দেয়াল উপন্যাসটি হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের সর্বশেষ উপন্যাস। যেটা ওনার মৃত্যু পর প্রকাশিত হয়েছিলো।
বইটা প্রকাশের আগেই নাকি অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছিলো, যার কারণে হুমায়ুন আহমেদকে কোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়েছে...
বইয়ে লেখক যে নিজ জবানীতে কিছু কথা বলেছেন এবং ১৯৭৫-১৯৮১ সালের ঘটনাবলীকে আশ্রয় করে উপন্যাস সাজিয়েছিল তা আদালতের দ্বারা প্রথমাবস্থায় বাতিল হয়েছিল। ফলে লেখককে বইটা সংশোধন করতে হয় এবং আমরা যে কপিটা পড়ি তা সংশোধিত রূপ।
কেন বিতর্কিত ছিলো, সেটা বই পড়তে গিয়ে বুঝলাম।
বইটাতে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গদের নিয়ে অনেকগুলো সেন্সিটিভ ইতিহাস উঠে এসেছে এবং হুমায়ুন আহমেদ নিরপেক্ষ ভাবেই বলেছে বলে আমার মনে হয়েছে।
প্রথমদিকে রয়েছে অবন্তি, শফিক, জাহাঙ্গীর, সরফরাজ আর ইসাবেলাদের নিয়ে গড়ে ওঠা অন্য দশটা উপন্যাসের মতো একটা কাহিনি, দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে সেই সময়ে লেখকের নিজ জবানীতে লেখা কিছু অভিজ্ঞতার কথা এবং তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে মুজিব, খালেদ, জিয়া, তাহের, ফারুক গ্যাংদের নিয়ে গড়ে ওঠা ইতিহাসের বিষয়।
হুমায়ূন নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন সেখানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। যেমন : রক্ষীবাহিনী দ্বারা ঘটা তাঁর পরিবারের অপদস্ত হওয়ার ঘটনা, আহমদ ছফা ও সিকানদার আবু জাফরের তাঁর জন্য তদবির করা, টাকার জন্য ‘নীল হাতি' বইটা লেখার প্রেক্ষাপট, ভাস্কর শামীম শিকদারের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, কবি নির্মলেন্দু গুণের বঙ্গবন্ধু হত্যার খবরে পাগলপ্রায় হয়ে যাওয়া বা জিয়ার খালকাটা উৎসবে কবি শামসুর রাহমানের সোৎসাহে যোগ দেওযার ইতিবৃত্ত।
নিঃসন্দেহে বইটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ পচাত্তরের মুজিব হত্যা এবং পরবর্তিতে জিয়ার হত্যা।
হুমায়ূন আহমেদ ‘দেয়াল’ উপন্যাসটি লেখার সিদ্ধান্ত নেন একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে। যা ছিল রাজনৈতিকভাবে খুবই সংবেদনশীল। ২০১১ সালে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসুস্থ হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকায় তার বাসায় যান। মূলত তখনই তিনি পাকাপোক্ত ভাবে সিদ্ধান্ত নেন, উপন্যাসটি লেখার।
কিন্তু শেষ জীবনে, শেষ উপন্যাসে এসে তাকে উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হলো। সে সময়ে অনেক হুমায়ূন ভক্তরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলেন, যে বইটি প্রকাশ হবে কিনা! যাহোক লেখকের অনুপস্থিতিতে বইটি প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে।
দেয়াল একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। বলতে গেলে ঐতিহাসিক উপন্যাস। উপন্যাসের শুরু অবন্তি নামে একটি মেয়ে ও তার দাদা সরফরাজের মাধ্যমে, আমরা এখান থেকেই শফিক, খালেদ মোশাররফ সহ বেশ কিছু চরিত্র পাই।
দেয়ালে মূলত শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা, মোশতাক আহমেদের ক্ষমতা গ্রহন। খালেদ মোশারফের বিদ্রহো, অভ্যুত্থান, চার নেতা হত্যা, সিপাহী বিপ্লব, এবং জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহন। এছাড়া কর্ণেল, তাহের, ওসমানি সহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক চরিত্র উল্লেখযোগ্য ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....