- বইয়ের নাম : টেবিল নম্বর ১৭
- লেখক : সুস্মিতা জাফর
- ধরণ : গল্পগ্রন্থ
- প্রচ্ছদ : মোঃ সাদিতউজজামান
- অলংকরন : জারীন ও রাজন
- প্রকাশনী : পরিবার পাবলিকেশন্স
- প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০২১
- মলাট মূল্য : তিনশ’ টাকা মাত্র।
আমার গল্পের সাথে যারা এখনো পরিচিত হননি; তারা পড়ে দেখতে পারেন এ বইটি। ২০২১ বইমেলায় প্রকাশিত 'টেবিল নম্বর ১৭' তে আছে আমার লেখা মোট ১৭টি গল্প। বইটির এখন তৃতীয় মুদ্রণ চলছে।
“ টেবিল নম্বর ১৭” ছোট গল্প সংকলন। বইটিতে আছে মোট ১৭ টি গল্প। প্রতিটা গল্পই উত্তম পুরুষে লেখা। গল্পের অনুভূতিগুলো সুন্দর সাবলীল ভাষায় লেখক আন্তরিক ভাবে প্রকাশ করেছেন যা যে কোনো পাঠককেই মুগ্ধ করবে!
বইয়ের প্রতিটা গল্পই আমার পড়তে ভালো লেগেছে। তবু যে ক'টা গল্প বিশেষভাবে মন ছুঁয়ে গিয়েছে আমি সেগুলো সম্পর্কে ছোট্ট করে একটু বলছি।
কাঁচের ওপাশে
গল্পটি খুবই মর্মস্পর্শী৷ সম্মুখ যুদ্ধে দাঁড়িয়ে একজন চিকিৎসক নিঃস্বার্থ সেবা দান করার পরেও মহামারীতে যে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেই বাস্তবতার নিদারুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই গল্পে। একদিকে কর্তব্যপরায়ণ চিকিৎসক, অন্যদিকে একজন স্নেহশীল পিতা। ছোট্ট মেয়ের বাবাকে কাছে পাওয়ার আকুতি! লেখক যেহেতু নিজেই একজন চিকিৎসক, তাই তিনি এমনভাবে গল্পের ছলে বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন যে পড়ার পর মনের অজান্তেই চোখ থেকে দু'ফোঁটা অশ্রু গড়ায় পড়েছে।
নিস্প্রাণ অপেক্ষা
কিশোরবেলার প্রথম প্রেম। যেখানে বিবেকের চেয়ে আবেগটাই বেশি কাজ করে। কেউ কেউ বড় হওয়ার সাথে সাথে মোহ ভেবে সেটা ভুলে যায়। আর কেউবা মনের গভীরে আজীবন যত্নে লালন করে সেই সম্পর্কটাকে। তবে ভুল মানুষের জন্য একপাক্ষিক ভালোবাসা নিয়ে আজীবন অপেক্ষা করাটা আসলেই অর্থহীন। এই অপেক্ষার ফল কখনও মিষ্টি হয় না।
কসাই ডাক্তার
এই গল্পে দু'টো বিষয়ই ধরা পড়েছে। ডাক্তার মানেই কসাই এটা যেমন ঠিক নয়, তেমনি সব পেশেন্টও অকৃতজ্ঞ নয়।
পরকীয়া
পরকীয়া যে এত মধুর হতে পারে তা এই গল্পটি না পড়লে জানতেই পারতাম না। এর বেশি বললে স্পয়লার হয়ে যাবে তাই আর কিছু বলছি না। তবে এ গল্পে কিন্তু কোনোভাবেই পরকীয়াকে সাপোর্ট করা হয়নি।
রেহানের সাথে একদিন
গল্পটা পড়ে খুব মজা পেয়েছি। রম্য গল্পের ছলে লেখিকা এখানে গণসচেতনতামূলক কতগুলো মেসেজ দিয়েছি যা এই করোনাকালীন সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অপারেশ স্যার
এ গল্পটা পড়ে খারাপ লাগলো। আমাদের জীবনে এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে। ব্যস্ততার অজুহাতে কাছের মানুষের কথা শুনার সময় হয় না আমাদের। অথচ হারিয়ে যাওয়ার পর ঠিকই বুঝি। তখন আফসোস ছাড়া আর কোনোকিছুই করার থাকে না।
বাকের ভাই
মনে পড়ে গেল নব্বই দশকের আমাদের ছেলেবেলার বিনোদনের দিনগুলো কথা। আহা! কি মধুর ছিল!
রাত্রি আতঙ্কের
এই গল্পের সাথে আমি নিজের মিল পেয়েছি খুব। আমিও মাঝে মাঝে একরকম দুঃস্বপ্ন দেখি। আমিও অন্ধকারকে প্রচন্ড ভয় পাই। তবে অন্ধকারকে ভয় পাওয়া যে “ফোবিয়া” রোগ তা গল্পটি পড়েই জানতে পারলাম।
মেহমান
এটি আমাদের আশেপাশের একটি বাস্তব গল্প। এরকম অনেক মানুষই আছেন যারা খুব সহজেই পরকে আপন করে নেন। কিন্তু বিনিময়ে শুধুই ধোঁকা খান তারা। তাদের স্নেহ বেশিরভাগ সময়ই অপাত্রে দান হয়। তবে অতিরিক্ত কোনো কিছুই যে ভালো না। এটা এই গল্পের শিক্ষণীয় দিক।
টি ট্রলি
আমি যদিও একদমই চাখোর নই, এমনকি একলা নিজের জন্য চা বানাতেও আমার বড্ড আলসেমি হয়। তবু আমার এই বইয়ের সবচেয়ে পছন্দের গল্প হচ্ছে এটি। একজন প্রতিবেশী দাদুর সাথে তার নাতনীর চায়ের আড্ডা। সাথে নানান রকমরের চায়ের রেসিপি জানতে পারবেন গল্পি পড়ে। আমি সিওর, এই গল্পটি পড়তে পড়তে যে কারোরই চায়ের তেষ্টা পেয়ে যাবে।
তবে একটি সামাজিক গল্পকে লেখক যেভাবে হুট করে ভৌতিক গল্পে রূপান্তরিত করেছেন, তা লেখনীর দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।
টেবিল নম্বর ১৭
একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প। ওয়েস্টার্ন পটভূমিতে লেখা এই গল্পটি ভীষণ ভালো লেগেছে আমার।
ভালো লাগার দিক
এই বইয়ের সবচেয়ে ভালো লাগার দিক হচ্ছে যে কোনো বয়সের পাঠকরাই এটি পড়তে পারবেন। আর বানান ভুল একদমই চোখে পড়েনি।
পরিশেষে বলতে চাই, যারা ছোট ছোট গল্প পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাদের জন্য টেবিল নম্বর ১৭ নিঃসন্দেহে একটি সুখপাঠ্য বই হবে। যারা এক মলাটে ভিন্ন স্বাদের গল্প পড়তে ভালোবাসেন তারা অবশ্যই বইটি সংগ্রহ করবেন।
ছবিঃ Habiba Kamrun Shia
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....