তমসা হতে : অঙ্কিতা সরকার | Tomsha Hote By Ankita Sarker

বইয়ের নাম : তমসা হতে;
লেখক : অঙ্কিতা সরকার;
প্রকাশক : বর্ণলহরী;
পেপারব্যাক, ১৮৪ পৃষ্ঠা (১২ সেমি X ১৮ সেমি), ₹ ১৯০/-


সোশ্যাল মিডিয়ায় ইদানীং তন্ত্র-মন্ত্র এবং প্রেত-পিশাচের দাপট বড়োই বেশি। প্রতি মাসেই নতুন সংকলন বেরোয় এই ধরনের থিম নিয়ে। পাঠককে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টায় লেখকেরা হৃদয় খুঁড়ে বেদনার বদলে রাশি-রাশি উৎকট জিনিস তুলে এনে স্তূপীকৃত করেন সেইসব লেখায়।
সচরাচর, অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো-র সন্ধান তাতে থাকে না।
এই বই কিন্তু ব্যতিক্রম।

লেখক মোট চারটি বড়োগল্পকে স্থান দিয়েছেন এই বইয়ে। তারা হল~
১) রক্তজবা: শতাব্দীপ্রাচীন এই কাহিনিতে মিশে আছে সমাজের কুটিল রূপ, ব্যর্থ ভালোবাসা, প্রতিহিংসার উদগ্র বাসনা, আর মায়া— যা ছলনা করে, আবার বেঁধেও রাখে।
২) বাৎসল্য: এই গল্প ভয় পাওয়ায়। তবে তার চেয়েও বেশি করে এই গল্প জন্ম দেয় রাগ আর কষ্টের। বড়ো মর্মস্পর্শী এই আখ্যান।
৩) অপেক্ষার অন্তিম প্রহর: এই কাহিনি অলৌকিক। তবে তার চেয়েও বেশি করে এই কাহিনি মানবিক। ক্রোধ আর প্রতিহিংসা— এই দু'টি অনুভূতির স্পর্শে কীভাবে জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যায় জীবন, সেটিই ধরা পড়েছে এতে।
৪) তমসা হতে: এটি, আমার মতে, এই বইয়ের সবচেয়ে গভীর লেখা। বর্ণনার নৈপুণ্যে, সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে, সর্বোপরি আবহ-নির্মাণে এটি ভয়ের গল্প ছাপিয়ে অন্য, বৃহত্তর কিছু হয়ে উঠেছে। আর এই গল্পও ভয়ের চেয়ে বেশি করে কষ্টই দেয়।

সত্যি-সত্যি ভারি ভালো লাগল এই সংকলনটি। ভয় পাওয়ানোর থেকেও এটি কালপ্রবাহ এবং তার উথাল-পাতালে এলোমেলো হওয়া জীবনের কথা বলে। লেখকের মিত অথচ প্রাপ্তমনস্ক লেখনী নারী-হৃদয়ের নানা অনুভূতিকে ফুটিয়ে তোলে খুব ছোটো পরিসরেও। সর্বোপরি, এই কাহিনিরা বলতে চায়, অতীতকে স্বীকার করেও আমাদের এগিয়ে চলা উচিত ভবিষ্যতের দিকেই।
তমসো মা জ্যোতির্গময়!

বইটির মুদ্রণ, বর্ণস্থাপন এবং বানান শুদ্ধ। প্রচ্ছদটি বড়ো অন্ধকার। গল্পগুলোতে খুব ছোট্ট হলেও একটি করে হেডপিস থাকলে আরও খুশি হতাম।
নিছক ভূতের বা ভয়ের গল্পের বদলে যদি আলোকসন্ধানী লেখা পড়তে চান, তাহলে এই সংকলনটিকে কোনোমতেই উপেক্ষা করবেন না -অলমিতি।
 

লেখিকা অঙ্কিতা সরকারের ( ঋতন্যা- কলমে অঙ্কিতা সরকার ) লেখা বই ' তমসা হতে ' । এই বইটি মূলত চারটি ভয়ের/অলৌকিক গল্পের সংকলন । প্রথম গল্প ' রক্তজবা ' । এটি মূলত তন্ত্র বিদ্যার উপরে লেখা একটি প্রতিশোধের গল্প , পড়তে পড়তে আমার বেশ ভয়াবহ লেগেছে ।

দ্বিতীয় গল্প ' বাৎসল্য ' । এটি মূলত এবং বইয়ের একমাত্র ভৌতিক গল্প আর সব থেকে ভয়ের গল্প এই বইয়ের । এই গল্পটিতে মূলত একজন প্রতিবন্ধী অশরীরীর হিংসার গল্প , আর একজন মায়ের ভালোবাসার গল্প যার জন্য সবাইকে ভুগতে হয়েছে কিন্তু কেন হয়েছে সেটা গল্প পড়লেই জানা যাবে তবে যথেষ্ট ভয় লেগেছে এই গল্প পড়ার সময় ।

তৃতীয় গল্প ' অপেক্ষায় অন্তিম প্রহর ' । এই গল্পটিও একটি প্রতিশোধের গল্প তবে প্রথম গল্প আর এই গল্পের প্রতিশোধ নেওয়ার কারণ সম্পূর্ণ অন্য রকম , তবে এই গল্পের প্রতিশোধটা যাদের উপর নেওয়া হয়েছে, সেটা সঠিক মনে হয়েছে , গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে আর ভয় তো সাথে আছেই ।

আর শেষ গল্প ' তমসা হতে ' , যে গল্পের নামে এই বইয়ের নাম , আর বইয়ের প্রচ্ছদও সম্ভবত এই গল্পের উপরেই বানানো । এই গল্পটিও ঈর্ষা বা হিংসার গল্প , যার হিংসার জন্য প্রায় একটা পরিবারকে ভুগতে হয়েছিলো তবে দ্বিতীয় গল্পের ঈর্ষাটা ছিলো বাৎসল্য ঈর্ষা আর আর এই গল্পের ঈর্ষাটা এসেছে মনের তমসা বা অন্ধকার থেকে । এর সাথে আছে দেবী লক্ষ্মী আর অলক্ষ্মীর বর্ণনা এবং তাঁরাও এই গল্পের সাথে জড়িয়ে গেছে , সব মিলিয়ে খুবই ভালো লেগেছে এই গল্পটা ।

চারটি গল্পই বেশ ভালো এবং বেশ ভয়ের কিন্তু আমার সব থেকে বেশি ভয়ের লেগেছে প্রথম দুটো গল্প , তুলনামূলক ভাবে শেষ দুটো গল্পে ভয় কম লেগেছে , তবে এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত, কারণ ঘটনার ভয়াবহতা সব গল্পেই আছে , তাই হতেই পারে অনেকের শেষ দুটো গল্পে বেশি ভয় লাগছে কারণ কারণ শরীর থেকে হৃৎপিণ্ড বের করে আনার ঘটনা পড়লে শিউরে উঠতে বাধ্য মন। তবে ব্যক্তিগত ভাবে ' বাৎসল্য ' গল্পটা আমার সবচেয়ে বেশি ভয়ের লেগেছে আর এতটাই ভয়ের লেগেছে যে ওই গল্পটা পড়ার পর সারারাত ভূতের স্বপ্ন দেখেছি , যদি এরকম পড়ি যে কোনো অশরীরী শুধু বাৎসল্য ঈর্ষা থেকে কারো ক্ষতি করছে , তাহলে তো ভয় লাগবেই । যাই হোক এটি সবচেয়ে ভয়ের লাগলেও গল্প হিসাবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে ' তমসা হতে ' যদিও সব গল্প গুলোই ভালো , তবুও একটা ব্যক্তিগত মতামত জানলাম ।

এছাড়া লেখিকার লেখনী খুবই ভালো, ভয়টাকে বেশ ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন, পাতার মান বেশ ভালো, প্রচ্ছদ মানানসই। সব মিলিয়ে অলৌকিক গল্পের সংকলন হিসাবে সংগ্রহ যোগ্য একটি বই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ