ঢাকায় দিনে ৩৯ টা ডিভোর্স হচ্ছে - দায়ী কে? নারী নাকি পুরুষ?

ঢাকায় দিনে ৩৯ টা  ডিভোর্স হচ্ছে। 
ঘন্টাতে একটিরও বেশী। এটা শুনে সবাই সেই পুরাতন কাসুন্দি নিয়ে বসে পড়েছে। সব দোষ ঐ মেয়েদের।

কারন - 

  • মেয়েরা এখন বেশী শিক্ষিত হচ্ছে,
  • মেয়েরা চাকুরী করেছে,
  • মেয়েরা বিজনেস করছে! 
  • আবার একদল হাসছে আর বলছে দেখো বেপর্দা মেয়ে বিয়ে করলে তো ডিভোর্স হবেই!
 একদিন তো রিপন ভাই বলেই বসলো এজন্যই আমি বেশী শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করিনি,আর বউকে চাকুরী করানো আমার পছন্দ না। সেদিন  সাধুবাদ জানিয়েছিলাম তাকে আর
আমি শুধু বলেছিলাম আপনার মায়ের জরায়ুর অপারেশনটাতো ডা. ফাতিমার কাছেই করিয়েছিলেন তাইনা? আর ডা. ফাতিমাও কারো স্ত্রী। সবাই আপনার স্ত্রীর মতো গৃহীনি হলে বাচ্চা প্রসব করাবেন কার আছে? 

রিপন ভাইরে মতো পছন্দ হলে কোন কথা নেই। সুখী হন।
কিন্তু আপনি শিক্ষিত, সুন্দরী, স্মার্ট, ধার্মিক, আধুনিক, গালে টোল পড়া, ভুবন ভোলানো হাসির রানী, ধনী শ্বশুরের আদরের দুলালী, বংশীয় ঘরের চাকুরীজীবি নারী বিয়ে করবেন আর সার্ভিস চাইবেন গ্রামের কপালপোড়া সখিনাবিবির মেয়ে সাগিরার মতো। সকাল সন্ধ্যা সে গরম খাবার নিয়ে বসে থাকবে আর বাতাস করবে, কিংবা নায়ক রেড ওয়াইন খেয়ে বাড়িতে ফিরবেন তবুও শাবানার মতো লাথি খেয়েও আপনার জুতা খুলে দিবে,  মসজিদে গিয়ে টাকা দান করে আপনার মঙ্গল কামনা করবে এসব ভাবাটা এই একবিংশ শতকে অবান্তর। 

আপনার সব অন্যায় সে মুখ বুজে সহ্য করবেনা। আপনি পর্ণ এডিক্টেড হোন কিংবা ইয়াবা তারপরও আপনার পায়ের নিচে জান্নাত বলে  তাকে বোকা বানাতে পারবেন না। 

একজন উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে ধার্মিক হলেও সে অন্যায়কে আঙ্গুল তুলে অন্যায় বলার সাহস রাখে। প্রতিবাদ করতে পারে।  বরং সে একটু বেশীই সাহসী কারন তার হৃদয়ে রাসুল সা. কে ধারন করে আর আল্লাহ্ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করে না। 

সময় পাল্টে গেছে ব্রো!  নিজের মানসিকতা পরিবর্তন করুন।
বিয়ের আগে ডিসিশন নিন। কোন মেয়েকে বিয়ে করতে চান? 
সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করুন ।

আপনার শিক্ষিত সুন্দরী বউটাও সাতঘাট ঘুরে, লেখাপড়া করে, জবযুদ্ধে জয়ী হয়ে নিজেকে আপনার জন্য স্মার্ট হিসাবে প্রস্তুত করলেও আপনি কিন্তু আপনার দাদা তার দাদার আমলের মতো ক্ষ্যাত মানসিকতা নিয়েই অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে লুঙ্গি পরে এসি ছেড়ে দিয়ে মোবাইলে এ্যানি, ব্যানি, এঞ্জেলার সাথে সেক্সচ্যাট শুরু করেন। 
বউ তখন বাহিরের পোশাক খুলে  এ্যাপ্রণ পরে কিচেনে  ঢুকে রান্না করে আর বাচ্চাকে ডাইনিং টেবিলে পড়াতে বসায়।
যিনি ঘর এবং বাহির দুটো সামাল দিচ্ছে এমন দুরন্ত আর ভুবনজয়ী নারীকে পাশে রাখবেন, তার সম্মানে বুক ফুলিয়ে রাস্তাতে হাঁটবেন অথচ শতবছরের পুরানো, বাসি, পঁচা, দূর্গন্ধযুক্ত প্রভুত্ববাদ মগজে পুষে রেখে শান্তি কামনা করবেন!

কি অদ্ভুত না!

রাত জেগে আপনার বউটা অসুস্থ বাচ্চা কোলে সারারাত কাটিয়ে দিবে আর আপনি নাকে সর্ষের তৈল দিয়ে তৈলাক্ত ঘুম দিবেন তা নিয়ে সংসারে অশান্তি হতেও পারে। কারন সকাল নটাতে তারও অফিস আছে। সকালের নাস্তাটাও তাকেই বানাতে হবে ভেবে আপনি উঠবেন সকাল ৮টা ১০ এ।

একসময় জরিনাবানুর স্বামী মরেছে আর কপাল খুলেছে পাশে বাড়ির কুদ্দুস চকিদারের। নিয়মিত জরিনাবানুর সাথে লটরপটরে ইতিহাস গ্রামের সবার মুখের মজাদার টপিক হলেও কুদ্দুসের বউটা কিন্তু নিরবে নিভৃতে চোখের পানি ফেলেছে, স্বামীকে বলতে গেলে রক্তাক্ত হয়েছে, সংসার ছেড়ে চলে যেতে বলেছে, কিংবা ভাত কাপড়ের খোটা তাকে রাতদিন শুনে আধমরা হয়ে অসুখে বিসুখে অবহেলা আর অযত্নে মরার মতো করে বেঁচে থাকতে হয়েছে।

কিন্তু ধরেন আপনি যদি আজ আপনার সুন্দরী ফেসবুক ফ্রেন্ড, স্বামী বিদেশ থাকে মারাও যাইনি এমন একজনেরর বাড়িতে গিয়ে দু ঘন্টা কাটিয়ে আসেন তখন আপনার বউ তর্জনি উঁচু করে বলতেই পারে আর যদি কোনদিন এমন করো তবে কিন্তু খবর আছে। সে এটা সহ্য করবেনা।  না শুনলে আপনাকে মুখের উপরই বলে দিবে  একদিন আমিও আমার কলিগ কে নিয়ে রাস্তাতে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাবো আর সেলফি তুলবো। সে কিন্তু মুখ বুজে কাঁদবে না।
মাইন্ড ইট।

নারীর অন্যায় মেনে না নেবার প্রবনতাকেই আজকাল অহংকার বলে চালানো হচ্ছে।  সেটাই মুল সমস্যা। 
আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা বদনবুকে নাক ডুবিয়ে শুয়ে থাকবেন, সুন্দরী বান্ধবীর সাথে রাতবিরাতে কথা বলবেন, নিজের অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা না করিয়ে ল্যাপটপ কাধে ঝুলিয়ে বড়লোকি দেখাবেন!  ইউটিউবের অন্ধকার গলিতে ঢুকে নোংরামীতে স্নান করবেন,
দুনিয়ার সকল বন্ধুবান্ধবের বাড়ির কুক্তা বিড়িলের খবর রাখবেন আর স্ত্রীর  খোঁজ রাখবেন না!   আর প্রতিবাদ করতে গেলে বলবেন উচ্চ শিক্ষিত মেয়েরা উগ্র হয়, বদমেজাজি হয়,  অসহিষ্ণু হয়, অধৈর্য্য হয়, বেয়াদব হয়, মুখে মুখে তর্ক করে!
ব্যাপারটা কেমন  অলিক হয়ে গেল না?

বিশ্বাস করেন এমন একদিন খুব নিকটে  যেদিন চাকুরীজীবী মা এবং বিজনেসম্যান বাবা তার কর্মজীবি  মেয়েকে বিয়ে দেবার আগে ছেলেকে প্রশ্ন করবে তুমি কি কি রান্না করতে পারো? আমার মেয়ে যখন তোমার সন্তান কে গর্ভে ধারন করতে গিয়ে বমি করতে করতে বিছানা থেকে উঠতে পারবে না তখন কি তুমি তাকে এক বাটি স্যুপ বানিয়ে খাওয়াতে পারবে? 

ছেলে উত্তর না হলে মুখের উপর তার অভিভাবকদের বলে আসবে পুত্রকে রাজপুত্র না বানিয়ে মানুষ বানান। কারন রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছে। 
নিজের মা ও তো অসুস্থ হতে পারে তাকে দেখার জন্য ছেলেরবউ আছে কিন্তু বউটার অফিস আওয়ারে তো নিজের ছেলেটার কাছে  একটু সেবা কি মা আশা করতে পারেনা!

মেয়ের  অভিভাবকেরা বুঝে, শুনে, দেখে নিজের সমস্যাগুলোকে অভারকাম করে জামাতা নির্বাচন করবে। কেবলই বর্তমানের ছেলেপক্ষের মতো কেবল চেহারা আর দিঘলকালো চুল দেখে নয়।

সেই সাহসও অর্জন করতে শিখতে হবে। 

ডিভোর্সের মুল কারন পুরুষদের অনুন্নত মানসিকতা,  প্রভুত্ত্বের প্রবনতা,নারীকে তার সঠিক সম্মান আর মর্যাদা না দেওয়া দায়ী। এমনকি নারীকে মানুষই মনে না করা! 

নারীও দুধে ধোয়া না। তবে সব দোষ তার একার না  না  না। 

 ডিভোর্সি মেয়ের পিতার সাথে  একদিন সময় নিয়ে কথা বলবেন প্লিজ। বাকীটা বুছতে পারবেন! 
কিংবা ঐ যে মেয়েটার গায়ে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার স্বামী তার ভাইটার সাথে একদিন কথা বলবেন! 

নিজেকে কেবল পুরুষ নয় পিতা, ভাই, পুত্রের স্থানে দাঁড় করিয়ে নিজেদের দিকে আঙ্গুল তুলতে শিখুন। সমস্যা কমে শুন্যে নেমে যাবে।

ডিভোর্স
সুমেরা জামান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ