জীবনটা আল্লাহ জান্নাতি সুখ ভোগের জন্য দেন নি।Life is not a bed of roses. জীবন কণ্টকাকীর্ণ। জীবন পরীক্ষার জায়গা। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্য আল্লাহ জীবনকে কঠিন করে দিয়েছেন। জীবনে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন নবী-রাসূলগন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াযাল্লাম বলেছেন, এই পার্থিব জীবন একজন বিশ্বাসীর জন্য জেলখানা, আর একজন অবিশ্বাসীর জন্য জান্নাত। জীবনের প্রতি আমরা কী অনুভব করি—তার দ্বারা বুঝে নিতে পারি—আমরা সত্যিকারের বিশ্বাসী কিনা!
ইন্টার্নেটের ঝলমলে ভার্চ্যুয়াল রিয়ালিটি, আর সেলুলয়েড জগতের নাটক-সিনেমা আমাদের অন্তরে অলীক কল্পনাবোধের জন্ম দেয়। ভালোবাসা, প্রেম, বিয়ে, হিরোইজম কিংবা জীবনকে এনজয় করার হাজার তরিকা নিয়ে প্রযুক্তিবিশ্ব আর নাটক-সিনেমা আমাদের অন্তরে হাজারটা গভীর ফ্যান্টাসির জন্ম দেয়। এরপর আমরা যখন বাস্তব জীবনে ফিরি—তখন আর মনের ফ্যান্টাসিগুলোর সাথে জীবনকে মেলাতে পারি না, তখন আমাদের অন্তরে গভীর হতাশার জন্ম নেয়।
নাটক-সিনেমা মূলত বর্তমানের আধুনিক ভোগবাদী-বস্তুবাদী সেক্যুলার ন্যারেটিভকে দৃশ্যায়ন করে। গল্পের প্রয়োজনে হয়তো কিছু ফিলোসফিক্যাল, স্পিরিচুয়াল চিন্তাভাবনা কোনোকোনো চরিত্রের মাধ্যমে পোর্টে করা হয় ঠিকই—কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে যা উপলব্ধি করানো হয়—'লিভ ইন দ্য মোমেন্ট, জাস্ট এনজয়, বাঁধ ভেঙে দাও, বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল, খেয়ে দাও, শুয়ে যাও...' ইত্যাদি ইত্যাদি (শেষের ফ্রেইজগুলোর জন্য খুবই দুঃখিত)৷ আর তরুণরা এমনিতেই বায়োলজিক্যালি অত্যধিক ইন্দ্রিয়পরায়ণ হয়ে থাকে, ফলে তারা এইসব ন্যারেটিভকে বেশ ইজিলি লুফে নেয়।
জীবনের মানে কী? আমরা কোত্থেকে এলাম? সবকিছুর শুরু কীভাবে? কী আমাদের নিয়তি? আমাদের অস্তিত্বের কি কোনো উদ্দেশ্য আছে?—এমন বিগ কোশ্চেনগুলো নিয়ে এই ম্যাটেরিয়ালিস্টিক মানুষজন ভাবে না। তারা ভোগবাদের মোহে এতটাই আচ্ছন্ন হয়ে থাকে যে—জীবন কখন কবরের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ায়—তা তারা টেরই পায় না। নাটক-সিনেমা আমাদের এই ভোগের প্রতিই সারাক্ষণ অনুপ্রাণিত করে, আর এতে লাভবান হয় পুঁজিবাদ।
কুরআনের প্রত্যাশিত জীবন আর নাটকের জীবন এক না। সুন্নাহর অনুপ্রেরণা আর একজন জাগতিক সফল ব্যক্তির অনুপ্রেরণা এক না। আবু বাকর, উমাররা কখনোই টম ক্রুজ বা শাহরুখ খান ছিলেন না। খাদিজা আর আয়েশাদের জীবনাচার কখনোই কেট উইন্সলেট বা দীপিকা পাদুকোনদের মতো ছিলো না। উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জীবন কখনোই শোবিজ লাইফের মতো আলো-জ্বলমলে আর লাক্সারিয়াস ছিলো না।
আমাদের ঠিক করে নিতে হবে—আমরা কাদের রোল-মডেল হিসেবে নিজেদের জন্য বাছাই করতে চাই। আমাদের হিরো কি মেসি-রোনালদো, নাকি খালিদ বিন ওয়ালিদ আর আমর ইবনুল আস—তা আমাদের খুব দ্রুতই নিশ্চিত করে নিতে হবে! দুনিয়ার চাকচিক্য নাকি আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাত—কোনটাকে আমরা বেশি মূল্য দেবো—তা খুব শীঘ্রই আমাদের ঠিক করে নিতে হবে। সময় আর বেশি নেই! বালু ঘড়ির বালু প্রায় ফুরিয়ে এলো বলে...
আধুনিক ঝলমলে পৃথিবী আসলে বিত্তবানদের জন্য। যার যত বেশি টাকা—দুনিয়া তাকে ততবেশি উজাড় করে দেয়। বিত্তবানের জন্য দুনিয়াই জান্নাতুল ফেরদাউস রুপে হাজির হয়! মধ্যবিত্তরা বিত্তবানদের সম্পদের প্রতি লোভ অনুভব করে—কিন্তু অক্ষমতার দরুন হতাশা আর হাহাকার নিয়েই শেষমেশ জীবন কাটিয়ে দেয়। গরীবরা কেউ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে, আর কেউ অলীক অহমিকায় ধ্বংস হয়। আর যারা একদমই ফকির—তাদের আল্লাহ ঠিক সেভাবেই খাওয়ান, যেভাবে খাওয়ান তিনি বনের পাখিদের।
দুনিয়ার রঙ-রূপ খুব অল্প কিছু মানুষের জন্য, অথচ ইসলাম ধনী-গরিব নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকেই ধারণ করে। প্রত্যেক শ্রেণি-পেশা-দেশ-বর্ণ ও লিঙ্গের মানুষের জন্যই ইসলামে সুযোগ আছে। জান্নাত লাভের সুযোগ দানে ইসলাম সদা সাম্যবাদী। একজন গরীব বা ফকিরের পক্ষেও জান্নাতুল ফেরদাউসের মালিক হয়ে ওঠা সম্ভব; ইসলাম একজন মানুষের সামর্থের মধ্যেই তাকে অন্যদের সমান সুযোগ দেয়। অথচ এই ইসলামকেই আমরা আমাদের পার্থিব জীবনের মোহে পড়ে ভুলে থাকি।
ইয়া আল্লাহ, দুনিয়ার মোহে পড়ে আমরা এতদিন যতো পাপ করেছি—সে পাপসমূহকে তুমি তোমার রহমতের চাদরে ঢেকে দাও। আমাদের সমস্ত গোপন পাপকে কিয়ামতের দিনও তুমি গোপন রেখো এবং গোপনেই মাফ করে দিও। ইয়া আল্লাহ, আমাদের প্রত্যেককে তুমি ইস্তিগফার করার সুযোগ দিও। জীবনের বাস্তবতাকে বুঝে আমরা যাতে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিজেদের হেফাজত করতে পারি—সে সুযোগ তুমি আমাদের দিও মাবুদ!
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....