- Title রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা
- Author মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
- Publisher বাতিঘর প্রকাশনী
- ISBN 9781556156786
- Edition 1st Published, 2020
- Number of Pages 272
- Country বাংলাদেশ
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা উপন্যাস 'কেউ কেউ কথা রাখে'-র একটা রিভিউ আমি লিখেছিলাম এক সময়। সেই রিভিউতে আমি বলেছিলাম, 'আমার মতে ওটাই তাঁর সেরা সৃষ্টি'। অথচ, মজার বিষয় হচ্ছে 'কেউ কেউ কথা রাখে' বইটা তাঁর মৌলিক উপন্যাস নয়। ওটার মূল লেখক আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক এডুয়ার্ডো সাচেরি। তাঁর বইটা স্প্যানিশ ভাষায় লেখা। নাম হচ্ছে, ‘’লা প্রেগুনতা দে সাস ওহোস'। বইটা ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে 'দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ' নামে। সেটারই বাংলা অনুবাদ হচ্ছে 'কেউ কেউ কথা রাখে'।
'কেউ কেউ কথা রাখে'-কে অনুবাদ বললেও ভুল হবে। ওটাকে বাংলাদেশের পটভূমিতে একটা বিশেষ কালে এনে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন সেটার এমন একটা রূপ দিয়েছেন যে তা মৌলিকের কাছাকাছি চলে গিয়েছে। এবং সেই কারণেই সেটাকে তাঁর সেরা সৃষ্টি বলেছিলাম আমি।
এখন অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি আমি। গতকাল তাঁর লেখা 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা' বইটা পড়ে শেষ করলাম। এটা পড়ার পরে মনে হয়েছে এটাই তাঁর সেরা বই। সৌভাগ্য হোক কিংবা দুর্ভাগ্য হোক, সেই সেরা বইটা পড়া হলো আমার সবার শেষে।
‘রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা' উপন্যাস নয়। এটি ছোট গল্পের একটা সংকলন। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের ছোট গল্প আগে কখনো পড়া হয়নি আমার। এই বইটার কল্যাণে তাঁর লেখা আঠারোটা ছোট গল্প পড়ে ফেলা হলো একটানে। উনি মূলত একজন থ্রিলার লেখক। সেই হিসাবে তাঁর ছোটগল্পগুলোও একই ধাঁচের হবার কথা। কিন্তু, আশ্চর্যজনক হচ্ছে, তাঁর ছোটগল্পগুলো বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। থ্রিলার গল্প যেমন আছে এখানে, আছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আবার একই সাথে সামাজিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্বলিত গল্পও রয়েছে সেখানে। প্রতিটা গল্পই ভিন্ন ধাঁচের, ভিন্ন আঙ্গিকের। কিন্তু, একই সাথে আবার সেখানে প্রবলভাবে উপস্থিত রয়েছে লেখকের সিগনেচার টিউন। প্রতিটা গল্পকে তিনি উপস্থাপন করেছেন তাঁর নিজস্ব স্টাইলে। অত্যন্ত আকর্ষণীয়, ধারালো আর বুদ্ধিদীপ্ত সেই স্টাইল।
এই বইয়ের 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা', ‘লেখকের আসন' ‘পিথিকোফোবিয়া কিংবা অন্দরে বান্দর', ‘ঈশ্বরকার', ‘আয়নার বায়না', যে কারণে লাশ ভেসে উঠতে পারে', সুন্দরবনে যেভাবে শুয়োরের দল জায়গা করে নিলো', 'সখেদ' গল্পগুলো পাঠকের চিন্তার জগতে বড় ধরনের ধাক্কা দেবে। এগুলো পাঠ করার পর প্রবল বিস্ময়ের সাথে পাঠক বুঝতে পারবেন একজন অসাধারণ বুদ্ধিমান এবং অত্যন্ত সমাজ সচেতন লেখক পাঠকের মনস্তত্ব নিয়ে খেলা করছেন সুদক্ষ এক শিল্পীর মতো। তাঁদের মস্তিষ্কে আলোড়ন তুলছেন তিনি ভিন্ন এক উপায়ে। চিরচেনা সমাজের অসঙ্গতির জায়গাটাতে তিনি পাঠককে নিয়ে যাচ্ছেন হাতে ধরে। কিন্তু, যাত্রা শেষ হবার আগে পাঠকের সেটা বোঝার কোনো উপায় থাকবে না। যাত্রার শেষ ধাপে গিয়েই শুধু পাঠক উপলব্ধি করবেন যে লেখক কোন কৌশলে এবং কোথায় তাঁকে নিয়ে এসে ছেড়ে দিয়েছেন। মুখোমুখি করিয়েছেন কোন সত্যের।
নিশ্চিতভাবেই তাঁর সেরা কিছু সৃষ্টি মলাট বন্দি হয়েছে 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা' গল্পগ্রন্থে। লেখক নিজেও এ বিষয়টাতে সচেতন। যে কারণে তিনি বইয়ের ভূমিকাতেই লিখেছেন, “এই গল্পগ্রন্থে আমার পরিচিত গণ্ডী থৃলার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গল্প রয়েছে। বিষয়বৈচিত্র্যের দিক থেকে 'সমৃদ্ধ' বললে উন্নাসিক বলা যাবে না হয়তো। তারচেয়েও বড় কথা, এখন পর্যন্ত নিজের কাছে নিজের লেখা সেরা কাজগুলোর বেশ কয়েকটি এই গল্পগ্রন্থে স্থান পেয়েছে - এমন দাবি আমি অকপটেই করছি।"
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন থ্রিলার গল্প লেখায় সিদ্ধহস্ত, এ ব্যাপারে আমরা সবাই একমত। কিন্তু, ছোট গল্প লেখায় তিনি যে আরও সিদ্ধহস্ত, আরও বেশি সুদক্ষ, সেটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। অন্তত আমার জানা ছিলো না, সেটা আমি আগেই স্বীকার করে নিয়েছি। ছোটগল্পের ক্ষেত্রে তিনি যে ভাষাটা ব্যবহার করেন, সেটাও অনেক বেশি শক্তিশালী, সুশোভিত এবং সুরম্য। একই সাথে লেখকের মধ্যে পরিমিতিবোধও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যে কারণে লেখাতে বাহুল্য নেই বললেই চলে। আঁটসাঁটও লেখা হবার কারণে পাঠকের বিরক্ত হবার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এটা 'রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা' বইয়ের রিভিউ নয়। গল্পগন্থের রিভিউ করা এমনিতেই কঠিন একটা কাজ। এই বইয়ের রিভিউ করা আরও কঠিন কাজ। কারণ, এখানে প্রতিটা গল্পই আলাদাভাবে বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। সেই আলোচনাতে আমি যাচ্ছি না। পাঠকের কাছে শুধু বইটাকে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছি মাত্র। যাঁদের সুযোগ আছে, পারলে বইটা পড়ে নেবেন। চিন্তাজাগানিয়া অচিন্ত্যনীয় কিছু আকর্ষণীয় গল্প পড়তে পারবেন বলেই আমার ধারণা। আমার কাছে অন্তত সে রকমটাই মনে হয়েছে।
Review Credit : Farid Ahmed [Thanks A Lot]
At A Glance
রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা’ ২০১৯-এর বইমেলার শেষের দিকে নিজের গল্পগুলো এক মলাটে বন্দি করে `নিছক গল্প কিংবা আখ্যান' নামে প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু আমার কলকাতার প্রকাশক অভিযান পাবলিশার্সের মারুফ হোসেন এমন নামকরণে খুশি হতে পারেননি। বইটার ভূমিকা নিয়েও তার ছিল আপত্তি। ‘আপনি আপনার মতো গল্প লিখবেন...কৈফিয়ত দেবেন কেন!’--এমনই ছিল তার বক্তব্য। পরবর্তিতে গল্পগ্রন্থটি অভিযান থেকে প্রকাশ করার সময় তিনি জানালেন, ‘রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা’ নামটি দিতে চাইছেন। আমি এককথায় রাজি হয়ে যাই, কারণ আমারও মনে হয়েছে, এই নামকরণটি যথার্থ, আগেরটার মধ্যে তাড়াহুড়ো কিংবা অতিরিক্ত বদান্যতার ছাপ ছিল হয়তো!
যাই হোক, অভিযান থেকে গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ হবার পর উপলব্ধি করলাম, একই গল্পগ্রন্থ ঢাকা এবং কলকাতা থেকে দুই নামে, ভিন্ন প্রচ্ছদে প্রকাশিত হবার কারণে পাঠকমহলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নেই, পরবর্তী সংস্করণটি হবে একই নামে, একই প্রচ্ছদে। তবে এবার গল্পের ধারাক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে; পুরনো একটি গল্পের পরিবর্তে যোগ করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে লেখা নতুন একটি গল্প। এই গল্পগ্রন্থে আমার পরিচিত গণ্ডী থৃলার ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গল্প রয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....