শুয়ে শুয়ে তারিক জামিল হাফিজাহুল্লাহর ‘জান্নাতি হুরের বয়ান’ বইটা পড়ছি। কোত্থেকে যেন হঠাৎ আমাতুল্লাহ এসে হাজির। ‘আপনি আবার এই বই নিয়ে বসেছেন? আজ সত্যি সত্যি দুপুরে খাবার বন্ধ!’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ইয়ে মানে জান্নাতের নিয়ামত সম্পর্কে একটু-আধটু পড়ায় তোমার এমন কী ক্ষতি হচ্ছে? আমি তো খারাপ কিছু পড়ছি না, তবু বাধা দিচ্ছ কেন?’
‘সব সময় ভালোমন্দ বুঝে তো লাভ নেই। আপনি এই বই পড়বেন না, এইটাই হলো কথা।’
‘কী বই পড়ব তাহলে?’
‘ওমা, বলে কী! বুকশেলফে বইয়ের অভাব আছে না কি? ইচ্ছেমতো একটা পড়লেই তো পারেন।’
‘কিন্তু তুমি তো পড়তেই দিচ্ছ না!’
‘আবার এই কথা! মনের ভুলেও এ জাতীয় বইয়ের ধারেকাছে যাবেন না। এগুলো পড়ে এত কী লাভ হয়? তারচেয়ে ছোট্ট ওই বইটা পড়ুন। নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন সম্পর্কে জানা যাবে।
‘তাই বুঝি, দাও তাহলে।’
আমাতুল্লাহ বুকশেলফের দিকে এগিয়ে গেল। একদম সামনের সারি থেকে ‘মুহাম্মাদ সা. একজন আদর্শ স্বামী’ বইটা হাতে নিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল। আমি চিৎকার করে উঠলাম, ‘আর কতবার এই বই পড়ব? বুকশেলফে কি নতুন বই নেই? অমন করলে কিন্তু বইই আর পড়ব না!’
‘আহা, রাগ করছেন কেন? আরেকবার পড়েই দেখুন না! ভালো বই যত বেশি পড়া যায়, ততই ভালো!’
‘তুমি থাকো তোমার ভালো বই নিয়ে। আমি চললাম।’ বলতে বলতে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। এই ভরদুপুরে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না।
২.
‘আশ্চর্য! তিনটা বাজতে যাচ্ছে, খাবার কথা ভুলে গেল না কি আজ? হাঁক ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে এগোলাম। সে কী! আমাতুল্লাহ তো নেই! গেল কোথায় মেয়েটা? ‘এই হুমু, হুমু, কই গেলা তুমি? আমি তো খিদেয় মরে গেলাম।’
চেয়ারের ওপর পা তুলে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে আমাতুল্লাহ। হাতে একটা বই। ‘ওগো শুনছ’। আমি উৎসাহী হয়ে বললাম, ‘কী সব পড়া হচ্ছে, হ্যাঁ!’
‘তা তো বলা যাবে না!’ বলে কিঞ্চিৎ কাত হয়ে চোখ টিপল ও। তারপর খিলখিল শব্দে হাসি।
আমি মুহূর্তেই বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম ওর অমন আচরণ দেখে। ঘটনা কী? আমার কাছে কি কিছু লুকানো হচ্ছে? ‘ওই, ওভাবে হাসবে না তো। একদম পেত্নীর মতো লাগছে!’
‘লাগুক!’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ‘আচ্ছা, আপনি আতীক উল্লাহ হাফিজাহুল্লাহর মতো একটা বই লিখতে পারবেন না? ওই বইটা উৎসর্গ করা হবে আমাদের...’
কথাটা শেষ করতে পারল না আমাতুল্লাহ। মুখ ঢেকে মিটিমিটি হাসতে লাগল। বললাম, ‘অবশ্যই চেষ্টা করব। কিন্তু আমাকে এভাবে না খাইয়ে মেরে ফেললে লিখব কীভাবে? খাওয়াদাওয়ারও তো দরকার আছে, না কি?’
আমাতুল্লাহ যেন আকাশ থেকে পড়ল। ‘আপনি এখনো খাননি?’
‘খাবার দিয়েছ মনে হয়!’
‘ওমা, আপনার হুরগুলো কোথায়? আমি তো ভাবছি, তাদের নিয়ে বেশ সুখেই লাঞ্চ করেছেন!’
এই কথা শুনে রাগে আমার গা জ্বলে উঠল। একে তো দুপুরে খেতে দেয়নি। তার ওপর বড় বড় কথা! দিন দিন মেয়েটার সাহস যে হারে বাড়ছে—তাতে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই!
আমি হঠাৎ করে কেমন অপমানবোধ করতে লাগলাম। খাবার না দিয়ে ফাজলামি করা—মজা একটা দেখিয়েই ছাড়ব। আমি মুখটা শুকনো করে পেছন ফিরে হাঁটা ধরলাম।
‘আরে আরে, যাচ্ছেন কোথায়?’ বলে এক লাফে সামনে গিয়ে দরজা আঁটকে দাঁড়াল ও। আমি আবার ঘুরে দাঁড়ালাম। ওর দিকে তাকাতেও ইচ্ছে করছে না এখন।
‘কী ব্যাপার, কথা বলছেন না কেন? হুরটুর আবার মুখে টেপ মেরে দেয়নি তো! দেখি দেখি!’
আমি খুব কষ্টে হাসি চেপে কষে এক ধমক দিলাম। ধমক খেয়ে মনে হলো আমাতুল্লাহ খুব আনন্দ পেয়েছে। বলল, ‘ওরে সাহেব! আপনিই না সেদিন বললেন, যার তাকদিরে যখন খাবার কথা লেখা আছে, সে তো তখনই খাবে। তাহলে আজ এত রাগ করছেন কেন?’
আমার রাগ আরও বেড়ে গেল এই কথা শুনে। সব সময় এত সত্য কথা সহ্য হয়! আমি মন খারাপ করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। আকাশে সাদা সাদা মেঘ। কয়েকটা পাখি মনের সুখে উড়ে বেড়াচ্ছে। চমৎকার লাগছে দেখতে। হঠাৎ পেছন থেকে আমাতুল্লাহ চিমটি কাটল, ‘কী, এত ঢং করছেন কেন? ঢং করলেই বুঝি আমি গালে তুলে খাইয়ে দেব!’
লেখা : আবদুর রহমান - Abdur Rahman
সিরিজ : রুপোলি সংসার
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....