আমাদের সমাজে এমন কিছু মিথ্যাচার প্রচলিত যা কেউ মিথ্যা হিসেবে সন্দেহ পর্যন্ত করেন না। যেমন ধরুন, অনেক মহিলা বলেন, “বিয়ের পর আমার স্বামী আমাকে আর লেখাপড়া করতে দেননি'। শুনলে সবার মাথায় নিশ্চয় ওই হতভাগ্য মেয়েটির ছবি ভেসে ওঠে, যার পাষণ্ড স্বামী লেখাপড়া করার অপরাধে তার হাতের আঙুল কেটে নিয়েছে! কিন্তু সচরাচর কি এমনটা হয়ে থাকে? নাকি ওইটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? একটি অস্বাভাবিক উদাহরণ? স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একজন পুরুষ যে পরিমাণ সময় কর্মক্ষেত্রে থাকেন, সেটি যদি একজন নারীর জন্য ঘরের কাজ সেরে ঘুমানোর, সিরিয়াল দেখার বা পরচর্চা করার জন্য যথেষ্ট হয়, তাহলে লেখাপড়া করার জন্য যথেষ্ট নয় কেন? অনেক পুরুষের পক্ষে হয়তো স্ত্রীর লেখাপড়ায় জোগান দেওয়া সম্ভব না হতে পারে, কিন্তু লেখাপড়ায় বাধা দেওয়ার মতো বোকা বা পাগল পুরুষ কমই আছেন।
একজন পুরুষের যদি স্ত্রীর জন্য শাড়ি গয়না কিনতে টাকার অভাব না হয়, বই কেনার বেলা টাকার অভাব হয়ে যাবে এটা কিঞ্চিৎ বিচিত্র নয় কি? প্রকৃতপক্ষে অনেক নারীদের মাঝেই এমন মানসিকতা দেখা যায়, ‘বিয়ে হয়ে গিয়েছে, এখন আমার দায়দায়িত্ব আরেকজনের, লেখাপড়া করে আর কী হবে?' কিংবা ‘এত কষ্ট কে করে?' কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত হওয়া ছাড়াও যে লেখাপড়ার আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা অনেকসময় তাদের নজর এড়িয়ে যায়। একজন সুশিক্ষিত নারী যেমন পরিকল্পিতভাবে নিজের সংসার সাজাতে পারেন, গড়ে তুলতে পারেন একটি সুশিক্ষিত সন্তান, বোঝেন পরিবারের সবার অধিকারের মাত্রা এবং তাদের প্রতি দায়িত্ব, তেমনটা কি সবার পক্ষে সম্ভব?
তারপরও যদি স্বামীর পক্ষে স্ত্রীর লেখাপড়ার জোগান দেওয়া কঠিন হয়, সে ক্ষেত্রে একজন নারীর সুযোগ রয়েছে বাবা বা ভাইয়ের সহযোগিতা নেওয়ার। এরপরও পড়াশোনা করতে না পারলে নিজের ইচ্ছা বা চেষ্টার অভাবকেই মুখ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। হ্যাঁ, অবশ্যই স্বামী যদি প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন, তাহলে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। কিন্তু এর অভাব হলেও স্ত্রীর লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়ার মতো প্রত্যক্ষ ভূমিকা মনে হয় কম লোকই পালন করেন। এসব ক্ষেত্রে অজুহাতগুলো কেবল নিজের অনিচ্ছা বা চেষ্টার অভাব ঢাকতেই দেওয়া হয়।
জীবনের সহজ পাঠ - রেহনুমা বিনত আনিস
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....