🔸বইয়ের নামঃ "তুমি ফিরবে বলে"
🔸লেখকঃ জাকারিয়া মাসুদ
🔸প্রকাশকঃ সাবিল পাবলিকেশন
🔸পরিবেশকঃ সমকালীন প্রকাশন
🔸প্রচ্ছদঃ আলি আরমান
🔸পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৮৮
🔸মুদ্রিত মূল্যঃ ২৬৫৳
✍️শুরুর আগেঃ
জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদাসীন, দুনিয়ার মোহে বুদ হয়ে থাকা, নাচ গান নিয়ে মত্ত, ছন্নছাড়া তরুণীদের উদ্দেশ্যেই বইটি লেখা।
✍️বইয়ের বিষয়বস্তুঃ
"তুমি ফিরবে বলে" বইটা রবের দিকে বোনদেরকে ফিরিয়ে আনার এক আকুতিভরা তীব্র মর্মস্পর্শী প্রচেষ্টা।
তারুণ্যের জোয়ারে দুনিয়াকে উপভোগ করার উদাত্ত আহবানে জাহিলিয়াতের স্রোতে ভেসে বেড়ায় কিছু তরুণ-তরুণী। ভাসতে ভাসতে কেউ কেউ ডুবে যায় ব্যর্থতা ও হতাশার অতল গহ্বরে। কেউ গিয়ে পড়ে গভীর সমুদ্রে। ছুটে বেড়ায় দিকভ্রান্ত পথিকের ন্যায়। তবে ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই যায়। বইটিতে লেখক চেষ্টা করেছেন সেই ক্ষতে একটুখানি ওষুধের প্রলেপ দিতে। আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত থেকে অগ্নিকুণ্ডের লাভার দিকে ছুটে চলা একঝাঁক তরুণীকে তিনি ফেরাতে চেয়েছেন। তাদের পথযাত্রায় লাগাম টানতে চেয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন ওটা আলো নয় আগুন। ওখানে কোনো সুখ নেই আছে জ্বলে পুড়ে ছাই হওয়ার রসদ।
✍️বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকেঃ
🔰 অন্তর হলো জীবনের মূল চালিকাশক্তি।
🔰 মহান আল্লাহ ই হলেন অন্তরের স্রষ্টা। আর তিনিই বলেছেন, অন্তরের প্রশান্তি একমাত্র তাঁকে স্মরণ করার মধ্যেই। তার বাইরে গিয়ে তুমি যা কিছু করোনা কেনো কোনো লাভ নেই। অযথা সময় নষ্ট। আল্লাহর স্মরণ থেকে যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবনটা যাতনাময় হয়ে যাবে। সবকিছু পাওয়ার পরেও সংকীর্ণ মনে হবে ধরণিকে।
🔰 দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী। তাই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট গুলোও ক্ষণস্থায়ী। এগুলো একদিন ঠিক ই ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু আখিরাতের দুঃখ-কষ্ট গুলো ফুরোবে না কখনো।
🔰 সত্যিকারের সফলতা হলো জান্নাত। যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই কামিয়াব। সে-ই সফল।
🔰 নারী আর পুরুষ আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। জন্মগতভাবে ই উভয় লিঙ্গ পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে ওঠে। সভ্যতার দোহাই সমান অধিকারের দিকে আহ্বান কারীরা চরম মিথ্যুক।
🔰 নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য আগলে রাখাটাই নারীজাতির স্বার্থকতা। জোর করে অন্যের মতো হতে গেলে স্বকীয়তা নষ্ট হয়।
🔰 লজ্জা হলো চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন মুসলিম নারী সব সময়ই লজ্জার ভুষণ আঁকড়ে ধরে রাখে। কারণ ঈমানের বিশেষ একটি শাখা হলো লজ্জা।
🔰 মানুষের সুখ নিহিত আছে স্বাধীনতার মধ্যে । মানসিকভাবে দাসত্বের জীবন পরিচালনা করে মানুষ কখনো সুখ পেতে পারেনা। প্রশান্তি কেবল তখনই আসতে পারে যখন মানুষ শত ইলাহের গোলামি থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র রাব্বুল আলামিনের সামনে নত হবে। এটাই প্রকৃত স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে স্বর্গসুখ। আছে হৃদয়ের প্রশান্তি।
🔰 প্রত্যেকটা মানুষের ই অন্তর থাকে।সেই অন্তরের হদিস বাইরে থেকে নেওয়া যায় না। ওটা কেবল ব্যক্তি নিজেই জানে। কোন জিনিসের বাসনা হৃদয়মন্দিরের সবকিছু উথাল-পাতাল করে দিচ্ছে, তা কি বাইরে থেকে বোঝা যায় কখনো? অন্তর কোনো আইন মানে না, কোনো বিধিনিষেধ মানেনা। মানে না কোনো সীমারেখা। সে চলে আপন গতিতে।
🔰 হিজাব উত্তম চারিত্রিক গুণাবলির ব্যানার। এটা একটা আদর্শিক পরিচয়। তুমি কোন জীবনদর্শন অনুসারে চলো তার পরিচয়বাহক। তুমি যে মুসলিম নারী, তার পরিচিতিই হলো হিজাব।
✍️পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
বইটি পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিলো যেনো লেখক স্বয়ং আমার সাথে ই কথা বলছেন। বইটিকে মনে হচ্ছিলো এক জীবন্ত সত্তা। প্রথম পৃষ্ঠা পড়ার পর আর বইটিকে হাত থেকে রাখতে মন চাইছিলো না বিধায় আড়াই ঘন্টায় বইটা পড়ে শেষ করেছি। যত পড়ছিলাম ততো ই যেনো ডুব দিচ্ছিলাম কোনো এক অজানা দুনিয়ায়। প্রতিটা বাক্য, প্রতিটা শব্দ যেনো আমাকে তাক করে লেখা হয়েছে। নিজের ভুল গুলো খুঁজে পাচ্ছিলাম। বইটা পড়তে গিয়ে একবারো হাসি আসেনি আমার বরং অনুতপ্ত হচ্ছিলাম একে একে নিজের কৃত ভুল গুলো সামনে আসছিলো। ইচ্ছে করছিলো এখন ই শোধরে নিই নিজেকে। তা কি চাইলেই সম্ভব? অবশ্যই নাহ। লেখকের আকুতি, আদেশ, ধমক সবটাই অনুভব করেছি প্রতিটা লেখায়। বুঝতে পেরেছি লেখকের একটাই চাওয়া- রবের দিকে প্রত্যাবর্তন।
✍️লেখার মানঃ
লেখকের লেখনশৈলী এক কথায় অসাধারণ। লেখক অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে প্রতিটা শব্দ, বাক্য উপস্থাপন করেছেন। লেখার মাঝে কোনো ত্রুটি আমি খুঁজে পাইনি। প্রতিটা শব্দ, বাক্য যেনো মধুরতায় মেশানো। গদ্যে পদ্যে এক কথায় অনবদ্য বইটি।
✍️ প্রোডাকশন কোয়ালিটিঃ
বইটির প্রচ্ছদ দেখেই বইটি পড়ার জন্য অস্হির হয়ে পড়েছিলাম। বাইন্ডিং বেশ ভালো। দাম ও বেশি নয়। হার্ড কভার। পৃষ্ঠা গুলো বেশ যত্নে সাজানো হয়েছে তা দেখেই বোঝা যায়। বলতে গেলে বইটির কোনো ত্রুটি নেই। এক কথায় অসাধারণ।
✍️ব্যক্তিগত মতামতঃ
প্রথমেই বলি আমার পড়া সেরা বইয়ের তালিকায় প্রথমে স্থান দিয়েছি বইটাকে। বইটা পড়ে যেমন আমি ভাবনার জগতে বিচরণ করেছি তেমনি কোনো তরুণী যতোটা উচ্ছৃঙ্খল হোক না কেনো, এই বই তাকে স্থির হয়ে বসে ভাবতে বাধ্য করবে। তার মধ্যে কিঞ্চিত পরিমাণ হলেও অনুশোচনাবোধ জাগ্রত করবে৷ তার চোখ অশ্রুসিক্ত হবে।
দ্বীনের পথে ফেরার জন্য প্রতিটি বোনের জন্য বইটি সহায়ক হবে বলে মনে করি। আল্লাহ চাইলে যে কেউ অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে ফিরে আসতে পারবে বইটির মাধ্যমে। আমার মতে, প্রত্যেক মেয়ের জীবনে বইটা দরকার। বইটি আমাকে অনেক কিছু উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে। কাঁদিয়েছে অনুশোচনায়।
সবশেষে বলবো, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেওয়ার মতো একটি বই "তুমি ফিরবে বলে"।
কোনো মানুষ ই ভুলের উর্ধ্বে নয়। ভুল হতেই পারে৷
ভুল ত্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
P.C- Me 😇 মুগ্ধতা
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....