ক্ষমা প্রার্থণা করে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি মৃত্যুর পর। কিন্তু সেটি গ্রহণ করা হয়নি ইরান সরকার কতৃক। ফাতওয়া বহাল রয়েছে আগের মতই। এরপর লেখক সালমান রুশদী বইটির প্রকাশককে পেপারব্যাক মুদ্রণ এবং অনুবাদ না করার জন্য নির্দেশ দেন। তাতেও ইরান সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি।
৭। এরপর থেকে সালমান রুশদী স্যার সালমান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান এবং পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি ফ্রিডম অব স্পিচের অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে ওঠেন। আজও ফ্রি থিংকারদের কাছে তার সম্মান বহাল রয়েছে।
৮। ১৯৯১ সালে বইটির জাপানি অনুবাদককে হত্যা করেছিলো ইসলামপন্থীরা এবং একই বছরে বইটির ইতালিয়ান অনুবাদককে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর আহত করেছিলো।
৯। ১৯৯৩ সালে ফের বইটির তুর্কী অনুবাদক আজিজ নেশিনকে হত্যা করার জন্য একটি লিটার্যারি ফেস্টিভ্যালে হামলা চালিয়েছিলো একদল ইসলামপন্থী। আজিজ নেশিনকে তারা তাদের হাতে সোপর্দ করতে বলেছিলো সেখানকার সকল ব্যক্তিদেরকে। সৌভাগ্যবশত আজিজ নেশিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তাই ক্ষোভে চরমপন্থীরা উক্ত জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলো।
১০। এই ঘটনার মাসখানেক পরই বইটির নরওয়েজিয়ান প্রকাশককে গুলি করা হয়েছিলো। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। তবে প্রাণে বেঁচে যান সে যাত্রায়।
১১। সুনির্দিষ্ট কোন একটি বই নিয়ে সবচাইতে বেশি আলোচনা, উগ্রপন্থীদের আক্রমণ এবং হতাহতের ঘটনা ঘটার দিক দিয়ে 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এবং বইটির লেখক সালমান রুশদী তার দুঃসাহসিক কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।
সূত্রঃ
বই- দ্য শ্যাডো কমান্ডার (সোলায়মানি, ইউএস এবং ইরানের বৈশ্বিক লক্ষ্য)
লেখক- আরাশ আজিজি
অনুবাদক- ত্বাইরান আবির
ধরণ- বায়োগ্রাফি
বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো আকাশ প্রকাশনা সংস্থা থেকে বইমেলা-২০২১ এ।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....