অহংকার: ইবলিশের স্বভাব
.
.
সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা (রহ.) বলেন, 'যে ব্যক্তি কোনো প্রবৃত্তির কারণে গুনাহে লিপ্ত হয়, তার জন্য ক্ষমার আশা করা যায়। কেননা, আদম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রবৃত্তির কারণে গুনাহে লিপ্ত হয়েছিলেন। আদম আলাইহিস সালামকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি অহংকারের কারণে কেউ গুনাহ করে, তাহলে তার অভিশপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা, ইবলীস অহংকার দেখিয়ে আল্লাহ তাআলার নাফরমানী করেছিল। অতঃপর তাকে অভিশপ্ত করা হয়েছে।'
.
এজন্য এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন, 'যার অন্তরে অণু-পরিমাণ অহংকারও থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।' (মুসলিম ৯১), আরেক হাদীসে তিনি বলেছেন, 'জাহান্নাম বলেছে, আমাকে অহংকারীদের জন্য প্রাধান্য দেয়া হয়।' (বুখারী ৪৫৬৯, মুসলিম ২৮৪৬)
.
উলামায়ে কেরাম এবং সাধারণ মুসলমানদের ক্ষেত্রে অহংকারের ক্ষতির ভিন্ন ভিন্ন তিনটি স্তর রয়েছে।
.
১) প্রথম স্তর: মনে মনে অহংকার করা।
অর্থাৎ ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের চেয়ে উত্তম মনে করে। তবে সে বিনয়ী হওয়ার চেষ্টাও করে। এ-অবস্থাকে উদাহরণস্বরূপ এভাবে বলা যায়, তার অন্তরে অহংকারের বৃক্ষ রোপিত আছে। কিন্তু ঐ বৃক্ষের ডালপালা বড় হতে নিলেই সে কেটে ফেলে।
.
২) দ্বিতীয় স্তর: কার্যকলাপে অহংকার প্রকাশ করা।
যেমন : মজলিসের উঁচু আসনে বসা, সাথীদের থেকে এগিয়ে থাকতে চাওয়া এবং অধিকারে কমতি হলে তা অপছন্দ করা। আপনি দেখতে পাবেন যে, কোনো কোনো আলিম মানুষের কাছ থেকে এমনভাবে তার মুখ বাঁকিয়ে রেখেছে, যেন তাঁদেরকে ভালোই লাগে না। দেখতে পাবেন, কোনো কোনো আবিদ মানুষের সাথে বসবাস করে কিন্তু তার চেহারা দেখে মনে হয়—সে মানুষকে তুচ্ছ করে। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে যে-আদব শিখিয়েছেন, এই দুই ব্যক্তি সে-সম্বন্ধে অজ্ঞ। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন—আপনার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় হোন। (সূরা শুআরা, ২১৫)
.
৩) তৃতীয় স্তর : কথায় অহংকার প্রকাশ করা।
যেমন : নিজেকে নিয়ে বিভিন্ন দাবি করা, গর্ব করা এবং নিজের পরিশুদ্ধতার কথা বলা। অন্যদের কাছে গর্ব করে নিজের নানা ঘটনা বলা ইত্যাদি। বংশীয় আভিজাত্যের মাধ্যমেও অহংকার প্রকাশ করা হয়। দেখা যায়, যে-ব্যক্তি সম্ভ্রান্ত-বংশীয়, সে তার তুলনায় নিম্ন বংশের লোকদেরকে তুচ্ছ মনে করে, অথচ সেই ব্যক্তি আমলের দিক দিয়ে তার চেয়ে উচ্চ অবস্থানে আছে।
.
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (আশ্চর্য!) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলে, আমি তোমার চেয়ে সম্মানিত, অথচ, একজন অপরজনের চেয়ে অধিক সম্মানিত হতে পারে একমাত্র খোদাভীরুতার মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা বলেন—নিশ্চয় তাআলার কাছে তোমাদের মধ্য হতে সবচেয়ে সম্মানিত হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যিনি সর্বাধিক খোদাভীরু। (সূরা হুজরাত, ১৩)
.
এভাবে সম্পদ, সৌন্দর্য, শক্তিমত্তা এবং অনুসারীর আধিক্য ইত্যাদি নিয়ে অহংকার প্রকাশ করা হয়। তবে দুনিয়ার রাজা-বাদশাহ ও ব্যবসায়ীদের মাঝে সম্পদ নিয়ে অহংকার করার প্রচলন ব্যাপক।
.
ইমাম গাযালীর 'সংক্ষিপ্ত ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন' গ্রন্থ থেকে
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....