শুধু মুসলিমরাই নয়; অমুসলিম ইতিহাসবিদরাও তার চারিত্রিক উৎকর্ষের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক স্টানলি লেনপুল বলেন, ‘তুরস্কের ইতিহাসে সুলায়মান ছিলেন সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ। তার ব্যক্তিগত চারিত্রিক গুণাবলি ছিল অসাধারণ, তার মেধা, ন্যায়পরায়ণতা, মহানুভবতা, দয়া এবং ভদ্রতাজ্ঞান কিংবদন্তিস্বরূপ ছিল এবং তার বুদ্ধিমত্তা, নিষ্কলুষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কোনো তুলনা ছিল না।’ সুলতান সুলায়মান ছিলেন একাধারে দিগ্বিজয়ী বীর, বলিষ্ঠ প্রশাসক, সুচতুর কূটনীতিবিদ, একনিষ্ঠ জনসেবক ও নিষ্ঠাবান মুসলমান। এভারসলে বলেন, ‘তার ব্যক্তিগত জীবন কলুষমুক্ত ছিল।’
কথিত আছে, ‘সুলতান সুলায়মানের মূল কবর তুরস্কে হলেও তার হৃৎপিণ্ডটি হাঙ্গেরির সিগেতভার শহরের আঙুর কুঞ্জে কবর দেওয়া হয়েছিল।’ এটি কোনো প্রতিষ্ঠিত মত নয়। তারপরও সুলায়মানের ‘হৃদয়ের খোঁজে’ বহুজাতিক বিশেষজ্ঞ দল এখনো সক্রিয় রয়েছে। ইতিহাসে সুলায়মান নিয়ম প্রবর্তনকারী বা ‘কানুনি’ হিসেবে বিশেষভাবে ছিলেন পরিচিত। সুলায়মানের আইন-গবেষণার ফসল কার্যকর ছিল 300 বছর ধরে। ইউরোপও এর মাধ্যমে লাভবান হয়েছে।
ইসলাম নিয়ে সুলতান সুলায়মানের কবিতা বিশ্বের উৎকৃষ্ট কবিতাগুলোর কাতারে স্থান পেয়েছে। সুলায়মান তার পরামর্শকদের মধ্যে শিল্পী, চিন্তাবিদ, ধর্মবেত্তা ও দার্শনিকদের বেশি ঠাঁই দিয়েছিলেন এবং তাদের কদর করতেন। এ কারণে ইউরোপের তুলনায় খিলাফত রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা, আদালত ও শাসনব্যবস্থা ছিল অনেক বেশি উন্নত, নিরপেক্ষ, মানবিক, ন্যায়ানুগ এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
ওই সময়কার ইউরোপীয় রাজনীতি-অর্থনীতি ছিল সুলতানের নখদর্পণে। মার্টিন লুথার, প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম ও ভ্যাটিকানের ব্যাপারে ছিল তার গভীর উৎসাহ। তাদের সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞানও তার ছিল। সুলতান মিথ্যা বলা পছন্দ করতেন না। কর্তব্যে অবহেলা মেনে নিতেন না। বাহুল্য কথা বর্জন করতেন। হালাল-হারাম মেনে চলতেন। তার নির্দেশনা ও বক্তব্য হতো নীতিবাক্যের মতো। সহজেই শত্রু-মিত্র চিনতে পারতেন। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার ব্যাপারে সুলতান এতটাই আমানতদার ছিলেন যে, তার ওপর নির্ভরতায় কারও কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু দৃঢ়তা ও ব্যক্তিত্বের ছাপ কখনো ম্লান হতো না। অপরাধী কোনোভাবেই প্রশ্রয় পেত না।
1566 সালের 6 সেপ্টেম্বর আজকের এই দিনে ৭২ বছর বয়সে হাঙ্গেরি অভিযানের সময় মৃত্যুবরণ করেন উসমানীয় খিলাফতের সবচেয়ে প্রতাপশালী এই শাসক। পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর উসমানীয়দের হাতে যিভেদকারের পতন ঘটে। সুলামানের ২৩ তম এই অভিযানের এই লড়াইয়ে ৩ জন পাশা, ৭ হাজার জেনেসারী এবং ২৮ হাজার সাধারণত সৈন্য প্রাণ হারান।
মহান আল্লাহ তায়ালা এই শাসকের যাবতীয় গুনাহ্গুকো মাফ করে
জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক।
আমীন। - মাহমুদুল্লাহ অনিক।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....