ইসলামি কমিউনিটির সাথেই থাকুন - সিয়ান | Stay with the Islamic community

| ইসলামি কমিউনিটির সাথেই থাকুন |


ইসলাম মানুষদের ফেরেশতা বানিয়ে দেয় না। মানুষ মানুষই থাকে। পাপে ও পুণ্যে, ভালো ও মন্দে। আমরা সেই আদমের সন্তান, যাকে আল্লাহ নিজ হাতে বানিয়েছেন, রূহ ফুঁকে দিয়েছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে সিজদা করিয়েছেন, সবকিছুর নামধাম শিখিয়েছেন এবং জান্নাতের মহাসুখে রেখেছেন। এরপর মাত্র একটি হুকুম করেছেন—“এই গাছটির কাছে যাবে না।” 
কিন্তু আদম সেই হুকুম শয়তানের প্ররোচনায় লঙ্ঘন করেছেন। সুতরাং কোনো পাপ করে ফেললে হতাশ হয়ে পড়া আমাদের উচিত নয়। পাপ না করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমরা। তবে আমরা এমন কোনো চিরনিষ্পাপ প্রাণী হয়ে পড়িনি যে, জীবনে কখনো কোনো পাপ করব না। নিজেকে এত বেশি সুফি দরবেশ ভাবতে শুরু মোটেই ভালো লক্ষণ নয় যে, আমরা কোনো পাপই করব না। 

মুসলিম ভাইবোনদের সাথে থাকুন। ইসলামি কমিউনিটির ভেতরে থাকুন। আমাদের কাছে যতই খারাপ মনে হোক না কেন, তুলনামূলক বিচারে অবশ্যই মুসলিম ভাই-বোনেরা উত্তম। এখানে খারাপটা আপেক্ষিক কারণে মনের ওপর হয়ত বেশি প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু খারাপের পরিমাণ এখানে অবশ্যই বেশি নয়। যেমন, মাসজিদে বসে একজন সিগারেট খেলে যতটা দৃষ্টিকটু লাগে, সিনেমাহলে বসে মদ খেলে কিন্তু ততটা লাগে না। তাই ইসলামি কমিউনিটিতে ভাইবোনদের সামান্য দোষ-ত্রুটি অতি দৃষ্টিকটু লাগে, আমাদের মনে কষ্ট বেশি দেয়। 

তবে মনে রাখা দরকার যে, নিজের ভালো আমলের কারণে আমাদের মধ্যে অনেক সময় একটা নাক-উঁচু ভাব জন্ম নেয়। এ কারণে অন্যদের সামান্য দোষ-ত্রুটি আমরা সহ্য করতে পারি না। এটাকে ‘অ্যারোগেন্স অব পাইটি’ বা তাকওয়ার অহংকার বলা যেতে পারে। নিজেকে আমরা যত বেশি মুত্তাকি ভাবি, অন্য মুসলিম ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি আমাদের মধ্যে তত বেশি বিরক্তি ও বিদ্বেষ জন্ম দেয়। আর সেটা একসময় গিয়ে আমাদের ভেতর মুসলিম-বিদ্বেষ জন্ম দিতে পারে, এক পর্যায়ে গিয়ে ইসলাম-বিদ্বেষ হয়ে উঠতে পারে এবং এটা আস্তে আস্তে ক্রনিক হয়ে একসময় আমাদের দীন থেকেও বের করে দিতে পারে। সুতরাং ‘অ্যারোগেন্স অব তাকওয়া সিনড্রোম’ থেকেও আমাদের সাবধান থাকা দরকার। কারণ, আল্লাহ এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন— 

“তোমরা কি ভেবেছ তোমাদের এমনিই ছেড়ে দেওয়া হবে! যে পর্যন্ত না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের মধ্যে কারা তাঁর পথে জিহাদ করেছে; আর আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের ছাড়া কাউকে বন্ধু ও অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেনি?” (সূরা আত তাওবাহ, আয়াত-১৬)  
তাই মুসলিম কমিউনিটির ভাই-বোনদের অনেক আচার-আচরণ অনেক সময় খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কসম! অবশ্যই সেক্যুলার সোসাইটির চেয়ে মুসলিম সোসাইটি হাজারগুণে উত্তম।

সেক্যুলাররা যেমন একটি নির্দিষ্ট দল বা গ্রুপের কাজকর্ম সামনে রেখে মূলত ইসলামকে ঘায়েল করতে চায়, আমাদের কাজকর্মগুলো যেন তেমন না হয়ে যায়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সামনে রেখে আমরা যেন মুসলিম কমিউনিটিকে এবং দিনশেষে ইসলামকে ঘায়েল না করে বসি। আমাদের ব্যক্তিগত কোনো খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে আমরা যদি ইসলামি কমিউনিটি ও মুসলিম ভাই ব্রাদারদের বিরুদ্ধে বলতে শুরু করি, তাহলে তার পরিণতি কী? মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে বলা। আমরা যতই বলি না কেন, “ইসলাম থেকে দূরে থাকতে বলিনি, ওই মানুষগুলো থেকে দূরে থাকতে বলেছি,” এর কোনো ফলিত গুরুত্ব নেই।

আর সত্যিই আমরা আমাদের ইসলামি কমিউনিটি, মুসলিম ভাইবোনদের নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ি, এর একটা কারণ হতে পারে এমন মানুষদের আমরা ঘনিষ্ঠ বানিয়েছি, যারা আসলে খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার যোগ্য নয়। সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত দীনি সাধারণ ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে তাদের সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং ঘনিষ্ঠ সার্কেল পরিবর্তন করা। একইসাথে ব্যবসাবাণিজ্য, লেনদেন, বিবাহশাদি, সামাজিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে আবেগী অতিসম্পৃক্ততা বন্ধ করে সতর্ক ও কেবল প্রয়োজনীয় সম্পৃক্ততার মধ্যে নিজেকে সীমিত করে রাখা। 

আমরা বিশ্বাস করি দোষে-গুণে, ভালো-মন্দে, মুমিন মুসলিম ভাইরা-ই মুমিন মুসলিমদের একমাত্র আস্থা ও ভরসার কেন্দ্র। আল্লাহ আমাদের নিজেদের দোষ-ত্রুটিগুলো মাফ করে দিন আর অন্যের দোষ-ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার তাওফীক দান করুন। আমীন।

সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ