বারবার এই কথা আমাদের স্মরণ করা উচিত যে, আমরা যতই বিজ্ঞান- যুক্তি - ধর্ম বিশ্লেষণ করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি না কেন, আমজনতা হল ফলোয়ার। সাধারণ মানুষ সফলদের ফলো করে, এত বিজ্ঞান যুক্তি তারা বোঝেও না, মানেও না। আর আমাদের আজকের সমাজের এই কথিত "সফল" ব্যক্তিদের একাংশ সেই যে শোবিজের নষ্ট জগতে পা রাখে। নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ ইত্যাদিতে যারা অভিনয় করে, মিউজিক প্রডিউস করে, ডিরেক্টর হয় জনতা তাদেরকে খুব ফলো করে, তাদের মত হতে চায়।
সাধারণত আমরা স্ক্রিনের উপর কুশীলবদের যা করতে দেখি তা নিজেরাও অনুকরণের চেষ্টা করি। ফলে জনসাধারণকে কোনো বিষয়ে প্রভাবিত করতে এই নাটক, সিরিজ, সিনেমার মাধ্যমে ট্রেন্ড তৈরি করা অত্যন্ত সহজ।
এই কথিত "সফল"রা খুব কমই আমাদের ভালো কিছু শেখায়। বিভিন্ন খারাপ বিষয়ে আমাদের তারা নানাভাবে প্রভাবিত করে। আর আমাদের চিন্তার গভীরতা কম হওয়ায় এবং আশেপাশের মানুষের দেখাদেখি আমরাও "ট্রেন্ড' নাম দিয়ে এসবে ঝাপিয়ে পড়ি।
ওই অভিনেতা এভাবে বিড়ি টেনে ফু দেয়, আমাদের তারা নিত্যনতুন গালি শেখায় আমরাও দিই, আমরাও কপি করি। তাদের আজেবাজে ডায়লগগুলো আমরাও আওড়ায়, কারণ ট্রেন্ড ফলো করা লাগবে।
মানুষ মুখে যা উচ্চারণ করে তার অধিকাংশই তার চিন্তার জগত ও পদ্ধতিতে প্রভাব বিস্তার করে। অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ বা ক্রমাগত অন্যের বাবা-মায়ের চরিত্রহনন করতে করতে দেখা যায় তার বাবা-মা নিয়ে কেউ কিছু বললে তা আর অন্তরে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না। গালি মানুষের অন্তর থেকে গাম্ভীর্যভাবকে অপসারণ করে, এই গাম্ভীর্যতাকে আমরা আত্মসম্মানবোধ বলে ডাকি। যার আত্মসম্মান নেই, সে অন্য যেকোন খারাপ কাজে জড়াতে পারে।
দেখুন, আপনি আমি শুধু অভিযোগ করছি, কেন ওরা সমাজকে নষ্ট করছে, গালি-বাজে অভ্যাসে তরুণদের অভ্যস্ত করছে। আর ওইদিকে যারা ময়লা ছিটানোর তারা কিন্তু বসে নেই, তারা তাদের ময়লা ছিটানোর কাজ বন্ধ রাখেনি। নিত্যনতুন আজেবাজে জিনিস তারা আমাদের মধ্যে প্রচার করছে। কয়েক দশক ধরেই এরা আস্তে আস্তে নেগেটিভিটি ছড়িয়েছে যেন মানুষ অল্প অল্প করে অভ্যস্ত হয়, হঠাত ট্রিগারড না হয়ে যায়। আমরা এতদিন তা একটু দুষ্টুমি আরকি, আমি তো দেখছি শুধু, গ্রহণ করছিনা টাইপ নফসকে প্রশ্রয় দেয়া কুযুক্তি ব্যবহার করেছি।
তাহলে আমাদের কাজ কী?
আমাদের উচিত নিজেদের বাঁচানো। এসব অপ্রয়োজনীয় ও চিন্তাচেতনা বিনষ্টকারী ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে হাঁটার বীরত্ব আমাদের অর্জন করতে হবে। এটা হল নিজেকে সাময়িকভাবে বাঁচানোর পথ। কিন্তু, যে সমাজে চারদিকে নতুন নতুন ময়লার বিস্তার হচ্ছে সে সমাজের মাঝখানে থাকবেন আর আপনার গায়ে ময়লা লাগবে না এটা তো হতে পারে না।
আমাদের সামষ্টিক দায়িত্ব আছে। এই দায়িত্ব স্রষ্টা প্রদত্ত। দায়িত্ব হল মানুষের কাছে ভালোটা প্রচার করা এবং খারাপ বিষয়ে তাদেরকে সচেতন করা।
“তুমি কে আরেকজনের লাইফে নাক গলানোর, মাই লাইফ মাই রুলস" – এসবও হচ্ছে ট্রেন্ড, বাজে ট্রেন্ড।
আর আপনি তো নেমেছেনই বাজে ট্রেন্ডের বিরুদ্ধে। যে একথা বলছে তাকে বোঝান আমি নাক না গলালে ঐ ওয়েব সিরিজের খলনায়কেরা তো ঠিকই নাক গলাচ্ছে, তাদের দেখে দেখে তুমি তো ঠিকই গালি দেয়া শিখছো, আজে বাজে চিন্তাভাবনা ও অভ্যাস গড়ে তুলছো?
এমন কখনো হওয়া সম্ভব না যে, লাইফ তোমার আর সেখানে কেউ রুল করবে না। আমাদের লাইফে সবসময় কেউ না কেউ রুল করবেই। তাই এইসব বাজে কথা রেখে উঠে আসো ওই অন্ধকার গর্ত থেকে। দুর্গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে তোমার মস্তিষ্ক পচে গেছে। আর তোমার মস্তিষ্ক পচাতে পেরেই ওই ওয়েব সিরিজের খলনায়কেরা তোমার লাইফে রুল করছে, আর তোমার মনে হচ্ছে আরেহ! এটাই তো লাইফ। বাইরে বাতাসে অনেক সুঘ্রান। এই সুঘ্রাণ নিয়ে দেখো লাইফ কাকে বলে। ডেয়ার টু টেস্ট ডিফরেন্ট ম্যান! টেস্ট করলেই তো তুলনা করতে পারবে কোনটা তোমার জন্য বেশি সুইটেবল!
বসে থাকলে চলবে না, আশেপাশের বন্ধু বান্ধব, ছোট ভাই, বড় ভাই, বাবা - সন্তান যেই এই রোগে আক্রান্ত, তার কাছে ছুটে যান, তাকে বোঝান, ভাই বোনের ক্ষেত্রে ইমোশন ব্যবহার করুন। শোবিজকে ফলো করা থেকে নিরুৎসাহিত করুন। আল্লাহর আদেশের ব্যাপারে তাদেরকে বোঝান, বোঝান গালি ছাড়াও বাঁচা যায়। আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করুন, সাহায্য করুন। পাল্টা গালি বা আঘাতের ভয়ে চুপ করে থাকলে চলবে না, "লোকে কী বলবে" তার পরোয়া করা যাবে না। এই নষ্ট সমাজের নষ্ট লোকেরা আমাকে কিছু বললে তাতে আমার কিছু যায় আসে না, বরং তাদেরকে সুস্থ করায়ই এখন আমাদের মিশন।
রেডি?
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....