- দি এ্যানাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স
- লেখক : মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া
- প্রকাশনী : সিম্পোজিয়াম পাবলিকেশন্স
- বিষয় : আন্তর্জাতিক রাজনীতি
- পৃষ্ঠা : 428, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : 1st Published, 2022
- আইএসবিএন : 9789843520531
Hard Power
বর্তমানের আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে 'Game of Power Politics' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মানে হলো, কে কাকে নিয়ন্ত্রণ করবে, কে কাকে নিজের দখলে নেবে এবং কীভাবে অন্যকে কথা শুনতে বাধ্য করাবে এসবের খেলা। তাই পৃথিবীতে যে রাষ্ট্রগুলো সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অধিক শক্তিশালী, তারা তুলনামূলক কম শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। শক্তিশালী দেশগুলো কর্তৃক দুর্বল দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা এবং তাদের ওপর নানা প্রকার বাণিজ্যিক বিধি-নিষেধ আরোপ করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, যুদ্ধের হুমকি দেওয়া অথবা সামরিকভাবে প্রভাব বিস্তার করাকেই 'Hard power' বলা হয়। এভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কিংবা মিলিটারি আক্রমণ করে অন্য আরেকটি রাষ্ট্রকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টাকে বলা হয় 'Hard Power Diplomacy'। এই হার্ড পাওয়ার ডিপ্লোমেসির দুইটি কার্যকরী পদ্ধতি রয়েছে;
পদ্ধতি-০১: মিলিটারি আক্রমণ, যুদ্ধের ঘোষণা ও ড্রোন হামলা। উদাহরণস্বরূপ: এক. ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চলটি' রাশিয়ার জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই রাশিয়া তার মিলিটারি শক্তি ব্যবহার করে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি দখল করে নিয়েছে। আর এটাই Hard power এর উদাহরণ। দুই. ইরাকের সাদ্দাম হোসেন কিংবা লিবিয়ার মোয়াম্মার গাদ্দাফি কেউই যুক্তরাষ্ট্রের কথা মতো চলত না। তাই তাদেরকে উৎখাত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একযোগে ড্রোন ও মিলিটারি হামলাই হচ্ছে Hard Power এর উদাহরণ।
পদ্ধতি-০২: হার্ড পাওয়ারের দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ট্যারিফ বা ব্যবসা বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক অবরোধ। উদাহরণস্বরূপ: বর্তমান সময়ে ইরান, কিউবা, উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলা এসব রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ্য। যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ্য হওয়ার কারণে এই রাষ্ট্রগুলোকে 'Rogue State' বা 'অবাধ্য রাষ্ট্র' বলা হয়। তাই অবাধ্য রাষ্ট্রগুলোকে নিজের বশে আনতে এই রাষ্ট্রগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ হলো Hard Power এর উদাহরণ।
Soft Power
এবার আসি Soft Power নিয়ে। এই সফট পাওয়ারের মানে হলো বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের বলয়ে নিয়ে আসতে কূটনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করা। ছোট রাষ্ট্রগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে তাদেরকে নিজের বলয়ে নিয়ে আসা, ছোট রাষ্ট্রগুলোর চলমান সমস্যা সমাধান করা ইত্যাদির মাধ্যমে সেই রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করাকেই Soft Power Diplomacy' বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ নাই সর্বপ্রথম এই Soft power এর ধারণাটি দিয়েছিলেন। জোসেফ নাই এর মতে, একটি রাষ্ট্রকে নিজের বলয়ে ও পক্ষে নিয়ে আসতে Hard Power বা মিলিটারি ক্ষমতা প্রদর্শন করা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। যেমন- লিবিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে হার্ড পাওয়ার ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রগুলোকে বেশিদিন নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি।
তাই একটি রাষ্ট্রকে দীর্ঘসময়ের জন্য নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে প্রয়োজন কূটনীতি। তাই একটি রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে অথবা সেই রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখলে এবং সেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসলে, সেই রাষ্ট্রটি এমনিতেই শক্তিশালী রাষ্ট্রটির অনুগত থাকবে। যেমন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ও জার্মানী ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ্য। কিন্তু যুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানকে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করে ও জাপানের নিরাপত্তার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র নিজের হাতে নেয়। ফলস্বরূপ জাপান এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও ভালো বন্ধু।
একই ভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিম জার্মানীকেও যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল প্ল্যানের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছিল। অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হলো 'Soft Power Diplomacy' ব্যবহার করা। হুমকি দিয়ে, অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে এবং ড্রোন হামলা করে একটি রাষ্ট্রকে বেশিদিন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। তাই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হলো সফট পাওয়ার ব্যবহার করা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিগত কয়েকবছরের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণ করলে সফট পাওয়ার এর নতুন আরেকটি ধারা লক্ষ্য করা যায়। সেটি হলো আমেরিকা এখন বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তনের জন্য নতুন নীতি অবলম্বন করছে। যেসব দেশে আমেরিকাপন্থী সরকার নেই সেসব জায়গায় এখন আর আগের মতো সামরিক শক্তি ব্যবহার করে না যুক্তরাষ্ট্র। বরং ওখানকার সরকার পরিবর্তনের জন্য ঐসব দেশের সরকার বিরোধীদেরকে বিভিন্ন সহযোগিতার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ: ভেনেজুয়েলার বর্তমান সরকার নিকোলাস মাদুরো রাশিয়াপন্থী। তাই রাশিয়াপন্থী এই সরকারকে হটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী দলের নেতা হুয়ান গুয়াইদুকে সহযোগিতা করছে। হংকং এর যারা Pro Democrats, তথা যারা শি জিনপিং এর বিরোধী তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু রাষ্ট্র কিউবাতে কখনো সরকার বিরোধী আন্দোলন হলে সেখানে আমেরিকা আন্দোলনকারীদেরকে নানা ভাবে উসকানি দিচ্ছে। একই ভাবে ইরানে যখন সরকার বিরোধী আন্দোলন হয় তখন মার্কিন রাজনীতিবিদরা ফেসবুক কিংবা টুইটারে সরাসরি বিরোধীদের সমর্থন করে পোস্ট দেয়।
Smart Power
Hard Power এবং Soft Power উভয়ের মিশ্রণ হলো Smart Power । একটি রাষ্ট্রকে নিজের বশে আনতে সেই রাষ্ট্রেকে একসাথে অর্থনৈতিক অবরোধ দেওয়া, মিলিটারি হুমকি দেওয়া, কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা, ড্রোন হামলা করা ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়া, এই সবগুলোর সমন্বয়কে বলা হয় 'Smart Power Diplomacy'। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার উপর এই Smart Power ব্যবহার করছে। অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে Soft Power এবং Hard Power এই দুটিকে একসাথে ব্যবহার করার নামই Smart Power
বাংলাদেশের কূটনৈতিক শক্তি: কেন বাংলাদেশের কূটনীতির সবচেয়ে বড় শক্তি ‘Soft Power'?
At A Glance Of The Anatomy of World Politics.
“দি এ্যানাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স” মূলত একটি মৌলিক গ্রন্থ, যেখানে একুশ শতকের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মোট ত্রিশটি অধ্যায় সম্বলিত এই বইতে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, ঘটনাক্রম, কূটনীতি, ভূরাজনীতি, দ্বন্দ্ব, সংকট ও ভবিষ্যত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একুশ শতকের বিশ্ব রাজনীতির গতিপ্রকৃতিকে বিদ্যায়তনিক বা একাডেমিক বিভিন্ন বয়ান, তত্ত্ব ও পরিভাষার মাধ্যমে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বইটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সহজবোধ্যতা। জটিল ভূরাজনৈতিক সমীকরণগুলো এই বইতে সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটির বিষয়বস্তুগুলো ধারাবাহিক এবং সুসংবদ্ধ।
বিশ্ব রাজনীতি বোঝার জন্য অনেকে ইতিহাস, তত্ত্ব এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলীই জানা যথেষ্ট মনে করেন। অথচ রাজনীতি বুঝতে হলে নয়া বিশ্বব্যবস্থা, কূটনীতি, ভূরাজনীতি, দর্শন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সরকারব্যবস্থা, জলবায়ু, বৈশ্বিক নিরাপত্তা, পরিশেষে বাংলাদেশের করণীয় ইত্যাদি সবগুলো বিষয়েরই মিথস্ক্রিয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে 'দি এ্যানাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স' বইটি অনন্য।
লেখক মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া এই বইটির প্রতিটি অধ্যায়কে এক সুতোয় বেঁধেছেন, যা সূচিপত্র দেখলেই পাঠক বুঝতে পারবেন। এই বইয়ের ব্যতিক্রম দিকটি হলো, সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি অধ্যায়ের শুরুতে ঐ অধ্যায়ের বিষয়বস্তুকে ভিত্তিকে করে একটি theme রয়েছে, যা অধ্যায়টি সম্পর্কে শুরুতেই পাঠককে একটি ম্যাসেজ দেবে। একইভাবে প্রতিটি অধ্যায় শেষে 'Question to think about?' নামে আরেকটি অংশ রয়েছে, যা পাঠকের চিন্তার খোঁড়াক জোগাবে। তৃতীয়ত, প্রতিটি অধ্যায় শেষ কিছু সমৃদ্ধশালী সহায়ক গ্রন্থের তালিকা দেওয়া হয়েছে। পরিশেষে উল্লেখিত দেশগুলোর বর্তমানের পাশাপাশি অতীত ইতিহাসও সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে, যা পাঠককে দেশের সার্বিক অবস্থা বুঝতে সহায়তা করবে।
দি এ্যানাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স : মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া | The Anatomy of World Politics books by Muhammad Miraj Mia Collect This Book
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....