ইমাম বান্নার পাঠশালা : ড. ইউসুফ আল কারযাভী | Imam Bannar Pathshala

  • বই : ইমাম বান্নার পাঠশালা
  • লেখক : ড. ইউসুফ আল কারযাভী
  • অনুবাদ : জাকিয়া সুলতানা শিফা
  • প্রকাশনায় : প্রচ্ছদ প্রকাশন
  • রিভিউ : আমজাদ ইলাহী 

ইমাম হাসান আল বান্না বিশ্বাসের সাথে এ কথাটি বারবার বলতেন, পৃথিবীর বুকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের পূর্বে যে সংকটটি দেখা দেয় তা হলো - অন্তর ও মানসিকতার সংকট।

“আমরা মানুষকে কীসের দাওয়াত দেবো’’ নামক পুস্তিকার একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম হলো ‘আমরা কোত্থেকে শুরু করব’। এ শিরোনামের অধীনে শহিদ হাসান আল বান্না বলেন—
 “উম্মাহর পরিগঠন, জাতির তারবিয়াত, প্রত্যাশা বাস্তবায়ন এবং এর প্রাথমিক শর্তগুলো কার্যকর করতে হবে। যে জাতি এ জাতীয় পরিবর্তনের চেষ্টা করে অথবা যে দল এসবের প্রতি আহ্বান করে, তাদের প্রয়োজন বিশাল মনোবল ও শক্তি। নিম্নে বর্ণিত কয়েকটি গুণাবলির মধ্য দিয়ে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে—

এমন ইচ্ছাশক্তি, যেখানে কোনো দুর্বলতার ছাপ থাকবে না। পূর্ণ আমানতদারি, যেখানে খিয়ানত বা চরিত্র বদলের কোনো স্থান হবে না। এমন ত্যাগ-কুরবানি, কোনো লোভ-লালসা ও কৃপণতা যার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। নিজের উৎসের পরিচয় জানা, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং তার যথাযথ মূল্যায়ন; এক্ষেত্রে সে কোনো ভুল করবে না, এ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে না এবং প্রবঞ্চনার শিকার হবে না।

এ সকল মৌলিক গুণ এবং রুহের এ প্রবল শক্তির ওপর ভর করেই উম্মাহর ভিত রচিত হয়। এর মাধ্যমে নতুন জাতিসত্তার বিকাশ ঘটে, উন্নত সমাজ গড়ে ওঠে এবং যারা দীর্ঘকাল নির্জীব জীবন কাটিয়েছে, তারা সঞ্জীবনী শক্তি লাভ করে।

যদি কোনো জাতির মধ্যে এ চারটি গুণের অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায় অথবা কমপক্ষে তাদের নেতা ও সংস্কারবাদীদের মধ্যে এগুলো অনুপস্থিত থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, সেই জাতি বড়োই নিঃস্ব এবং তাদের কাজকর্ম অন্তসারশূন্য। তারা কোনো সফলতা লাভ করতে পারবে না এবং প্রত্যাশার বাস্তবায়ন ঘটাতেও সক্ষম হবে না। বরং তারা স্বপ্ন, ধারণা ও কল্পনার জগতে বসবাস করছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
وَ اِنَّ الظَّنَّ لَا یُغۡنِیۡ مِنَ الۡحَقِّ شَیۡئًا 
“অথচ সত্যের ব্যাপারে এমন ধারণা মোটেই ফলপ্রসূ নয়।” সূরা নাজম : ২৮

এটিই মহান আল্লাহর চিরন্তন নিয়ম এবং সৃষ্টির ব্যাপারে এটিই তার বিধান। আল্লাহর বিধানে আপনি কখনও কোনো পরিবর্তন পাবেন না—
...اِنَّ اللّٰهَ لَا یُغَیِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰی یُغَیِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِهِمۡ... ﴿۱۱﴾
“আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।”
সূরা রাদ : ১১ 

এটি মূলত সেই নিয়ম, যা রাসূল সা. হাদিসে ব্যক্ত করেছেন—
يُوشِكُ الْأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الْأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا .فَقَالَ قَائِلٌ: وَمِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ،وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ، وَلَيَنْزَعَنَّ اللَّهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ، وَلَيَقْذِفَنَّ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمُ الْوَهْنَ. فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا الْوَهْنُ؟ قَالَ: حُبُّ الدُّنْيَا، وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ.
“অচিরেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, যেমন খাবারের পাত্রে আহার গ্রহণকারীরা সমবেত হয়। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন— ‘হে আল্লাহর রাসূল, সেদিন কি আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে এমন অবস্থা হবে?’ নবিজি সা. বললেন— ‘না; বরং সেদিন তোমাদের সংখ্যা হবে প্রচুর। কিন্তু তোমরা সেদিন স্রোতের আবর্জনার ন্যায় ভেসে যাবে। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ব্যাপারে ভয় দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে দুর্বলতা সঞ্চার করবেন।’ তখন এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন— ‘হে আল্লাহর রাসূল, কী সেই দুর্বলতা?’ নবিজি সা. বললেন, ‘দুনিয়ার মহব্বত এবং মৃত্যুর প্রতি অনীহা’।” আবু দাউদ : ৪২৯৭

এ হাদিসে আমরা দেখতে পেলাম— রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, উম্মাহর দুর্বলতা ও জাতির লাঞ্ছনার কারণ হলো— আত্মার দুর্বলতা, অন্তরের নির্জীবতা, উত্তম চরিত্রের শূন্যতা এবং বীরত্ব ও সাহসিকতার অভাব। যদিও সেদিন সংখ্যা হবে প্রচুর এবং জাগতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে তারা এগিয়ে যাবে বহু দূর!”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ