ভালোবাসার জন্যই মানুষ এই মর্তলোকে জন্মায়, কিন্তু এই যে দুজন নারী ও পুরুষ তাদের মতো এতো তীব্রমধুরভাবে কেউ বোধহয় কখনো ভালোবাসতে পারেনি। আপনারা মহৎ, আপনারা উদার, আপনারা জানেন, ভালোবাসা হচ্ছে অগ্নিসম, যেখানে কোনো পাপ প্রবেশ করতে পারে না।
বলছি, চন্দ্রাবতী আর জয়ানন্দের কথা। আহা, তাদের প্রণয়-বয়ান পড়লে যে মানুষ পাহাড়ের মতো কঠিন তারও বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে প্রেমঝর্ণাধারা। অপ্রেমিকও হয়ে উঠবে প্রেমিক। সুখভোগ আমোদ-আহ্লাদে ডুবে আছে যেজন তারও চন্দ্রাবতী পড়ে মনে হবে -জীবনে কি যেন বাকি রয়ে গেলো। এই মর্তলোকে যে জন্মালাম, জীবনিটা কী ঠিকমতো বাঁচা হলো? নাকি একজীবন মনের ভুলেই কেটে গেলো! ভালোবাসাহীন জীবনই তো ভুল জীবন!
বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল কাহিনিতে যাই। নায়িকার নাম আগেই উল্লেখ করেছি চন্দ্রাবতী আর নায়ক জয়ানন্দ। পৃথিবীতে তাদের চেয়ে সুন্দর, তাদের চেয়ে নিষ্পাপ নর-নারী কী আর জন্মেছে! তাদের মতো সুখী আর কেউ নেই, তাদের মতো দুঃখীও কেউ নেই।
তাদের প্রেমের শুরুটা অতি চমৎকার, স্নিগ্ধ হলেও মধ্যাংশটা করুণ।
বংশীদাসের কন্যা চন্দ্রাবতী একদিন পুজোর জন্য ফুল তুলতে গেলে জয়ানন্দের সঙ্গে তার দেখা হয়। প্রথম দর্শনেই প্রেম।
তারপর একের পর এক পত্র বিনিময়। একসময় বিয়ের দিনক্ষনও ঠিক হয়ে যায়।
কিন্তু হায়! হঠাৎ গল্পে প্রবেশ করে তৃতীয় ব্যক্তি। এক মুসলিম তরুণী তাদের মধ্যে ঢুকে পড়লে আসন্ন প্রণয়কাব্য করুণ উপাখ্যানে পরিণত হয়। শুরু হয় ত্রিমুখী উৎপত্তি।
- বই- চন্দ্রাবতী
- লেখক- ড. মুকিদ চৌধুরী
- জনরা- নাট্যোপন্যাস।
উল্লেখ্য - ড. মুকিদ চৌধুরীর নাট্যোপন্যাসটিতে প্রচলিত কাহিনি ধারা মানা হয়নি।
চন্দ্রাবতী ষোড়শ শতকের প্রথম নারী কবি। তাঁর জীবনকাহিনী নাটকীয় এবং বেদনাবিধুর। সেই মধ্যযুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত বহুপালা রচিত হয়েই চলেছে এই মহিয়সী নারীকে নিয়ে। ভারতে একবার আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো 'চন্দ্রাবতী ' পালা দেখবার। সেই থেকেই চন্দ্রাবতী আমার কাছে যেন এক নক্ষত্র।
কবি চন্দ্রাবতীর সৃজন প্রতিভার বাইরে ব্যক্তি চন্দ্রাবতীর জীবনী এবং প্রেম শোকগাঁথাই ময়মনসিংহ গীতিকায় অন্তর্ভুক্ত। তিনি তাঁর জীবনের একটা সময় 'রামায়ণ ' রচনা করেছিলেন। তবে কৃত্তিবাস বা বাল্মীকির প্রচলিত 'রামায়ণ' তিনি অনুসরণ করেননি। লিখেছে আঞ্চলিক ভাষায় সীতা মায়ের দুঃখকে নিজের মধ্যে ধারণ করে। করুণরসকে উপজীব্য করে, নারী মনোভাববে ফুটিয়ে তুলেছিলেন রামায়ণপালায়। এছাড়াও তিনি 'মলুয়া কাব্য' ও 'দস্যু কেনারানের পালা' রচনা করেছেন।
এভাবেই শিব সাধিকা চন্দ্রাবতী বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোকসাংস্কতিক অঙ্গনে এখনো জীবিত।
ক্রেডিট : কেয়া দেবনাথ।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....