বই : ডার্ক ম্যাটার
লেখক : ব্লেইক ক্রাউচ
অনুবাদক : Salman Haque
জনরা : সাই-ফাই থ্রিলার
প্রথম প্রকাশ : গ্রন্থমেলা ২০২১
প্রকাশক : আফসার ব্রাদার্স
পৃষ্ঠা : ৩১৯ পৃষ্ঠা
আচ্ছা কল্পনা করুন তো নিজের প্রতিরূপ দেখতে কেমন হয়? কেমন হয় কোনো পাবে বসে তার সাথে চিয়ার্স বলে রেড ওয়াইন গিললে?
যদি বলি আপনার বর্তমান বাস্তব জীবন পুরোটাই ভ্রম? হ্যাঁ, কোয়ান্টামতত্ত্ব মতে আপনার এই বাস্তবতা ছাড়াও আরো বহুসংখ্যক বাস্তবতায় আপনি এক্সিস্ট করেন। ধরুন আজ থেকে ৫ বছর আগে আপনি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেটার জন্য আপনার এখনো আফসোস হয়_ ভাবেন সেদিন সে সিদ্ধান্ত না নিলে আজকে আপনার জীবনটা অন্যরকম হতো। এক্সেক্ট টাইমে অন্য এক বাস্তবতায় আপনি সে সিদ্ধান্ত নেননি এবং সে বাস্তবতায় আপনার আফসোসটা নেই। অর্থাৎ আপনি সুখী। মানে কোনো কাজ করার আগে আপনার মস্তিষ্ক যতটা সিদ্ধান্ত কল্পনা করতে পারে ততটা বাস্তবতা সৃষ্টি হয়। এবার আপনি এক বাস্তবতা সুখী হলে অন্য বাস্তবতায় সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় অসুখী। অর্থাৎ অপর কল্পনাগুলো মিলে সৃষ্টি হয় মাল্টিভার্স।
স্ট্রিং থিওরি মতে আমরা জানি ১০ এর অধিক মাত্রা থাকা সম্ভব। মানুষ চতুর্মাত্রিক জীব। সময় ছাড়া মানুষের জীবন ব্যাখ্যা করা যায় না। সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে কিউবটার কল্পনা করা হয় তার নাম 'ট্যাসারেক্ট'। এখানে বসে আপনি আপনার অতীত ভবিষ্যৎ দেখতে পাবেন। অতীত বা ভবিষ্যতে কমিউনিকেট করতে পারবেন।
ডেসেন ছিল পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তার সুপ্ত বাসনা ছিল এমন একটা কিউব বানিয়ে টাইম ট্র্যাভেল করা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রায় দ্বারপ্রান্তে এসে বিয়ে করে বসে ড্যানিয়েলাকে। (তাদের সন্তান চার্লির বর্তমান বয়স পনেরো বছর।) এরপর সংসারের চাপে আর ফুরসত মিলেনি স্বপ্ন বাস্তবায়নের। প্রায় পনেরো বছর পর এসে এই আফসোস তার মনে জাগে। একদিন বন্ধুর বাড়িতে আমন্ত্রণ থেকে ফেরার পথে অপহরণ করা হয় ডেসেনকে... এরপর জ্ঞান ফিরে দেখতে পায় অন্য বাস্তবতায় সে। পরিচিত অনেককিছুই বদলে গেল। তার স্বপ্ন অন্যজন বাস্তবতায় রূপ দিয়েছে। কিউবটা তৈরি করে ফেলেছে। তারপর শুরু হয় গল্পের শুরু... একেরপর এক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া ডেসেন কি তার ভালোবাসার ড্যানিয়েলা, চার্লি ও তার চিরচেনা পরিবারকে খুঁজে পাবে? জানতে হলে বই হাতে নিতে হবে।
প্রতিক্রিয়া : আমাদের চিরচেনা জগৎ বা আপনজনের সাথে কাটানো সময় কতটা মূল্যবান তা শুধু আমরা হারিয়ে ফেললেই অনুভব করি। 'গ্র্যাভিটি' মুভিটা দেখেও সেইম অনুভূতিটাই হয়েছিল। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে হঠাৎ ছিটকে পড়ে মহাকশে দিক্বিদিক ছুটে যাচ্ছিল স্যান্ড্রা, শেষে পৃথিবীতে ফিরে এসে স্যান্ড্রার যে অনুভূতি হয়েছিল, এখন সেটাই অনুভব করছি। এটাই একবাক্যে বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া।
মাল্টিভার্স, ডাইমেনশন, রিয়ালিটির এক দুর্দান্ত কম্বো। কোনো কাটখোট্টা তত্ত্ব নেই, এই তিনটার বেসিক মিশেল দিয়ে যে এমন গল্প বানানো যায়, অভাবনীয়। তার চেয়েও যেটা সবার ঊর্ধ্বে ছাপিয়ে উঠেছে, সেটা হলো ভালোবাসা, পরিবার, প্রিয়জন। আপনি মূলত একটা ভালোবাসার গল্পই পড়বেন। কোনো প্রতিবন্ধকতায় আপনি তাদের হারাতে চাইবেন না।
সালমান হক অনূদিত আমার পড়া ১৬ নাম্বার বই সম্ভবত। আমার সবচেয়ে ফেভারিট অনুবাদক। মৌলিক বা অনুবাদে তিনি কোনো বর্ণবৈষম্য সৃষ্টি করেননি। জোশ প্রোডাকশন। লেভেলের প্রচ্ছদ। And obviously highly recommended.
কাহিনী সংক্ষেপ
আর দশটা সাধারণ দিনের মতনই শুরু হয়েছিল সেই দিনটা। শিকাগোর এক স্থানীয় পাবে বন্ধুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিল জ্যাসন ডেসেন, যেখানে তার জন্যে পথ চেয়ে বসে আছে স্ত্রী ড্যানিয়েলা আর সন্তান চার্লি। কিন্তু তার আর ফেরা হয়ে ওঠে না। বদলে যায় চেনা-পরিচিত সবকিছু।
"তুমি কি তোমার জীবন নিয়ে খুশি?"
এক অচেনা অপহারণকারীর হাতে জ্ঞান হারাবার আগে এই কথাটাই শুনতে পায় জ্যাসন। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে সে আবিষ্কার করে এক ল্যাবরেটরিতে, গার্নির সাথে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়। তাকে ঘিরে রেখেছে হাজমাত স্যুট পরিহিত অপরিচিত কয়েকজন মানুষ। তাদেরই একজন হাসিমুখে জ্যাসনের উদ্দেশ্যে বলে- “তোমাকে ফিরে পেয়ে ভালো লাগছে”।
জ্যাসন আবিষ্কার করে যে এই জগতে তার জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। কখনো বিয়ে করেনি। চার্লির জন্মই হয়নি।
সবচেয়ে বড় কথা, এখানে সাধারণ একজন পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নয় সে; বরং একজন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক যে কিনা এমন কিছু আবিষ্কার করেছে যা আগের জীবনে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল তার কাছে।
তাহলে কি এই জগতটা ভ্রম? নাকি এতদিন ভ্রমের জগতে বসবাস শেষে আসল জগতে ফিরে এসেছে সে?
আর যদি আগের জগতটাই সত্য হয়, তাহলে বাড়িতে আপনজনদের কাছে ফিরবে কি করে সে? এর জবাব নিহিত আছে এক কঠিন যাত্রায়, যেখানে নিজের সবচেয়ে ভয়ংকর দিকগুলোর সম্মুখীন হতে হবে তাকে। নিজের মুখোমুখি কি হতে পারবে জ্যাসন? (ফ্ল্যপ)
পাঠ অনুভূতি
এই একটু আগে বইটা শেষ করে উঠেছি, কিন্তু বইয়ের প্রভাব যাচ্ছে না। আসলে ভাবছি বইটা এতদিন কেন পড়ি নাই!? বইয়ের জনরাটা মূলত সায়েন্স ফিকশন। কিন্তু সায়েন্সের জটিল কোনো সমীকরণ কিংবা থিওরি অথবা জটিল কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমি নিজে সায়েন্সের স্টুডেন্ট হলেও এই বিজ্ঞান আমাকে বেশি টানে না।
সে যাই হোক, আব্বু ছুটিতে থাকায় দীর্ঘক্ষণের জন্য বই ধরতে পারছিলাম না, কিন্তু তিনদিনে ১০০পৃষ্ঠা পড়ার পর আর কিছু ভালো লাগছিলো না। জ্যাসনের কি হলো, ড্যানিয়েলা আর চার্লি তারা কোথায়? এসব প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিলো। শেষে লুকিয়ে লুকিয়ে বাকিটা ২দিনে শেষ করেছি।
আর কিছু বলতে পারছি না। কারণ, যাই বলি না কেন, মনে হচ্ছে এই বুঝি স্পয়লার হয়ে গেল।
শুধু একটা কথাই বলবো, বইটা মাস্ট রিড। সে আপনি সায়েন্স ফিকশন ভালোবাসেন আর নাই বাসেন! বইটা পড়ার অনুরোধ থাকবে।
অনুবাদ প্রসঙ্গে
‘সালমান হক’ ভাইয়ের অনুবাদ। এইটা নিয়ে কোনো অভিযোগ নাই। অসাধারণ অনুবাদ বলতে যা বোঝায় সেটাই। অবলীলায় পৃষ্ঠার পৃষ্ঠা পড়ে গেছি। কোনো জায়গায় আটকাতে হয়নি। আমার অনুবাদ গ্রন্থ পড়ার পেছনেও সালমান হক ভাইয়ের পরোক্ষে হাত আছে! তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ আমি।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....