লালসালু PDF - সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | Lalsalu - Syed Waliullah

প্রাচীনকাল থেকে বাংলার গ্রামীণ সমাজ কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও ধর্মীয় গোরড়ামিতে জর্জরিত। পীর কিংবা সাধু সন্ন্যাসীরা তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় ও বিভিন্নভাবে (ধর্মীয়, অর্থনৈতিক,সামাজিক) তাদেরকে করেছে শোষিত ও অত্যাচারিত।এমনই একটি সমাজবাস্তবতার চিত্র সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ "লালসালু" উপন্যাস তুলে ধরেছেন।



কাহিনী সংক্ষেপণ: "শস্যহীন জনবহুল এ
অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেরিয়ে পড়বার ব্যাকুলতা ধোঁয়াতে আকাশকে পর্যন্ত যেন সদাসন্ত্রস্ত করে রাখে। ঘরে কিছু নেই।ভাগাভাগি, লুটালুটি আর ধান বিশেষে খুনাখুনি করে সর্ব প্রচেষ্টার শেষ। দৃষ্টি বাইরের পানে, মস্ত নদীর ওপারে, জেলার বাইরে-প্রদেশেরও; হয়তো-বা আরো দূরে।"

অর্থাৎ প্রচন্ড জনবহুল এক স্থানে অন্ন বর্ষার প্রবল অভাব;যেখানে খাদ্য বস্ত্রের অভাব থাকলেও মানুষের মনে ধর্মীয় কুসংস্কার কিংবা অন্ধত্বের কার্পণ্য নেই।এমনই এক স্থান থেকে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ নিজের অস্তিত্বকে টেকানোর জন্য বেরিয়ে পড়ে। মহব্বতনগর গ্রামে নাটকীয় প্রবেশের মধ্যেই মজিদের ভন্ডামীর পরিচয় পাওয়া যায়। গ্রামে প্রবেশ করেই মজিদ গ্রামবাসীকে গ্রামের পেছনে অবস্থিত একটি পুরনো কবরকে মোদাচ্ছের পীরের মাজার বলে ধর্মের ভয় দেখায়। গ্রামের মানুষেরাও লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে। ফলে মজিদও বুঝতে পারে যে তার পরিকল্পনা সার্থক হতে যাচ্ছে। জঙ্গল সাফ করে ইট- সুরকি দিয়ে বাধাই করে শুরু হয় মজিদের ধর্মব্যবসা। ধীরে ধীরে মাজারে জনসমাগম বাড়ে, বাড়তে থাকে দান খয়রাতের নামে কুসংস্কার। মজিদেরও ঘরবাড়ি জমিজোত হয়। ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করতে থাকে মজিদ। তার ধর্মব্যবসার ভীত কে মজবুত করার জন্য কিভাবে ঠ্যাঙা বুড়োকে গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে, আমিনা বিবির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায় , আক্কাসের স্কুল করার স্বপ্ন ভেঙে দেয় ও জামিলাকে মাজার পূজায় বাধ্য করতে চায় তারই চিত্রের ফুটে উঠেছে উপন্যাসের বাকি অংশে।

পাঠ প্রতিক্রিয়া: "লালসালু‌" নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর একটি। কারণ উপন্যাসটি ইংরেজি, ফরাসি ও উর্দুসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে এবং পাঠক সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

 এর কেন্দ্রীয় চরিত্র মসজিদ কুসংস্কার, শঠতা, প্রতারণা ও অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক। সে তার ধর্মব্যবসা কে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষকে বিভিন্নভাবে শোষণ করে অর্থ-বিত্ত ও প্রতিপত্তির অধিকারী হয়। এক্ষেত্রে খালেক বেপারী ভূস্বামী ও প্রতিপত্তির অধিকারী হাওয়ায় সামাজিক নেতৃত্বের অধিকারী হলেও সে মজিদের মাজার শক্তির অধীনতা স্বীকার করেছে। যা প্রচলিত ইতিহাসের ধারার ব্যতিক্রমী।

তবে গ্রামের অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যেও আক্কাসের স্কুল গড়ার মাধ্যমে শিক্ষার সুবাতাস ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস ও জামিলার সাহসী প্রতিবাদ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
সমাজবাস্তবতামুলক এই উপন্যাসে মানবতাবাদী লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কুসংস্কারাচ্ছন্ন দরিদ্র গ্রামবাসীকে কিভাবে মজিদের মতো ভন্ডরা তাদের অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে যুগ যুগ ধরে শোষণ করে আসছে তারই চিত্র অঙ্কন করেছেন। তার লক্ষ্য ধর্মকে কিংবা ধর্ম বিশ্বাসকে অবমাননা নয়; বরং তিনি চেয়েছেন ধর্মীয় বিশ্বাসের নামে গ্রামে গেড়ে বসে কুসংস্কারের মুখোশ উন্মোচিত করতে।

লালসালু উপন্যাস PDF - সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | Lalsalu - Syed Waliullah  PDF Download Now 

- রওনক জাহান 
(ভলান্টিয়ার কনটেন্ট রাইটার)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ