মহিলা সাহাবিয়াগণের অর্জন ও অবদান - নারী সাহাবীদের শিল্পচর্চা ও বাণিজ্য

মহিলা সাহাবিয়াগণের অর্জন ও অবদান


প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ -এর মহিলা সাহাবিয়াগণ ছিলেন এক একজন মহীয়সী নারী। তাঁরা ছিলেন পবিত্র, ইসলামের দুর্গ এবং নবীজি হযরত মুহাম্মাদ -এর জীবদ্দশাতেই (সাধারণভাবে) জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। এ ছাড়া ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায়, মানবজাতির পরিবর্তনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারীদের অবদান এবং ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তারা রাজনীতি, যুদ্ধ, সাহসিকতা ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় ইসলামিক আদর্শের প্রচার প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই পবিত্র নারীগণ একদিকে জিহাদের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন; অন্যদিকে রাজনীতি, শিক্ষাখাত, ইসলামিক বিচার বিভাগ, শরিয়াতের ব্যাখ্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, চিকিৎসা ও সেবাখাতে পদচারণা করেছেন। সংক্ষেপে বলা যায়, এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তাদের জ্ঞান, উদারতা ও ভদ্রতার শুভ্রতা ছড়ায়নি।

ধর্মীয় ক্ষেত্রে অবদান

আমরা জানি বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে ইসলামে অবদান রাখার সুযোগ বিদ্যমান। যেমন কেউ জিহাদের ময়দানে যুদ্ধ করতে পারেন। আবার কারও ধৈর্য, দৃঢ়তা, অধ্যবসায় এবং সাহসিকতার উদাহরণও ইতিহাসে পাওয়া যায়।

উহুদের ময়দানে যখন অবিশ্বাসী কাফিররা নবী মুহাম্মাদ -কে আক্রমণ করে, সে সময় অল্পসংখ্যক ত্যাগী অনুসারীই তাঁর পাশে থেকে যুদ্ধ করেছিলেন। সে কঠিন মুহূর্তে মহিলা সাহাবিয়া উম্মু আম্মারা রাযি. আল্লাহর রাসূল -এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বীরত্বের সাথে কাফিরদের মোকাবিলা করে নবীজিকে হেফাজত করেছিলেন। শত্রুদের সাথে তরবারি, তির, বর্শা দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। আমর ইবনু কমিআহ নামক কাফির সৈন্য যখন আক্রমণের জন্য নবীজি -এর কাছাকাছি চলে এসেছিল তখন তিনিই নবীজিকে তার আক্রমণ থেকে হেফাজত করেছিলেন। তাঁর কাঁধে প্রচণ্ড আঘাত থাকা সত্ত্বেও তিনি তরবারি চালিয়ে গেছেন। কিন্তু ওই কাফির যেহেতু যুদ্ধ-পোশাকে সুরক্ষিত ছিল তাই তিনি তাকে হত্যা করতে সমর্থ হননি।”

মুসায়লামাহ কাজ্জাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। অসংখ্য আঘাতে জর্জরিত হওয়ার পাশাপাশি তাঁর একটি হাত সেই যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল।

আহযাবের (খন্দক) যুদ্ধে রাসূল -এর ফুপু সফিয়্যাহ রাযি. শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য চমৎকার সামরিক পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। একজন ইহুদিকে হত্যা করেন।” হুনাইনের যুদ্ধে উম্মু সুলাইম রাযি. তাঁর তরবারি দিয়ে শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করেন।”

ইয়ারমুকের যুদ্ধে আসমা বিনতু আবি বকর, উম্মু আব্বান, উম্মু হাকীম, খাওলা, হিন্দ এবং উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়া রাযি. ব্যতিক্রমধর্মী অবদান রাখেন। আসমা বিনতু ইয়াজিদ রাযি. শত্রুবাহিনীর নয়জন কাফিরকে হত্যা করেন।” আটাশ হিজরিতে উন্মু হারাম রাযি. সাইপ্রাসের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

উম্মুল মুমিনীন ‘আইশা, উম্মু সালিম এবং উম্মু সালিত রাযি. আহতদের সেবাদানে দক্ষতার পরিচয় দেন। সাহাবীদের সময়ে নারীগণ স্থল ও সমুদ্রপথে উভয় জিহাদেই অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধের ময়দানে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের মাধ্যমে। যেমন : সৈন্যদেরকে চিকিৎসাসেবা প্রদান, আহতদের সেবা করা, তৃষ্ণার্তদেরকে খাবার ও পানি সরবরাহ। এ ছাড়া সৈন্যদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে তির-বর্শা সরবরাহ করা। আহতদের সেবার মাধ্যমে সৈন্যবাহিনীর মনোবল ধরে রাখতেও তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। এ ছাড়া তাঁরা শহীদদের লাশ মদিনাতে বহন করে নিয়ে আসতেন।

উম্মু আতিয়া রাযি. সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি তিনি হযরত উমর রাযি. এর শাসনামলেও যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। নারীগণ এবং শিশুরা মৃতদের দাফন-কাফনে অংশ নিতেন। এ ছাড়া ইসলামের দাওয়াত কাফিরদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও তাঁরা অবদান রেখেছেন।

৮. সীরাতু ইবনি হিশাম, ২/৮২। ইবনু কায়্যিমিল জাওমিয়্যাহ; যাদুল মা'আদ, ৩/১৭৯। গ্রন্থকার উক্ত কাফিরের নাম 'কানিয়া' লিখেছেন। সম্ভবত তা অনিচ্ছাকৃত ভুল। ৯. ইবনু সা'দ; তবাকাতুল কুবরা, ৮/৩০৬ [4543 ] |

১০. সীরাতু ইবনি হিশাম, ২/২২৮। আল মুসতাদরাকু আলাস সহিহাইন, ৬৮৬৭ | ১১. ইবনু সা'দ; তবাকাতুল কুবরা, ৮/৩১২ [৪৫৭১]। সহিহ মুসলিম, ১৮০৯।

১২. ইবনু কাসীর; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১২/১২৮।

ফাতিমা বিনতু খাত্তাব রাযি.-এর দাওয়াতেই হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযি. ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ ছাড়া উম্মু সালিম রাযি. হযরত তালহা রাযি.-কে এবং উম্মু হাকিম রাযি. তাঁর স্বামী ইকরামা রাযি.-কে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। উম্মু শারিক দসিয়া রাযি. কুরায়েশ নারীদের মধ্যে ইসলাম প্রচারে সরাসরি ভূমিকা রাখেন।

এ ছাড়া দ্বীন প্রচারের আরও একটি দিক হচ্ছে এই দ্বীন আল হককে সকল ধরনের পরিবর্তন ও নব-উদ্ভাবিত বিষয় থেকে হেফাজত করা। কারণ, তখনকার সমাজে মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত অনেক অনাচার বিদ্যমান ছিল।

যাইহোক, ইসলামকে সঠিকরূপে সংরক্ষণের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অনেক সাহাবিয়া রাযি.-ই করেছেন। কিন্তু তাদের মাঝে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ হচ্ছেন হযরত 'আইশা রাযি। পঁয়ত্রিশ হিজরিতে হযরত উসমান রাযি.-কে যখন শহীদ করা হয়, তখন পরবর্তী খলীফা নিয়োগ নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা ও সন্দেহ দেখা দেয়। সেই দুর্যোগময় সময়ে তিনিই ইরাকের বসরা ও মক্কার মুসলিমদেরকে প্রভাবিত করে উম্মাহর মাঝে একতা ফিরিয়ে আনেন।

নামাযের ইমামতি করা এবং আযানের মাধ্যমে লোকদেরকে নামাযের জন্য ডাকা মুসলিমদের আমলি জিন্দেগীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীরা পুরুষদের নামাযে কখনোই ইমামতি করতে পারে না ঠিক; কিন্তু রাসূল -এর যামানায় নারীরা সম্মিলিতিভাবে এই দায়িত্বগুলোর আঞ্জাম দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ ছিলেন হযরত ‘আইশা, উম্মু সালিম, উম্মু ওয়ারাকা এবং সা'দ বিনতু কামামাহ রাযি। এমনকি উন্মু ওয়ারাকা রাযি. নিজের গৃহকে মহিলাদের নামাযের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করেছিলেন। সেখানে মহিলা মুয়াজ্জিন দ্বারা আযান হতো এবং উম্মু ওয়ারাকা রাযি.-এর ইমামতিতে নারীরা নামায আদায় করতেন।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান


রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও মহিলা সাহাবিয়াগণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। খলীফা হযরত উমর রাযি. এজন্যই শিফা বিনতু আব্দিল্লাহ রাযি.-এর রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তাকে মূল্যায়ন করতেন এবং সময়ে সময়ে তাঁর সাথে অনেক বিষয়ে পরামর্শ করতেন। এমনকি তিনি তাঁকে রাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত করেছিলেন।

১৩. তারীখু দিমাশক, ২২/২১৬। বর্ণনাটির কোনো ভিত্তি নেই। মূলত বর্ণিত হয়েছে যে, কথিত আছে, উমর রাযি. তাকে বাজারের দায়িত্বে নিযুক্ত করেছিলেন। তবে তার সন্তানগণ বিষয়টি অস্বীকার করতেন এবং এ ধরনের কথায় ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। বাস্তবতা হলো, ওনার ছেলে সুলায়মান বিন আবু হাছমাহ বাজারের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন আর কখনো কখনো উমর রা. তাঁকে পুত্রের দায়িত্ব তদারকির দায়িত্ব দিতেন। অর্থাৎ রাসূল মদিনা থেকে হিজরতের পূর্বে কাফিররা তাঁকে নিজ গৃহে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল কে রুকাইকা বিনতু সাইফি রাযি. সতর্ক করেছিলেন। তারপরই নবীজি নিজ বিছানায় হযরত আলী রাযি.-কে রেখে গোপনে মদিনায় হিজরত করেন।

ইসলামে নারীদের ব্যাপক রাজনৈতিক অধিকারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একজন নারী ইচ্ছে করলে শত্রুকে নিরাপত্তা দিতে পারেন; সে অধিকার তাঁকে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসবিদ আবু দাউদ, হযরত আলী রাযি.-এর বোন উম্মু হানি রাযি.-এর সাথে সম্পৃক্ত করে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। উম্মু হানি রাযি. একজন কাফির শত্রুকে আশ্রয় দেন। এ বিষয়ে রাসূল বলেন,

“তুমি যাকে আশ্রয় দান করেছ, আমরাও তাকে আশ্রয় দান করেছি; তুমি যাকে নিরাপত্তা প্রদান করেছ, আমরাও তাকে নিরাপত্তা করেছি।" এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হচ্ছে মহিলাদের নিরাপত্তা দানের সাথে ইমাম বা নেতার একমত হতে হবে।

শিক্ষা, জ্ঞান ও শিল্পচর্চা


ইসলামি জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় এমন রয়েছে যা জানা আবশ্যক। যেমন : অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝে কিরাত পড়া, শরিয়াহ, ফিকহ এবং হাদিস নিয়ে পড়াশোনা করা। এই সবই ইসলামি শিক্ষার আওতাভুক্ত। মহিলা সাহাবিয়াদের অনেকে এসকল ক্ষেত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন।

হযরত ‘আইশা, হাফসা, উম্মু সালামা ও উন্মু ওয়ারাকা রাযি. পবিত্র কুরআনের হাফেজা ছিলেন। এ ছাড়া হিন্দ বিনতু উসায়দ, উম্মু হিশাম বিনতু হারিসা, জায়েদা বিনতু হায়ান ও উম্মু সা'দ বিনতু সা'দ রাযি. কুরআনের অংশবিশেষ মুখস্থ করেছিলেন। এ ছাড়া তাঁরা কুরআনের তাফসীর করতে সক্ষম ছিলেন। হযরত ‘আইশা, উম্মু সালামা রাযি. হাদিসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন। তাদের বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা যথাক্রমে 2210 ও ৩৮৭। হাদিসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে 'আইশা রাযি. অগ্রগণ্য ছিলেন, কারণ তিনি অধিক সময় আল্লাহর রাসূল -এর নিকটবর্তী ছিলেন।

ছেলে বাজার ঘুরে দায়িত্ব পালন করতেন আর তিনি সন্তানের কাছ থেকে এসব বিষয়ে জেনে নিতেন। আল ইসাবাহ, ৮/2021 ১৪. তবাকাতুল কুবরা, ৮/৫২। গ্রন্থকার রুকাইয়া বিনতু সাইফি লিখলেও বিশুদ্ধ মতে নামটি রুকাইকা হবে।

১৫. মুসনাদু আহমাদ, ২৬৮১২। সহিহ।

এ ছাড়া ‘আইশা রাযি.-এর বোন আসমা বিনতু আবি বকর, উম্মু আতিয়া, উম্মু হানি এবং ফাতিমা বিনতু কায়েস রাযি. হাদিসের ওপর বিশেষ জ্ঞান রাখতেন। ইসলামি ফিকহের ক্ষেত্রে শুধু হযরত আইশা এবং উম্মু সালামা রাযি.-এর বর্ণিত হাদিসের ওপরই কয়েকটি কিতাব সংকলিত হতে পারে।

হযরত সফিয়্যা, হাফসা, উম্মু হাবিবা, জুওয়াইরিয়া, আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা, উম্মু সারিক, উম্মু আতিয়া, আসমা বিনতু আবি বকর, লাইলা বিনতু কায়িফ, খাওলা বিনতু তাইয়েত, উম্মু দারদা, আতিকা বিনতু যায়েদ, সাহলা বিনতু সুহায়েল, ফাতিমা বিনতু কায়েস, যয়নব বিনতু জাহাশ, উম্মু সালমা, উম্মু আইমান, উম্মু ইউসুফ রাযি. এর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা অসংখ্য।

হযরত 'আইশা রাযি. উত্তরাধিকার আইনের বিধান-সংক্রান্ত বিষয়েও বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এজন্য অনেক প্রসিদ্ধ সাহাবী রাযি. এই বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর সাথে পরামর্শ করতেন।

ইসলামি আইনশাস্ত্র ও ফিকহে বিশেষভাবে পারদর্শী হওয়ার পাশাপাশি মহিলা সাহাবিয়াগণ জ্ঞানের অন্যান্য শাখায়ও বিশেষ যোগ্যতা হাসিল করেছিলেন। আসমা বিনতু ইয়াজিদ বিন সাকান রাযি. বক্তৃতা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন। আসমা বিনতু উমায়েস রাযি. স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

অনেক সাহাবিয়া চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। উম্মু মুত্বা' আসলামিয়াহ, উন্মু কাবশা, হামনা বিনতু জাহাশ, মুয়াতা, উমায়মা, উম্মু যায়িদ, রাবিয়া বিনতু মুয়াজ, উন্মু আতিয়া, উম্মু সালিম রাযি. চিকিৎসাক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার জন্য সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন। মদিনাতে রাসূল -এর মসজিদের পাশে রুফাইদা আসলামিয়া রাযি.-এর ঘরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-সামগ্রীসহ অপারেশনের সুবিধা ছিল।

সাহিত্যেও তৎকালীন নারীদের পাণ্ডিত্য ছিল। সে সময়ের প্রসিদ্ধ কয়েকজন কবি ছিলেন : খানসা, সাআদি, সফিয়্যা, আতিকা, বিনতু যায়িদ, হিন্দ বিনতু আসাসা, উন্মু আইমান, কাবাশাহ বিনতু রাফিয়া, উমামা মারদিয়া, হিন্দ বিনতু হারিছ, যয়নাব বিনতু আওয়াম আযদি, মায়মূনা ও রুকাইয়া রাযি। হযরত খানসা রাযি.-এর লিখিত একটি সম্পূর্ণ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল।

শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য


মহিলা সাহাবিয়াগণের মধ্যে জীবিকানির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিদ্যমান ছিল। তাঁরা কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্যচর্চা, ক্ষুদ্রশিল্পকে (যেমন : বুনন, উৎপাদন ও পোশাকের নকশাকার্য) পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে হাদিস গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদে বিস্তারিত বর্ণিত রয়েছে।

কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা কম ছিল; শুধু মদিনার কিছু উর্বর জমিতে আনসার মহিলাগণ চাষাবাদ করতেন। হিজরতকারী মুহাজিরাদের মধ্যে আসমা রাযি. চাষাবাদ করতেন। যদিও রাসূল -এর আগমনের পূর্বের যুগকে বলা হয়ে থাকে অশিক্ষিত অন্ধকারের যুগ।

কিন্তু তখনো কিছু মহিলা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, লেখনশৈলী ও হাতের লেখায় অত্যন্ত দক্ষ। যেমন : শিফা বিনতু আব্দিল্লাহ রাযি. সেই অন্ধকার যুগেই লিখতে ও পড়তে শিখেছিলেন। হাফসা, উম্মু কুলসুম বিনতু উকবা এবং কারিমা বিনতু মিকদাদ রাযি. শিক্ষিত ছিলেন। হযরত ‘আইশা ও উন্মু সালামা রাযি. লিখতে জানতেন না; কিন্তু পড়তে পারতেন। তাঁদের উভয়কে মহান আল্লাহ বিশেষ স্মৃতিশক্তি দান করেছিলেন। এ ছাড়া নবীজি -এর সন্নিকটে থাকার কারণে তাঁদের নিকট থেকে অনেক গ্রহণযোগ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

কোনো কোনো মহিলা সাহাবী রাযি. সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। হযরত খাদিজা রাযি. একজন সফল নারী ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়িক কাফেলা পাঠাতেন। খাওলা, মালিকা, তাকাফিয়া ও ফাখারিয়া রাখি, তৈলজাতীয় সুগন্ধির—যা ইতার নামে পরিচিত ছিল—ব্যবসা করতেন। হযরত সাউদা রাযি. চামড়াশিল্পের ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

আনসার সাহাবীদের মেয়েরা কোনো বিশেষ উৎসব বা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কবিতা ও নাশিদ রচনা করতেন। উম্মু সালামা রাযি. তাজবিদসহ কুরআন তিলাওয়াত করতেন— যা অত্যন্ত কঠিন একটি যোগ্যতা। এভাবে এমন কোনো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র নেই যেখানে এই মহীয়সী নারীদের পদচারণা ছিল না। আল্লাহ সুবহানু তাআলা তাদের আত্মাগুলোকে চিরপ্রশান্তি দান করুন!

মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন; তারা তাঁর প্রভুর সন্নিকটেই অবস্থান করবেন।

মাওলানা সাঈদ আনসারী দারুল মুসান্নিফীন, আযমগড়, উত্তর প্রদেশ, ভারত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ