দ্য মার্শিয়ান : এন্ডি উইয়ার | The Martian by Andy Weir

  • Title : দ্য মার্শিয়ান
  • Author : অ্যান্ডি উইয়ার
  • Translator : শেহজাদ আমান
  • Publisher : অন্বেষা প্রকাশন
  • ISBN : 9789849530169
  • Edition : 1st Published, 2021
  • Number of Pages : 384
  • Last Update September 16, 2022
আচ্ছা, আপনি কি জীবনে কখনো কোথাও আটকা পড়েছিলেন? একা? কোন বাসায়, কিম্বা কোন ঘরে? কেমন লেগেছিলো? একাকীত্ব আঁকড়ে ধরেছিলো নিশ্চই? আর ভয়? নিজেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করার পর প্রথম কোন চিন্তাটা এসেছিলো আপনার মাথায়? বাঁচতে হবে, বের হতে এখান থেকে যেভাবে হোক। কাছের মানুষজনকে জানাতে হবে, আমি আটকা পড়েছি এখানে !!

এবার চিন্তা করুন, আপনি আটকা পড়েছেন একটা বহুতল বিল্ডিং'এ, যেখানে একমাত্র মানুষ বলতে শুধু আপনি নিজে ! ভাবনা টা ভীতিকর, তাই না? যদি এমন হয়, পুরো মহল্লাতেও আর কোন মানুষজন নেই, কিম্বা পুরো শহরে? আপনি একা !! কল্পনা করতে গিয়েই অস্থির হয়ে যাচ্ছেন নিশ্চই...

তাহলে ভাবুন মহাকাশচারী মার্ক ওয়াটনি'র কথা...যে বেচারা একটা মিশনে গিয়ে আটকা পড়ে গিয়েছিলো আস্ত একটা গ্রহে...পৃথিবী থেকে ১৩৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে, সম্পূর্ণ একাকী !! মঙ্গল গ্রহে...

একটা দূর্ঘটনায় মার্ক'কে মৃত ভেবে; তাকে ফেলেই স্পেস শীপে উঠে চলে যেতে বাধ্য হয় তার সহকর্মী অভিযাত্রীরা। কিন্তু আসলে মরেনি সে !! জ্ঞান ফিরে পেয়ে জেগে উঠে দেখে এই নির্জন গ্রহে সে পড়ে আছে একাকী !! প্রচন্ড ধূলিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পৃথিবীতে সিগন্যাল পাঠানোর যন্ত্র। পাঠালেও যে খুব লাভ হয়ে যেত মুহূর্তেই, তা কিন্তু না !! কক্ষপথ ছেড়ে চলে গেছে মিশনের জাহাজ !! রসদ নিয়ে নতুন করে উদ্ধার অভিযান বাস্তবায়ন করতে লেগে যাবে কয়েক বছর !! তাই, ততদিনে অক্কা পাওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোন বিকল্প নেই তার হাতে !! প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে মরবে মার্ক ওয়াটনি? অক্সিজেনের অভাবে? নাকি পানির অভাবে? না খেয়ে? তেষ্টায়? যন্ত্রপাতি বিগড়ে? নাকি একাকীত্বে?

কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র নয় বোটানিস্ট কাম ইঞ্জিনিয়ার কাম মহাকাশচারী মার্ক ওয়াটনি...মঙ্গলের জানমানব বিহীণ বিরান প্রান্তরে শুরু হলো তার বেঁচে থাকার অভূতপূর্ব এক সংগ্রাম...
আর পৃথিবীতে কি হলো? সোজা বাংলায় বলতে গেলে, তোলপাড় !!
যখন সবাই টের পেল তারা নির্জন এক গ্রহে ফেলে এসেছে এক জীবিত মানুষকে, তখন মাথা নষ্ট হয়ে গেলো সবার !! লাখ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখার আর জীবিত ফেরত আনার জন্য শুরু হলো আরেক যুদ্ধ !! যেখানে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে গেল সমস্ত পৃথিবী...

পাঠ প্রতিক্রিয়া -

এন্ডি উইয়ারের লেখা দ্য মার্শিয়ান সাই ফাই উপন্যাসটি বহুল আলোচিত এবং পঠিত। বিখ্যাত পরিচালক রিডলী স্কটের আই এম ডি বি'তে ৮ রেটিং প্রাপ্ত একটা মুভিও আছে এই উপন্য্যাসের উপর নির্মিত। ম্যাট ডেমন, সেবাস্টিয়ান স্ট্যান, কেট মারা সহ দারুণ সব অভিনেতা অভিনেত্রীরা ছিলেন কাস্টিং এ। মুভিটা দেখে ফেলেছিলাম বের হবার সাথে সাথেই। বইটা পড়লাম আজ।
ব্যাতিক্রমধর্মী একটা সায়েন্স ফিকশন পড়ার অভিজ্ঞতা হলো বলতেই হবে। মার্ডারবট সিরিজের অল সিস্টেমস রেড পড়ার পর এই একটা বই পড়লাম, যেখানে সায়েন্সের কচকচানির মধ্যেও মাঝে মাঝে বই বন্ধ রেখে হো হো করে হেসে উঠতে হয়েছে।

অনুবাদক ভূমিকাতেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন, বইটা পড়তে হলে সাধারণ বিজ্ঞানের কিছুটা জ্ঞান থাকতেই হবে। সায়েন্স ফিকশন যারা পড়ার জন্য হাতে তুলে নেন, তারা নিশ্চই জানেন, "এটাই সাইন্স" !! তবে এই বইটা পড়তে হলে শাকিব খানের চেয়েও কিছুটা বেশি সাইন্স দরকার !! আর দরকার; মহাশূণ্য, স্পেস শীপ, মহাজাগতিক মিশন কিম্বা মঙ্গল গ্রহের প্রতি রোমান্টিকতার আড়ালে থাকা ভয়ংকর ভয়ংকর জটিল গাণিতিক হিসাব নিকাশের প্রতি আগ্রহ !! তা না হলে বিজ্ঞানের খটোমটো তথ্যাবলী আপনাকে বিরক্ত করে তুলতে পারে !!

বইটা মূলত উত্তম পুরুষে লেখা মার্ক ওয়াটনির মঙ্গল গ্রহে বেঁচে থাকা কালীন জীবনের প্রতিটি দিনের লগ। এবং শেষের দিকে এসে বইটা আর শুধু মার্কের থাকেনি। হয়ে গেছে নাসা'র বিখ্যাত সব বিজ্ঞানী, অসাধারণ প্রতিভাবান সব তরুণ তরুণী আর বেঁচে থাকার এবং বাঁচিয়ে রাখার এই অবিস্মরণীয় সংগ্রামে এক হয়ে যাওয়া বিশ্ববাসীর গল্প !!

বইটা হার্ডকোর সায়েন্স ফিকশন হলেও এর অনন্যতা হচ্ছে বর্ণনাশৈলীতে। প্রায় প্রতি পদে পদে হিউমার এবং জীবন-মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ জানানো মুহূর্ত গুলোকে রসিকতা দিয়ে মোকাবেলা করা - এমনটা আমি সচরাচর কোথাও দেখিনি। সায়েন্স ফিকশনে তো নয়ই। তাই বইটা পড়তে গিয়ে সময়টা দারুণ কেটেছে। শেষের দিকে তো প্রায় নখ কামড়ানোর মতো অবস্থা !! এক অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবে দুনিয়ার তাবত বিজ্ঞানীরা? মার্ক ওয়াটনি বাঁচবে তো? ধরতে পারবে পৃথিবীতে ফেরার স্পেস ফ্লাইট? বাঁচবে তো ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আসা সহকর্মীরা?

অনুবাদ -

আমি সাধারণত অনুবাদের জন্য আলাদা প্যারাগ্রাফ করিনা আমার রিভিউতে। কিন্তু এই বইয়ের জন্য করতেই হলো। বিজ্ঞানের জটিল বিষয় গুলো মূল লেখকই দারুণ সহজ করে লেখার চেষ্টা করেছেন জানি আমি, কিন্তু সেই তত্ত্ব আর তথ্যমূলক বর্ণনাগুলোর বাংলায় অনুবাদ, অনুবাদক এত সুন্দর এবং সাবলীল ভাবে করেছেন তাতে তার দারুণ দক্ষতাই প্রমাণ করে। তবে তার কৃতিত্ব এতেই শেষ হচ্ছে না, বরং বলতে হবে শুরু !! 

মূল বইয়ের হিউমার আর রঙ্গরসিকতাগুলো দুর্দান্তভাবে তিনি রূপান্তর করেছেন বাংলায় !! ইংরেজী ভাষার কৌতুকগুলো বা কমিক ইঙ্গিতগুলো সেই কমিক মেজাজ ধরে রেখে সাবলীল অনুবাদ করাটা কিন্তু যেন তেন কম্মো নয়। আর এখানেই অনুবাদক আদনান আহমেদ রিজন তার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। যদিও "আবার জিগায়" এবং সিরিয়াস মোমেন্টে ফাকড শব্দের অনুবাদে "আকাশ ভরা তারা"র বাহুল্য বিরক্তিকর লেগেছে।

নেগেটিভ দিক -

মুভিটা দেখার সময় একটা অনুভূতি হয়েছিলো। মনে হয়েছিল, ভেরি ওয়েল মেড হলেও রিডলি স্কট যেটা তুলে ধরতে পারেন নি তা হলো মার্শিয়ানের একাকীত্বটা। একটা বিশাল গ্রহে একাকী একটা মানুষের যে ভীতিকর এবং নির্জনতার ভয়ংকর অনুভূতিটা হবে; সেটা ফুটে উঠেনি। তার ইনোভেশনের কাছে তার টিকে থাকার হার্ডশিপ আর স্ট্রাগলিং টা একেবারে ম্লান মনে হয়েছে !! এখন বইটা পড়েও দেখলাম তাই। পুরো গল্পে; বৈরী লাল একটা গ্রহতে আটকা পড়া মানুষটার জীবনপণ সার্ভাইভালের দিকেই মনোযোগ দেয়া হয়েছে বেশি, সাহিত্যের দিকে নয়।

ভার্ডিক্ট -

দুর্দান্ত প্রচ্ছদ। একেবারে মন কাড়া। অনুবাদকের নিজেরই করা প্রচ্ছদটা। বইয়ের প্রোডাকশন নিয়ে কথা বলার মত জ্ঞান বুদ্ধি আমার তেমন নাই। তবে বই পড়তে কোন সমস্যা হয়নি। ভেতরে কিছু বানান ভুল পেয়েছি, যদিও আমার কোন ছুতমার্গ নেই এতে তেমন একটা।

ব্যাতিক্রমী বই প্রেমী কিম্বা হিউমার লাভারদের জন্য মাস্ট রিড একটা বই দ্য মার্শিয়ান। আর সায়েন্স ফিকশন প্রেমীদের জন্য তো বটেই।
 

At A Glance 

মঙ্গল গ্রহে এক মিশনে এসে প্রবল ধূলিঝড়ের কবলে পড়ে বাধ্য হয়ে মঙ্গল ত্যাগ করে পৃথিবীর পথে পাড়ি জমিয়েছে নাসার নভোচারীরা। কিন্তু মৃত মনে করে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে তাদের সহযাত্রী মার্ক ওয়াটনিকে। চরম বিরুদ্ধ ও প্রতিকূল পরিবেশের লাল গ্রহটিতে একা পড়ে রয়েছে সে। পৃথিবীর সাথে যোগাযোগেরও কোনো উপায় নেই তার। যদি অক্সিজেনেটর ভেঙে পড়ে তাহলে দমবন্ধ হয়ে এবং যদি ওয়াটার রিক্লেইমার নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে মারা পড়বে সে। 

তার বসবাসের আশ্রয়স্থল হাবটা ফুটো হয়ে গেলে হবে বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এসবের কিছু যদি নাও ঘটে, এরপরও একসময় খাবারের ভাণ্ডার ফুরিয়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করবে অনাহারে। এই ভয়ানক অবস্থায় সে আদৌ কি টিকে থাকতে পারবে? কখনো কি ফিরে যেতে পারবে তার প্রাণের নীল গ্রহ পৃথিবীতে? আসুন পাঠক, পরিচিত হোন ‘মহাশূন্যের রবিনসন ক্রুসো’ মার্ক ওয়াটনির বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও পৃথিবীতে ফিরে আসার অসীম সাহসিক যুদ্ধের সাথে...!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ