‘মেয়ে আমার সবেমাত্র এসএসসি দিল। সামনে কলেজে উঠবে। এ জন্য ভালো একজন টিউটর খুঁজছি। আপনি আমাকে সহযোগিতা করতে পারবেন ভেবেই আপনার বাসায় আসা।’ অতিথি মানুষটা মৃদু হেসে ভাইয়াকে বললেন।
মেয়ে বিষয়ক আলোচনা শুরু হতেই আমি পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। শেষ পর্যন্ত আলোচনার মোড় কোন দিকে যাবে বলা মুশকিল। বেশ কিছুদিন আগে একবার তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলতে শুনেছিলাম। কাজেই বেরিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আমি বেরোতে বেরোতে শুনলাম, ভাইয়া বলছেন, ‘কী যে বলেন ভাইজান! আমি মাদরাসায় পড়েছি। আরবি শেখার জন্য শিক্ষক চাইলে একটা কথা ছিল। জেনারেলপড়ুয়া টিউটর সম্পর্কে ধারণা নেই তো।’
শুনেছি আপনার ছোট ভাইটা অমক কলেজে পড়ে। ও পারবে না একটা ব্যবস্থা করে দিতে?’
‘জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে। তবে ওর খোঁজে মেয়ে টিউটর থাকার কথা না। মেয়েদের সঙ্গে মেশার অভ্যাস নেই ওর।’ বলে গর্বের হাসি হাসলেন ভাইয়া।
‘তাহলে তো আরও ভালো। আমার আসলে ছেলে টিউটরই দরকার! মেয়েটা পর্দা করে। ওর টিচার বাসায় গিয়ে পড়িলে চলে এল। আমরা যেহেতু আছিই, সমস্যা হবে না আশা করি।’
এবার নড়েচড়ে বসলেন ভাইয়া। একে তো বেচারা হুজুর মানুষ। তার ওপর বলছে মেয়েটা পর্দা করে। অথচ টিউটর চাই ছেলে! এটা কোন ধরনের রসিকতা? ঘটনা বুঝতে না পেরে ভাইয়া মাথা চুলকাতে লাগলেন।
ভাইয়াকে চুপচাপ ভাবতে দেখে মানুষটা সম্ভবত খুব আনন্দ পেলেন। বললেন, ‘সত্যি বলতে কি, আপনার ছোট ভাইটাকেই টিউটর হিসেবে চাই। আমি ওর সম্পর্কে ভালোমতো খোঁজখবর নিয়ে এসেছি। আপনি বড় ভাই। আপনার অনুমতির দরকার আছে। তাই একেবারে সোজা বাসায় চলে এলাম।’
ভাইয়া আঁতকে উঠলেন। ‘ছোটটা কোনো মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কথাই বলতে পারে না ঠিকমতো। আর ও যাবে মেয়ে পড়াতে? তা ছাড়া এটা জায়েজ নয়। আমি অনুমতি দিতে পারছি না, ক্ষমা করবেন।’
‘সারা জীবনের জন্য ওকে টিউটর হিসেবে পেতে চাইলে নিশ্চয়ই আপনি অমত করবেন না!’ হা হা করে হেসে উঠলেন মানুষটা।
হঠাৎ গেলেন ভড়কে ভাইয়া। ‘সারা জীবনের জন্য টিউটর’ কথাটার মধ্যে বিশেষ একটা ইঙ্গিত আছে। ভাইয়া না বোঝার ভান করে বললেন, ‘আমি আসলে বুঝতে পারছি না আপনার কথা। একটু ক্লিয়ার করে বলুন তো, কী বলতে চাইছেন।’
মানুষটা এবার খুব আগ্রহ নিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি এতক্ষণ সময় নষ্ট করার জন্য। আমি আসলে এসেছি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। মেয়েটা বড় হচ্ছে। একসময় না একসময় বিয়ের চিন্তা করতেই হবে, কী বলেন?’
‘জি, তা তো অবশ্যই।’
‘তাহলে আশা করি বুঝতে পেরেছেন।’
ভাইয়া কেমন অবাক চোখে মানুষটার দিকে তাকালেন। সত্যি সত্যি বলছে না কি এটাও কোনো রসিকতা হবে কে জানে! অবিশ্বাসের স্বরে ভাইয়া বললেন, ‘জি?’
‘আপনার ছোট ভাইকে আমার পছন্দ হয়েছে। বিয়ের উপযোগী মেয়ে আছে বলে নিজেই চলে এলাম। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায়।’
ভাইয়া হঠাৎ উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। ‘আপনি সত্যি করে বলুন তো, কী দরকারে এসেছেন?'
‘বললাম তো।’
‘কিন্তু ও তো এখনো অনেক ছোট। পড়াশোনাই শেষ হয়নি।’
‘সেটা জেনেই তো এসেছি, না কি? তা ওর বয়সটা কত যেন?
‘কত আর হবে, ২১-২২।’
‘যথেষ্ট। আলি রা. নবিজি সা. এর জামাই হয়েছিলেন৷ তখন তার বয়স ছিল ২১ বছর। আমি নিজেও ২২ বছর বয়সে বিয়ে করেছি।’
‘আচ্ছা!’
‘জি, এখন আপনারা কিছুটা ভেবেচিন্তে নিন। পরে আমাকে সিদ্ধান্ত জানাবেন। আপাতত উঠি।’
‘আরে বসুন। আমিও বাইরে যাব। একসঙ্গে বেরোই।’
‘আবদুল্লাহ! আবদুল্লাহ!’ কিছুক্ষণ পর ওই রুমে আমার ডাক পড়ল। আমি দ্রুত সেখানে পৌঁছালাম। ভাইয়া প্লেট-দস্তরখানা উঠাতে উঠাতে বললেন, ‘এগুলো ভেতরে নিয়ে যাও তো।’ আমি নেবার জন্য হাত বাড়াব, অমনি মানুষটা আমাকে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। সময় গড়িয়ে চলল, কিন্তু থামার লক্ষণ নেই। একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে রাগে আমার গা জ্বলে গেল! বিরক্ত মুখে ভাবতে লাগলাম, ‘আঙ্কেল! সব জায়গায় এত অভিভাবকত্ব ফলান কেন? এর জন্য কি আপনার নিজের ছেলেমেয়ে যথেষ্ট নয়? অথচ তখনো আমি জানি না সামনে কী বিরাট একটা ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছি!
গল্প : এক অদ্ভুত বিয়ের প্রস্তাব
লেখা : আবদুর রহমান - Abdur Rahman
সিরিজা : রুপোলি সংসার
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....