সত্যটা মিথ্যা : সাদাত হোসাইন - Sottota Mithya By Sadat Hossain

  • Title সত্যটা মিথ্যা
  • Author সাদাত হোসাইন
  • Publisher অন্যধারা
  • ISBN 9789849683438
  • Edition 1st Published September, 2022
  • Number of Pages 176
  • Country বাংলাদেশ
  • Language বাংলা

রেজা সিরিজের প্রথম বই লেখার সময়ও আমি ভাবিনি যে, সত্যি সত্যিই এটা চালিয়ে যাব।
এর অবশ্য কারণও আছে। থ্রিলার লেখা আমার কাছে সবসময়ই ভীষণ কঠিন কাজ বলে মনে হয়।
তারপরও এই দুঃসাহসী চেষ্টার পেছনে মূল কারণ ছিল কৌতূহল। আমি দেখতে চেয়েছিলাম, পাঠক আমার এই অনভ্যস্ত নতুন পরিসরে বিচরণকে ঠিক কীভাবে গ্রহণ করেন?
মজার ব্যাপার হচ্ছে, পাঠক আমাকে চমকে দিয়েছেন। রেজা সিরিজের প্রথম দুটি বই নিয়েই তাদের সাড়া ছিল অভাবিত। 

মাঝখানে খানিক বিরতি নিতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, তাদের আগ্রহের সেই পারদ ক্রমশই চড়েছে। সম্ভবত এটিই আমাকে রেজা সিরিজের আরো একটি উপন্যাস লিখতে সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করেছে।
আজকাল আমার নিজের সঙ্গে দারুণ একটি ব্যাপার ঘটে। পত্রিকা কিংবা টেলিভিশন সংবাদে দেখা নানা ঘটনা হুটহাট মাথায় গেঁথে যায়। এমন নয় যে, ওই ঘটনাগুলোকে আমি খুব সচেতনভাবেই মন ও মগজে সেঁটে নেই। বরং এটি ঘটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এবং আমার অজান্তেই তার কিছু কিছু ক্রমশই ডালপালা ছড়াতে থাকে। তারপর হয়ে উঠতে থাকে কল্পিত মহীরুহ। এই প্রক্রিয়াটি আমি খুবই উপভোগ করি। ‘সত্যটা মিথ্যা’আমার কল্পনার জগতের সঙ্গে বাস্তব ঘটনার সংযোগে তৈরি তেমনই এক গল্প।

আতাউর রহমানের জীবনে তার চির রুগ্ন স্ত্রী রাজিয়ার ভূমিকা নিতান্তই অনুল্লেখযোগ্য। অবিরাম রোগে শোকে বিপর্যস্ত রাজিয়াকে মাত্র পঁয়তাল্লিশেই ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা বলে ভুল হয়। তার ভগ্ন স্বাস্থ্য। মন বিক্ষিপ্ত। অকালে চুল পড়ে নগ্নপ্রায় মাথা। কথা বলতে গেলেই হাঁপানির তীব্র টানে নাভিশ্বাস অবস্থা। কিন্তু রকমাতে গেলেই হাঁপানির তীব্র এই নিয়ে আতাউর রহমানকে কখনো আক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। তিনি বরং স্ত্রী-কন্যা নিয়ে দূরের এই ছোট্ট শহর বনগিরিতে ভালোই ছিলেন। সমস্যা হচ্ছে, যে রাজিয়াকে তিনি তার জীবনে কখনোই প্রভাববিস্তারী কিছু ভাবেননি, সেই রাজিয়াই যেন মৃত্যুর পর তার জীবনটা হঠাৎ ওলট-পালট করে দিতে লাগলেন। আতাউর রহমান দৈব ঘটনা কিংবা কুসংস্কারে খুব একটা বিশ্বাস করেন না। তারপরও তার মনে হতে লাগল জীবিত রাজিয়ার ভাগ্যই বুঝি তাকে এতদিন নানা অশনি, অঘটন ও আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল। কিন্তু রাজিয়ার মৃত্যুর পর সেইসব আপদ-বিপদই যেন মহাপরাক্রমে ফিরে আসতে লাগল ।

মাস চারেক আগে এক ভোরবেলা মর্নিং ওয়াক সেরে এসে তিনি ঘরে ঢুকলেন। রাজিয়া তখনো ঘুমাচ্ছেন। সাধারণত এসময়ে ঘুমন্ত স্ত্রীকে তিনি ডাকেন না। কিন্তু সেদিন ডাকলেন। রাজিয়া অবশ্য তার সেই ডাকে সাড়া দিলেন না। শুধু যে সাড়াই দিলেন না, তা-ই না। তিনি আর ঘুম থেকেই উঠলেন না। তার কন্যা মিলা এসে মা, মা বলে চিৎকার করে কাঁদল। কিন্তু রাজিয়া রোজ যেমন বাঁ কাত হয়ে শুয়ে থাকেন তেমন শুয়েই রইলেন। মিলা তাকে ধরে সোজা করল। ডাকল। চোখ খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু তাতে লাভ হলো না। রাজিয়া আর চোখ মেলে তাকালেন না। তিনি ঘুমের মধ্যেই শেষ  নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এই নিয়ে আতাউর রহমান কতটা ব্যথিত হয়েছেন তা বোঝা না গেলেও অন্তত এটুকু বোঝা গিয়েছিল যে রাজিয়া যে দীর্ঘ দুর্ভোগের জীবন যাপন করেছেন তা থেকে তার মুক্তি কেবল বিষাদেরই নয়। সেখানে যন্ত্রণা উপশমের স্বস্তিও রয়েছে। কখনো কখনো মৃত্যুই যেন মুক্তি ।

মানুষ মৃত মানুষের শোক কিংবা স্মৃতি ভুলে যায় সবচেয়ে দ্রুত। আতাউর রহমানও ভুলে গেলেন। তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তার ওষুধের দোকান নিয়ে। সেদিন মেঘলা আকাশ। সন্ধ্যা থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। থেকে থেকে বিদ্যুৎও চমকাচ্ছে। এসময়ে বাটুল পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। জায়গাটা গা ছমছমে। বাধ্য না হলে কেউ এ পথে আসে না। কিন্তু আতাউর রহমান এলেন। ফার্মেসি বন্ধ করে দীর্ঘসময় রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পেলেন না। বাড়ি যাওয়ার সংক্ষিপ্ত পথ এই বাটুল পাহাড়ের গা ঘেঁষা সরু রাস্তাটাই। তবে এখানকার ল্যাম্পপোস্টগুলোর বেশিরভাগই অকেজো। রাস্তার অবস্থাও বিশেষ সুবিধের নয়। বাড়িঘর নেই বলে জায়গাটাও বেশ নির্জন । সন্ধ্যা নামতে না নামতেই সুনসান চারপাশ।

রাস্তার ডানদিকে খাড়া পাহাড়। বাঁয়ে বেশ খানিকটা নিচে ঢালের শেষে গোরস্থান। বিশাল বড় এই গোরস্থান বহুবছরের পুরনো। ফলে অনেক কবরই ভেঙেচুরে গেছে। সেই ভাঙা কবরের ফাঁকফোকরে মানুষের হাড়গোড় অবধি দেখা যায়। এই নিয়ে নানা ভীতিকর গল্পও আছে। আতাউর রহমান অবশ্য সেসব গ্রাহ্য করেন না। তিনি তার এই মধ্য বয়সের অপরিহার্য শারীরিক চর্চার অংশ হিসেবে রোজ এই পথে হেঁটে যাতায়াত করেন। আজ বৃষ্টি বলে মূল রাস্তায় রিকশা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত হলো না। তাকে হেঁটে আসতে হলো গোরস্থানের এই পথেই। কিন্তু মাঝামাঝি এসেই কেমন অস্বস্তি লাগতে লাগল। মনে হলো আশপাশে কেউ আছে। সতর্ক দৃষ্টিতে অনুসরণ করছে তাকে। বারকয়েক যেন তার পায়ের শব্দও শুনতে পেলেন। কিন্তু পিছে তাকিয়ে দেখলেন কেউ নেই। এমন অবশ্য প্রায়ই হয়। গোরস্থানের এই জায়গাটাতে এলেই গা ছমছম করে। শরীর অসাড় হয়ে আসে। আতাউর রহমানের ধারণা, এটা তার মনের ভয়। লোকমুখে এই গোরস্থান নিয়ে নানা আজেবাজে কথা শোনা যায়। তিনি সেসব বিশ্বাস না করলেও তার অবচেতন মন হয়তো বিশ্বাস করে। সে কারণেই এমন অস্বস্তিকর অনুভূতি। আজও কি তেমন কিছুই হচ্ছে? আতাউর রহমান কবরস্থানটা প্রায় পার হয়ে এসেছেন। দুর্ঘটনাটা ঘটল ঠিক সেই মুহূর্তে ।

কেউ একজন যেন পাহাড়ের শরীর থেকে আচমকা ষাঁড়ের মতো বেরিয়ে আসতে লাগল। আবছা আলোয় কালো আলখাল্লা পরা লোকটার ছায়ামূর্তি দেখে আতাউর রহমানের বুক কেঁপে উঠল। কী করবেন তিনি? কিছু করার সুযোগ অবশ্য পেলেন না। তার আগেই ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত চিটচিটে এক বস্তায় ছায়ামূর্তিটি তার মুখ ঢেকে ফেলল। তারপর চেপে ধরল পাহাড়ের সঙ্গে। আতাউর রহমান শ্বাস নিতে পারছেন না। তার গলা হাঁসফাঁস করছে। অসহায়ের মতো শূন্যে হাত-পা ছুঁড়তে লাগলেন তিনি। লোকটা প্রথম আঘাতটা করল ঠিক তখনি। আতাউর রহমানের ডান কাঁধ বরাবার ধারালো কিছুর আঘাত। তীব্র যন্ত্রণায় গুঙিয়ে উঠলেন তিনি। সাদা শার্টটা রক্তে লাল হয়ে যেতে লাগল। ছুরির ফলাটা বসে গেছে মাংসের গভীরে। ছায়ামূর্তি ছুরিটা টেনে বের করল। সম্ভবত আবারো আঘাত করবে। কিন্তু আতাউর রহমান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। ভারসাম্য হারিয়ে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। এই পতন অবশ্য তাকে বাঁচিয়েও দিলো। সরু রাস্তার খাড়া ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নিচের কবরস্থানে গিয়ে পড়লেন তিনি। একটা ভাঙা কবরের ভেতর তার শরীরের অর্ধেকটা সেঁধিয়ে গেল । ভয়ানক এক আতঙ্ক অবশ করে রাখল তাকে ।

‘আপনি কি কাউকে সন্দেহ করছেন?' গোঁফে হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস
করলেন রেজা।
'নাহ।'
‘এর আগে এমন কিছু ঘটেছে?'
'নাহ।'
'কিন্তু একটু আগেই যে বললেন প্রায়ই মনে হতো আপনাকে কেউ অনুসরণ
করছে?'
'জি।'
'তাহলে সেসময় কেন পুলিশকে কিছু জানাননি?'
*আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না।' “কী বুঝতে পারছিলেন না?'
‘কেউ সত্যি সত্যিই আমাকে অনুসরণ করছে নাকি ওটা আমার মনের
ভুল?'
‘অনুসরণ যে করছিল সেটা ঠিক কী কারণে সন্দেহ হচ্ছিল?' ‘আমি বাজারে একটা ডিসপেনসারি চালাই। নাম মিলা ফার্মেসি।'

'মিলা কে?'
“আমার মেয়ে।’
“বয়স কত?’
'এই... উনিশ ।'
*আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন?'
‘এক মেয়েই।'
—আচ্ছা। বলুন, তারপর?'
‘আমি রাত নটা থেকে দশটার মধ্যে ডিসপেনসারি বন্ধ করি। বাসা থেকে হেঁটেই যাতায়াত করি। তো শর্টকাট পথ হিসেবে ওই বাটুল পাহাড় আর কবরস্থানের মাঝখানের পায়ে হাঁটা রাস্তাটাই ব্যবহার করি। যদিও জায়গাটা নির্জন। ল্যাম্পপোস্টের সবগুলোতে বাতিও নেই। ফলে সন্ধ্যার পর বেশিরভাগ জায়গাই অন্ধকার হয়ে থাকে।'
'হুম। আসলে ওখানে বাতি লাগালেও কয়েকদিন পরপরই কারা যেন ঢিল মেরে ভেঙে ফেলে।' যোগ করলেন রেজা। 'তো তখন প্রায়ই মনে হতো কেউ একজন অনুসরণ করছে। মানে ওরকম
একটা অনুভূতি হতো। কিন্তু পেছনে তাকালেই চট করে সরে যেত। বা কাউকে
দেখতাম না।'
'কাউকে কখনোই দেখেননি?”
'নাহ।'
'তাহলে কেন মনে হতো যে ওখানে কেউ ছিল? এটা আপনার মনের ভুলও তো হতে পারত। একা অন্ধকারে নির্জন কোনো জায়গা ধরে হাঁটলে একটা গা ছমছমে অনুভূতি কিন্তু আমাদের সবারই কমবেশি হয়।'
'জি। তা হয়।'
‘তার ওপর গোরস্থানটা নিয়েও তো লোকে নানা কথা বলে। ওটাও কিন্তু মানসিক অস্বস্তি তৈরি করে। তাই না?”
'জি।'
“কিন্তু আপনার কেন সন্দেহ হয়েছিল যে কেউ আপনাকে অনুসরণ করছে? নাকি আপনি মনে মনে কাউকে ভয় পেতেন? সন্দেহ করতেন?” বলে সামান্য থামলেন রেজা। তারপর সামনে থাকা চায়ের কাপে পুরি ডুবিয়ে কামড় দিতে দিতে বললেন, ‘কারো সঙ্গে কি এমন কিছু হয়েছিল... মানে যাকে আপনি ভয় পান?'

ভদ্রলোক এবার আর কথা বললেন না। তার ডান কাঁধে ব্যান্ডেজ। জামায় কাদামাটি, রক্তের দাগ। কলারের কাছে অনেকটা জায়গা ছেঁড়া। চোখে ডাট ভাঙা চশমা। তিনি চশমাটা ঠিক করতে করতে দীর্ঘসময় পর জবাব দিলেন, 'নাহ।'

‘ওই গোরস্থান থেকে উঠে এলেন কী করে?' জিজ্ঞেস করলেন রেজা।
*একা একাই। অনেকক্ষণ চুপচাপ পড়ে রইলাম। কিন্তু লোকটা আর এলো না। সম্ভবত গোরস্থান ভয় পায়। আমিও সাবধানতাবশত আর রাস্তার দিকে উঠলাম না। নিচের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে আবার ডিসপেনসারিতে ফিরে গেলাম। তারপর নিজেই নিজের ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করলাম।'
“বাসায় কাউকে জানাননি?'
‘কী করে জানাব? ফোন খুঁজে পাচ্ছি না। সম্ভবত গড়িয়ে পড়ার সময়
কোথাও ছিটকে গেছে।'

'ওহ।' বলে গম্ভীর হয়ে রইলেন রেজা। তারপর বললেন, 'নেশাখোর ছিনতাইকারি নয় তো?”
“কিছু নেয়নি তো। চায়ওনি চায়ওনি কিছু।AR.com
'হুম। কারো সঙ্গে কোনো ঝামেলা আছে আপনার? পাওনা টাকা, জমিজমা
সংক্রান্ত ইস্যু বা অন্য কিছু?'
'না।' বলে ডানে বাঁয়ে মাথা নাড়ালেন আতাউর রহমান। তারপর খানিক কী ভেবে বললেন, ‘একটা কথা?'
‘কী?' কৌতূহলী ভঙ্গিতে তাকালেন রেজা ।

'না মানে আমি ঠিক জানি না কথাটা বলা ঠিক হবে কি না... কিংবা নিরপরাধ কাউকে আমি দোষী করছি কি না...।' দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে কথাটা বললেন আতাউর রহমান। তারপর চট করে থেমে গেলেন তিনি। যেন কথাটা আর বলতে চাইছেন না।

“জি বলুন? আপনি কোনো ক্লু না দিলে আমরা কী ধরে নেব?”
আতাউর রহমান অবশ্য কিছু বললেন না। তিনি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, 'না থাক। কারো সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।
তাছাড়া বাচ্চা ছেলে । এই বয়সের ছেলেরা একটু আধটু ওরকম হয়ই।'
'কীরকম?”
‘এই মানে প্রেম ট্রেম...। মেয়েদের পছন্দ করা। বাসার সামনে ঘোরাঘুরি
করা।'
‘মানে আপনার মেয়েকে পছন্দ করে?

‘ওরকমই। তবে তেমন সিরিয়াস কিছু না। মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়ির সামনে দেখা যেত। একদিন ডেকে খুব করে ধমকে দিয়েছিলাম। তারপর আর
আসেনি।'
‘নাম কী ছেলের?’
'রবিন।'
'কী করে?”
“তাতো জানি না।

“আপনি কি কারো নামে কোনো অভিযোগ করতে চান?'
আতাউর রহমান দীর্ঘসময় কী ভাবলেন। তারপর বললেন, 'না।'
শেষরাতের দিকে বৃষ্টি কমে এসেছে। রেজা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালেন। সীমান্তবর্তী ছোট্ট এই শহরের নাম বনগিরি। এর বেশিরভাগই পাহাড় আর জঙ্গল। দিন পনেরো হলো তিনি এখানে এসেছেন। এখনো শহরের গতিপ্রকৃতি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। তবে এটুকু বুঝতে পারছেন, এখানে চারদিকে অবিরাম ফিসফাস। লুকোচুরি খেলা । সেই খেলায় তিনি পুলিশ হলেও বাকিরা সবাই চোর নয়। ফলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় করতে চান না তিনি ।

সাদাত হোসাইন

স্নাতকোত্তর নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দুটো ইচ্ছে নিয়ে স্বপ্নযাত্রার শুরু। একখেয়ানৌকার মাঝি হওয়া, দুই- নিজের নামটি ছাপার অক্ষরে দেখতে পাওয়া। মাদারীপুরের কালকিনি থানার কয়ারিয়া নামের যে গ্রামে জন্ম, তার পাশ দিয়েই তিরতির করে বয়ে গেছে ছােট্ট এক নদী। খেয়ানৌকার মাঝি হওয়ার স্বপ্নটা তাই সত্যি হওয়াই ছিল সহজ। কিন্তু হলাে উল্টোটা। পূরণ হলাে দ্বিতীয় স্বপ্নটি! সাদাত হােসাইন হয়ে গেলেন লেখক। লিখেছেন কবিতা, ছােটগল্প, উপন্যাস; যা প্রশংসা কুড়িয়েছে পাঠকমহলে। আরশিনগর নামের দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাসটি রীতিমত চমকে দিয়েছে পাঠকদের। সাথে বিস্ময় তৈরি করেছে তার আরও একটি দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস অন্দরমহল। শুধু লেখালেখিই নয়, দুর্দান্ত আলােকচিত্রী সাদাত হােসাইন নিজের স্বপ্নের সীমানাকে বাড়িয়ে নিয়ে গেলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণেও তার নির্মিত বােধ ও দ্য শুজ শর্টফিল্ম দুটি প্রশংসার ঝড় তুলেছে বিশ্বব্যাপী কাজ করছেন। একাধিক নতুন ফিল্ম নিয়ে সাদাত হােসাইনের জগতজুড়ে অমিত স্বপ্নের বাস। সেই স্বপ্নের সবটা ছুঁয়ে ছুটে যেতে চান অবিরাম। সম্প্রতি আলােকচিত্র, লেখালেখি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য জিতেছেন ‘জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ