- বই : পরিবেদন
- লেখক : মৌরি হক দোলা
- প্রকাশনায় : কুহক কমিকস এন্ড পাবলিকেশন্স
- প্রকাশকাল : একুশে বইমেলা ২০২২ (২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২)
- প্রচ্ছদ : Tawhid Ahmed
- সম্পাদনা : Jemim Ara Mouri, Abs RaZz
- মূদ্রিত মূল্য : ২৫০৳
★ভূমিকা
২০২০ এর অক্টোবর থেকে অপেক্ষায় ছিলাম এই বইটা নিয়ে৷ ফেসবুকে ৪ পর্ব দেয়ার পরে লেখক আর গল্পটা ফেসবুকে পোস্ট করেনি দেখে ইনবক্সে জানতে পারলাম এই গল্পটা বই হিসেবে আসবে। তাই পান্ডুলিপি জমা দিয়েছে কুহক কমিকস এন্ড পাবলিকেশন্সে৷ সেই থেকে অপেক্ষা করতে করতে ২০২২ এ এসে বইটা হাতে পেলাম। এই বইটার সাথে আমার অন্যরকম এক অনুভূতি জুড়ে আছে। এককথায়, আমার আবেগ মিশে আছে এই বইয়ের মাঝে। আমার অপেক্ষা সফল হয়েছে। আমি একটা পরিপূর্ণ জীবনগাঁথা উপন্যাস পেয়েছি। যেটা আমাকে নবীন লেখক মৌরি হক দোলা আপু দিয়েছে। একটা যৌথ পরিবারের গল্প। মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যগুলো কীভাবে এক সূত্রে বাঁধা থাকে তারই প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছে লেখক।
★কাহিনী সংক্ষেপ
মফস্বল শহরের একটা ছোটখাটো বাড়িতে মিশে আছে অনেকগুলো মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প। জালাল সাহেবের শিমুল গাছের এই বাড়িটাতে বিকেলে মেয়েদের আড্ডা বসে। সেখানে চলে প্রত্যেকের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ভালোবাসা। জালাল সাহবের দুই ছেলে তারেক ও বদরুলের বিয়ে দিয়েই গল্পের শুরু হয়। কিন্তু কোনো এক কারণে তারেকের বিয়েটা ভেঙে যায়। তারপর হুট করেই তারেক উধাও হয়ে যায়। সবাই ধরে রেখেছিল বদরুলের বিয়েটাও ভেঙে যাবে। আসলেই কী বদরুলের বিয়েটা হয়েছিল। বদরুলদের পরিবারটা একান্নবর্তী পরিবার। ওদের পরিবারে অনেক অনেক মানুষ। জালাল সাহেবের এক সময়ের বিশাল বাড়িতে থাকত কয়েকজন ভাড়াটে পরিবার। তাদের সাথেও সখ্যতা গড়ে উঠেছিল কুলসুমের মায়ের। গ্রামীণ জীবনের সাধারন কিছু বিষয় নিয়েই বইটা লেখা। সহজসরল, সাবলীল বইটি সত্যিই মন ভালো করে দেয়। তবে বইটি বেশ মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে পাঠকের।
★চরিত্র বিশ্লষণ
এই গল্পের বিশেষ চরিত্র হিসেবে রয়েছে বদরুল। বদরুলের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা বর্তিত হয়েছে। এই বইয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে কোনো চরিত্রকেই ধরা যায় না। প্রত্যেকটা চরিত্রই বিশেষ ভাবে নিজেদের অবস্থানে পরিপূর্ণ। গল্পে প্রতিটা চরিত্রই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
জলি নামের এক সংগ্রামী মেয়ের জীবনকাহিনী রচিত হয়েছে। বাপ-মা মরা অল্প বয়সী মেয়েটিকে পয়ত্রিশ বছর বয়সী এক বুড়োর সাথে বিয়ে দিয়ে ভাই-ভাবী হাফ ছেড়ে বাঁচে। কিন্তু সেই মেয়েটি কী সংসার জীবনে টিকে থাকতে পেরেছিল.?? জলির সংগ্রামী জীবনটা আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত চিত্রিত হচ্ছে।
কিশোর বয়সী আদ্যোপান্তে ভরা নীলু। চোখে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছোয়া। নীলুর বান্ধবী বর্ষার সাথে রয়েছে অজস্র স্মৃতি। নীলুর কিশোরীপানার আদ্যোপান্ত কাহিনীগুলো হয়ে উঠে স্মৃতিকাতর।
কলি যে কী না নীলুর সমবয়সী, তবুও সে নীলুর মামী। বদরুলের স্ত্রী হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে৷ মানুষ তো কথা শোনাবেই সেটা ধরে বসে থাকলে তো চলবে না।
এছাড়াও আর অনেক অনেক চরিত্রে রয়েছে বইটিতে। লিলুয়া, জালাল সাহেব, কুলসুমের মা, চাঁদমণি, কবিতা সহ আরো অনেককে নিয়েই রচিত হয়েছে বইটি।
★পাঠ-প্রতিক্রিয়া
পরিবেদন বইটা পড়লে গ্রামীন জীবনের অনেক স্মৃতি রোমন্থন হবে। যেগুলো সুখকর অনুভূতি দিবে। উপন্যাসটিতে নীলুর সাথে তার ছোট মামির কথোপকথন শুনে আমারও মনে হয়েছে অনেক স্মৃতি। লেখকের বয়স অল্প হলেও লেখক পাঠক সমাজকে দারুণ কিছু দিয়েছে। উপন্যাসটিতে রয়েছে অনেক চরিত্র। একেকটা চরিত্র দারুণ ভাবে সাজিয়ে তুলেছে। প্রয়োজনের বাইরে একটা চরিত্র তৈরি হয়নি।জালাল সাহেব, কুলসুমের মা, তারেক,বারেক,বদরুল, লিলুয়া, কলি, বিথি, নীলু, বর্ষা, ছক্কু মাতবর, কবিতা সহ আরও একান্নবর্তী চরিত্র নিয়ে উপন্যাসটি রচিত। প্রত্যেকটা মানুষ একটা বন্ধনে আবদ্ধ।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাদের জীবন-যাপন, নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা ভালোবাসার মিশেল। মাঝে সাঝে পারিবারিক ঝগড়া মিশ্রিত একান্নবর্তী পরিবারের মানুষগুলো প্রতিবেশীদের সাথে গড়ে তোলা সখ্যতাকে লেখক খুবই সহজ সাবলীল ভাবে তুলে ধরেছেন।
কীভাবে তিলতিল করে কুলসুমের মা তার এই সংসার গড়ে তুলেছেন। আবার সেই গড়ে তোলা সংসারের স্মৃতিঘেরা শেকড়কে রেখে অন্যত্র নতুন শেকড় গড়ে তোলা কতটা কষ্টকর সেটাও দেখিয়েছেন। এক কথায় এই উপন্যাসটা গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে লেখা অসাধারণ এক উপন্যাস। নবীন হিসেবেও লেখকের লেখনশৈলী ও শব্দচয়ন ভীষণ সুন্দর। লাইনগুলোও সাবলীল ভাষায় লেখা, অশালীন কোনোকিছু চোখেই পড়বে না। মনোমুগ্ধকর একটা উপন্যাস। সব সাধারণের মাঝে যেন অন্যরকম এক অসাধারণত্ব ছুয়ে দিয়েছে উপন্যাসে। তৃপ্তি ভরে পড়ার মতো একটা গল্প। লেখক স্বার্থক তার এই লেখা দিয়ে। আপুর জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা রইলো। অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী বইয়ের জন্য। পুরো বইটাতে শীতল ছোয়া রয়েছে।
ফ্ল্যাপ:
রাতের বেলা খুব আস্তে কথা বললেও তা তীব্র হয়ে শোনা যায়। কারণ প্রকৃতি তখন নীরব থাকে। সে নিশ্চুপ থাকতে চায় অন্ধকারের ভাঁজে। তাই যদি কেউ এই চাওয়ার ব্যত্যয় ঘটাতে চায়, তাহলে তা খানিকটা দূরে ছড়িয়ে দিয়ে সে প্রতিশোধ নেয়। এই নতুন দম্পতির প্রতিও আজ সে প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু প্রতিশোধের আঘাতটা বোধ হয় লক্ষ্য করা মানব-মানবী না পেয়ে পায় তৃতীয় একজন। ...
…আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে তার কানে বিভিন্ন কথা, হাসির শব্দ ভেসে আসছিল। প্রথমে আনমনা হয়েছিল, তাই লক্ষ্য করেনি শব্দের উৎস কোথায়। হঠাৎ লক্ষ্য হলে বোঝার সাথে সাথে তার হুঁশ ফেরে। বেছে বেছে সে তাহলে ছোট ভাইয়ের ঘরের পাশে এসেই দাঁড়িয়েছে? বিরক্তিতে জ্বলন্ত সিগারেটটা সে পা দিয়ে মাটিতে পিষে ফেলে। নিজের জীবনকে তার এইভাবে পিষে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে।
সিনোপসিস
যুগের কলতান আমাদেরকে কিছু নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করে দেয়। সেই নিয়ম ভাঙার প্রথা সচরাচর এই সমাজে হয় না। তবে কখনো যদি কোনো কারণে চিরায়িত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে, তবে তা সমাজে জন্ম দেয় নানা রকম সমালোচনা। এই সমালোচনার কোনো অর্থ নেই, কোনো ইতিবাচক লক্ষ্য নেই। কিন্তু এই সমালোচনা যেকোনো সময় একটি মানুষের জীবনে ঝড় বয়ে আনতে পারে। এই আচমকা ঝড়ের কথা জীবনও জানে। তবুও সে আপন পথে বয়ে চলার সময় কখনো কখনো প্রথা বিরুদ্ধ ইতিহাস তৈরি করে কারো কারো জীবনে। সেই প্রথা বিরুদ্ধ ইতিহাস জীবনকে ছুঁতে পারে না, জীবন এগিয়ে যায়। কিন্তু শেষ করে দেয় একজন ভুক্তভগীর আশা-ভরসা-স্বপ্নকে। তারেক সেই ভুক্তভোগীদের একজন। তার জীবনের গল্প সমাজের আর পাঁচটা পুরুষের জীবনের মতো না। একটু ভিন্ন। কিন্তু এই ভিন্ন জীবনের শুরুটা কেমন? শেষের গল্পই বা কি? সে কি পেরেছিল নতুন করে স্বপ্নকে সাজিয়ে নিতে?
"উঠন্ত মুলো নাকি পত্তনে চেনা যায়।"
ব্যক্তিগত রেটিং- ৪.৯/৫
® তাসফিয়া নূর তাম্মি
(বি.দ্র. রিভিউটা অত গোছালো না। তাই ক্ষমার চোখে দেখবেন)
নিজের সম্পর্কে কিছু কথা (মৌরি হক দোলা)
মৌরি হক দোলা। সবে কলেজ পাশ করলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে আর বই পড়তে খুব ভালোবাসি। কয়েক বছর আগে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় লেখালেখিতে আমার হাতে খড়ি। সপ্তম শ্রেণিতেই বাবার পত্রিকার সুবাদে নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। বাবার নিজের ব্যবসা সম্পর্কিত পত্রিকা। সেখানে এক কোণায় আমার জন্য সর্বদা এক পৃষ্ঠা বরাদ্দ থাকতো। কারণ আর কিছুই না। শুধু আমাকে উৎসাহ দেয়া।
অনেক বছর আগে আমার মা লিখতেন। গদ্যও লিখতেন, তবে পদ্যে তার টান বেশি ছিল। সংসার জীবনে ঢুকে সব যেন অতলে তলিয়ে গিয়েছিল। সংসার, চাকরি, মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়ন... সেই ডুবে যাওয়া স্বপ্ন আবার ভেসে উঠেছিল আমার লেখনী দেখে। মাকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কখনো ভেবেছিলে তোমার মেয়ে লিখবে? বই বের হবে তার? মায়ের উত্তর ছিল, আগে কখনো ভাবিনি। কিন্তু যেদিন পুরোনো ডায়েরিটায় তোর লেখা পড়েছিলাম, সেদিন একবার মন বলেছিল।
ছোটগল্প লিখতাম নিজের খাতায়। নিয়ম করে বাবার পত্রিকায় তা ছাপা হতো। ক্লাস টেনে পড়ার সময় বাসায় প্রথম নেট কানেকশন আসে। তখন খোঁজ পেয়েছিলাম "গল্প কবিতা ডট কম" নামক লেখালেখির এক প্ল্যাটফর্মের। প্রতি মাসে সেখানে একটি করে গল্প পাঠাতাম। অন্যান্য শ্রদ্ধেয় লেখক আপু-ভাইয়ারা তা পড়ে আমাকে উৎসাহ-পরামর্শ দিতেন। এরপরে ব্লগ নিক খুললাম। পরিকল্পনা না থাকলেও ঘটনাক্রমে ২০১৯ একুশে বইমেলায় আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ আনলাম।
ছোট্ট কলেজ জীবনের দুই বছর নানা কারণে লেখালেখি থেকে দূরে ছিলাম কিংবা দূরে থাকতে হয়েছিল। এরপর করোনা কালটা অমানিশার মাঝেও আমার লেখালেখির জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। ছোট ছোট দুটো উপন্যাস লিখে ফেললাম। তার একটি সময়ের স্পন্দন- মৌরি হক দোলা এলো সেপ্টেম্বর মাসে জনতা প্রকাশ থেকে বই আকারে। আরেকটি উপন্যাস "পরিবেদন" পান্ডুলিপি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে কুহক - Kuhok কমিক্স এন্ড পাবলিকেশন থেকে বই আকারে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। ইনশাআল্লাহ এ বছরই আসবে সে। আশা করি, খুব ভালো লাগবে আপনাদের বইটা।
সামনে ভর্তি পরীক্ষা। তবুও না লিখে থাকতে পারি না। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে গল্প সাজিয়ে যাই। কারণ সত্যি বলতে, লেখালেখিটাই আমার প্রাণ! বইয়ের পরে কলম আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এ দুটি যদি কখনো হারিয়ে যায়, তবে আমিও হারিয়ে যাবো চিরতরে...
মৌরি ফুলের গল্প
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....