খতিবুল উম্মাহ মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.)। যার কর্মগুণে ‘খতিব’ শব্দটি সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ সম্মানের শব্দ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ শুধু নয়, এ উপমহাদেশের মুসলিম মনীষীদের মধ্যে অতুলনীয় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আন্তর্জাতিক পরিসরেও তিনি সুপরিচিত মুসলিম মনীষী।
খতিব বললে এখনো চোখে ভেসে ওঠে যার নাম, সেই অমর ব্যক্তিত্ব মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.) ২০০৭ সালের ৬ অক্টোবর ৭৯ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আজ তার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। খতিব উবায়দুল হক (রহ.) ১৯২৮ সালের ২ মে সিলেটের বারোঠাকুরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
খতিব উবায়দুল হক (রহ.) প্রথাগত আলেম ছিলেন না। তিনি একাধারে মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। আমাদের জাতীয় ও সমাজজীবনে তার রয়েছে বহুমুখী অবদান। তিনি ছিলেন খুবই স্পষ্টভাষী। সারাজীবন সাদাকে সাদা- আর কালোকে কালো বলে গেছেন। তার মাঝে কোনো গোড়ামি ছিল না, তিনি ছিলেন নির্লোভ, নিরহংকার, সদালাপী ও দরাজ কণ্ঠের অধিকারী।
খতিব সাহেব ছিলেন একজন ইসলামি পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের তৃতীয় খতিব ও সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার হেড মাওলানা ছিলেন। দারুল উলুম দেওবন্দে শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হন। ঢাকা আলিয়া থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার সাথে জড়িত হন। তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া ও জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহে হজরত শাহজালাল (রহ.)–এর শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
খতিব উবায়দুল হক (রহ.) বহুধাবিভক্ত ইসলামি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে গেছেন সারা জীবন। তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, আন্তরিকতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সব ধর্মীয় দল ও উপদলের মাঝে ঐক্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ধর্মীয় মতপার্থক্য নিরসন এবং ইসলামি ঐক্য সুসংহত করার লক্ষ্যে তিনি ‘জাতীয় শরিয়া কাউন্সিল’ নামে একটি অরাজনৈতিক স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠন করেছিলেন।
বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং ও বীমা চালুর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। এ ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অবদান রাখায় মাওলানা উবায়দুল হকের নাম নিঃসন্দেহে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
বায়তুল মোকাররমের খতিবের দ্বায়িত্বের পাশাপাশি তিনি ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠিত সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের সভাপতি মতো গুরুদায়িত্বও পালন করেছেন।
১৫ বছর আগে আজকের এই দিনে তিনি আল্লাহর কাছে পাড়ি জমান। কে জানে আরেকজন সাহসী খতিবের জন্য জাতিকে আরো কতোটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আজ দেশে অসংখ্য খতিব আছেন। কিন্তু একজন স্পষ্টভাষী মিম্বরের সিপাহসালার নেই। নেই খতিব সাহেবের মতো একজন মানুষ।
আল্লাহপাক খতিবুল উম্মাহ মাওলানা উবায়দুল হক এর জীবনের সকল নেক আমলগুলো কবুল করুন। তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের আ’লা মাকাম নসীব করুন। তার মতো রাহবারে মিল্লাহ আল্লাহপাক এ জাতিকে আরো বেশি উপহার দিন। এবং কোরআনের খাদেম আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহকে নেক হায়াত দান করুন আর দয়া করে তাকে কোরআনের ময়দানে ফিরিয়ে দিন।
[ছবিতে খতিবুল উম্মাহ মাওলানা উবায়দুল হক রাহিমাহুল্লাহ ও বিশ্বনন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ পরস্পর পরস্পরের হাত ধরে একটি অনুষ্ঠানের দিকে যাচ্ছেন। ছবিটি ১৯৯৫ সালের] - Masood Sayedee
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....