বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন? - তাওহীদ এলাহী


বাঙালি মুসলমান-মুসলমান হওয়ার আগে- হিন্দু-ও ছিল না, মুসলমান-ও ছিল না। তারা ছিল এ এলাকায় পাললিক বা জলা-জংলাপূর্ণ ভূমিতে বসবাসকারী কৃষিজীবী, মৎস্যজীবী, বেদে , কোচ , রাজবংশী ও আধা যাযাবর আদিবাসী জনগোষ্ঠী। যাদের ঐ অর্থে সুগঠিত কোন ধর্মচর্চা ছিল না। তারা ছিল- না মুসলমান , না হিন্দু , না বৌদ্ধ। মুঘল আমলে ১০০-১৫০ বছরের নিয়ত পরিবর্তনশীল সামরিক, ভৌগলিক, আর্থিক ও সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে এরা উদ্ভুত ও আবির্ভুত হয়। এখানে ধর্মান্তরিত হওয়ার কোন বিষয় ছিল না। অথবা, বিদেশি মুসলমানগণ এখানে এসে বসতি গেড়ে পুরো এলাকায় ইসলামাইজেশন করেছে এমনটিও ঘটেনি। বরং, ইসলামাইজেশন হয়েছে বেশ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ ফ্যাকটরের দৈবক্রমে যুগৎপতভাবে সমন্বয়ের কারণে। জনাব হাসান মাহমুদ 'বাঙালি মুসলমান প্রশ্ন' বইতে এ অভিনব তত্ব উপস্থাপন করেছেন।

১৮৭২ সালের প্রথম আদমশুমারীতে বাংলা এলাকায় ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব সকলকে চমকে দেয়। ১৮৭২ সালের প্রথম আদমশুমারীতে বাংলা এলাকায় ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাব সকলকে চমকে দেয়। বাংলা এলাকার জনসংখ্যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি মুসলমান দেখে তৎকালীন শাসক শ্রেণী তথা ইংরেজ এবং শিক্ষিত হিন্দু জনগোষ্ঠী আশ্চার্যান্বিত হয়। সবার ধারণা ছিল ভারতের অপরাপর এলাকার মতই বাংলা এলাকাতেও সংখ্যাগুরু হিসেবে হিন্দুই থাকার কথা।

বাংলা এলাকায় মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যাখ্যার জন্য নানা তত্ব আসে। এর মধ্যে ইংরেজি শিক্ষিত হিন্দু পন্ডিতেরা বলেন, ইসলামী শাসকদের তরবারির ভয়ে দলে দলে লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। ইংরেজ পন্ডিতেরা দাবী করেন , নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা বর্নপ্রথার যাঁতাকলে পৃষ্ঠ হয়ে ও ইসলামের সাম্যবাদে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। পন্ডিতদের এ দাবীর প্রতিবাদ হিসেবে ততকালীন শিক্ষিত ক্ষমতাশালী মুসলমানগণ দাবী করেন, এ এলাকার মুসলমানরা ও তাদের পূর্ববর্তীরা বেশিরভাগ আফগান তুর্কি , পারস্য ও নানা ইসলামি দেশ হতে এখানে মাইগ্রেট করেছে। তারা নিম্নবর্ণজাত , এটি হজম করা কঠিন ছিল। তবে এ মতটি খুব বেশি হালে পানি পায় নি। এসব তত্ব পরবর্তী গবেষণায় নানাজন নানাভাবে খন্ডন করেছেন।

১৮৮১ সালে সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের দুটি প্রবন্ধ- বাঙ্গলার ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা, বাঙ্গালীর উৎপত্তি- এর মাধ্যমে বাংলা এলাকায় মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি প্রথমবারের মত মূলধারার আলোচনায় আসে। তিনি এ এলাকায় জনসাধারণের ৪টি ভাগে বিভক্ত করেন। এর মধ্যে তিনটি ভাগের মধ্যে পরিপূর্ণ বা আংশিক আর্য (বিদেশি অভিজাত ) বংশানুক্রম খুজে পান, বাকি একটি অংশ স্থানীয় অনার্য হিসবে চিহ্নিত করেন। এই নিম্ন বংশজাত অনার্য গোষ্ঠীর বড় অংশটি ইসলাম ধর্মে চলে এসেছে বলে অনুমান করেন।

এর বাইরে বেশকিছু সাহিত্য ও গবেষণায় বাঙালি মুসলমানদের জাতিগত উৎপত্তি ও চরিত্র বিশ্লেষণ করার চেষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আহমদ ছফা রচিত ' বাঙালি মুসলমানের মন' , গোলাম মুরশিদ রচিত 'হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য’ , অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’ ইত্যাদি । হাসান মাহমুদের মতে এই বইগুলোর ব্যাখ্যাগুলো ত্রুটিপূর্ণ, তত্বীয়ভাবে অগ্রহনযোগ্য , ওরিয়েন্টালিজম দোষে দুষ্ট- ফলত এগুলো অবৈজ্ঞানিক কুসাহিত্য। জনাব মাহমুদ মনে করেন, এসব গ্রন্থকাররা ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক হিসেবে ভাল হলেও ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে অপ্রশিক্ষিত, গবেষনার তত্বজ্ঞানে ডাব্বা , সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা গঠনশৈলীতে আন্ডা। ওরিয়েন্টালিজিমের দোষ তথা- পাশ্চাত্যে যেভাবে প্রাচ্যকে ছোট, হীন করে দেখায় ও দমিয়ে রাখে, প্রাচ্যের পশ্চাদপদতার জন্য প্রাচ্যকেই দায়ী করে- ঠিক একইভাবে এ বইগুলোতে বাঙালি মুসলমানদের হীন, ছোটলোক, দুর্বল, অশিক্ষিত , মানসিকভাবে অপরিপক্ক, সুবিধাবাদী , নিম্নবর্নজাত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নবর্ণজাত এসব বাঙালি উচ্চবর্ণের তাড়া খেয়ে একবার হিন্দু হতে বৌদ্ধ , বৌদ্ধ হতে মুসলমান ধর্মে চলে এসেছে। বাঙালি মুসলমানের সকল সমস্যার মূলে বাঙালি মুসলমান।

বাঙালি মুসলমানদের উৎপত্তি ও সংখ্যাধ্যিকতার বিষয়ে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন অসীম রায় ও রিচার্ড ইটন। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত The Islamic Syncretistic Tradition in Bengal বইতে অসীম রায় বলেন, বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠী এসেছে এ এলাকার আদিবাসী অনার্য জনগোষ্ঠী থেকে। এই আবির্ভাবের শুরুতে সামাজিক নেতৃত্বে ছিল মুসলমানেরা। এই নেতারাই কালক্রমে পীরের মর্যাদা লাভ করে। এইসব পীর কিন্তু সুফি পীর-দরবেশ না। অন্যদিকে, এ সময়ে মুসলিম সাহিত্যিকরা স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে মিলিয়ে আরবী-ফারসী আর ইসলামের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্ঠা করে। এদের সাহিত্য নগরবাসী শিক্ষিত ধনী মুসলমানদের সাথে গ্রামের কৃষি-মৎস্যজীবী মুসলমানদের সংযোগ স্থাপন করত। অসীম রায়ের ব্যাখ্যাগুলোকে স্বীকার করে নিয়েই ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত প্রকাশিত হয় Richard Eton রচিত সাড়াজাগানো গবেষণাগ্রন্থ The Rise of the Islam and Bengal Frontiers। মি: ইটন জানান, প্রান্তবর্তী এসব জনগোষ্ঠী বিদেশ থেকে আসা ও স্থানীয় পীরদের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এসব পীরদের তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে আখ্যা দেন। উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে বনজংগল পরিষ্কার করে একসাথে থেকে সামাজিকভাবে বসবাস করে। এসব ব্যাখ্যায় তিনি নদীর গতিপথ পরিবর্তন ,পাললিক ভূমি তৈরি ও তাতে জংলাভূমি সৃষ্ঠি এবং মুঘলদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন। তবে এ গবেষণার ভুল ব্যাখ্যা বা আংশিক ব্যাখ্যা দেয়া লোকেরও অভাব নেই। জনাব মাহমুদ এ দুজনের ব্যাখ্যাকেই নতুন আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করে তার তত্ব দাঁড় করিয়েছেন।

মিঃ রায় ও মিঃ ইটনের গবেষনায় এটি স্পষ্ঠ যে, এ এলাকায় ১২শ শতক হতে ১৯শ শতক পর্যন্ত ইসলাম বিস্তার করেছে , এবং মুলত মুঘল আমলেই সারাবাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে। মুঘল আমলের মধ্য-১৬শ শতক থেকে হতে মধ্য-১৭শ শতক ছিল বাংলায় মুসলিম জনবৃদ্ধির স্বর্নযুগ। বাংলার ভৌগোলিক ইতিহাস ও প্রাচীন মানচিত্রসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মুঘল আমলের পূর্বে উত্তরবঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ, সোনারগাঁও, কুমিল্লা, সিলেট চট্রগ্রামসহ দু-একটি উচু অঞ্চল ব্যতিত সারা বাংলা জলাভূমিতে পরিপুর্ণ ভাটির দেশ ছিল, বেশিরভাগ এলাকা বছরে আট-নয়মাস পানির নিচে থাকত। এ সময়ে পদ্মা/গঙ্গা, যমুনাসহ বড় নদীগুলো পশ্চিম হতে ধীরে ধীরে পুর্বের দিকে সরে আসে। নদীসমুহের স্থান পরিবর্তনের ফলে তৈরি হয় ব্যাপক চরাঞ্চল, ধীরে ধীরে চরগুলোতে পলি জমে গড়ে উঠে উর্বর ভূমি আর বিস্তীর্ন বনাঞ্চল।

এদিকে সামরিকভাবে মুঘলরা বাংলা অঞ্চল করায়ত্ত করলে তাদের সাথে আসা মুঘল তুর্কি বিদেশী ২-২.৫ লাখ সৈন্য ও সিভিল স্টাফরা কর্মহীন হয়ে যায়। অনেক সৈনিক-কর্মচারীগণ অবসরে চলে গিয়ে ধর্মকর্মে মনোযোগী হয়। অন্যদিকে তাদের সাথে আসা মাড়োয়াড়িদের হাতে থাকে বিনিয়োগযোগ্য নগদ অর্ত্থ। মুঘলরা বাড়তি ও অবসরপ্রাপ্ত লোকজনকে বিনা করে ও মুল্যে বনভূমির জমি দান করে বিনিময়ে চাইত সারাবাংলায় মুঘল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা ও কৃষি জমির বিস্তৃতি। এসব লোক একটি এলাকায় একটি করে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে মসজিদের পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠাতার নামে বেশ বড় বা মাঝারি আকারে বনভূমিযুক্ত জমিদারি/তালুকদারি পায়। আর এসব পরিষ্কার করে কৃষি জমিতে রুপান্তরের জন্য শ্রমসাধ্য কাজটি করার জন্য ছিল পরিশ্রমী বেদে,কোচ, রাজবংশী, মতস্যজীবী,কৃষিজীবী আধা যাযাবর আদিবাসীরা। তাদের কাছে স্থায়ী আবাসন ও নিশ্চয়তাপূর্ন জীবিকার জন্য কৃষিকাজের সুযোগ অধিকতর সুবিধাজনক ছিল। সে প্রেক্ষিতে এসব উদ্যোক্তার আশ্রয়ে এক একটি এলাকায় স্থানীয় আদিবাসীরা একটি সম্মিলিত জামাতের অধীন আশ্রিত হন। এসব উদ্যোক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাজেজা বা অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিল মর্মে জনশ্রুতি থাকলেও সবার কমন দুটি বিষয় ছিল খুব লক্ষ্যনীয়। এসব উদ্যোক্তারা বন্য শ্বাপদশঙ্কুল বনভূমিকে বশে এনেছিল, নিজের স্থাপিত মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি সুন্দর সামজিক প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো দিয়েছিলেন। এগুলো প্রয়োজনীয় বোধ হলেও এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও বিনিয়োগের সক্ষমতা এ এলাকার আদীবাসী আধা-যাযাবার মানুষদের ছিল না। আর পুরো বিষয়টি হয়েছে মুঘলদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়।

এ ধরণের উদ্যোক্তা বা পীর বা নেতা যে শুধু মুসলমান ছিল ব্যাপারটি এমন নয়, মুঘলরা অনেক হিন্দুদেরকে এ ধরণের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। তবে বাংলা এলাকায় মুসলমানদের সংখ্যাটি ছিল আনুপাতিক হারে হিন্দুদের প্রায় দশগুণ বা আরো বেশি। প্রাথমিক উদ্যোক্তা পীরদের মৃত্যুর পর তাদের পরবর্তী প্রজন্মেরা পূর্ববর্তী প্রজন্মের নামে মাজার প্রতিষ্ঠা করে এবং মসজিদে জুমার নামাজের পাশাপাশি এসব মাজারে সেজদা পূজা সবই করা হত। অর্থাৎ, সে সময়ে হিন্দু ও মুসলমান ধর্ম বা আদিবাসীদের ধর্মের খুব বেশি মৌলিক পার্থক্য ছিলনা। তবে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে হাজী শরিয়তুল্লাহ , দুদু মিয়া সহ নেতাদের আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যতা বোধ জাগ্রত হয়। এসব ফারায়েজি নেতাদের কেউ কেউ সে সেময়ে একটু উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাষ্প জাহাজ ইত্যাদির কারণে অধিকতর হারে মধ্যপ্রাচ্যে হজব্রত সহ নানাকাজে গমন করেন এবং সেখানকার ইসলামী জীবনের ধ্যান-ধারণা লাভ করেন। তারা দেখেন মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামের তুলনায় এখানকার সে সময়ের জামাতবদ্ধ লোকজনের মধ্যে প্রচলিত বা উদ্ভুত ইসলাম বিদাআত ও অনৈসলামিক কার্যকলাপে ভর্তি। তাদের মধ্যে বিগত ১০০ বছর ইসলামী সমাজের একটি কাঠামো বা আইডিয়া গড়ে উঠলেও বেশির ভাগ ইসলামী ফরজ চর্চা বা প্রথা যেমন, নামাজ , রোজা , কোরআন পাঠ ইত্যাদির ব্যাপারে তারা ছিল প্রায় অজ্ঞাত। ফারায়েজী নেতারা সেগুলো সংস্কারের ডাক দেন। ধীরে ধীরে মুসলমানি চর্চাগুলো সংঘবদ্ধ হতে থাকে।

নিয়তির এ নির্মম পরিহাস, বাঙালি মুসলমানদের ‘জাতে উঠা’র জন্য নানা ধরণের চ্যালেঞ্জের মধ্যে যেতে হয় ইতিহাসের শুরু হতেই। ১৯০১ সালের আদমশুমারিতে নোয়াখালী এলাকার ৯৯ ভাগ মুসলমান দাবী করে তারা বিদেশী আফগান, পারস্য, তুর্কী, মধ্যপ্রাচ্যদের বংশোদ্ভুত আশরাফ মুসলমান, যা প্রকৃতপক্ষে কোনভাবেই সঠিক নয়। আদিবাসী থেকে উদ্ভুত বাঙালি মুসলমানরা আরজল বা আতরাফ হিসেবে বিবেচিত হতো। এদের যে কারো আর্থিক বা প্রশাসনিক সুযোগ থাকলেই তারা বিদেশী বা সরকারী টাইটেল নামের সাথে যুক্ত করত এবং শহরে মাইগ্রেট করে তার পূর্বের পরিচয় ভুলে যাওয়ার চেষ্ঠা করত, আশরাফ হিসেবে পরিচিত হওয়ার জন্যে হন্যে হয়ে যেত। এরা ইতিহাসের নানা সময়ে নিজের মুখের বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে আরবি, ফার্সি, উর্দু , ইংরেজীতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্ঠা করত। বিদেশি আশরাফরা বা পরিবর্তিত এই আশরাফরাই আবার মুসলীমলীগসহ নানা রাজনৈতিক কাঠামো গঠন করে আতরাফদের নেতৃত্ব দেয় এবং তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতাবোধ (ধর্মীয় আবেগ অর্থে) জাগ্রত করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়। পাকিস্তান আমলেও পুরোসময় এই আশরাফ পাকিস্তানিরা আতরাফ বাঙালি মুসলামানদের শোষণ করে।

লক্ষনীয় বিষয় হলো , বাংলা ভাষাটিও কোনদিন এ অঞ্ছলের আশরাফ মুসলমান আর উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের নিজের ভাষা হয়ে উঠতে পারেনি। শাহ সগীর বা আব্দুল হাকিমদের মত পুথি সাহিত্যিকরা সে সেময়ে ইসলামী জ্ঞানে ছড়িয়ে দেয়ার নিমিত্ত এ এলাকার মানুষরের রুচির সাথে মিলিয়ে সাহিত্য চর্চা করে ইসলামী দূতিয়ালির কাজ করলেও এগুলো নিয়ে আশরাফরা আত্ববিশ্বাসী ছিলনা। আশরাফদের রুচির সাথে সাথে তাল মিলানোর জন্যই ভাষাটিকে তারা অধিকতর আরবি-ফার্সি-উর্দু শব্দ যুক্ত করার মাধ্যমে বাংলা ভাষার ইসলামাইজেশন করে জাতে তোলার চেষ্ঠা করে। আসলে, অতি আশরাফরা পারতপক্ষে বাংলাভাষায় কথা বলত না, পাছে তাদের নিম্নবর্ণজাত আতরাফ ভাবা হয়। অপরদিকে উচ্চ বর্ণের আর্য হিন্দুরা সাংস্কৃতিক শব্দসমূহের বহূল ব্যবহারের মাধ্যমে সাংস্কৃতাইজেশন করে এটিকে মোটামুটি ভদ্রলোকের ভাষাহিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্ঠা করে, কেউ কেউ সংস্কৃতকে দৈনন্দিন ভাষা হিসেবে ব্যবহার করত।

আর অধুনাকালে জাতে উঠার মাধ্যম হলো বাংলা ভাষাকে ইংলিশাইজেশন করা।

এককথায়, জাতি হিসেবে বাঙালি মুসলমান বাইরে থেকে উড়ে আসা আশরাফ মুসলমান নয়, রুপান্তরিত আর্য হিন্দুও নন। তারা এ মাটির সন্তান , বাংলা তাদের ভাষা। এ সময়ে এ সমাজে যে প্রচলিত সংস্কৃতিগুলো আছে, হয় এগুলো মুঘল-পারস্য-তুর্কী-মধ্যপ্রাচ্যের অথবা ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতি। আর বাকিটা আধুনিক পশ্চিমা সংস্কৃতি। সময় এসেছে নিজেদের, নিজের সত্বাকে জানা ও আবিষ্কার করা।

শিকড়ের এই টানকে উপেক্ষা করে বা নিজেকে সঠিকভাবে না নিজের সকল সংস্কৃতি না জেনে না চিনে চিনে বেশি উপরে কি উঠা সম্ভব? - Credit : - Tawhid Elahi

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ