একজন জহির রায়হান - তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পলেখক, চলচ্চিত্রকার, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাই

তিনি একজন ঔপন্যাসিক,
লিখেছেন-
হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে, বরফ গলা নদী, তৃষ্ণা, আর কতদিন, কয়েকটি মৃত্যু ইত্যাদি।
কী চমৎকার নাম! উপন্যাস গুলোর নাম শুনলেই মনে শিহরণ জাগে। আর এক এক টা উপন্যাস কি জীবন্ত! দেশপ্রেম, ভাষা আন্দোলন, প্রেম-ভালবাসা কী নেই?


হাজার বছর ধরে উপন্যাসের “রাত বাড়ছে, হাজার বছরের পুরনো সেই রাত!” কিংবা আরেক ফাল্গুনের " আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো।" আজও পাঠকের মনকে শিহরিত করে, ভাবতে শেখায়, উত্তেজিত করে। ছোট্ট কয়েকটি কথা অথচ কত শক্তিশালী এক-একটি বাক্য!


তিনি একজন গল্পলেখক,
একুশের গল্প নিশ্চয়ই পড়েছেন? ঐ যে তপুর ফিমার টা একটু ছোট ছিল... ঐ যে রেনুর সাথে ভালোবাসার গল্পটা... কী অসাধারণ গল্প! কী অভাবনীয় প্রতিবাদ!


তিনি একজন চলচ্চিত্রকার,
পরিচালনা করেছেন-
কখনো আসেনি, কাঁচের দেয়াল, সঙ্গম (পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র), জীবন থেকে নেয়া, Stop Genocide, Let there be light ইত্যাদি। “জীবন থেকে নেয়া” চলচ্চিত্রে সর্বপ্রথম জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়... কি অসাধারণ প্রতিভা... স্বাধীন বাংলাদেশের এতগুলো বছর পরও তিনি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার।


তিনি একজন ভাষাসৈনিক,
সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ভাষা আন্দোলনে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১০ জনের যে দলটি প্রথম মিছিল বের করে তিনি তাতে ছিলেন।


তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা,
১৯৭১ সালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কলকাতায় চলে যান। কলকাতাতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে দেন মুক্তিযুদ্ধের ফান্ড এ।


তিনি একজন ভাই,
মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে হানাদার পাকিস্তানি ও আলবদর-আল শামস- রাজাকাররা করেন ইতিহাসের জঘন্যতম চক্রান্ত। পরাজিত হওয়ার আগে এমন জগন্য-ঘৃণ্য-ভয়ংকর কাজ পৃথিবীর কোথাও কেউ করেনি। বেছে বেছে শত্রুরা হত্যা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, দার্শনিক ইত্যাদি পেশার প্রায় এক হাজার সূর্যসন্তানদের!


সেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তাঁর বড় ভাই শহিদুল্লাহ কায়সার। কিন্তু রায়ের বাজার বধ্যভূমি সহ অনেক জায়গায় খুঁজেও ভাইয়ের লাশ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি ভাইকে খুঁজতে মিরপুর যান। উল্লেখ্য মিরপুর তখনো মুক্ত হয়নি। শহিদুল্লাহ কায়ছারের মত তিনিও একেবারে হারিয়ে যান অজানায়। তাঁর চলচ্চিত্রের নামে বললে- কখনো আসেনি!


তিনি জহির রায়হান। পুরো নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ১৯৩৫ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন এ মহান মানুষটি। জন্মদিনে তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

__Credit : Junayed Hossain

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ