‘আপনি মেয়ে পটানোর আশ্চর্য এক ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছেন!’ লাইব্রেরি থেকে ফিরে বই রাখতে রাখতে গটগট করে বলল আমাতুল্লাহ।
‘কী বললে?’ চেহারায় বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের মাঝামাঝি একটা অবস্থান ফুটিয়ে তুলে বললাম। হঠাৎ করে এই জাতীয় কথা বলার মানে কোনো একটা রহস্য নিশ্চয়ই আছে। মেয়েটা এমনিতেই রহস্যময়ী। মাঝেমধ্যে ওর হাবভাব দেখে বিভ্রান্ত হয়ে যাই! ঠিক কী বলতে চায়, বুঝতে পারি না।
‘প্রশংসা করা হয়েছে জন্য বারবার শুনতে ইচ্ছে করছে, তাই না?’ ঘাড় ঘুরিয়ে হাসতে হাসতে জবাব দিল আমাতুল্লাহ।
আমি আরও একবার বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। কী সাঙ্ঘাতিক মেয়ে! এত দিন জানতাম মেয়েরা মানুষের চোখের ভাষা পড়তে পারে। এখন দেখছি মনের ভাষাও বুঝতে পারে!
‘এত কী ভাবছেন?’
‘হঠাৎ এই কথা কেন বললে তাই ভাবছি।’
‘হঠাৎ না, আগেও বলেছি।’
‘ও আচ্ছা।’
‘ও আচ্ছা মানে কী? স্পষ্ট করে বলুন।’
‘উফ্, কী বলব?’ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললাম।
‘মেয়েরা আপনাকে এত পছন্দ করে কেন?’
‘এটা তোমার ভুল ধারণা। আমাকে হারাতে চাও না বলেই সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা ভাবো।
‘মোটেই না। আমাকে দেখলেই বান্ধবীরা আপনার লেখা নিয়ে আলোচনা করে।’
হো হো করে হেসে ফেললাম আমাতুল্লাহর বাচ্চাসুলভ কথা শুনে। ‘আরে, এই সাধারণ ব্যাপারটা বোঝো না? তোমাকে খুশি করার জন্য ওরা আমার প্রশংসা করে। জানোই তো, কারও প্রিয় মানুষকে নিয়ে আলোচনা করলে সে খুব আনন্দ পায়। ওরাও তোমাকে আনন্দ দিচ্ছে।’
‘উঁহু, সেটা নয়। ওরা আমার আড়ালেও আলোচনা করে। সেদিন যেই না আমি লাইব্রেরিতে ঢুকলাম, অমনি সবাই চুপ। একজন বলছিল, লুকিয়ে লুকিয়ে নাকি ফেসবুকে আপনার লেখা পড়ে! আমার তখন যা মনে হচ্ছিল না ওর ঘাড়টা মটকে দিই! পাজিটার সাহস কত যে আরেকজনের হাজবেন্ডের আইডিতে ঢুকে লেখা পড়ে!’ বলতে বলতে রাগে আমাতুল্লাহর চোখমুখ লাল হয়ে গেল।
রাগলে ওকে অনেক সুন্দর দেখায়। আমি এই সুন্দর্য উপভোগের জন্য জোর করে হাসি আটকে গম্ভীর থাকার চেষ্টা করছি। ও আরেকটু রাগুক না!
রাগের মাথায়ই আমাতুল্লাহ বলতে লাগল, ‘জবাব দিচ্ছেন না কেন? কেন মেয়েরা আপনাকে নিয়ে এত আলোচনা করে?’
‘তার আমি কী জানি?’ বলে উত্তর সাজানোর চেষ্টা করতে লাগলাম৷ এই মেয়ে এখন ভয়ংকরভাবে রেগে যাবে! চুপচাপ তার ঝাড়ি হজম করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে ওকে রাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না। বিকেলে এক জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার কথা। সেটা মিস হয়ে গেলে খুব খারাপ লাগবে। ভাবতে ভাবতেই আমাতুল্লাহ হুঙ্কার ছাড়ল, ‘জানি না মানে? আপনি অবশ্যই জানেন। সবকিছু জানেন। এই মুহূর্তে বলতে হবে আমাকে!’
হাতজোড় করার ভঙ্গিতে কাঁচুমাচু করে বললাম, ‘আরে আরে, এত রেগে যাচ্ছ কেন! আমার কথা তো শোনো আগে!’
‘আমি কিছুই শুনব না!’
‘না শুনলে নাই। আমার কথা আমিই শুনব।’ বলে শুরু করলাম, ‘বোকা মেয়ে! বুঝতে পারছ না, কেবল ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছ, অমনি তোমার বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু তোমার চার বান্ধবীর এখনো হয়নি। এখন যে বয়স, বিয়ে নিয়ে একটা কৌতূহল থাকবেই, তাই না? ওরাও তো চাচ্ছে, ওদেরও একজন প্রিয় মানুষ থাকুক, কিন্তু লজ্জায় বাসায় বলতে পারছে না! তাহলে উপায়? এখন যেহেতু তুমি হচ্ছ ওদের সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড। তাই খুব কাছ থেকে তোমাকে এবং তোমার প্রিয় মানুষটাকে ওরা পর্যবেক্ষণ করছে। ওই যে বললাম, নিজের বিয়ের কথা তো সরাসরি বাসায় বলতে পারছে না, তাই আমাদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বোঝাতে চাইছে, ওরাও আসলে বিয়ে করতে ইচ্ছুক!’
এইটুকু শুনে আমাতুল্লাহর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সম্ভবত এখন আর রাগ নেই। মেয়েরা অল্পতেই যেমন রাগ করে, অল্পতেই আবার হাসতে শুরু করে। আমি গলা বাড়িয়ে বললাম, ‘কী, বুঝতে পারছ? না কি আরও ব্যাখ্যা করতে হবে?’ বলতে বলতে ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে চোখ টিপলাম!
ও খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল, ‘তার আর দরকার নেই। আমি এমনিতেই পটে গেছি!’
গল্প : হয়তো হারানোর ভয়ে
লেখা : আবদুর রহমান - Abdur Rahman
সিরিজ : রুপোলি সংসার
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....