তুমি নামক প্রিয় অসুখ : লেখিকা মৌসুমী আক্তার

বইয়ের নাম - তুমি নামক প্রিয় অসুখ
লেখিকা - মৌসুমী আক্তার
প্রকাশনী - নবকথন প্রকাশনী
প্রচ্ছদ - আদনান আহমেদ রিজন
জনরা - রোমান্টিক
রেটিং - ৮.৫/১০
রিভিউ দিয়েছেন : নবনিতা শেখ


✦বই কথা
মৌ আপুর প্রথম বই এটা। এর আগেও আমাদের অনলাইনে অসংখ্য গল্প-উপন্যাস উপহার দিয়েছেন, তবে অফলাইনে এটাই প্রথম। আমাদের সবার প্রিয় চরিত্রদের নিয়ে এই বইটা। বিহান আর দিয়া-কে নিয়ে গল্প আমরা প্রায় অনেকেই পড়েছি। তো যারা পড়েছি, তাদের কাছে বিহান ভাই মানেই এক আকাশ ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসার মানুষটা বইয়ের পাতায়।

✦কাহিনী-সংক্ষেপ
শুরুটা হয় ক্লাস নাইনে পড়ুয়া একটা মেয়ের শীতের সকালে পাওয়া একটা চিঠি দিয়ে। যদিও সে এই চিঠি প্রথম না, এর আগেও প্রায়শই পেয়েছে। অজ্ঞাত ঠিকানা থেকে আসতো। 
মামাবাড়ির সেই একরোখা ছেলেটার প্রতি ছিল তার ভীষণ ঝোঁক। সর্বদা তাকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা সেই বাচ্চা হৃদয়কে কাবু করে ফেলেছিল। তবে, সামনে গেলেই ভয় হতো। এজন্য এড়িয়ে যেত। কিন্তু মনের অজান্তেই তার মন দিয়ে ফেলে। 
কাহিনীটা এদের দুজনকে নিয়ে হলেও, এখানে আরও অনেক গল্প ছিল। না পাবার বেদনা, হারিয়ে ফেলার ভয়, বিচ্ছেদ যন্ত্রণা, বাবা মায়ের করা কিছু ভুল, কাজিন-আড্ডা, প্রেমময়ী খুনশুটি, সমাজের কটু কথা ইত্যাদি নিয়ে পুরো উপন্যাসটা ফুল একটা প্যাকেজ ছিল। কিছু কাহিনী এমনও ছিল, যা আমরা প্রায়ই আমাদের চক্ষু সম্মুখে দেখে থাকি। বিস্তারিত জানতে হলে অবশ্যই বইটা পড়ুন।

✦কিছু চরিত্র 
১.বিহানঃ গল্পের মূলে ছিল এই চরিত্রটি। সমস্ত অসুখ ছিল বিহান নামের এই চরিত্রটিকে নিয়েই। যখনই তার সংলাপ আসবে, তখনই একটা উত্তেজনা কাজ করবে। উপন্যাসে তার আধ্যাত্মিক বাণী গুলো তেমন একটা ছিল না তবে ভালোবাসার একটা অসুখ ছিল।

২.দিয়াঃ সবচেয়ে মিষ্টি, অভিমানী একটা মেয়ে। শ্যামাঙ্গিণী এই মেয়েটা একটা বার মুখ ফুটে যা চাইতো, তার প্রেমিক পুরুষ যেভাবেই হোক সেটা এনে দিতো। পুরো উপন্যাসের সর্বত্র দিয়া নামের মেয়েটা ছেয়ে ছিল। 

৩.রিয়াঃ এই মেয়ের রূপের বর্ণনাটা ছিল অনেক সুন্দর। তাদের বাড়ির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে এই রিয়া। আর সে ভালোবাসতো এক ঠোঁট কাটা স্বভাবের ছেলেকে। 

৪.বিভোরঃ বিভোর নামটাতেই বিভোর হওয়া টাইপের একটা ব্যাপার আছে। উপন্যাসের সবচেয়ে মজার চরিত্র হচ্ছে এটা। তার কথা দিয়ে যে কাউকে হাসাতে পারবে। উপন্যাসে, কষ্টের কোনো একটা দৃশ্যে এই ছেলেটার একটা বাণী চোখে জল আর মুখে হাসি ফোঁটাতে সক্ষম। 

৫.মেহনুবাঃ সবাই তাকে মেহু নামেই চিনে। ভীষণ দায়িত্বশীল একটা মেয়ে। তার ব্যাপারে আরো লিখতে গেলে স্পয়লার হয়ে যাবে। 

৬.আবিরঃ দিয়ার বড় ভাই। যার বিশাল দুনিয়ার ছোট্ট কোণায় ছিল একটা মেয়ে। কিন্তু সেই মেয়েকে ছাড়া আবির একদম অচল। অসুস্থ হয়ে যায় তার অনুপস্থিতিতে।

৭.ভাবনাঃ এই চরিত্রটা ভীষণ মজার ছিল। ভাবনাকে নিয়ে তৈরি হওয়া কাহিনী গুলো আরো আকর্ষণীয় ছিল।

৮.ফয়সালঃ এটাকে নিয়ে লিখতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। 

পুরো উপন্যাসের সবগুলো চরিত্রকে অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সবার নামে আলাদা আলাদা লিখতে গেলে রচনা হয়ে যাবে।

✦পাঠ-প্রতিক্রিয়া 
বইটা হাতে নিয়েই পড়া শুরু করেছিলাম। একরকম নেশা ধরে গিয়েছিল। এক বসায় শেষ করতাম। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণবশত তা পারিনি। তবে একটু পড়ার পর, সামনে কী হবে ভাবতাম। পড়তে না পারলে ছটফট করতাম। তবে একটা কথা না বললেই নয়, উপন্যাসে যতবার বিহান ভাইয়ের প্রসঙ্গ এসেছে, ততবার হেসেছি আমি। মুচকি মুচকি হাসার কারণে বাড়ির মানুষ অবশ্য অন্য কিছু ভেবেছে। যাই হোক, উপন্যাসের কিছু কিছু জায়গায় জাদু ছিল। 

✦প্রিয় কিছু লাইন
• “আমার দিকে কেউ তাকালে যে তোমার কষ্ট হয় সেটা অনুভব করি আমার তার থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্ট হয়। এজন্য আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না। আমার দু'চোখ শুধু তোমাকে দেখতে ব্যস্ত শ্যামাপাখি। যে চোখ একবার ভালোবাসার চোখ দিয়ে প্রেমিকার চোখ দেখেছে, সেই চোখ জানে পৃথিবীর অন্য কারো চোখে চোখ রাখা নিষিদ্ধ।” (বিহান ভাই)

• “ওনি কোনো গল্প বা সিনেমার নায়ক নন, ওনি আমার জীবনের হিরো, যায় হাজার হাজার ফ্যান ফলোয়ার্স নেই। যার জীবনের এক এবং একমাত্র ফলোয়ার আমি। হাজার হাজার ফলোয়ারের ভালোবাসা আমি একাই তাকে দিতে পারি।” (দিয়া)

• “প্রসঙ্গ যেখানে তুমি সেখানে তুমিই আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী” (বিহান ভাই)

• “চেনা মানুষের অচেনা রূপের মতো ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি আর কোনো কিছুতে হতে পারে না।” (দিয়া)

• “তোমাকে পাওয়ার আক্ষেপটা পরকালেও থেকে যাবে ইহকালেও রয়ে গেল। তুমিও ঠকাও নি, আমিও ঠকাই নি শুধু নিয়তির কাছে হেরে গেলাম দুজনে।” (বিহান ভাই)

•“প্রতিটা প্রহর কাটছে তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার অস্থিরতায়, তোমাকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতায়। তুমি রয়ে গেছো আমার শিরা-উপশিরায়। তোমাকে নিয়ে আজও স্বপ্ন বোনে এ মন, লেপ্টে রাখে দু'চোখের পাতায়।” (বিহান ভাই)

তাছাড়া আরো অনেক আছে। সব লেখা যাবে না। 

✦ব্যক্তিগত সমালোচনা
উপন্যাসটা অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন আপু। পুরো গল্পে একঘেয়েমি আসবে না একটুও। তবে বানানে বেশ কিছু ভুল ছিল। কিছু টাইপিং মিসটেক ছিল। আর শুরুতে লেখা ছিল সময়টা শীতকাল, ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ। আপু এখানে একটু ভুল করেছেন, সে সময়টা শীতের হলেও শীতকাল না। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বসন্তকাল শুরু হয়। আর বানানের দিকে কিছু কিছু জায়গায় ‘য়’ এবং ‘ই’ এ গুলিয়ে ফেলেছেন আপু। বাক্য গঠনেও দুয়েক জায়গায় ভুল পেয়েছি। এগুলো অবশ্য লেখিকার ভুল নয়।যিনি প্রুফ রিড করেছেন তার।তবে সর্বোপরি ধরতে গেলে, এসব ভুল চোখে পড়ার মতো না। প্রথম বইয়ে এমন সামান্য ভুল ত্রুটি থাকবেই। আশা রাখছি সামনে এসব ঠিক থাকবে। কাহিনী গোছানো অনেক সুন্দর ভাবে হয়েছে। শেষে একটু চমক ছিল। যেটা আরো ভালো লেগেছে। বাকিটুকু জানতে হলে বইটা ঝটপট নিয়ে ফেলুন। এই বইটা আসলেই একটা অসুখ। 

~নবনী🌸

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ