- বই : কুরআনের সাথে পথচলা
- লেখক : নায়লা নুযহাত
- প্রকাশনী : সবুজ উদ্যোগ প্রকাশনী
- বিষয় : কুরআন বিষয়ক আলোচনা
- পৃষ্ঠা : 264, কভার : পেপার ব্যাক
- ভাষা : বাংলা
জেনারেল শিক্ষিতদের জন্য হিফয করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় ভুগেন, সেটা হলো, কীভাবে হিফয করব। নিজে নিজে হিফয করাটা সহজ কাজ না। একা একা করতে গেলে প্রায়ই দেখা যায়, রুটিন যেভাবে করেছি সেভাবে এগোতে পারিনি। 'একেবারে রুটিন মাফিক চলবো' এই মনের জোরটা আসতে সময় লাগে অনেক মানুষেরই। এই সময়ে সবচেয়ে জরুরী হলো, হাল ছেড়ে না দেয়া। 'আমাকে দিয়ে হবে না/বয়স বেড়ে গেছে/আমি আরব না' ইত্যাদি অজুহাত পেছনে ফেলে নিয়মমাফিক পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে হবে একটু একটু করে।
এটাই 'কুরআনের সাথে পথচলা' বইয়ের মূল বার্তা। বইটির লেখিকা নায়লা নুযহাত ২০১২ সন থেকে লিখতে থাকা হিফয যাত্রার টুকরো অভিজ্ঞতা, অনুভূতি গল্প ইত্যাদির সমন্বয়ে বইটি সাজিয়েছেন। তবে এতে যে শুধু নিজের অভিজ্ঞতাই এনেছেন তা নয়, অন্য হাফিযদের যাত্রাও এতে স্থান পেয়েছে। তাই এই বই অনেক, অনেক হাফিযদের প্রাণের কথা, যা লেখিকা নিজের ভাষায় তুলে ধরেছেন।
একটি বিষয়
সেই ২০১২ সন থেকে লিখতে থাকা হিফয যাত্রার টুকরো অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, গল্প ইত্যাদির সমন্বয়ে এই বই৷ অনেক কথা “আমি” দিয়ে লেখা হয়ে থাকলেও, তার সবই যে আমার নিজের অভিজ্ঞতা, তা নয়। অনেকের থেকে শোনা অনেক অভিজ্ঞতার কথা লিখে রেখেছিলাম “দ্যা ডায়েরি অফ এ কুরআন স্টুডেন্ট” শিরোনামে, তাদেরই নিজেদের বর্ণনায়। এই বই তাই কেবল একজন ছাত্র বা ছাত্রীর হিফয যাত্রার বর্ণনা না। এই বই, অনেক, অনেক কুরআন স্টুডেন্টের প্রাণের কথা- যা নিজের লেখনীতে তুলে ধরলাম।
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। যাঁর অনুগ্রহে আমি কুরআন শিখেছি। যাঁর দয়াতে আজকে আমি এই লেখা লিখতে বসেছি।
বইয়ের শুরুতে অনেকে লেখেন “অমুকের জন্য এই বই”। কখনো ভালোবাসা প্রকাশ করতে লেখেন, কখনো সম্মান অথবা কৃতজ্ঞতা। আমি কোনো একজনের নাম লিখতে পারছি না। কুরআনের সাথে নিজের যাত্রার আড়ালে যাদের ভূমিকা ছিল, তাদের সকলের কথা আজ বড় বেশি মনে পড়ছে। আর বুঝে উঠতে পারছি না, কাকে ছেড়ে কার কথা লিখবো?
মায়ের শখ ছিল, ছেলে-মেয়েদের কুরআন পড়া সুন্দর হবে। ছোট চাচা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আমার প্রথম কুরআন শিক্ষকের উচ্চারণ অনেক ভালো ছিল- শিখিয়েছিলেন সুন্দর করে। এরপর ভাইয়ার কাছে নতুন করে তাজউইদ পড়া। বাবা চাইলেন ইসলামিক স্টাডিজ পড়ি। সেখানে আরবী শেখার শুরু- যা ভবিষ্যতে কুরআনের সাথে থাকার পথ সহজ করে দেয় আল্লাহর ইচ্ছায়। আরো কত কী মনে পড়ছে! মনে পড়ছে খালা-ফুপু-চাচা মামাদের সবার সেই খুশিভরা চেহারা- আমার কুরআন পড়ার অগ্রগতি শুনে। মনে পড়ছে আমার সাহিত্যিক নানাকে, আমার লেখা দেখে বড় খুশি হতেন সেই ছোটবেলায়, না জানি এই বইটা দেখলে কী করতেন! মনে পড়ছে নানী বলতেন “আমরা যদি তোমাদের মত শিখতাম সময় থাকতে!” আর দাদীর স্মৃতিশক্তি ছিল সাংঘাতিক- তিনি অনেক সূরা এমনিই মুখস্থ বলতে পারতেন!
মনে পড়ছে নিজের পরিবার, শ্বশুরবাড়ির সকলে, সৌদি আরবে যেই খালাম্মারা, ভাবীরা শুধু আমি কুরআন ক্লাসে যাই বলে আমার অজস্র “না পারা” কে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন তাঁদেরকে।
মনে পড়ছে সারাজীবন যত শিক্ষক শিক্ষিকার কাছে পড়েছি, তাঁদের কথা! কোনো একজনের নাম লেখার উপায় আমার নেই। কুরআনের যাত্রা তো কেউ একা একা করতে পারে না- আপনজনদের ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা, ত্যাগ স্বীকার সব নিয়েই এই যাত্রা।
তবে এই যাত্রায় যেই দুইজন মানুষ আমার সফর-সঙ্গী ছিলেন, তাদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। একজন আমার স্বামী- আমি এই যাত্রা পাড়ি দিতে গিয়ে মনের জোর হারিয়েছি বহুবার, কিন্তু তিনি আমার ওপর সেই বিশ্বাস রেখেছেন। আরেকজন আমার মেয়ে, আমার প্রতিটি সাফল্যে যার হাসিমুখ আমার সাথে ছিল। সেই সাথে, এই যাত্রা চলাকালীন আমার সকল না পারা, সকল অপারগতার ভুক্তভোগী ছিলেন এই দুইজন। আমার পড়া চালিয়ে যেতে পারার আড়ালে এই দুইজনের ত্যাগ স্বীকার কতখানি তা আসলে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
মনে পড়ছে এই বইটির সাথে জড়িত সকলকে- যেই বোন সংকলন করেছেন ভালোবেসে তাকে। সেই ভাই যিনি প্রকাশনার সমস্ত ঝামেলা বহন করেছেন তাকে। সেই ভাই-বোনদের যারা শুরু থেকে বলে আসছেন এই লেখাগুলো যেন বই আকারে বের করা হয়। মনে পড়ছে সেই বোনদের কথা যারা বিভিন্ন সময়ে লেখাগুলো সেভ করে রেখেছেন। সেই সমস্ত বোনদের যারা আমার পাশে ছিলেন, আমার এই যাত্রায়।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার, শুরুতে এবং শেষে।
নতুন একেকটা শহরে যখনই থাকার জন্য গিয়েছি, দেখেছি সেই শহরকে বুঝতে অনেকদিন লাগে। সেই শহরের মানুষের ভাষা ভিন্ন হলে তো কথাই নেই। বাসা নেয়া, বাজার করা, হসপিটাল কোথায় জেনে নেয়া ইত্যাদি কাজগুলো কঠিন লাগে। এরকম পরিস্থিতিতে, অপরিচিত এক শহরে যখন আমরা এমন কাউকে পেতাম, যিনি এই বিষয়গুলো জানেন, মনে হত যে সব কাজ অনেক সহজে হয়ে গেল।
জেনারেল লাইন এর পড়া থেকে হিফযের জগতে পদার্পণের সময়ে আমার অবস্থা ছিল অনেকটা সেই অপরিচিত শহরে থাকতে যাওয়ার মত। উৎসাহ দেয়ার কেউ নেই। সমস্যাগুলো বুঝবে এমন কেউ নেই। হিফযের সহজ এবং প্র্যাকটিক্যাল পন্থা দেখিয়ে দেয়ার কেউ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, আমার সমস্যার কাস্টমাইজড সমাধান দেয়ার কেউ নেই। ইন্টারনেট ঘেঁটে হিফয সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করা, নিজেকে নিজেই বয়ে বেড়ানো, কখনো চলতে পারা আর কখনো চলতে চলতেই বসে পড়া- এই সব নিয়েই ছিল আমার হিফযের সফর। একসময় সৌদি আরবের কুরআন স্কুলের সন্ধান পেলাম। সেখানে দেখলাম নতুন আরেক জগৎ! কুরআন মুখস্থ করার উদাহরণ অনেক পেয়েছি। কিন্তু কুরআনের সাথে পথচলা মানে কী, সেটা সেই প্রথম বুঝেছি।
তখন থেকেই টুকটাক লেখার শুরু। কখনো এই আশায় যে, হয়তো কেউ অনুপ্রেরণা পাবে। কখনো এজন্য যে, হয়ত কোনো পদ্ধতি বা সমাধান কারো কাজে লাগবে। কখনো এই ভেবে যে, কুরআনের সাথে জীবন কতটা অপূর্ব তা তুলে ধরতে পারবো।
২০১২ থেকে লিখতে থাকা টুকরো অভিজ্ঞতা- কখনো নিজের আর কখনো অন্যের, উপদেশ, হিফয স্কুলের বর্ণনা, অনুপ্রেরণামূলক গল্প- ইত্যাদি
মিলিয়ে আজকের এই “কুরআনের সাথে পথচলা”।
দোয়া করি আল্লাহ যেন এই প্রচেষ্টা কবুল করে নেন। আর এই যাত্রায়
যা কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে আমার তরফ থেকে, তা যেন ক্ষমা করে দেন।
নায়লা নুযহাত ঢাকা, ১০ই অগাস্ট, ২০২২
________
কেন মানুষকে কুরআন মুখস্থে উৎসাহিত করাটা আমাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ?
কারণ, আমরা যখন এই যাত্রা শুরু করেছিলাম, আমাদের পথ দেখানোর মানুষ খুব কম ছিল। কখনো বা, ছিলই না!
। কুরআন মুখস্থ শুরুর আগে আমাদের বোঝা উচিত এখানে কোনো শর্টকাট নেই। মুখস্থকে সহজ করার কিছু কৌশল আছে বৈকি, আছে দিক নির্দেশনা। কিন্তু কুরআনের মতো মহামূল্যবান কিছুকে অন্তরে ধারণের জন্য ধৈর্য্যের সাথে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ পথ অনেক দীর্ঘ, কঠিন, একই সাথে মধুর ও সুন্দরতম পথ এটা...!
>> রাসূলুল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রতিটি ব্যক্তি তাই পাবে যে উদ্দেশ্যে সে কাজ করেছে। তাই যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যেই। আর যদি সে কোনো নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে হিজরত করে, তবে সেই হিজরত তার উদ্দেশ্য অনুযায়ীই হবে।”
>> সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থের ইচ্ছা এক দুঃসাহসী স্বপ্ন। আমরা তো নিজের উপর ভরসা করে আগাই না, আমাদের আস্থা কেবল আল্লাহর উপর। তাঁর সাহায্য থাকলে, কোনোকিছুই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। অবিনশ্বর আল্লাহর উপর ভরসা রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
> কুরআন মুখস্থের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, কেউ কিছু আমাদের মুখে তুলে দিবে না। তথ্য, কৌশল, প্রক্রিয়া সব ব্যাপারেই আমাদের কষ্ট করতে হবে। কষ্ট ছাড়া খুব সহজে কিছু মিলবে না। যদি একদিন সময়-সুযোগ সব হওয়ার পর হিফয শুরু করবো ভাবি তাহলে একদিন হয়তো সবই হবে কিন্তু শেখা আর হবে না। সত্যিই চাইলে খাটতে হবে। বাইরের প্রভাবকগুলো তখনই কাজ করবে যখন আমাদের ভেতরটা শেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকবে।
> কুরআন যারা মুখস্থ করতে চাই তাদের সচেতন থাকতে হবে যেন সেটা করতে গিয়ে আমরা নিজেদের দায়িত্বগুলো অবহেলা না করি! যেমন কেউ যদি অফিসের কাজের সময় কাজ বাদ দিয়ে কুরআন পড়েন! অথবা স্কুল শিক্ষিকা ক্লাসে না পড়িয়ে কুরআন পড়ছেন.... ইত্যাদি! দায়িত্বের ফাঁকে ফাঁকে যেই বাড়তি সময় পাওয়া যায় সেটাকে যেন আমরা কুরআন পড়ার কাজে ব্যবহার করি। দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে বের করা সময়কে না!
> প্রায়ই মনে হতো, এমন দিন যদি আসে যখন আমার হাতের কাছে মুসহাফ নেই? আল্লাহ যেন তেমন দুঃসময় থেকে আমাদের নিরাপদে রাখেন। আমীন। কিন্তু, যদি আসে এমন দিন? সিরিয়াতে যেমন এসেছে দুঃসহ দিন? হয়ত মুসহাফ নেই হাতের কাছে। হয়ত বা বন্দীদের মত? আবার বলছি, এমনটা যেন না হয়। কিন্তু যদি আসে এমন দিন?
তখনই মনে হয়েছিলো, অন্তরে যার কুরআন থাকবে, তাকে কে কুরআন থেকে আলাদা করতে পারবে? কে ঠেকাবে তাকে, তার রবের কথা উপলব্ধি করার থেকে?
আর তখন থেকেই মনে হয়েছে, কুরআনও শিখতে হবে ইন শা আল্লাহ, আর, আরবীও জানতে হবে! আমার রবের কথা থেকে আলাদা থাকতে হতে পারে, এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সুযোগই যেন কেউ কোনদিন না পায়!
আল্লাহ যেন আমাদেরকে যাবতীয় বিপদ থেকে নিরাপদ রাখেন। আর, কেউ যেন কোনদিন আমাদেরকে তাঁর কিতাব থেকে, তাঁর কথা থেকে দূরে নিয়ে যেতে না পারে! যেখানে থাকি, যেভাবে থাকি, আমাদের হৃদয়ে যেন আমরা এই পৃথিবীর জান্নাত বয়ে বেড়াতে পারি-- আর রাহমানের কুরআন! আমীন!
যখন আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি, তখন আমরা ছোট বড় যেমন পদক্ষেপই নেই না কেন, আমাদের কোনো প্রচেষ্টাই হারিয়ে যাবে না।
>> একবার একটি ক্লাসে শুনেছিলাম বিভিন্ন বই নিয়তের হাদীসটি দিয়ে শুরু হয় তার একটা কারণ সম্ভবত লেখকেরা হাদীসটিকে নিজেদের জন্য উপদেশ স্বরূপ বইয়ের শুরুতে রাখেন। একজনকে দেখেছিলাম যে প্রতিটি ক্লাস নোট, প্রতিটি বইয়ের প্রথমে লিখে রাখত “রিয়া” থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোয়াটি। এর কারণ জানতে চাইলে ও বলল যে নিজেকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ও এটা করে। কারণ সঠিক নিয়তে, অর্থাৎ আল্লাহর জন্য ইবাদত না করলে তা আল্লাহ কবুল করেন না।
তাই আমরা যারা কুরআন শিখছি, আমাদের বেশি বেশি করে মনে রাখতে হবে যে এটা আমাদের আর আমাদের রবের মধ্যকার ব্যাপার। এখানে মানুষকে বলে বেড়ানো, কতটুকু মুখস্থ করলাম সেটা বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া অথবা অপ্রয়োজনে নিজের পড়া কেমন হচ্ছে, কত ভালো হয় এসব বলার প্রয়োজন নেই। শেষ পর্যন্ত কোনও মানুষের দেয়া স্বীকৃতি কোনও কাজে আসবে না। অন্তরের মালিক আমাদের রব আমাদের প্রচেষ্টা কবুল করেন কিনা সেটাই একমাত্র কথা!
তার মানে এই না যে আমরা কাউকে উৎসাহিত করবো না অথবা নির্ভরযোগ্য কেউ যে কিনা আমাকে সাহায্য করতে পারেন এ বিষয়ে, তাঁর সাহায্য নেব না অথবা কাউকে শেখাবো না। ইন শা আল্লাহ সবই করবো, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করবো। যতটুকু মানুষ এমনিতেই জেনে যায়, বা তাদের শেখাতে গিয়ে জানাতে হয় অথবা নিজে শিখতে গিয়ে জানাতে হয়, ততটুকু ছাড়া আমরা নিজেদের অবস্থান প্রচার করে বেড়াবো না। মানুষের প্রশংসা আমাদের কোনও কাজে আসবে না। আর তাই আমাদের অন্তর যেন তা খুঁজে না বেড়ায় তার জন্য প্রতিনিয়ত নিজের নিয়ত শুদ্ধ করার চেষ্টা করতে হবে এবং আমাদের অন্তর যেন রিয়া মুক্ত থাকে তার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে থাকতে হবে।
রিয়া থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোয়াটি হল:
اللهم إني أعوذ بك أن أشرك يك وأنا أعلم وأستغفرك لما لا أعلم
“হে আল্লাহ আমি জ্ঞাতসারে আপনার সাথে শির্ক করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই এবং অজ্ঞাতসারে (শিক) হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চাই।”
আল্লাহ যেন আমাদের সকলের অন্তরকে রিয়া মুক্ত রাখেন। এবং আমাদের যার যতটুকু প্রচেষ্টা তাঁর পথে চলার ব্যাপারে, তা যেন কবুল করে নেন, আমাদের অন্তরের দুর্বলতার কারণে যেন তা নষ্ট হয়ে না যায়। আমীন!
। বর্তমানে আমরা অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ, অনেক সচেতন, কুরআন শিক্ষার ব্যাপারে; আমাদের সন্তানদেরকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে। কিন্তু, আমাদের আরো অনেক সচেতন হতে হবে আরেকটি বিষয়ে। সেটা হচ্ছে, আমরা কার থেকে এই শিক্ষাগুলো নিচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে একটি সত্য কথা হচ্ছে, পৃথিবীতে কোথাও ভুল-ত্রুটিমুক্ত শিক্ষক খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। একজন মানুষ যতই চেষ্টা করুক, তার ভুল ত্রুটি থাকবেই। অনেক গুনাহ থাকবে। কুরআন নিজের জীবনে প্রয়োগ করা অনেক বড় একটি ব্যাপার। অনেক সময় মানুষের সারা জীবন লেগে যায়, আর তার পরেও হয়ত সামান্যই প্রয়োগ করতে পারে। সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু, একজন কুরআন শিক্ষক অথবা শিক্ষিকার কথাবার্তায়, আচার ব্যবহারে, তাঁর জীবনে কুরআন আছে, তিনি কুরআনকে গুরুত্ব দেন, তিনি এই সমস্ত বিষয় হাল্কাভাবে দেখেন না, তিনি কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী চলেন- এই ব্যাপারটা থাকা জরুরী। না হলে, তাঁদের থেকে আমরা হয়তো তত্ত্বীয়ভাবে কুরআন শিখে ফেলবো। কিন্তু, কুরআনের শিক্ষা থেকে আমরা দূরেই থেকে যাব।
মনে রাখবেন, কুরআন শিক্ষার অর্থ কেবল ‘আলিফ’, ‘বা’, ‘তা' শেখা না। এই শিক্ষার সাথে সাথে আমরা কুরআন এর অর্থ অনুধাবন করা, জীবনে প্রয়োগ করা, কুরআনের প্রতি ভালোবাসা অন্তরে ধারণ করা- ইত্যাদি আরো অনেক বিষয় শিখি। আমরা আল্লাহর সাথে পরিচিত হই।
বাচ্চার স্কুল খোঁজার সময় যেমন আমরা অনেক কিছু দেখি, একটা বাসা নেয়ার সময় যেমন আমরা পরিবেশ দেখি, তেমনি, কে আমাদেরকে
আল-আদাব আল-মুফরাদ ৭১৬
আমাদের রবের কালাম শেখাচ্ছে, সেটা আমাদের আরও গুরুত্ব সহকারে দেখাটা দায়িত্ব।
তাই, যেকোনো প্রোগ্রাম, যেকোনো সুযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে দেখতে হবে আমরা কার কাছে যাচ্ছি। প্রথমত, তাঁর আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিনা দেখতে হবে। তারপর দেখতে হবে, তিনি মোটামুটি মানুষটা কেমন, কুরআনের একজন শিক্ষক হিসেবে। তিনি কি কুরআনের আলোকে চলার চেষ্টা করেন? তিনি কি আল্লাহর রাসূল এর সুন্নাহ পালন করার চেষ্টা করেন?
একটি সামান্য উদাহরণ। অশ্লীল কথা আর কুরআন একত্রে যায় না। কুরআন এবং গান একত্রে যায় না। কুরআন এবং পর্দার ব্যাপারে গাফিলতি একত্রে যায় না। শিক্ষক খোঁজার সময় যদি একজনকে পাই, যিনি কথায় কথায় বাজে কথা বলেন; অথবা, কুরআনও ভালোবাসেন এবং গানও ভালোবাসেন; অথবা, কুরআন শেখান ঠিকই কিন্তু পর্দার ব্যাপারগুলো মোটেই মানেন না- তাহলে এমন মানুষদের কাছে না যাওয়াই উচিত, যখন আমাদের অন্য কারো কাছে শেখার সুযোগ আছে।
এই ব্যাপারটায় খেয়াল রাখতে হবে যে, একজনের ব্যক্তিগত জীবনকে যাচাই-বাছাই করা আমাদের উদ্দেশ্য না। হতেই পারে, একজন আজকে এই ব্যাপারগুলো মেনে চলতে পারছেন না কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এগুলো ঠিক করে নিবেন। কিন্তু, যখন আমরা একজনকে দায়িত্ব দিব আমাদেরকে আমাদের রবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার, তখন, নিজেদের এবং নিজেদের সন্তানদের অন্তর গড়ার জন্য কার হাতে তুলে দিচ্ছি সেটা খেয়াল রাখাটা অবশ্যই আমাদের দায়িত্ব।
> কুরআন মুখস্থ করা, নিয়মিত তাফসীর পড়া, নিয়মিত কুরআন নিয়ে বসা- একদম প্রথমে এগুলো হয়তো অনেক দূরের লক্ষ্য বলে মনে হয় । কিন্তু, “আমার রবের আরো সান্নিধ্যে আমার থাকা উচিত। আমার রবের কালাম, যা তিনি আমার জন্য পাঠিয়েছেন, সেটা আমার জানতে চেষ্টা করা উচিত।”- এই বোধটা প্রথমে নিজের ভেতর আনা জরুরী।
“কিভাবে করবো” তার চেয়ে, “কেন করবো” সেই ব্যাপারে ধারণা পরিষ্কার
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....