- বই : অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী PDF Download Available ⤵️
- রচয়িতা : আহমদ ছফা
- প্রকাশক : মাওলা ব্রাদার্স
- প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
- পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৪৪ পৃষ্ঠা
- মুদ্রিত মূল্য : ১২৫ টাকা
Truth is stranger than fiction. আহমদ ছফার আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ থেকে এই আপ্তবাক্যটি আরও একবার অনুভব করা যায়।
ব্যক্তিগত জীবনে আহমদ ছফা অকৃতদার ছিলেন। তবে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক নারীর সংস্পর্শে এসেছেন তিনি। সেইসব নারীদের সঙ্গে তার হৃদয়ঘটিত কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল কিনা তা স্পষ্টভাবে বলা যাবে না, তবে এই উপন্যাসে তিনি প্রেমজ একটি অঙ্গীকার থেকে তাদের সম্পর্কের বয়ান করেছেন।
পৃথিবীর জটিলতম শিল্পকর্মের অন্যতম হলো নর-নারীর প্রেম। এই উপন্যাসে লেখক মূলত দুজন নারীর কথা বর্ণনা করেছেন- দুরদানা আফসারিয়াব ও কন্যা শামারোখ। লেখক এই দুই নারীর মনো-দৈহিক জগতের এমন উন্মোচন ঘটিয়েছেন যে, গ্রন্থটি পাঠ করলে মনে হবে জীবনের করুণতম অভিজ্ঞতার উৎস থেকে জন্ম লাভ করেছে এই সমস্ত চরিত্র। নিজের জীবনের প্রেমকাহিনী বর্ণনা করার জন্য সাহস ও সততার প্রয়োজন। আহমদ ছফা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এই দুইয়ের সম্মিলন ঘটিয়েছেন এই উপন্যাসে।
আত্মজৈবনিক উপন্যাস হলেও লেখক কারও প্রকৃত নাম ব্যবহার করেননি। নিজের নামটিও জাহিদ হাসান ছদ্মনামের অন্তরালে রেখে দিয়েছেন। তবুও কয়েকটি চরিত্রকে বেশ সহজেই আন্দাজ করা যায়। যেমন: দুরদানা আফসারিয়াব আসলে শামীম শিকদার, ইউনুস জোয়ারদার সিরাজ শিকদারের ছদ্মনাম বা আবুল হাসানাত সাহেব যে জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক তা বুঝতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। অন্য চরিত্রগুলোর প্রকৃত পরিচয় জানতে পারলে আরও ভালো লাগত।
বই পর্যালোচনাঃ অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী
লেখকঃ আহমদ ছফা
গতানুগতিক ধারার বাইরে, কেবল নিছক সময় কাটানোর জন্য উপন্যাস নয়, বরং সেই উপন্যাসের সঙ্গে কাটানো সময়টাকে আনন্দের পাশাপাশি কিছু বাস্তবধারার জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করাই বোধহয় উচিত আর আহমদ ছফা'র উপন্যাসগুলোতে তেমন কিছু পাওয়াটাই খুব প্রত্যাশিত।
'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' উপন্যাসে লেখক প্রেমের কথা, প্রেমিকার কথা বলেছেন। উইকিপিডিয়া এবং গবেষনা বলে এটি আহমদ ছফা'র আত্নজৈবনিক উপন্যাস। তাহলে এখানে লেখকের সাহসের তারিফ করাটা খুব প্রয়োজনীয়। কভারের উপরের দিকের উল্টোপৃষ্ঠের লেখাগুলোর মতো করে বললে কেবল প্রেম করলেই প্রেমের বয়ান সম্ভব হয়না৷ প্রেম করার জন্য যেমন সৎ এবং একনিষ্ঠ হৃদয়বৃত্তির প্রয়োজন তেমনি প্রেমের বয়ানের জন্য প্রয়োজন নিষ্ঠা এবং সততার। লেখকের মধ্যে প্রেমজ অঙ্গীকার প্রবলরূপে ছিলো বলেই হয়তো 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' একটি সত্যের স্পর্শ পাওয়া পরিপূর্ণ প্রেমের উপন্যাস৷
উপন্যাসের কথক জাহিদ। যে সোহিনীকে বর্ননা করে তার প্রাক্তন প্রেমগুলোর কথা, প্রেমিকাদের কথা। সোহিনী, যে লেখকের কাছে অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বেদনা। অর্ধেক কষ্ট, অর্ধেক সুখ৷ যাকে প্রেমের আখ্যান শোনাতে গিয়ে লেখকের বুক দুমড়েমুচড়ে উঠে তার পুরনো প্রেমিকাদের কথা মনে করে। এ সেই সোহিনী যে লেখকের কাছে অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী। উপন্যাসের একটি বর্তমান চরিত্র, যে কথক জাহিদের একমাত্র শ্রোতা।
উপন্যাসে যুদ্ধের পরের সময়ে ঢাকার অবস্থা দেখা যায়৷ জাহিদ যুদ্ধ শেষে ঢাকায় এসে দুরদানা আফরাসিয়াব বলে একজনের খোঁজ করে, যার কথা সে যুদ্ধ চলাকালীন কলকাতায় শুনেছে, যে নাকি মেয়ে হয়েও ছেলেদের মতো জামাপ্যান্ট পরে চলাফেরা করে, সাইকেল চালিয়ে নাখালপাড়ার দিক থেকে আর্ট ইন্সটিটিউটে চলে আসতো। যার পকেটে থাকতো আত্নরক্ষার জন্য ছুরি, যাকে বিশ্ববিদ্যালয় গন্ডিতে সবাই চিনতো, শুধু চিনতো না জাহিদ৷ দুরদানা ছিলো বিপ্লবী নেতা ইউসুফ জোয়ারদারের বোন।দুরদানার সাথে লেখকের দেখা হয়, কথা হয়, ভাব হয়, একসময় প্রেম হয়। এবং নানা জটিলতায় একসময় সে প্রেম শেষও হয়ে যায়।
উপন্যাসের প্রথম ভাগে দুরদানার কথাই বলেছেন জাহিদ৷ এরপর আসে আরেকজন নারীর কথা, যার নাম ছিলো শামারোখ। মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে দেখা হয় কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শামারোখের। যুদ্ধের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও নানা রাজনৈতিক জটিলতায় তা আটকে যেতে থাকে। উপন্যাসের কথক জাহিদের সাথে শামারোখের পরিচয় হয় এবং দিনে দিনে তাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাও বাড়তে থাকে৷ এবং তাদের মধ্যকার অলিখিত প্রেমটুকুকেও এখান থেকে বাদ দেয়া যায়না। জাহিদ শামারোখকে ভালোবেসেছিলো। আর শামারোখ ও।
একদিন আচমকা শামারোখ জাহিদের হোস্টেলে এসে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে৷ কিন্তু ভড়কে যাওয়া জাহিদ সবকিছু বিবেচনা করে শামারোখের ইংরেজি বিভাগের চাকরিটার জন্য উঠেপড়ে লাগে। একসময় চাকরিটা হয়েও যায়৷ তারপরেই শামারোখ আর জাহিদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে শুরু করে৷ এক পর্যায়ে দেখা যায়, শামারোখ তরুন কবি শাহরিয়ারের সাথে প্রেম করছে।
এটা জাহিদ কে বেশ যন্ত্রনা দেয়, কেননা তখন নব্য পরিচিতি পাওয়া লেখক জাহিদ তার বইয়ের রয়্যালিটির টাকা থেকে শাহরিয়ার কে সাহায্য করেছিলো। দুরারোগ্য ব্যধিতে শাহরিয়ার ও মারা যায়। এরপর শামারোখ আরেকজন কে বিয়ে করে আমেরিকায় পাড়ি জমায়৷ উপন্যাসে জাহিদ এপর্যন্ত বলেই সমাপ্তি টেনেছে।
যদি এটি আত্মজৈবনিক হয়, আর উপন্যাসের কথক জাহিদ'কে যদি আহমদ ছফা রূপে ধরা হয়, তাহলে এর বাকি চরিত্রগুলোর সাথেও সত্যিকার চরিত্র মেলানো সম্ভব৷ বলা হয় উপন্যাসের দুরদানা চরিত্রটি আসলে স্থপতি শামীম শিকদার এর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'সোপার্জিত স্বাধীনতা'র স্থপতি শামীম শিকদার। আর শামারোখ চরিত্রটি প্রফেসর সুরাইয়া খানম এর যিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে যোগদান করেছিলেন। উপন্যাসে শামারোখের জাহিদ পরবর্তী প্রেমিক হিসেবে পাওয়া যায় শাহরিয়ার চরিত্রটি, যেই চরিত্রটি আসলে তখনকার তরুন কবি আবুল হাসানের। কথিত, আবুল হাসান একসময়ে আহমদ ছফার প্রেমিকার সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমভাগের দুরদানার ভাই ইউসুফ জোয়ারদার আসলে তখনকার বিপ্লবী নেতা সর্বহারা দলের সিরাজ শিকদার। উপন্যাসে আরো অনেকগুলো চরিত্র রয়েছে যার সাথে বাস্তব মিল পাওয়া যায়৷
এতেই বুঝা যায়, আহমদ ছফা কতখানি সত্য, নিষ্ঠা, সততা, সাহসিকতার সাথে উপন্যাসে তার জীবনের প্রেমের বয়ান করেছেন। এতো বাস্তবতা, সত্য, সাহসিকতা আর অখন্ড প্রেমজ অঙ্গীকারের জন্যই হয়তো 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' এতোটা অসাধারণত্বের প্রমান রেখেছে।
বইটি পড়া না থাকলে পড়ুন। আশা করি ভালো লাগবে।
[অতি উৎসাহ থেকে দুরদানা এবং শামারোখ অর্থাৎ শামীম শিকদার এবং সুরাইয়া খানমের ব্যাপারে খুঁজতে গিয়ে অল্পতেই তাদের ছবি পেয়েছি৷ এখানে যুক্ত করে দিলাম৷ তাহলে উপন্যাস টা আরো বাস্তব লাগবে। ধন্যবাদ।]
বইটা পড়া শুরু করেছিলাম রাজশাহী থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাসের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটির আগে এক ফ্রেন্ডের থেকে বইটা ধার নিয়েছিলাম।শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল এটা একটা গদবাধা বস্তাপচা প্রেমের উপন্যাস কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমার ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
এই উপন্যাসে কল্পিত নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চরিত্রের মধ্যে রয়েছে
দুরদানা আফরাসিয়ার- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের বিখ্যাত ভাস্কর্য 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' বা 'স্বোপার্জিত স্বাধীনতার' নির্মাতা শামীম শিকদার ই এই দুরদানা। এই বই টা পড়ার আগে আমি শামীম শিকদারকে একজন পুরুষ মানুষ ভেবেছিলাম।
কবি শাহরিয়ার-কবি আবুল হাসান, ২৮ বছর বয়সে প্লুরিসি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আর শামারোখ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুরাইয়া খানম যার মৃত্যুর দুই বছর পর বইটি প্রকাশিত হয়।
তিন নারী মূর্তি বেশ সাবলীল ভাবে ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। প্রথম জন দুরদানা যে তার নারীত্ব নিয়ে মাথা ঘামায় না, দ্বিতীয় জন শামারোখ , যে তার নারীত্ব , সৌন্দর্য দিয়ে পুরো পৃথিবীকে বসে আনতে চায়। "সোহিনী"যাকে উদ্দেশ্য করে উপন্যাসটি লেখা তার সম্পর্কে লেখক তেমন কিছু বলেননি লেখক।
পুরো উপন্যাস জুড়ে লেখক তার প্রেয়সীর কাছে অতীত স্মৃতির ভান্ডার উন্মোচন করেন।তার প্রেয়সী সোহিনী তার কাছে অর্ধেক আনন্দ , অর্ধেক বেদনা, অর্ধেক কষ্ট ,অর্ধেক সুখ, অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী।সোহিনীর কাছে মূলত দুজন নারীর কথা উল্লেখ করেন, প্রথম জনের নাম দুরদানা, যে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে জীবন অতিবাহিত করে, নারী হিসেবে তাকে চেনা দায়। অদ্ভুত তার বেশভূষা,ষাট সত্তরের দশকে একজন তরুণী ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে আসা যাওয়া করছে ব্যাপারটা ভাবতেও শিহরণ জাগে। এককথায় নারীত্ব নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই।এই অদ্ভুত চরিত্রের নারীর সাথেই একসময় লেখকের সুপ্ত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।দুরদানার সাইকেলের পেছনে চড়ে লেখক সারাদিন ঘুরে বেড়ায় পাশাপাশি অনেকের চক্ষুশূল ও হয়ে উঠে। একটা সময় দুরদানার নারীত্ব প্রকাশ পেলে তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে লেখক। ঘটনাচক্রে দুরদানার ভাই ইউসুফ জোয়ারদার খুন হয়, পরবর্তীতে দুজন দু দিকে চলে যায়।
এরপর লেখকের জীবনে আসে শামারোখ।সদ্য স্বামী, সন্তান ছেড়ে আসা অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারিণী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকুরী পেয়েও হারাতে বসেছেন বিভাগীয় প্রধানের চক্রান্তের শিকার হয়ে।বিচিত্র সব কাহিনীর মাধ্যমে শামারেখার জীবনের সাথে জড়িয়ে যায় লেখক। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও যথাসাধ্য সাহায্য করে শামারেখাকে। কিন্তু একটা সময় এই শামারেখা যুক্তরাষ্ট্র ফেরত কবি শাহরিয়ারের মধ্যে সুখ খুঁজে নেয়। শামারেখার রূপে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই কাব্য রচনা করেছিলেন এর মধ্যে অন্যতম হলো চালচুলহীন তরুণ কবি শাহরিয়ার। খুব অল্প বয়সেই নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়ে গিয়ে কবি প্লুরিসি রোগে আক্রান্ত হয়। বিলেত থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার সাথে সাথে শামারেখার সাথে পরিচয় হয় এবং তার রূপে মুগ্ধ হয়ে অসামান্য কিছু কাব্য রচনা করেছিলেন এটা যেমন সত্য তেমনি ওষুধ পত্র সেবনেও অনিয়ম শুরু করেছিলেন এটাও তেমনই সত্যি। ফলশ্রুতিতে মাত্র আটাশ বছর বয়সে এই প্রতিভাবান কবির মৃত্যু ঘটে।
অনেক লিখেছি, আর পারবোনা।
এই বইটিতে যুদ্ধ পরবর্তী ঢাকার স্পষ্ট রূপ ফুটে উঠেছে।আর আহমদ ছফার মতবাদ ও উক্তি সত্যিই অসাধারণ। তার একটি উক্তি
"নারী আসলে যা, তার বদলে যখন সে অন্যকিছুর প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার আকর্ষণ করার শক্তি হাজার গুণ বেড়ে যায়।"
অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী PDF Download Available Now
আহমদ ছফা
সোহিনী যাকে উদ্দেশ্য করে লেখাটি শুরু সেই প্রিয়তম জাহিদের কাছে অর্ধেক আনন্দ,অর্ধেক বেদনা,অর্ধেক কষ্ট,অর্ধেক সুখ,অর্ধেক নারী,অর্ধেক ঈশ্বরী।
লেখার শুরুতে একটু বিরক্ত আসতে পারে। এই বিরক্তিই এক পর্যায়ে রোমাঞ্চজনক হয়ে উঠে। রোমাঞ্চ আরম্ভ হয় যখন দুরদানার দুরন্ত গল্প শুরু হয়।
জাহিদের জিবনে তিন জন নারী জড়িয়ে পড়ে। দুরদানা হলেন প্রথমজন যিনি সব সময় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলাফেরা করেন, যিনি কখনো নারীত্ব নিয়ে ভাবে না।
দ্বিতীয়জন হলেন কন্যা শামারোখ যিনি তার অপরূপ সৌন্দর্য ও নারীময়তায় তার চারপাশকে মারাত্মক আকর্ষিত করে রাখে। তিনি তার অপরূপ সৌন্দর্য দ্বারা পৃথিবীকেই যেন জয় করতে চায়।
তৃতীয়জন হলেন সোহিনী।জাহিদের জিবনে দুরদানা ও কন্যা শামারোখ এর অধ্যায় শেষ হলেই আসে সোহিনী। সোহিনীরর কাছেই যেন জাহিদ শেষ আশ্রয় চায়। সে সোহিনীর ভালবাসা পেতে উদগ্রীব হয়ে উঠে। কিন্তু তিনি তার আগে সোহিনীকে জানাতে চায় শামারোখ ও দুরদানা নিয়ে তার যে গল্প সেটা। সোহিনীকে উদ্দেশ্য করেই পুরো গল্পটি লেখা। তাই সম্পর্কে গল্পে কোন কিছু স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
কন্যা শামারোখের জন্যে কি করেনি জাহিদ..? তার ত্যাগ তিতিক্ষা সব ভুলে গিয়ে শামারোখ অন্য আরেকজনের হাত ধরে চলে যায়। এটা ছিল খুবই কষ্টদায়ক।
সোহিনী সম্পর্কে গল্পে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ ছিল না। হয়তো দ্বিতীয় খন্ডে লেখক সব স্পষ্ট করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, লেখক দ্বিতীয় খন্ড শেষ করতে পারেন নি।
প্রেম নিয়ে আপনার ধারণা কী?প্রেমকে যদি সহজ বলা হয় তাহলে বুঝব আপনি প্রেম বুঝেন না আর প্রেমকে যদি কঠিন বলেন, তাহলে বুঝব আপনি কোনদিন প্রেমিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন নি।
আহমদ ছফার আত্মজৈবনিক উপন্যাস " অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী"। আহমদ ছফা অবিবাহিত ছিলেন।তবে তিনি একাধিকবার প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। উপন্যাসে তিনি তার প্রেয়সীর সোহিনীর কাছে অবলীলায় দুইজন নারীর প্রতি তার প্রেমের কথা স্বীকার করেছেন। একজন -দুরদানা আফরাসিয়াব। যে ছিলো দুরন্ত স্বভাবের। আরেকজন- শামারোখ৷ সদ্য স্বামী সন্তানকে ছেড়ে আসা মধ্য বয়স্ক এক রূপবতী নারী।
লেখক প্রেমকে সবচাইতে জটিলতম শিল্পকর্ম বলেছেন। তিনি একেকটি নারী চরিত্রকে সুনিপুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসটি পড়লে মনে হবে, নারী চরিত্রগুলো আমাদের বাস্তব জীবনের করুণ সব অভিজ্ঞতা থেকে সৃষ্টি। তিনি প্রেমে পড়েছেন, দূরে সরে গিয়েছেন,দূরে থাকার মতো আবার কাছেও থেকেছেন। প্রয়োজনে সবার বিপক্ষে যেয়ে নারী চরিত্রের অধিকারের জন্য কথা বলেছেন।
প্রেম করার জন্য যেমন সৎ ও একনিষ্ঠ হৃদয় প্রয়োজন, তেমনি প্রেমকে বয়ান করার জন্য নিষ্ঠা ও সততা প্রয়োজন। আর একাজটি আহমদ ছফা খুবই অসাধারণ দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করেছেন।
তিনি তার প্রেয়সী সোহিনীকে প্রেম নিবেদনের যেসব উপমা দিয়েছেন তাতে আমি বিমোহিত। তিনি তার প্রেয়সী সোহিনীকে লেখেছেন-
"সোহিনী, তুমি আমার কাছে অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বেদনা।অর্ধেক কষ্ট,অর্ধেক সুখ।অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী।তোমাকে নিয়ে আমি কি করব! তোমার টানা টানা কালো চোখের অতল চাউনি আমাকে আকুল করে।তোমার মুখের দীপ্তি মেঘ ভাঙা চাঁদের হঠাৎ ছড়িয়ে যাওয়া জোছনার মতো আমার মনের গভীরে সবর্ণ তরঙ্গ বাজিয়ে তুলে। "
Awesome
উত্তরAlhumdullah
উত্তরThat Gent Mark
উত্তর