মাই লাভলি ওয়াইফ - সামান্থা ডাউনি | My Lovely Wife - Samantha Downing

  • বইঃ মাই লাভলি ওয়াইফ 
  • মূলঃ সামান্থা ডাউনিং
  • অনুবাদঃ ইরাজ উদ্দৌলা দিবাকর
  • প্রকাশকঃ ভূমিপ্রকাশ
  • প্রকাশকালঃ আগস্ট, ২০২১
  • ঘরানাঃ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
  • প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী 
  • পৃষ্ঠাঃ ৩১৪
  • মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৪০ টাকা
  • ফরম্যাটঃ হার্ডকভার   

কাহিনি সংক্ষেপঃ স্বামী, স্ত্রী আর কিশোর বয়সী দুই ছেলে-মেয়ে। সুখের সংসার তাদের হিডেন ওকস নামের ছোট্ট এক শহরে। গৃহকর্তা একজন পেশাদার টেনিস কোচ আর গৃহকর্ত্রী একজন স্বনামধন্য রিয়েল এস্টেট এজেন্ট। ছেলে-মেয়ে দুটোই হাইস্কুল পড়ুয়া। অসঙ্গতিটা কোথায় তাহলে? আছে।

মোটামুটি লম্বা একটা সময় ধরে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে নিজেদের শিকার নির্বাচন করে তারা। শিকার হিসেবে বেছে নেয়া হয় এমন কিছু মহিলাদের, যারা মূলত একাকী জীবনযাপন করে। এরপর তাদেরকে অপহরণ করে অজানা জায়গায় বন্দি করে রেখে চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন, তাও মাসের পর মাস। একসময় খুন করা হয় ওদের। সম্পূর্ণ প্যাটার্নটা মিলে যায় কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ওয়েন অলিভার রিলি'র করা খুনগুলোর সাথে। সেই ওয়েন অলিভার রিলি, যে একটা সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিলো সমগ্র হিডেন ওকস শহরে৷ তবে কি এতোদিন পর আবারো ফিরে এসেছে সে!

টোবিয়াস একজন বধির। নানাভাবে মেয়েদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে সে। কি উদ্দেশ্যে? একজন আদর্শ স্ত্রী হিসেবে যাকে দশে দশ দেয়া যায় সেই শান্তশিষ্ট মিলিসেন্ট আসলে কি লুকাচ্ছে তার স্বামীর কাছ থেকে? হিডেন ওকসের সাংবাদিক জশের কাছে রীতিমতো চিঠি পাঠিয়ে সিরিয়াল কিলিং শুরু করেছে এক বদ্ধ উন্মাদ। পাওয়া যাচ্ছে একের পর এক নারীর ক্ষতবিক্ষত লাশ। এসবের পেছনে আসলে কে? দুঁদে ইনভেস্টিগেটর ক্লেয়ার ওয়েলিংটন যখন পা রাখলো হিডেক ওকসে, ধীরে ধীরে আরো অনেক রহস্যই উন্মোচিত হতে লাগলো।

শ্বাসরুদ্ধকর সব ঘটনার সাথে সাথে কারো কারো মন দুলতে লাগলো বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মধ্যকার দোলাচলে৷ এখানে কে মন্দ আর কে বেশি মন্দ, সেটাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দিলো।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সামান্থা ডাউনিং-এর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার 'মাই লাভলি ওয়াইফ' প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। প্রকাশের পরপরই এটা হয়ে ওঠে বেস্টসেলার। হারলান কোবেন আর সি. যে. টিউডরের মতো পাঠকপ্রিয় থ্রিলার লেখকদের প্রশংসায় ভেসেছে এই উপন্যাসটা। সাজানো গোছানো জীবনের পরতে মোড়ানো মানবমনের অন্ধকার দিক সম্পর্কে চমৎকার একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন সামান্থা ডাউনিং 'মাই লাভলি ওয়াইফ'-এ। কতো অদ্ভুত ধরণের ফেটিশ যে মনের গহীনে দিনের পর দিন কেউ কেউ পুষে নিয়ে থাকে, ভাবলে কিছুটা অবাকই হতে হয়।

অন্যান্য অনেক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের মতোই 'মাই লাভলি ওয়াইফ'-এর কাহিনি এগিয়ে গিয়েছে বেশ ধীরেধীরে। ছোটছোট সব অধ্যায়ের শেষাংশগুলোতে একটু একটু করে কাহিনির সাথে সম্পর্কিত সত্যগুলো উন্মোচন করেছেন লেখিকা। মাঝেমাঝে কিছুটা স্লো মনে হয়েছে আমার কাছে পড়তে গিয়ে। তবে শেষদিকে এসে উত্তেজনার পারদ বেশ খানিকটা চড়ে গিয়েছিলো। এক ছাদের নিচে বছরের পর বছর একসাথে বসবাস করলেও নাকি মানুষ মানুষকে পুরোপুরি চিনে উঠতে পারে না। কথাটা বেশ সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে এই উপন্যাসে। সামগ্রিকভাবে 'মাই লাভলি ওয়াইফ' আমার কাছে ভালোই লেগেছে। প্রায় তিন মাস পর কোন বই পড়ে শেষ করতে পারলাম। ব্যাপারটা ভালো লাগলো।

তরুণ অনুবাদক ইরাজ উদ্দৌলা দিবাকরের চতুর্থ অনুবাদকর্ম এটা। এই প্রথম তাঁর অনুবাদ পড়ার সুযোগ হলো আমার। আমি মুগ্ধ। তাঁর অনুবাদ ঝরঝরে আর প্রাঞ্জল। একটা জায়গাতেও দুর্বোধ্য লাগেনি আমার কাছে। নিজের দীর্ঘদিনের রিডার্স ব্লক কাটাতে ইরাজ উদ্দৌলা দিবাকরের এমন চমৎকার সুখপাঠ্য অনুবাদ অনেক বড় একটা ভূমিকা রেখেছে। তাঁর অনুবাদ ভবিষ্যতেও পড়ার আশা রাখি।

সজল চৌধুরী'র প্রচ্ছদটা বেশ ভালো লেগেছে। 'মাই লাভলি ওয়াইফ'-এর বাঁধাইটা আমার কাছে কিছুটা দুর্বল বলে মনে হয়েছে। সমস্যাটা আমার কপিতেই কি-না আমি নিশ্চিত না। যাই হোক, যারা পড়তে চান পড়ে ফেলতে পারেন বইটা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ