- বইয়ের নাম : গয়নার বাক্স - PDF Download
- লেখক : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
- প্রকাশক : আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
- মূল্য : ১০০ টাকা।
- পৃষ্ঠা : ৮৭
- প্রথম প্রকাশ : ১৯৯৩ সাল
- জনরা : রহস্য ও ভৌতিক।
ফ্ল্যাপে লেখাঃ
পড়তি বনেদি পরিবারে বিয়ে হয়েছিল সোমলতার । খোলাটাই আছে, সার নেই। একটু বড়-বড় কথা বলা এবং সুযোগ পেলেই দেশের বাড়ির জমিদারির গল্প বলা এদের একটা প্রিয় অভ্যোস । যাকে বলে, বারফট্টই।
সোমলতার স্বামীটি বি. এ. পাশ । তবু তবলা বাজানো ছাড়া কিছু করেন না । সোমলতাদের যৌথ পরিবারের । এ-বাড়িতেই তিনতলায় তিনটে ঘর নিয়ে থাকেন এক দজাল পিসশাশুড়ি । বালবিধবা এই শাশুড়িই সংসারের সর্বময় কত্রী ।এই পিসশাশুড়ই মৃত্যুকালে সোমলতাকে ডেকে তার একশো ভরি সোনার গয়নার বাক্স সোমলতার হাতে গচ্ছিত করে গেলেন। মৃত্যুর আগে,না মৃত্যুর পরে?
সোমলতা ভাল করে বুঝতে পারেনি। কিন্তু পিসশাশুড়ি
যে এরপরেও বারবার দেখা দিয়েছেন এতে সন্দেহ নেই। তা বলে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এই দুদন্তি উপন্যাস কোনওক্রমেই ভুতুড়ে কাহিনী নয় । প্ৰায় রূপকের ব্যঞ্জনা নিয়েই যে এসেছে এই গয়নার বাক্সের ঘটনাটা, তা ধরা পড়ে দারুণ কৌতুহলকর ও গভীর তাৎপর্যময় এই উপন্যাসের একেবারে শেষ পঙক্তিতে পৌছে গিয়ে ।
মূলকথাঃ
গরীব ঘরের মেয়ে সোমলতা। তার বিয়ে হয় কলকাতা এক পড়তি বনেদী পরিবারের ছেলের সাথে। তার স্বামীর নাম চকোর মিত্র চৌধুরী। চৌধুরীর চাঁদ আর নেই। সংসারের অবস্থা করুন। জমিজামা আর গয়না বিক্রি করে সংসার চাকা চলছে। চলছে বলবে ভুল হবে জোর করে চালানো হচ্ছে।
চৌধুরীর বাড়ী ছোট বড় সোমলতা। সোমলতা ছাড়াও তার এক জা,একজন বালবিধবা পিসশাশুড়ি আছেন। বড়জা ও পিসশাশুড়ি দুজনেই দজ্জাল। সামান্য কারনে সোমলতাকে কথা শোনাতে ছাড়তো না।
বিশাল বাড়ী তিনতলার তিনটি রুমে থাকত পিসশাশুড়ি। পিসশাশুড়ীর ভয়ে সোমলতা ছাদে উঠতো না। একদিন বিকাল বেলায় পা টিপে টিপে ছাদে উঠে সোমলতা দেখলো অদ্ভুত ঘটনা। পিসি স্থির হয়ে বসেই আছেন। চোখ খোলা এবং পলকহীন।মুখটা হাঁ হয়ে আছে। সোমলতা তার কাছে গিয়ে তাকে স্পর্শ করে বুঝতে পারে পিসশাশুড়ির ভবলীলাসাঙ্গ হয়ে গেছে। সোমলতা ভয়ে ছুটে আসতে লাগলো। তখনই ঘটলো অদ্ভুত ঘটনা। পিসিমার গলায় কে জানি বলছে, উত্তরের ঘরে যাবি।কাঠের বড় আলমারি টা খুলে দেখবি তলায় চাবি-দেওয়া ড্রয়ার,ড্রয়ার খুললে একটা আলপাকা জামায় মোড়া কাঠের বাক্স পাবি।
সোমলতা ভয়ে আছন্ন হয়ে পিসশাশুড়ি গয়নার বাক্স নিজের ঘরে এনে রাখে।তারপর শুরু হয় নানা আধিভৌতিক কাহিনি। বিধবা পিসশাশুড়ি মরে গিয়েও আগলে রাখে তার গয়নার বাক্স।
এদিকে সংসার হাল ফেরানোর জন্য সোমলতা নিজের গয়না বিক্রি করে শুরু করে ব্যবসা। দেখতে দেখতে সে ব্যবসায় উন্নতি হয়। এক দোকান থেকে আরো কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করে সোমলতা ও তার স্বামী।
বিয়ের চার বছর পর সোমলতার সংসার আলো করে জন্ম গ্রহন করে তার একমাত্র কন্যা বসন। বসন্ত কালে তার জন্ম বলে তার নাম রাখা হলো বসন। অনেকদিন বাদে এ বাড়ি তে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে।বাসনের সময় কাটে কোলে কোলে আদরে আদরে। পরিবারের সবার ভালোবাসাই সিক্ত হয় বসন।
দেখতে দেখতে বসন বড় হয়ে যায়। বনেদী পরিবারের একমাত্র মেয়ে। তাকে বিয়ে করলে তো একটা রাজত্ব পেয়ে যাবে পাত্রপক্ষ। ওকে বিয়ে করার জন্য অনেক বনেদি পরিবারে ছেলেরা আগ্রহ দেখিয়েছে। বসন ভালোবাসে অমলেশ নামের এক মেধাবী তরুনকে। স্কুল কলেজের মেধাবী ছাত্র অমলেশ বর্তমানে আমেরিকাতে পড়াশোনা করে। ছুটিতে দেশে এসে অমলেশ বসনকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব পাঠায়।কিন্তু অজানা কারনে বসন সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
ব্যক্তিগত মতামতঃ
আমি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের খুব বড় ফ্যান না। তবে তার বিখ্যাত সব উপন্যাস পড়া হয়েছে। গয়নার বাক্স উপন্যাস টি তার অনন্য সৃষ্টি। মাত্র ৮৭ পেইজের উপন্যাসটি শেষ হওয়ার পর অদ্ভুত একটা ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছে।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দূরবীন উপন্যাসের মত এখানেও একসাথে দুইটি প্রজন্মের দুইজন নারীর জীবনাখ্যান তুলে ধরা হয়েছে । একদিকে ২২ বছর বয়সী সোমলতা আরেক দিকে তার মেয়ে বসন।
সোমলতা একজন সংগ্রামী নারীর প্রতিরূপ। পড়তি বনেদি চৌধুরী পরিবারে বিয়ে হয়ে আসার পর সে বুঝতে পারে এই বাড়ি ধ্বংস হতে বেশি বাকি নেই।খোলাটাই আছে,সার নেই। এই বাড়ির সবাই অলস প্রকৃতির। আর একটু সুযোগ পেলেই পূর্ব পুরুষের জমিদারির গল্প বলাটাই তাদের অভ্যাস।
সোমলতার বি,এ পাশ স্বামীটি অলস। তবলা বাজানো ছাড়া আর কিছু তিনি করেন না। দেখতে লম্বা চওড়া সুদর্শন আর বোকাসোকা হলেও কমলা নামে তার এক রক্ষিতা আছে। পিসশাশুড়ি থেকে প্রথম যেদিন কমলা কথা শুনলেন দু চোখে ধারা বিসর্জন করতে করতে এটাকে নিয়তি হিসাবে মেনে নিলেন।
সোমলতা তার স্বামী কে বললেন গোপনে তার কাছে যাওয়ার দরকার নেই। গোপন যেখানে ঘৃণা,লজ্জা,ভয়ে সেইখানেই দুর্বলতা,সেইখানেই পাপ।
বিবাহিত সোমলতা জীবনেও হঠাৎ বৃষ্টির মত ভালোবাসা দোলা দেয়। সোমলতা একদিন দোকান থেকে বাসায় ফিরছিলো হঠাৎ তাকে আপাদমস্তক চমকে দিয়ে দীঘল চেহারা,দুটি অপরুপ হরিণের চোখের অধিকারী ছেলেটি স্খলিত কন্ঠে প্রেম নিবেদন করে। সারারাত কান্না করে সোমলতা। কিন্তু সেই ভালোবাসা কে প্রশ্রয় দেয় না। সেই নাম না জানা ছেলেটি প্রতিদিন দরজার সামনে রক্তগোলাপ রেখে যায়।
সোমলতা এবং বসন দু'জনের জীবনে নানা অপ্রাপ্তি। এত বিশাল সংসারে বউ হয়েও সোমলতার মাঝে অপ্রাপ্তি ছিলো। বসনও সেই শূন্যতা থেকে বের হতে পারে নাই। সোমলতা একজন আর্দশ স্ত্রী কিন্তু ব্যর্থ প্রেমিক।
উপন্যাসের নাম দেখে এটা কে একটি গোয়েন্দা উপন্যাস ভেবেছিলাম। কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর ভাবলাম ভৌতিক রহস্য উপন্যাস। আর পুরো উপন্যাস পড়ে মনে হলো হলো লেখক উপন্যাসের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজের নানা কুসংস্কার আর নারীর আত্মমর্যাদার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
লেখক পরিচিতিঃ
পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের টালমাটাল সময়ে পরিবারসমেত কলকাতা পাড়ি জমান। বাবার চাকরির সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শৈশব কেটেছে তার।
দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন কিছুদিন। বর্তমানে সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এর সহকারী সম্পাদক পদে নিয়োজিত আছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই ভীষণ বইপড়ুয়া ছিলেন। হাতের কাছে যা পেতেন তা-ই পড়তেন। খুব ছোটবেলাতেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মানিক বন্দোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দোপাধ্যায় এর মতো লেখকদের রচনাবলী পড়ে শেষ করেছেন। এই পড়ার অভ্যাসই তার লেখক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস পার্থিব, দূরবীন, মানবজমিন, গয়নার বাক্স, যাও পাখি, পারাপার ইত্যাদি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর রহস্য সমগ্র রহস্যপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এছাড়াও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই সমগ্র অবলম্বনে বিভিন্ন সময় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তার উপন্যাস ‘যাও পাখি’ এবং ‘মানবজমিন’ নিয়ে বাংলাদেশেও ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হয়েছে। তার সৃষ্ট চরিত্র শাবর দাশগুপ্ত এবং ধ্রুব পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....